ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কুফল
(عاقبة العلمانية)
১. ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’-এর প্রধান লক্ষ্য হ’ল ইসলামকে মানুষের বৈষয়িক জীবন থেকে বিতাড়িত করে আধ্যাত্মিক জীবনে বন্দী করে ফেলা। অতঃপর সেখান থেকেও ক্রমে ক্রমে বিদায় করে দিয়ে মানুষকে পুরা নাস্তিক ও বস্ত্তবাদী করে তোলা। এই লক্ষ্যের প্রথম স্তরে তারা অত্যন্ত দ্রুত সফলতা লাভ করেছে এবং মুসলিম বিশ্বের প্রায় সর্বত্র বর্তমানে এই দর্শন নামে-বেনামে রাষ্ট্রীয়ভাবেই চালু হয়ে গেছে। চূড়ান্ত স্তরের মহড়াও প্রায় সব দেশেই কিছু কিছু চলছে সে সব দেশের কম্যুনিষ্ট ও সমাজতন্ত্রী দলগুলির মাধ্যমে ও তাদের প্রচারিত সাহিত্য-সাময়িকী, বই ও পত্র-পত্রিকা তথা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সমূহের মাধ্যমে।
২. এই দর্শনের ফলে মুসলমানরা ইসলামকে অপূর্ণ ও বিকলাঙ্গ ভাবতে শুরু করেছে। ফলে চৌদ্দশ’ বছরের পুরনো ইসলাম এ যুগে অচল বলতেও মুসলিম শিক্ষিত সন্তানের জিহবা আড়ষ্ট হয় না। বরং উল্টা অপবাদ ছড়ানো হয় যে, ইসলামী আইন ব্যবস্থায় অমুসলিমদের জন্য কোন বিধান নেই।
৩. এই দর্শনের মারাত্মক কুফল হিসাবে মুসলমান তার আধ্যাত্মিক জীবনে আল্লাহর আইন ও বৈষয়িক জীবনে নিজের জ্ঞান বা প্রবৃত্তিকে ইলাহ-এর আসনে বসিয়েছে। আল্লাহ বলেন,
أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنْتَ تَكُوْنُ عَلَيْهِ وَكِيْلاً- أَمْ تَحْسَبُ أَنَّ أَكْثَرَهُمْ يَسْمَعُوْنَ أَوْ يَعْقِلُوْنَ إِنْ هُمْ إِلاَّ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ سَبِيْلاً-
‘(হে নবী!) আপনি কি দেখেছেন ঐ ব্যক্তিকে, যে স্বীয় প্রবৃত্তিকে ইলাহ গণ্য করেছে? আপনি কি ঐ লোকটির কোন দায়িত্ব নিবেন? আপনি কি মনে করেন ওদের অধিকাংশ লোক শুনে বা বুঝে? ওরা তো চতুষ্পদ জন্তুর মত বরং তার চেয়েও অধম’ (ফুরক্বান ২৫/৪৩, ৪৪)।
৪. এই দর্শনের বাস্তব ফলশ্রুতি হিসাবে আমাদের নেতারা রাজনীতির মঞ্চে দাঁড়িয়ে সোচ্চার গলায় শিরকী কালাম উচ্চারণ করে বলেন, ‘জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস’। একই কারণে সূদভিত্তিক হারামী অর্থনীতি রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু করতে এবং দেশবাসীকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ‘হারামখোর’ বানাতেও আমাদের মুসলিম নেতাদের অন্তর আল্লাহর গযবের ভয়ে প্রকম্পিত হয় না। স্বীয় পদমর্যাদার অপব্যবহার করে লাখ লাখ ঘুষের টাকা পকেটে ভরতেও এদের হাত কাঁপে না। ডাক্তারের চেয়ারে বসে অসহায় রোগীর পকেট ডাকাতি করতেও এদের বিবেকে বাধে না। মাল মওজূদ করে ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিম খাদ্যসংকট সৃষ্টি করতেও এরা জাহান্নামের ভয়ে ভীত হয় না। জুয়া-লটারী আর স্মাগলিংয়ের হারামী পয়সায় খাবার কিনে নিষ্পাপ কচি মা‘ছূম বাচ্চার মুখে তুলে দিতেও এদের পাষাণ পিতৃহৃদয় ভয়ে অাঁৎকে ওঠে না। কারণ তার বিশ্বাস অনুযায়ী এ সবই হ’ল বৈষয়িক ব্যাপার। এখানে আবার জান্নাত-জাহান্নাম কি? তাই একজন লোক মসজিদে পাক্কা মুছল্লী এবং ‘আলহাজ্জ’ লকব নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেও বৈষয়িক ব্যাপারে তার কোনই প্রভাব পড়বে না, যদি নাকি ঐ ব্যক্তি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী হয়। তার দ্বীন তার দুনিয়ার উপরে কোন প্রভাব বিস্তার করবে না। ঐ ব্যক্তি হবে তখন পুরা দুনিয়াদার। দুনিয়াবী লাভ-লোকসানই হবে তার সকল কাজের নৈতিক মানদন্ড। যাঁরা দেশের রাজনৈতিক ও বৈষয়িক ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামান না বরং আলীশান খানক্বাহে বসে মা‘রেফাতের সবক দেন কিংবা বার্ষিক ওরস- ঈছালে ছওয়াব ও প্রাত্যহিক নযর-নেয়াযের দৈনিক ব্যালান্স হিসাব করায় সদা ব্যস্ত থাকেন, তারাই এদেশে ‘দ্বীনদার’ বলে খ্যাত। জানি না ইসলামের মহান নবী (ছাঃ) ও তাঁর চারজন খলীফাকে এরা দ্বীনদার বলবেন, না ‘দুনিয়াদার’ বিশেষণে বিশেষিত করবেন।
আমরা যারা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী সমাজ গঠনের শপথ নিয়েছি, নির্ভেজাল ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসেনা হিসাবে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীকে উপরোক্ত জাহেলী মতবাদটি সম্পর্কে সর্বদা হুঁশিয়ার থাকতে হবে এবং নিজেকে ও নিজের পরিবার ও সমাজকে এই ইসলাম ধ্বংসকারী খৃষ্টানী মতবাদ হ’তে এবং এই মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের জান, মাল, সময় ও শ্রম ব্যয় করা হ’তে বিরত থাকতে হবে।[1][1]. আল্লামা ইকবাল (১৮৭৩-১৯৩৮খৃ:) বলেন, ... جب جدا هو دين سياست ﺴﮯـــــــــــــــﮯ ﭽﻨﮕﻳﺯي ‘যখন রাজনীতি হ’তে দ্বীন পৃথক হয়ে যাবে, তখন সেখানে কেবল চেংগীযী বর্বরতাই অবশিষ্ট থাকবে’ এ কথার বাসত্মবতা আজ পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই দেখা যাচ্ছে। -লেখক।