২য় মতবাদ : ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ
(النظرية الثانية: العلمانية)
Religion should not be allowed to come into politics. It is merely a matter between man and god. ‘ধর্মকে রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশাধিকার দেওয়া উচিত নয়। এটি মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যকার একটি (আধ্যাত্মিক) বিষয় মাত্র’।
Secularism বা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের মূল কথাটি উপরোক্ত দু’টি বাক্যের মধ্যে নিহিত। দীর্ঘ প্রায় দু’শত বছরের গোলামীর যুগে বৃটিশ বেনিয়া দার্শনিকদের শিখানো ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ নামক এই মতবাদটি সাফল্যজনকভাবে চালু করার ফলেই সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা সদ্য রাজ্যহারা মুসলিম শক্তিকে নিরুৎসাহিত করতে এবং সুদীর্ঘকাল যাবৎ ভারত উপমহাদেশ শাসন করতে সক্ষম হয়েছিল। বর্তমানে উপমহাদেশে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি স্বাধীন দেশ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিকগুলি চালু না থাকার অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল বৃটিশের রেখে যাওয়া উপরোক্ত মতবাদ। ফলে মুসলিম দেশে বাস করেও আমরা অমুসলিম দেশ সমূহের গৃহীত আইন অনুযায়ী শাসিত হচ্ছি। পৃথিবীতে প্রত্যেকটি দেশ তাদের জনগণের লালিত কৃষ্টি ও সংস্কৃতি মোতাবেক রাষ্ট্রীয় আইন ব্যবস্থা গড়ে তুলে ও সেই অনুযায়ী দেশ শাসন করে থাকে। কম্যুনিষ্ট দেশগুলি তাদের অধিকাংশ জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কম্যুনিষ্ট পার্টির গৃহীত আইনের লৌহ কঠিন শৃংখলে শাসিত হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য মুসলিম দেশগুলির জন্য যে, এই দেশগুলির শাসন ব্যবস্থায় তাদের নিজস্ব তাহযীব ও তামাদ্দুনের প্রতিফলন নেই। বরং দেশের সংবিধানে অনৈসলামী শাসন দর্শনের গোলামীর চেহারা প্রকটভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। তথাকথিত উদারতাবাদের দোহাই পেড়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ নামক উক্ত মতবাদটির প্রচলন ঘটানো হয়েছে। যার মূল কথাই হ’ল রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে ধর্মের অর্থাৎ ইসলামের কোন বিধান চলবে না। বরং জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত পার্লামেন্টের গুটিকয়েক গুণী ও নির্গুণ সদস্য কিংবা সামরিক ডিক্টেটর প্রেসিডেন্ট নিজের খেয়াল-খুশীমত যা আইন করে দিবেন, সেটাই দেশের আইন বলে সকলকে মেনে নিতে হবে। পৃথিবীতে ইসলাম ব্যতীত অন্য যতগুলি ধর্ম আছে, কারো নিকট আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত রাষ্ট্রীয় বা অর্থনৈতিক দর্শন বা হেদায়াত মওজূদ নেই। তাই একথা নির্বিবাদে বলা যায় যে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ নামে সৃষ্ট উক্ত মতবাদটি কেবলমাত্র ইসলামকেই মুসলমানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন থেকে বের করে দেবার জন্য ইহুদী-নাছারা বুদ্ধিজীবীদের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে।
বস্ত্তত:পক্ষে ঊনবিংশ শতকে আবিষ্কৃত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের এই আধুনিক মতবাদটি অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হ’লেও বিশ্ব ইতিহাসের অতুলনীয় রাজনৈতিক দলীল ‘মদীনার সনদ’-এর রচয়িতা ও ঐতিহাসিক ‘হোদায়বিয়ার সন্ধি’তে স্বাক্ষরদানকারী কুশাগ্রবুদ্ধি রাজনীতিবিশারদ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর প্রচারিত ও আল্লাহ প্রেরিত পূর্ণাঙ্গ শরী‘আত ইসলামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বরং অন্যান্য ধর্মের বিপরীতে ইসলামী শরী‘আতে মানুষের আধ্যাত্মিক ও বৈষয়িক উভয় জীবনের জন্য চিরন্তন হেদায়াত সমূহ মওজূদ রয়েছে। যা যথাযথভাবে মেনে নেওয়ার মধ্যেই মানুষের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি নির্ভর করে।