মধ্যপন্থা
(قصد السبيل)
উপরের তিনটি চরমপন্থী মতবাদ আলোচনা শেষে এক্ষণে মধ্যপন্থা বের করা খুবই সহজ হয়ে যাবে। একজন প্রকৃত মুমিন যদি আলেম হন, তাহ’লে নিজে কুরআন-হাদীছ দেখে জীবন গড়বেন। আর যদি জাহিল হন, বা কোন বিষয় না জানা থাকে, তাহ’লে নিরপেক্ষ, যোগ্য ও মুত্তাক্বী আলেমের নিকট হ’তে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধান জেনে নিবেন। কখনই কোন অবস্থায় কোন নির্দিষ্ট মাযহাবী ফৎওয়া বা ব্যক্তির রায় তলব করবেন না। তাহ’লে তিনি ১ম মতবাদের সংকীর্ণতা হ’তে মুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী নিজের জীবন, পরিবার ও রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্লাহ।
একজন মুমিন নিশ্চয়ই ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবেই বিশ্বাস করবেন। তিনি ধর্মীয় জীবনে তো বটেই, বৈষয়িক জীবনেও ইসলামের দেওয়া হুদূদ বা সীমারেখা পুরোপুরি মেনে চলবেন। আর এভাবেই তিনি ২য় মতবাদের খপপর হ’তে মুক্তি পেয়ে সার্বিক জীবনে পূর্ণ মুমিন হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন ইনশাআল্লাহ।
একজন মুমিন অবশ্যই দ্বীন ও দুনিয়াকে একত্রে গুলিয়ে ফেলবেন না। তিনি কোন অবস্থাতেই দ্বীনকে দুনিয়া হাছিলের মাধ্যমে হিসাবে ব্যবহার করবেন না। বরং দুনিয়াকে দুনিয়া গণ্য করেই তাকে দ্বীনের রং-য়ে রঞ্জিত করতে চেষ্টা করবেন। তিনি দ্বীনের ব্যাপারে কোন অবস্থাতেই রায় বা যুক্তিবাদকে অগ্রাধিকার দিবেন না এবং আক্বীদা ও বিধানগত ব্যাখ্যায় কখনই ছাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত তরীকার বাইরে যাবেন না। তাহ’লেই তিনি ৩য় মতবাদের বাড়াবাড়ি হ’তে রেহাই পেতে পারেন।
অতঃপর একজন মধ্যপন্থী মুসলমান যখন যে হালেই থাকুন না কেন, নিজেকে সর্বাবস্থায় নির্ভেজাল সৎ ও দ্বীনদার হিসেবেই প্রমাণিত করবেন। দ্বীনের লক্ষ্যে তিনি দুনিয়াকে কুরবানী দিবেন এবং কোন অবস্থাতেই দুনিয়ার জন্য দ্বীনকে বিক্রি করবেন না। কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে প্রাপ্ত দ্বীনকেই তিনি দ্বীন হিসাবে গণ্য করবেন। কারো রায় ও কেয়াস নয়, বরং আল্লাহর ‘অহি’কে সত্য মিথ্যার মানদন্ড হিসাবে গ্রহণ করবেন। তিনি ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে বিশ্বাস করবেন এবং জীবনের যে শাখার সঙ্গে তিনি জড়িত হবেন, সেই শাখাতে ইসলামের বিধান মেনে চলে বাতিলের উপরে হকের বিজয় ঘটাতে চেষ্টিত হবেন। তিনি সর্বাবস্থায় দ্বীনদারগণের সাথে জামা‘আতবদ্ধ থাকবেন এবং অন্যদেরকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিয়ে যাবেন।
যদি ইসলামী খেলাফত কায়েম থাকে, তাহ’লে সেখানে তিনি বিদ্রোহ ছড়াবেন না। বরং সরকারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য বজায় রেখে সংশোধনের মন নিয়ে যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন ও সরকারকে সুপরামর্শ দিবেন। পক্ষান্তরে যদি খেলাফত কায়েম না থাকে, তাহ’লে দেশে ইসলামী খেলাফত কায়েমের জন্য শারঈ তরীকায় যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।