পর্যালোচনা
১ম দলের বক্তব্য পরিস্কার। তাঁরা কুরআনী আয়াতসমূহ ও হাদীছসমূহকে প্রকাশ্য অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং বিদ‘আতী তালাককে বাতিল গণ্য করেছেন। ২য় দলের বক্তব্যে তাবীলের আশ্রয় স্পষ্ট। এখানে স্ব স্ব রায়-এর পক্ষে দলীলকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এতদ্ব্যতীত ওমর (রাঃ)-এর ইজতেহাদী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাময়িকভাবে জারি করা কঠোর প্রশাসনিক নির্দেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ৩য় দলের বক্তব্য রেওয়ায়াত ও দিরায়াত-এর বিরোধী। ৪র্থ দলের বক্তব্য কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগের সাথে সামঞ্জস্যশীল।
মিসর ও সিরিয়াতে শেষোক্ত দলের বক্তব্য সরকারী আইন হিসাবে স্বীকৃত। যেমন সিরীয় আইনের ৯১ ধারায় বলা হয়েছে যে, স্বামী তার স্ত্রীকে তিনটি তালাক দেওয়ার অধিকার রাখে। ৯২ ধারায় বলা হয়েছে যে, শাব্দিকভাবে হৌক বা ইঙ্গিতে হৌক কয়েকটি তালাক একত্রে মিলিতভাবে দিলে তদ্বারা একটির বেশী পতিত হবে না।[1]
১৯৬১ সালে পাকিস্তানে প্রবর্তিত মুসলিম পারবারিক আইনেও এর স্বীকৃতি মেলে। বাংলাদেশেও উক্ত আইন সরকারীভাবে চালু আছে। যেমন বলা হয়েছে, ‘১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশে তালাক আল-আহসান বা তালাক আল-হাসানের সহিত তালাক আল-বিদাতের ক্ষেত্রে বিশেষ কোন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না। কারণ এই অর্ডিন্যান্সের বিধান অনুযায়ী তালাক যে প্রকারেই ঘোষণা করা হোক না কেন উহা সঙ্গে সঙ্গে বলবৎ হবে না। তালাক ঘোষণার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে যে দিন নোটিশ প্রদান করা হবে সেদিন হ’তে ৯০ দিন অতিবাহিত হবার পর তালাক বলবৎ হবে’।[2]
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে, ‘যে কোন আকারে তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্র সম্ভব বিষয়টি লিখিতভাবে ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়্যারম্যানকে জানাতে হবে এবং চেয়াম্যানকে প্রদত্ত লিখিত নোটিশের এক কপি নকল অপর পক্ষকে (স্বামী বা স্ত্রী) দিতে হবে। এই নোটিশ দেয়ার বিধান অমান্য করলে এক বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার শাস্তি হবে’।
তালাক যে পক্ষই দিক না কেন, যেদিন চেয়ারম্যানকে নোটিশ দেয়া হবে, সেদিন থেকে নববই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক বলবৎ হবে না। তবে স্বামী তালাক দিয়ে থাকলে এবং তালাকের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে নববই দিন এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত এ দু’টির মধ্যে যে মেয়াদটি দীর্ঘতর, সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর তালাক বলবৎ হবে।
নোটিশ পাবার দিন হ’তে তিরিশ দিন সময়ের মধ্যে চেয়ারম্যান একটি শালিশী পরিষদ গঠন করবে। চেয়ারম্যান, একজন স্বামীর প্রতিনিধি এবং একজন স্ত্রীর প্রতিনিধি এই তিন জনকে নিয়ে শালিশী পরিষদ গঠিত হবে। এই পরিষদ স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ মিটিয়ে তাদেরকে তালাক হ’তে বিরত থাকতে রাজী করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।
পারিবারিক আইন অর্ডিন্যান্সের এই বিধানটি পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা নিসার ৩৫ নং আয়াতের নির্দেশ অনুসারে প্রণয়ন করা হয়েছে।[3]
[1]. আল-ফিক্বহুস ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহূ (বৈরুত : দারুল ফিক্র ৩য় সংস্করণ ১৯৮৯), পৃঃ ৪০৭।
[2]. এস,বি. রহিম, মুসলিম জুরিসপ্রুডেন্স, ২য় সংষ্করণ ১৯৭৬, পৃঃ ১৪৯; 7/(3) Takaq: Sub-scction (5), a talaq,....shall not be effective until the expiration of nintey days from the day on which notice under sub-section (1) is delivered to the Chairman.
Modes of talaq: Talaq-i-bidaat, as in actual practice now-a-days, consists in the pronouncement of 3 talaqs in one sitting which immediately therefter severs the marriage tie and the divorce becomes irrevocale (Talaq-i-bain). This from has its sanction under Hanafi Law and not recognised by the Shia as also the shafi schools. The Muslim Family Laws Ordinace, 1961, PP. 60-62.
[3]. ওসমান গণি, মুসলিম আইন (ঢাকা : খোশরোজ কিতাব মহল, ২য় সংষ্করণ ১৯৭৩), পৃঃ ১১৬-১৭। 7/(3) Talaq: (4) Within thirty days of the receipt of notice under sub-Section (1). The Chairman shall constitute an Arbitration Council for the purposee of bringing about a reconcilliation between the parties, and the Arbiration Council shall take all steps necessary to bring about such reconciliation. The Muslim Family Laws Ordinance, 1961. pp. 60.