চার ইমামের প্রতি সম্বন্ধ পর্যালোচনা
এক মজলিসে তিন তালাককে তিন তালাক গণ্য করার বিষয়টি অনুসরণীয় চার ইমামের প্রতি সম্বন্ধ করা হয়ে থাকে। কিন্তু বিষয়টিতে আমরা নিশ্চিন্ত নই। কেননা পরবর্তীকালে এমন বহু কিছু তাঁদের মাযহাব হিসাবে চালু হয়েছে, যে বিষয়ে তাঁদের থেকে কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা সূত্র নেই। কেননা চার ইমামের মধ্যে শাফেঈ (রহঃ) ব্যতীত বাকী তিনজনের কেউই ফেক্হী বিষয়ে কোন গ্রন্থ রচনা করে যাননি। এক্ষণে তাঁদের মাযহাব বলে গৃহীত মাসআলা সমূহের সংকলন হিসাবে যে সকল বিরাট বিরাট ফিক্হগ্রন্থ পরবর্তীকালে রচিত ও প্রচারিত হয়েছে, পরীক্ষায় দেখা যাবে যে, সেগুলিতে সংকলিত অধিকাংশ মাসআলা কিংবা সবগুলোই তাঁদের অনুসারী পরবর্তী বিদ্বানগণের রচিত। আবুল ফাৎহ মুহাম্মাদ বিন আবুল হাসান ইবনু দাক্বীকুল ঈদ (মৃতঃ ৭০২ হিঃ) চার মাযহাবে প্রচলিত ছহীহ হাদীছ বিরোধী ফৎওয়া সমূহের একটি বিরাট সংকলন তৈরী করেছিলেন। যার ভূমিকাতে তিনি ঘোষণা করেছেন যে, ‘এই মাসআলাগুলি চার ইমামের নামে চার মাযহাবে চালু থাকলেও এগুলোকে তাঁদের দিকে সম্পর্কিত করা হারাম’। এগুলির মাধ্যমে তাঁদের উপরে মিথ্যারোপ করা হয়েছে মাত্র’। আল্লামা তাফ্তাযানী, শা‘রাবী, অলিউল্লাহ দেহলভী, মোল্লা মুঈন সিন্ধী, আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌবী প্রমুখ বিদ্বানগণ সকলেই একথা স্বীকার করেছেন।[1]
(১) উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হানাফী আলেম মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষ্মৌবী একত্রিত তিন তালাক সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই অবস্থায় হানাফী মাযহাব অনুযায়ী তিন তালাক পতিত হবে এবং ‘তাহলীল’ ব্যতীত তার সাথে পূর্ব স্বামীর পুনর্বিবাহ সিদ্ধ হবে না।
কিন্তু এমন যরূরী অবস্থায় যেমন স্বামীর নিকট থেকে উক্ত মহিলার পৃথক হওয়া কঠিন কিংবা তাতে ক্ষতির আশংকা বেশী, সেই অবস্থায় অন্য কোন ইমামের তাক্বলীদ করায় ক্ষতি নেই। যেমন এর দৃষ্টান্ত রয়েছে নিরুদ্দিষ্ট স্বামীর ক্ষেত্রে। এখানে হানাফীগণ ইমাম মালেক (রহঃ)-এর মাযহাব (চার বছর)-এর উপরে আমল করা জায়েয মনে করেন। তবে তিন তালাকের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম হবে যে, ঐ ব্যক্তি যেন কোন শাফেঈ আলেমের নিকট থেকে ফৎওয়া জেনে নিয়ে তার উপরে আমল করে’ [ফাতাওয়া রশীদিয়াহ (করাচী : মুহাম্মাদ আলী কারখানায়ে কুতুব, তাবি), পৃঃ ৪৬২]।
(২) অন্যতম সেরা আলেম মাওলানা রশীদ আহমাদ গাংগোহী একত্রিত তিন তালাককে তিন তালাক গণ্য করেন এবং ‘হালাল’ ব্যতীত পুনর্বিবাহের কোন পথ খোলা নেই বলে ফৎওয়া দেন’ (ঐ, পৃঃ ৪৬২)। কিন্তু তাঁর নিজস্ব মত বা মাসলাক হিসাবে বর্ণনা করেন যে, যে মাসআলায় ছাহাবা ও মুজতাহিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, সে মাসআলায় নিজের তাহকীক অনুযায়ী বা কোন হকপন্থী মুজতাহিদ-এর তাক্বলীদকে অগ্রগণ্য মনে করে তার উপরে আমল করবে। বিরোধী মতকে কোনরূপ তিরষ্কার করবে না। বরং যরূরী অবস্থায় তার উপরে আমল করবে। এ কারণে এ দুর্বল বান্দা হানাফী মাযহাবের হওয়া সত্ত্বেও অন্য কোন মাযহাবের অনুসারীকে তিরষ্কার করে না এবং নিজের মাযহাযকেও অযথা অন্যের উপরে প্রাধ্যন্য দিতে চেষ্টিত হয় না।... প্রয়োজনে শাফেঈ মাযহাবের উপরে আমল করায় কোন দোষ নেই। তবে সেটা যেন নফসের খাহেশ পূরণের উদ্দেশ্যে না হয়। বরং যদি শারঈ দলীলের ভিত্তিতে হয় তাহ’লে তাতে কোন দোষ নেই’ (ঐ, পৃঃ ৪)।