জিহাদ ও কিতাল

হকপন্থী দল

(ক) হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন,

لاَ تَزَالُ طَائِـفَةٌ مِنْ أُمَّتِى ظَاهِرِيْنَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَهُمْ كَذَالِكَ-

‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’।[1] এখানে ‘বিজয়ী’ অর্থ আখেরাতে বিজয়ী।

(খ) হযরত ইমরান বিন হুছায়েন (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِّنْ أُمَّتِىْ يُقَاتِلُوْنَ عَلى الْحَقِّ ظَاهِرِيْنَ عَلى مَنْ نَاوَأَهُمْ حَتَّى يُقَاتِلَ آخِرُهُمُ الْمَسِيْحَ الدَّجَّالَ، رواه أبوداؤد- ‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা একটি দল থাকবে যারা হক-এর উপর লড়াই করবে। তারা শত্রুপক্ষের উপর বিজয়ী থাকবে। তাদের সর্বশেষ দলটি দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধ করবে’।[2]

(গ) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى يُقَاتِلُوْنَ عَلَى الْحَقِّ ظَاهِرِيْنَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ  ‘আমার উম্মতের একটি দল ক্বিয়ামত পর্যন্ত সর্বদা হক-এর উপর লড়াই করবে বিজয়ী অবস্থায়’।[3]

(ঘ) মু‘আবিয়া বিন কুররাহ স্বীয় পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন যে, لاَ تَزَالُ طَائِفَةٌ مِنْ أُمَّتِى مَنْصُورِينَ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ- قَالَ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ عَلِىُّ بْنُ الْمَدِينِىِّ هُمْ أَصْحَابُ الْحَدِيثِ ‘চিরকাল আমার উম্মতের মধ্যে বিজয়ী একটি দল থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। এভাবে ক্বিয়ামত এসে যাবে’। ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, (আমার উস্তাদ) আলী ইবনুল মাদীনী বলেছেন, তারা হ’ল ‘আহলুল হাদীছ’।[4]

বস্ত্ততঃ পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে চিরকাল আহলুল হাদীছের উক্ত দল থাকবে এবং পথভোলা মানুষকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথে ডাকবে। তারাই হ’ল হাদীছে বর্ণিত ফিরক্বা নাজিয়াহ বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল’।[5] যারা সর্বাবস্থায় পবিত্র কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের উপর আমল করে থাকে।[6] আল্লাহ আমাদেরকে আহলুল হাদীছের দলভুক্ত করুন এবং আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের সার্বক্ষণিক পাহারাদার মুজাহিদ হিসাবে কবুল করে নিন- আমীন!

উল্লেখ্য যে, আজকাল কিছু লোক বলছেন যে, সবাইকে কেবল ‘মুসলিম’ বলতে হবে, ‘আহলুল হাদীছ’ বলা যাবে না। কেউ বলছেন, ‘আহলুল হাদীছ’ বলা গেলেও তাদের ‘সংগঠন’ করা যাবে না। অথচ উপরে বর্ণিত হাদীছগুলিতে তাদেরকে একটি ‘দল’ (طَائِفَةٌ) হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং অন্যান্য ‘মুসলিম’ থেকে তাদের ‘হকপন্থী’ হওয়ার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। মূলতঃ এগুলি শয়তানী ধোঁকা মাত্র। যাতে বাতিলপন্থীরা সংগঠিত হয়। কিন্তু হকপন্থীরা বিচ্ছিন্ন থাকে এবং কখনো সংগঠিত শক্তিতে পরিণত হ’তে না পারে। বিচ্ছিন্ন মুমিনগণ যখন নির্দিষ্ট ইসলামী লক্ষ্যে নির্দিষ্ট ইমারতের অধীনে সংগঠিত হবে, তখনই সেটি একটি শক্তিতে পরিণত হবে। যা সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে। আর সেকারণেই বাতিলপন্থীরা সংগঠিত আহলেহাদীছদের ভয় পায়, বিচ্ছিন্ন আহলেহাদীছদের নয়। অতএব হকপন্থীরা সাবধান! তারা ‘ইমারত’ ও ‘বায়‘আত’ নিয়েও কথা তুলছেন। অথচ এগুলি রাসূল (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। বরং ক্বিয়ামত পর্যন্ত ফিরক্বা নাজিয়াহর অন্তর্ভুক্ত খাঁটি মুসলিমগণ সর্বদা উক্ত সুন্নাত অনুসরণ করে চলবেন। মজার কথা হ’ল, বাতিলপন্থীদের নেতৃত্ব কবুল করতে ও তাদের অন্ধ আনুগত্য করতে এইসব লোকদের কোন আপত্তি দেখা যায় না।


[1]. ছহীহ মুসলিম ‘ইমারত’ অধ্যায় ৩৩, অনুচ্ছেদ ৫৩, হা/১৯২০; অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ ঐ, দেউবন্দ ছাপা শরহ নববী ২/১৪৩ পৃঃ; বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৭১ ‘ইল্ম’ অধ্যায় ও হা/৭৩১১-এর ভাষ্য ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়।

[2]. আবুদাউদ হা/২৪৮৪, মিশকাত হা/৩৮১৯।

[3]. মুসলিম হা/১৯২৩; মিশকাত হা/৫৫০৭ ‘ফিৎনা সমূহ’ অধ্যায়, ‘ঈসার অবতরণ’ অনুচ্ছেদ।

[4]. তিরমিযী হা/২১৯২, মিশকাত হা/৬২৮৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০২; আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[5]. তিরমিযী হা/২৬৪১; ছহীহাহ হা/১৩৪৮; মিশকাত হা/১৭১।

[6]. আবুদাঊদ হা/৪৬০৭, তিরমিযী হা/২৬৭৬, ইবনু মাজাহ হা/৪২; মিশকাত হা/১৬৫।