জিহাদ ঘোষণা
শত্রুশক্তির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার অধিকার হ’ল মুসলমানদের সর্বসম্মত আমীরের (নিসা ৪/৫৯)। অন্য কারু নয়। ‘সর্বসম্মত’ বলতে ঐ শাসক যার প্রতি ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সকলে অনুগত থাকে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّى دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلاَّ بِحَقِّ الإِسْلاَمِ ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ ‘আমি লোকদের সাথে যুদ্ধের জন্য আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর তারা ছালাত কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে। যখন তারা এরূপ করবে, তখন আমার পক্ষ হ’তে তাদের জান ও মাল নিরাপদ থাকবে, ইসলামের হক ব্যতীত। আর তাদের (অন্তরের) হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত থাকবে’।[1]
এখানে রাসূল (ছাঃ) আদিষ্ট হয়েছেন, কেননা তিনি ছিলেন উম্মতের নেতা। তিনি মাদানী জীবনে আল্লাহর হুদূদ বা দন্ডবিধিসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষমতা রাখতেন। পরবর্তী সময়ে এই ক্ষমতা খলীফাগণ ও ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকগণ সংরক্ষণ করেন। কোন মুসলিম ব্যক্তি বা দল যে কোন সময়ে যে কারু উপরে উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন না।
যেমন উসামা বিন যায়েদ (রাঃ)-এর প্রসিদ্ধ হাদীছে এসেছে যে, সপ্তম হিজরীর রামাযান মাসে জুহায়না গোত্রের বিরুদ্ধে তিনি একটি ক্ষুদ্র সেনাদলের সাথে প্রেরিত হন। তখন তাঁর বয়স ছিল অনধিক ১৬ বছর। শত্রুপক্ষ পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের এক ব্যক্তি তার সামনে পড়ে যায় ও দ্রুত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে। এটা তার চালাকি ভেবে তিনি তাকে হত্যা করে ফেলেন। পরে এ খবর শুনে রাসূল (ছাঃ) ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বলেন,أَفَلاَ شَقَقْتَ عَنْ قَلْبِهِ حَتَّى تَعْلَمَ أَقَالَهَا أَمْ لاَ؟ وَكَيْفَ تَصْنَعُ بِلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ إِذَا جَاءَتْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ ‘সে সত্যভাবে বলেছে কি-না তা জানার জন্য তুমি কেন তার হৃদয় ফেঁড়ে দেখলে না? ক্বিয়ামতের দিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এসে তোমার সামনে দাঁড়াবে, তখন তুমি কি করবে? একথা তিনি বারবার বলতে থাকেন (কঠিন পরিণতি বুঝানোর জন্য)’।[2] এই ঘটনার পর উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) কসম করেন যে, তিনি কোন মুসলিমের বিরুদ্ধে কখনোই যুদ্ধ করবেন না। সেকারণ তিনি আলী (রাঃ)-এর সময় উটের যুদ্ধে বা ছিফফীন যুদ্ধে যোগদান করেননি। হযরত সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাছ (রাঃ)ও একই নীতির উপর ছিলেন। ইমাম কুরতুবী বলেন,فِيهِ دَلِيلٌ عَلَى تَرَتُّبِ الْأَحْكَامِ عَلَى الْأَسْبَابِ الظَّاهِرَةِ دُونَ الْبَاطِنَةِ এতে দলীল রয়েছে যে, বিধান প্রযোজ্য হবে বাহ্যিক বিষয়ের উপর, অন্তরের বিষয়ের উপর নয়’।[3]
উপরোক্ত হাদীছদ্বয়ে প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ব্যতীত কোন দল বা ব্যক্তি এককভাবে কারু বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদ ঘোঘণা করতে পারে না। আর বাহ্যিক বিষয়ের উপরেই সিদ্ধান্ত হবে, কারু অন্তরের বিষয়ের উপর নয়।[1]. বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/১২, ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[2]. আর-রাহীক্ব ৩৮৩ পৃঃ; মুসলিম হা/৯৬; আবুদাঊদ হা/২৬৪৩; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৪৫০।
[3]. বুখারী হা/৬৮৭২; ফাৎহুল বারী ১২/২০৪।