জিহাদ ও কিতাল

সরকারের আনুগত্যমুক্ত হওয়া

সরকারের সুস্পষ্ট কুফরী প্রমাণিত হলে তার আনুগত্যমুক্ত হওয়া যাবে।[1] তবে সেটা কল্যাণকর হবে কি-না, সে বিষয়ে অবশ্যই দেশের বিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরাম কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিবেন এবং মুসলিম নাগরিকগণ তাদের অনুসরণ করবেন। শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায় কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণ বেশী হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বিদ্রোহ করা যাবে না। বরং ধৈর্যধারণ করতে হবে, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ফায়ছালা নাযিল হয়। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী’ (বাক্বারাহ ২/১০৯, তওবা ৯/২৪)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নেতা তারাই, যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে। তোমরা তাদের জন্য দো‘আ কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দো‘আ করে। আর তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট নেতা তারাই, যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদের ঘৃণা করে। তোমরা তাদের উপর লা‘নত কর, তারাও তোমাদের উপর লা‘নত করে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি সে সময় তাদের আনুগত্যমুক্ত হব না? তিনি বললেন, না। যতক্ষণ না তারা তোমাদের মধ্যে ছালাত কায়েম করে। না যতক্ষণ না তারা তোমাদের মধ্যে ছালাত কায়েম করে। أَلاَ مَنْ وَلِىَ عَلَيْهِ وَالٍ فَرَآهُ يَأْتِى شَيْئًا مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ فَلْيَكْرَهْ مَا يَأْتِى مِنْ مَعْصِيَةِ اللهِ وَلاَ يَنْزِعَنَّ يَدًا مِنْ طَاعَةٍ ‘সাবধান! যখন কাউকে তোমাদের উপর শাসক নিযুক্ত করা হয়, অতঃপর তার মধ্যে আল্লাহর নাফরমানীর কোন কিছু পরিলক্ষিত হয়। তখন তোমরা সেই নাফরমানীর কাজটিকে অপসন্দ কর (অর্থাৎ সেটা করো না)। কিন্তু তার আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ো না’।

একই রাবী হতে অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَإِذَا رَأَيْتُمْ مِنْ وُلَاتِكُمْ شَيْئًا تَكْرَهُونَهُ فَاكْرَهُوا عَمَلَهُ وَلاَ تَنْزِعُوا يَدًا مِنْ طَاعَةٍ ‘যখন তোমরা তোমাদের শাসকদের কাছ থেকে এমন কিছু দেখবে যা তোমরা অপসন্দ কর, তখন তোমরা তার কাজটিকে অপসন্দ কর। কিন্তু আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নিয়ো না’।[2] তিনি বলেন, مَنْ رَأَى مِنْ أَمِيرِهِ شَيْئًا يَكْرَهُهُ فَلْيَصْبِرْ عَلَيْهِ ‘কেউ তার শাসকের নিকট থেকে অপসন্দনীয় কিছু দেখলে সে যেন তাতে ধৈর্যধারণ করে’।[3] তিনি বলেন, أَدُّوا إِلَيْهِمْ حَقَّهُمْ وَسَلُوا اللهَ حَقَّكُمْ এমতাবস্থায় তাদের হক তাদের দাও এবং তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চাও’।[4] فَإِنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُم ‘কেননা তাদের পাপ তাদের উপর এবং তোমাদের পাপ তোমাদের উপর বর্তাবে’।[5]তিনি বলেন, أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ، فَإِنَّ اللهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ ‘তোমরা তাদের হক দিয়ে দাও। কেননা আল্লাহ শাসকদেরকেই জিজ্ঞেস করবেন তাদের শাসন সম্পর্কে’।[6]

উপরের আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, প্রকাশ্য কুফরীতে লিপ্ত সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ক্ষেত্রে দু’টি পথ রয়েছে।-

১- যদি শাসক পরিবর্তনের সহজ পথ থাকে, তাহ’লে সেটা করা যাবে।

২- যদি এর ফলে সমাজে অধিক অশান্তি ও বিশৃংখলা সৃষ্টির আশংকা থাকে, তাহ’লে ছবর করতে হবে ও সকল প্রকার ন্যায়সঙ্গত পন্থায় সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করতে হবে, যতদিন না তার চাইতে উত্তম কোন বিকল্প সামনে আসে। এর দ্বারাই একজন মুমিন আল্লাহর নিকটে দায়মুক্ত হ’তে পারবেন।

কিন্তু যদি তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ না করেন, সরকারকে সুপরামর্শ ও উপদেশ না দেন, বরং অন্যায়ে খুশী হন ও তা মেনে নেন, তাহ’লে তিনি গোনাহগার হবেন ও আল্লাহর নিকটে নিশ্চিতভাবে দায়বদ্ধ থাকবেন। মূলতঃ এটাই হ’ল ‘নাহী ‘আনিল মুনকার’-এর দায়িত্ব পালন। যদি কেউ ঝামেলা ও ঝগড়ার অজুহাত দেখিয়ে একাজ থেকে দূরে থাকেন, তবে তিনি কুরআনী নির্দেশের বিরোধিতা করার দায়ে আল্লাহর নিকটে দায়ী হবেন।

শাসক বা সরকারকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার সাথে সাথে তার কল্যাণের জন্য সর্বদা আল্লাহর নিকটে দো‘আ করতে হবে। কেননা শাসকের জন্য হেদায়াতের দো‘আ করা সর্বোত্তম ইবাদত ও নেকীর কাজ সমূহের অন্তর্ভুক্ত।


[1]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬৬ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[2]. মুসলিম হা/১৮৫৪-৫৫; মিশকাত হা/৩৬৭১ ‘নেতৃত্ব ও বিচার’ অধ্যায়।

[3]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৬৮।

[4]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৭২।

[5]. মুসলিম হা/১৮৪৬, মিশকাত হা/৩৬৭৩।

[6]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৭৫।