মুসলিম উম্মাহর মধ্যে পরস্পরে কাফের গণ্য করার ধারাবাহিক ইতিহাস
উম্মতের মধ্যে প্রথম বিদ‘আতের সূচনা হয় পরস্পরকে ‘কাফির’ বলার মাধ্যমে। ৩৭ হিজরী সনে ছিফফীন যুদ্ধের সময় খারেজীদের মাধ্যমে যার উদ্ভব ঘটে। তারা হযরত আলী, ওছমান, তালহা, যুবায়ের, আবু মূসা আশ‘আরী, আমর ইবনুল ‘আছ ও মু‘আবিয়া (রাঃ) সহ উটের যুদ্ধে, ছিফফীন যুদ্ধে এবং উক্ত যুদ্ধ বন্ধে উভয় পক্ষের শালিশীতে সম্মত ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের ধারণা মতে অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে উত্থান করা সিদ্ধ মনে করে। ফলে খারেজীরা হ’ল উম্মতের প্রথম ভ্রান্ত ফের্কা, যারা কবীরা গোনাহগার মুসলিমকে ‘কাফের’ বলে এবং তাকে হত্যা করা সিদ্ধ বলে। এদের সাথে সাথেই সৃষ্টি হয় আরেকটি চরমপন্থী ভ্রান্ত ফের্কা শী‘আ দল। যারা বলে যে, রাসূল (ছাঃ)-এর পরে মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ, আবু যর গেফারী ও সালমান ফারেসী (রাঃ) ব্যতীত সকল ছাহাবী ধর্মত্যাগী ‘মুরতাদ’।[1] তাদের ধারণা মতে হযরত আবুবকর, ওমর, ওছমান এবং সকল মুহাজির ও আনছার ছাহাবী ও তৎপরবর্তী যুগে তাদের অনুসারীবৃন্দ যারা তাদের মতের বিরোধী, সবাই কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তাদের নিকটে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকদের কুফরী ইহূদী-নাছারাদের কুফরীর চাইতে নিকৃষ্ট। কেননা তারা হ’ল আসল কাফের এবং এরা হ’ল ধর্মত্যাগী কাফের। আর জন্মগত কাফিরের চাইতে ইসলামত্যাগী ‘মুরতাদ’ কাফির অধিক ঘৃণিত। এদের পরপরই একে একে ক্বাদারিয়া, জাবরিয়া, মুরজিয়া, মু‘তাযিলা প্রভৃতি ভ্রান্ত ফের্কাসমূহের উদ্ভব হ’তে থাকে। এরা সবাই একে অপরকে কাফির বলতে থাকে। এভাবেই শান্তিপ্রিয় মুসলিম উম্মাহ একটি পরস্পরে বিদ্বেষী উম্মতে পরিণত হয়। আল্লাহ রহম করেন আহলেহাদীছগণের উপরে, যারা রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সকল প্রকার বাড়াবাড়ি হ’তে মুক্ত হয়ে মধ্যপন্থী থাকেন এবং সর্বদা ছিরাতে মুস্তাক্বীমের উপর দৃঢ় থাকেন। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তারা এভাবেই থাকবেন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে। যদিও সকল যুগে বিদ‘আতীরা তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করবে। যেমন এ যুগেও করছে।
[1]. ইবরাহীম আর-রুহাইলী, আত-তাকফীর ওয়া যাওয়াবিতুহু (কায়রো : দার আহমাদ, ২য় সংস্করণ ১৪২৯/২০০৮) পৃঃ ৩৫।