‘প্রকাশ্য কুফরী’ (كُفْرٌ بَوَاحٌ) -এর ব্যাখ্যা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সুস্পষ্ট কুফরী না দেখা পর্যন্ত শাসকের আনুগত্যমুক্ত হয়ো না। সেটা কিভাবে?
(إِلاَّ أَنْ تَرَوْا) অর্থ, তোমরা যাচাই করে দেখবে। কেবল ধারণা ও প্রচারের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে না। (كُفْرًا) অর্থ, কেবল ফাসেকী বা কোন কবীরা গোনাহ যথেষ্ট নয়। বরং ইসলামকে পুরোপুরি অস্বীকার করা বুঝাবে। (بَوَاحًا) অর্থ, প্রকাশ্য। যাতে কোনরূপ অস্পষ্টতা বা গোপনীয়তা থাকে না। (عِنْدَكُمْ) অর্থ, তোমাদের জ্ঞানীদের নিকট। (مِنَ اللهِ فِيهِ بُرْهَانٌ) অর্থ, তার কুফরীর ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত কুরআন ও সুন্নাহর মযবুত দলীল থাকতে হবে। কোন দুর্বল প্রমাণ বা সন্দেহের ভিত্তিতে নয় কিংবা কোন দল বা ব্যক্তির একক সিদ্ধান্তে নয়। বরং কাউকে কাফের ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেবার এখতিয়ার থাকবে রাষ্ট্রীয় ইসলামী আদালতের শরী‘আত অভিজ্ঞ বিচারকমন্ডলীর অথবা দেশের হাদীছপন্থী বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে। অন্য কারু সিদ্ধান্তে নয়। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَيُّمَا رَجُلٍ قَالَ لأَخِيهِ يَا كَافِرُ! فَقَدْ بَاءَ بِهَا أَحَدُهُمَا- ‘যদি কেউ তার ভাইকে বলে হে কাফের! তাহলে সেটা তাদের যেকোন একজনের উপর বর্তাবে’।[1]
এর দ্বারা ছোট কুফরী বুঝানো হয়েছে। কেননা কেউ কাউকে কাফের বললেই সে কাফের হয়ে যায় না। বরং কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলীলের ভিত্তিতে যাচাই সাপেক্ষে কুফরী সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হলে এবং বারবার বুঝানো সত্ত্বেও স্বীয় অবিশ্বাসে অটল থাকলে তাকে ‘প্রকাশ্য কুফরী’ হিসাবে গণ্য করা যাবে। কোন মুসলিম সরকারের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।
তবে কাফের সাব্যস্ত হ’লেই উক্ত শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরয, তা নয়। কারণ যুদ্ধ করার বিষয়টি শর্তসাপেক্ষ। আর তা হ’ল বৈধ কর্তৃপক্ষ, অনুকূল পরিবেশ এবং যথার্থ শক্তি ও পর্যাপ্ত সামর্থ্য থাকা। আল্লাহ বলেন, فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)। তিনি বলেন, لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। অন্যথায় তা আত্মহননের শামিল হবে। যা করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। যেমন তিনি বলেন, وَلاَ تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)।