যে অহংকার শোভনীয়
(১) যখন মানুষ মিথ্যা ছেড়ে সত্যের অনুসারী হয়, তখন সে তার জন্য অহংকার করতে পারে। যেমন কুফর ছেড়ে ইসলাম গ্রহণ করা। (২) যদি কেউ জাল ও যঈফ হাদীছ ছেড়ে ছহীহ হাদীছের উপর আমল শুরু করে, তবে তার জন্য সে গর্ব করতে পারে। (৩) যখন কোন ব্যক্তি বাতিল ছেড়ে ফিরক্বা নাজিয়াহর অন্তর্ভুক্ত হয়, তখন সে ঐ জামা‘আতের উপর গর্ব করতে পারে। যেমন হযরত ছওবান (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,
لاَ تَزَالُ طَائِـفَةٌ مِنْ أُمَّتِى ظَاهِرِيْنَ عَلَى الْحَقِّ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ حَتَّى يَأْتِىَ أَمْرُ اللهِ وَ هُمْ كَذَالِكَ -
‘চিরদিন আমার উম্মতের মধ্যে একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে। পরিত্যাগকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এমতাবস্থায় ক্বিয়ামত এসে যাবে, অথচ তারা ঐভাবে থাকবে’।[1] আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ হকপন্থী জামা‘আত হ’ল ‘আহলুল হাদীছ’।[2] তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যস্থলে থাকতে চায়, সে যেন জামা‘আতবদ্ধ জীবনকে অপরিহার্য করে নেয়’।[3] (৪) হকপন্থী দলের নামে অহংকার। যেমন হোনায়েন-এর যুদ্ধের দিন বিপর্যয়কর অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হুকুমে উচ্চ কণ্ঠের অধিকারী আববাস (রাঃ) হোদায়বিয়ার বৃক্ষতলে মৃত্যুর উপরে বায়‘আত গ্রহণকারী ছাহাবীদের ডেকে বলেন, أَيْنَ أَصْحَابُ السَّمُرَةِ ‘সামুরা বৃক্ষের সাথীরা কোথায়? يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ ‘হে আনছারগণ! একইভাবে বাতিলের অন্ধকারে আহলেহাদীছ-এর পরিচয় নিঃসন্দেহে সত্যের অহংকার। যা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। (৫) উচ্চ বংশের অহংকার। যেমন একই যুদ্ধে একই অবস্থার খচ্চরের পিঠ থেকে নেমে তেজস্বী কণ্ঠে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলে ওঠেন, أَنَا النَّبِىُّ لاَ كَذِبْ + أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ ‘আমি নবী, মিথ্যা নই। আমি আব্দুল মুত্ত্বালিবের পুত্র’।[4]
খ্রিষ্টানদের সাথে সন্ধির জন্য তাদের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী সেখানে খলীফাকে উপস্থিত হওয়ার জন্য বায়তুল মুক্বাদ্দাস সফরকালে খলীফা ওমর (রাঃ) যখন একাকী খালি পায়ে উটের লাগাম ধরে হাঁটতে শুরু করেন, তখন সাথী আবু ওবায়দাহ (রাঃ) এতে আপত্তি করেন। জবাবে ওমর (রাঃ) বলেন, إِنَّا كُنَّا أَذَلَّ قَوْمٍ فَأَعَزَّنَا اللهُ بِالْإِسْلاَمِ فَمَهْمَا نَطْلُبُ الْعِزَّةَ بِغَيْرِ مَا أَعَزَّنَا اللهُ بِهِ أَذَلَّنَا اللهُ ‘আমরা ছিলাম নিকৃষ্ট জাতি। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন। অতএব যে কারণে আল্লাহ আমাদের মর্যাদা দান করেছেন, তা ছেড়ে অন্য কিছুর মাধ্যমে সম্মান তালাশ করলে আল্লাহ আমাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, إِناَّ قَوْمٌ أَعَزَّنَا اللهُ بِالْإِسْلاَمِ ، فَلَنْ نَبْتَغِيْ الْعِزَّ بِغَيْرِهِ ‘আমরা সেই জাতি যাদেরকে আল্লাহ ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন। এর বাইরে অন্য কিছুর মাধ্যমে আমরা সম্মান চাই না’।[5][1]. ছহীহ মুসলিম ‘ইমারত’ অধ্যায়-৩৩, অনুচ্ছেদ-৫৩, হা/১৯২০; অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ ঐ, দেউবন্দ ছাপা শরহ নববী ২/১৪৩ পৃঃ; বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৭১ ‘ইল্ম’ অধ্যায় ও হা/৭৩১১-এর ভাষ্য ‘কিতাব ও সুন্নাহকে অাঁকড়ে ধরা’ অধ্যায়; আলবানী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০-এর ব্যাখ্যা।
[2]. তিরমিযী হা/২১৯২, ছহীহুল জামে‘ হা/৭০২; মিশকাত হা/৬২৮৩।
[3]. তিরমিযী হা/২৪৬১।
[4]. মুসলিম হা/১৭৭৬; বুখারী হা/২৮৬৪; মিশকাত হা/৫৮৮৮, ৫৮৮৯।
[5]. হাকেম ১/৬১-৬২, হা/২০৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫১; ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, শিরোনাম: ‘ওমর ইবনুল খাত্ত্বাবের হাতে বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়’ ৭/৫৬।