ফিরক্বা নাজিয়াহর পরিচয় : [1]
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِيْ مَا أَتَى عَلَى بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِيْ أُمَّتِيْ مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوْا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ- وَفِيْ رِوَايَةِ أَحْمَدَ وَأَبِيْ دَاؤدَ عَنْ مُعَاوِيَةَ: ثِنْتَانِ وَسَبْعُوْنَ فِي النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَهِيَ الْجَمَاعَةُ، وَإِنَّهُ سَيَخْرُجُ فِيْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ تَتَجَارَى بِهِمْ تِلْكَ الْأَهْوَاءُ كَمَا يَتَجَارَى الْكَلْبُ بِصَاحِبِهِ لاَ يَبْقَى مِنْهُ عِرْقٌ وَلاَ مَفْصِلٌ إِلاَّ دَخَلَهُ-
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের উপরে তেমন অবস্থা আসবে, যেমন এসেছিল বনু ইস্রাঈলের উপরে এক জোড়া জুতার পরস্পরে সমান হওয়ার ন্যায়। এমনকি তাদের মধ্যে যদি কেউ এমনও থাকে, যে তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে যেনা করেছে, তাহ’লেও আমার উম্মতের মধ্যে তেমন লোকও পাওয়া যাবে যে এমন কাজ করবে। আর বনু ইস্রাঈল ৭২ ফের্কায় বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফের্কায় বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। তারা বললেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার উপরে টিকে থাকবে’। -
অতঃপর আহমাদ ও আবুদাঊদ হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, ৭২ দল জাহান্নামী হবে ও একটি দল জান্নাতী হবে। আর তারা হ’ল, আল-জামা‘আত। আর আমার উম্মতের মধ্যে সত্বর এমন একদল লোক বের হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তিপরায়ণতা এমনভাবে প্রবহমাণ হবে, যেভাবে কুকুরের বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির সারা দেহে সঞ্চারিত হয়। কোন একটি শিরা বা জোড়া বাকী থাকে না যেখানে উক্ত বিষ প্রবেশ করে না।[2]
সনদ : আলবানী ‘হাসান’ বলেছেন। তিরমিযী ‘হাসান’ বলেছেন বিভিন্ন ‘শাওয়াহেদ’-এর কারণে। হাকেম বিভিন্ন বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন, هذه أسانيد تقام بها الحجة في تصحيح هذا الحديث ‘এই সকল সনদ হাদীছটি ছহীহ হওয়ার পক্ষে দলীল হিসাবে দন্ডায়মান’।[3] ছাহেবে মির‘আত উক্ত মর্মের ১০টি হাদীছ উল্লেখ করেছেন ‘শাওয়াহেদ’ হিসাবে। অতঃপর তিনি বলেন, এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ সমূহের কোনটি ‘ছহীহ’ কোনটি ‘হাসান’ ও কোনটি ‘যঈফ’। অতএব افةراق الأمة -এর হাদীছ নিঃসন্দেহে ‘ছহীহ’ (صحيح من غير شك)।[4]
সারমর্ম : মুসলিম উম্মাহ অসংখ্য দলে বিভক্ত হবে। তন্মধ্যে একটি মাত্র দল শুরু থেকেই জান্নাতী হবে।
হাদীছের ব্যাখ্যা : হাদীছটি ‘ইফতিরাকুল উম্মাহ’ (افةراق الأمة) নামে প্রসিদ্ধ। এর মধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী লুকিয়ে রয়েছে। যাতে ভবিষ্যতে মুসলিম উম্মাহর আক্বীদাগত বিভক্তি ও সামাজিক ভাঙনচিত্র যেমন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তেমনি তা থেকে নিষ্কৃতির পথও বাৎলে দেওয়া হয়েছে। এটাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, যত দলই সৃষ্টি হউক না কেন, একটি দলই মাত্র শুরুতে জান্নাতী হবে, যারা রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবায়ে কেরামের আক্বীদা ও আমলের যথার্থ অনুসারী হবে।
(لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِيْ مَا أَتَى عَلَى بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ) ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মতের উপরে তেমন অবস্থা আসবে, যেমন অবস্থা এসেছিল বনু ইস্রাঈলের উপরে এক জোড়া জুতার পরস্পরে সমান হওয়ার ন্যায়’।
لَيَأْتِيَنَّ ‘অবশ্যই আসবে’ অর্থ ‘আপতিত হবে’। এখানে أَتَي ক্রিয়াটির পরে عَلَى অব্যয়টি এসে তাকে ‘সকর্মক’ করেছে। যার সঠিক তাৎপর্য দাঁড়াবে الغلبة المؤدة إلي الهلاك ‘ঐরূপ বিজয় যা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়’। যেমন আল্লাহ বলেন, وَفِيْ عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ، مَا تَذَرُ مِنْ شَيْءٍ أَتَتْ عَلَيْهِ إِلاَّ جَعَلَتْهُ كَالرَّمِيْمِ- ‘আর নিদর্শন রয়েছে ‘আদ-এর কাহিনীতে, যখন আমরা তাদের উপরে প্রেরণ করেছিলাম অশুভ বায়ু’। ‘এই বায়ু যার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল, তাকেই সে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল’ (যারিয়াত ৫১/৪১-৪২)। একই ক্রিয়াপদ অত্র হাদীছে ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বনু ইস্রাঈলের উপরে দলাদলির যে গযব আপতিত হয়েছিল, একই ধরনের গযব আমার উম্মতের উপরে আপতিত হবে। ‘এক জোড়া জুতার পরস্পরে সমান হওয়ার ন্যায়’ বাক্যটি আনা হয়েছে দুই উম্মতের অবস্থার সামঞ্জস্য বুঝাবার জন্য।
[1]. নিবন্ধটি মাসিক ‘আত-তাহরীক’ (রাজশাহী) ১৬ বর্ষ ১ম সংখ্যা অক্টোবর’১২-তে ‘দরসে হাদীছ’ কলামে প্রকাশিত হয়। ২য় সংস্করণে কিছুটা সংযোজনসহ প্রকাশিত হ’ল।
[2]. তিরমিযী হা/২৬৪১, ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২; আবুদাঊদ হা/৪৫৯৬-৯৭; আহমাদ হা/১৬৯৭৯; মিশকাত হা/১৭১-১৭২; আলবানী, ছহীহাহ হা/১৩৪৮, ২০৩, ১৪৯২।
[3]. হাকেম ১/১২৮।
[4]. মির‘আত ১/২৭৬-৭৭।