কুফরী বিধান
উপরে বর্ণিত সূরা মায়েদাহ ৫০ আয়াতে ‘জাহেলিয়াতের বিধান’ অর্থ কুফরী বিধান। এই কুফরী দু’ধরনের : বিশ্বাসগত কুফরী (كُفْرٌ اِعْتِقَادِىٌّ) ও কর্মগত কুফরী (كُفْرٌ عَمَلِىٌّ)।
(ক) বিশ্বাসগত কুফরী (كُفْرٌ اِعْتِقَادِىٌّ) : যেসব শাসক বা শাসক দল বৈষয়িক জীবনে আল্লাহর বিধান সমূহ অস্বীকার করেন অথবা সেগুলিকে ‘হক’ জানলেও পরিস্থিতি বা যুগের দোহাই পেড়ে নিজেদের রচিত বিধানকে উত্তম বা সমান বা সিদ্ধ মনে করেন, তারা বিশ্বাসগত কুফরীর অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ বলে গণ্য হবেন। অতএব তারা মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিলেই কিংবা ছালাত-ছিয়াম পালন করলেই মুসলিম গণ্য হবেন না। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
وَمَنْ دَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ، فَهُوَ مِنْ جُثَى جَهَنَّمَ، وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أَنَّهُ مُسْلِمٌ، رواه احمد والترمذىـ.
‘যে ব্যক্তি জাহেলিয়াতের দিকে মানুষকে আহবান করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামীদের দলভুক্ত। যদিও সে ছিয়াম পালন করে, ছালাত আদায় করে এবং ধারণা করে যে সে একজন মুসলিম’।[1]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যদি কেবল কা‘বাগৃহে বসে দিনরাত ছালাত-ছিয়ামে রত থাকতেন এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা বৈষয়িক ব্যাপারে কোন কথা না বলতেন, তাহ’লে কাফির ও মুশরিক সমাজ তাঁর বিরোধিতা করত না বা ২৩ বছরের নবুঅতী জীবনে তাঁকে এত কষ্ট সহ্য করতে হ’ত না। অতএব ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রস্তাব অনুযায়ী মসজিদের মধ্যে আল্লাহর আনুগত্য ও পার্লামেন্টে গিয়ে শয়তানের আনুগত্য, এ ধরনের দ্বিমুখী আনুগত্যের দাবী তাওহীদে ইবাদতের সরাসরি বিরোধী। এই আপোষমুখী ফর্মুলার বিরুদ্ধে আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيْدُوْنَ أَن يُفَرِّقُوْا بَيْنَ اللهِ وَرُسُلِهِ وَيقُوْلُوْنَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيْدُوْنَ أَن يَتَّخِذُوْا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيْلاً- أُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِيْنَ عَذَاباً مُّهِيْنًا- (النساء ১৫০-১৫১)-
‘যেসব লোকেরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে এবং বলে যে, আমরা কিছু অংশের উপরে ঈমান আনলাম ও কিছু অংশে কুফরী করলাম। এর দ্বারা তারা দু’য়ের মাঝে একটা (আপোষের) রাস্তা বের করতে চায়’। ‘এরাই হ’ল প্রকৃত ‘কাফির’। আর আমরা কাফিরদের জন্য নিকৃষ্টতম শাস্তি নির্ধারিত করে রেখেছি’ (নিসা ৪/১৫০-১৫১)।
অতএব উপরে বর্ণিত আক্বীদা ও বিশ্বাস যদি কোন নেতা বা দলের থাকে, তবে সেই নেতা বা দল ইসলাম থেকে খারিজ গণ্য হবে। তাদের দলভুক্ত হওয়া কোন মুসলমানের জন্য সিদ্ধ নয়।
(খ) কর্মগত কুফরী (كُفْرٌ عَمَلِىٌّ) : যদি কোন শাসক বা শাসক দল আল্লাহর বিধানকে সর্বোচ্চ, সর্বাঙ্গ সুন্দর ও সর্বযুগীয় এবং মুসলিম-অমুসলিম সকল মানুষের জন্য কল্যাণবিধান বলে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে এবং মুখে তা স্বীকার করে ও তা প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা চালায়, কিন্তু বাধ্যগত কারণে আল্লাহর কিছু হুকুম বাস্তবায়নে অক্ষম থাকে, তাকে ‘কর্মগত কুফরী’ বা কুফরে ‘আমলী বলে। তারা ইসলাম বিরোধী কোন বিধান জারি করলে তাদের উক্ত হুকুম মান্য করা সিদ্ধ হবে না। বরং তার প্রতিবাদ করতে হবে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে ও তাকে ঘৃণা করতে হবে। যদিও বিদ্রোহ করা যাবে না।[2]
উপরে বর্ণিত দুই অবস্থাতেই ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ একটি নিরেট কুফরী মতবাদ। ইসলামের সাথে এর আপোষের কোন সুযোগ নেই।[1]. আহমাদ হা/১৭২০৯; তিরমিযী হা/২৮৬৩; মিশকাত হা/৩৬৯৪, সনদ ছহীহ ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়।
[2]. মুসলিম হা/১৮৫৪; মিশকাত হা/৩৬৭১, ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়।