দুনিয়ার সকল মুসলমান কি আহলেহাদীছ? (هَلِ الْمُسْلِمُ كُلُّهُمْ أَهْلُ الْحَدِيْثِ؟)
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে অস্বীকার কিংবা সম্পূর্ণ অমান্য করে কেউ মুসলমান হ’তে পারেন না। তাই এক হিসাবে দুনিয়ার সকল মুসলমানই আহলেহাদীছ। কিন্তু একটু সতর্কতার সাথে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মুসলমানদের মধ্যে এযাবৎ যতগুলো দল, মাযহাব ও তরীক্বার সৃষ্টি হয়েছে এবং আজও হচ্ছে, তার সবগুলোই কোন না কোন ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তাধারাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সেজন্য প্রত্যেক মাযহাবের পৃথক পৃথক ‘ফিক্বহ’ গ্রন্থ রচিত হয়েছে। প্রত্যেক মাযহাবের অনুসারীরা স্ব স্ব ফিক্বহের কিতাবসমূহ হ’তে ফৎওয়া সংগ্রহ করে থাকেন এবং সেগুলোকেই কার্যত অভ্রান্ত শরী‘আত ভেবে মান্য করে থাকেন। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে তার স্বপক্ষে বা বিপক্ষে কোন নির্দেশ আছে কি-না, তা খুঁজে দেখার অবকাশ তাদের থাকে না। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের মনে এ অন্ধ বিশ্বাসই বদ্ধমূল থাকে যে, স্বীয় তরীক্বা বা মাযহাবী ফিক্বহের বরখেলাফ পবিত্র কুরআন বা ছহীহ হাদীছে কোন কথাই থাকতে পারে না।
সেটাও মন্দের ভাল ছিল যদি না অবস্থা আরও নিম্ন পর্যায়ে নেমে যেত। বর্তমানে কোন কোন আলেম ও পীর যেকোন কারণেই হোক মাঝে-মধ্যে এমনামন অভিনব ফৎওয়া জারি করে থাকেন, যার সাথে কুরআন-হাদীছ তো দূরের কথা, নিজ মাযহাবী ফিক্বহের কিতাবেরও কোন সম্পর্ক নেই। যেমন আমাদের সমাজে প্রচলিত পীরপূজা, কবরপূজা, মীলাদ-ক্বিয়াম, কুলখানী, চেহলাম, হায়াতুন্নবী, আল্লাহ নিরাকার, তিনি সর্বত্র বিরাজমান ইত্যাদি আক্বীদা ও আমলসমূহের পিছনে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) কিংবা তাঁর মাযহাবের শ্রেষ্ট কিতাবসমূহে কোনরূপ সমর্থন নেই। অথচ সরলবুদ্ধি জনসাধারণ অন্ধ বিশ্বাসে তাদের আলেমদের তাবেদারী করতে গিয়ে এগুলিকেই প্রকৃত ইসলামী অনুষ্ঠান বলে ধারণা করে। এভাবে তারা বিভিন্ন সময় নানাবিধ শিরক ও বিদ‘আতের শিকার হয়ে পড়ে। যার পরিণতি জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ ঐ ব্যক্তির সম্মুখে যদি কোন নিরপেক্ষ হক্বপন্থী আলেম রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন ছহীহ হাদীছ পেশ করে তার ভুল ধরিয়ে দিতে চান, তাহ’লে বেচারা ভীষণ ক্রোধে ফেটে পড়ে এবং শেষ অস্ত্র হিসাবে নিজ বাপ-দাদা হ’তে শুরু করে বিগত যুগের ইমাম ও পীর-আউলিয়ার নাম নিয়ে যুক্তি দেখিয়ে বলে ‘তাঁরা কি বুঝতেন না?’ যদিও ঐ সকল বিগত ব্যক্তিদের তাক্বওয়া-পরহেযগারী ও কুরআন-হাদীছের পাবন্দী সম্পর্কে তার স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। অথচ ঐ ব্যক্তি একবারও ভাবে না যে, দ্বীন সম্পূর্ণরূপে ‘অহিয়ে এলাহীর’ উপরে নির্ভরশীল। এখানে কোন ব্যক্তির নিজস্ব রায় বা খেয়াল-খুশীর কোন অবকাশ নেই।
বলা বাহুল্য উপরোক্ত অজুহাতই ছিল সকল যুগের গোঁড়া সংস্কারবাদীদের মোক্ষম যুক্তি- যা যুগে যুগে সকল নবীকেই শুনানো হয়েছে। এই অন্ধ কুসংস্কারের বিরোধিতা করার কারণেই সমাজের বুকে জেঁকে বসা ক্বায়েমী স্বার্থবাদীরা নবীদেরকে অকথ্য নির্যাতন করেছে, প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডে জীবন্ত নিক্ষেপ করেছে, সর্বস্বান্ত অবস্থায় দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। আজও তারা শেষনবীর সনিষ্ঠ অনুসারীদের উপরে একইভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।