ঐক্যের ভিত্তি ও সত্য-মিথ্যা ঐক্যের প্রতিক্রিয়া
ঐক্যের ভিত্তি হ’ল বিনয় ও সহনশীলতা। যেটা সাধারণত: হকপন্থী সমমনাদের মধ্যে হয়ে থাকে এবং যার দ্বারা ‘হক’ শক্তিশালী হয়। কিন্তু আজকাল সে স্থান দখল করেছে কূটনীতি ও চাটুকারিতা। ফলে ঐক্য কেবল শ্রুতিমধুর একটি শব্দে পরিণত হয়েছে। যার সত্যিকারের কোন বাস্তবতা নেই। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যা ঐক্যের প্রতিক্রিয়া এভাবে হয়ে থাকে যে, হকপন্থী ব্যক্তি বা দল বাতিলপন্থী ব্যক্তি বা দলের নিকটে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। এমনকি তারা তার মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে বাতিলপন্থীরা হকপন্থীদের মাঝে বিলীন হয় না। এর কারণ হ’ল এই যে, হক সর্বদা প্রবৃত্তির পরিপন্থী, আর বাতিল সর্বদা প্রবৃত্তির অনুগামী। ফলে ‘কিছু ছাড় ও কিছু গ্রহণ কর’ এই নীতির ভিত্তিতে যখন উভয়ের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন হকপন্থী তার হক থেকে কিছু ছাড় দিয়ে হক-এর ক্ষতি করে। কিন্তু বাতিলপন্থী তার বাতিল থেকে কিছু ছাড় দিলেও তার কোন ক্ষতি হয় না। বরং বাস্তবে এটাই দেখা যায় যে, হকপন্থীকেই কেবল ছাড় দিতে হয়, বাতিলপন্থীকে নয়। কারণ নফসের পূজারীদের সংখ্যাধিক্য থাকার কারণে তারাই সর্বদা বিজয়ী হয়।
অতএব ‘হক’-কে অক্ষুণ্ণ রেখে এবং হক-এর বিজয়ের স্বার্থেই কেবল সাময়িক ঐক্যজোট সম্ভব হ’তে পারে। যদিও তার স্থায়ীত্ব হয় একেবারেই কম। যেমন ‘মদীনার সনদ’ রচনা সত্ত্বেও ইহুদী-নাছারাদের সাথে গঠিত রাসূলের ঐক্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে এর দ্বারা তিনি সাময়িকভাবে উপকৃত হয়েছিলেন। অতএব বাতিলপন্থীদের সাথে কেবল বাহ্যিক সম্পর্ক রাখা যাবে, আন্তরিক সম্পর্ক কখনোই নয়।
একজন ‘ইনসানে কামেল’ দল-মত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলবেন এবং সর্বদা সবাইকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিবেন। তিনি সবার সাথে থাকবেন, কিন্তু চলবেন নিজস্ব পথে। পৃথিবী ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বিশ্বমানবতার মধ্যে ক্রমেই শুরুর ন্যায় এক জাতিতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। তাই আল্লাহর পথে দাওয়াত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। পোষা পাখি মনিবের ডাক পেলে যেমন দৌড়ে আসে, জান্নাত থেকে নিক্ষিপ্ত বনু আদম তেমনি জান্নাতের পথের সন্ধান পেলে আবারও ছুটে আসবে ইসলামের দিকে, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথে, আল্লাহর প্রেরিত অহি-র বিধানের দিকে। ‘ইনসানে কামেল’-কে সর্বদা সে পথেরই একজন ‘দাঈ’ বা আহবানকারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সত্যের পথের পথিককে সর্বদা একথা মনে রাখতে হবে যে, হাক্কুন নাফ্স, হাক্কুল ইবাদ বা হাক্কুল্লাহ যেটাই আদায় করি না কেন, সর্বদা লক্ষ্য থাকতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। উদ্দেশ্য থাকবে দ্বীন। পদ্ধতি হবে সুন্নাতে রাসূল ও সুন্নাতে খুলাফায়ে রাশেদীন। এই মূল সত্য থেকে বিচ্যুত হ’লেই শয়তান আমাকে ধরে ফেলবে এবং জাহান্নামের পথে ধাবিত করবে। অতএব যেকোন কষ্ট ও নির্যাতন এমনকি মৃত্যুকেও হাসিমুখে বরণ করে নিতে হবে। কিন্তু কোন অবস্থায় দ্বীনকে হাতছাড়া করা যাবে না। নিজের চিন্তাজগতকে সর্বদা আখেরাতমুখী করে রাখতে হবে। দুষ্টু ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরে রাখার ন্যায় শয়তানের দিকে প্রলুব্ধ মনকে জোর করে ধরে আখেরাতমুখী করতে হবে। সর্বদা সমমনা তাক্বওয়াশীল ব্যক্তিদের সাথে থাকতে হবে ও দুনিয়াদারদের থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। যদিও বাহ্যিক সদ্ভাব সবার সাথেই রাখতে হবে।