ইনসানে কামেল

সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের গুরুত্ব কতটুকু?

জবাব : দু’টি বৈধ বিষয়ের মধ্যে কোনটা অগ্রাধিকার পাবে, সেটা যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত অগ্রগণ্য। যদিও তা অনেক সময় ভুলও হ’তে পারে। কিন্তু অবৈধ বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের কোন মূল্য নেই। আল্লাহ কৃত হালাল ও হারামের ক্ষেত্রে কারু মতামত গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। সেটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই কেবল সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। বর্তমান বিশ্বে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় মূলতঃ নামসর্বস্ব হয়ে গেছে। এমনকি জাতিসংঘের মত বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঐক্যপ্রতিষ্ঠানেও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে পদদলিত করে ‘ভেটো’ ক্ষমতার অধিকারী ৫টি রাষ্ট্র বিশ্বের প্রায় দু’শোটি সদস্য রাষ্ট্রের উপরে ছড়ি ঘুরাচ্ছে। বরং বলা চলে যে, এক আমেরিকাই সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে ছলে-বলে-কৌশলে ও তার পাশব শক্তির জোরে। গণতন্ত্রের নামে গঠিত জাতীয় সংসদে দলনেতার ইচ্ছা-অনিচ্ছার বাইরে  উক্ত দলের কোন সদস্যের নিজস্ব মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। ফলে সেখানে গিয়ে নেতা বা নেত্রীর সমর্থনে টেবিলে চাপড়ানোই তাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

ইসলামে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত কোন আবশ্যিক বিষয় নয়, যদি না তা ইসলামী বিধানের অনুকূলে হয়। যখন কোন সংগঠনে দুনিয়াদারদের সংখ্যাধিক্য হবে কিংবা নেতৃত্ব দুনিয়া পূজারী হবে, তখন সেই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে না। আল্লাহ বলেন, ’হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যসেবীদের সঙ্গে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)। হকপন্থী বাতিলপন্থী জগাখিচুড়ী সংগঠনের দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন, ‘(হে রাসূল!) আপনি ওদেরকে সংঘবদ্ধ ভেবেছেন। অথচ ওদের অন্তরগুলো বিভক্ত’ (হাশর ৫৯/১৪)। এমতাবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে তাঁর উপরে ভরসা করে একাই কাজ করে যেতে হবে এবং এতে আল্লাহর অনুগ্রহে দ্বীনদারগণের অন্তর নিশ্চয়ই সেদিকে ধাবিত হবে। ফলে দ্বীনদারগণের জামা‘আত বড় ও শক্তিশালী হবে। দুনিয়াদারদের কেবল জৌলুস থাকবে ও নাম থাকবে। কিন্তু সেখান থেকে বরকত উঠে যাবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আবির্ভাবের পূর্বে মক্কার ‘হানীফ’ ও মদীনার ইহুদী-নাছারাদের দল বড় ও শক্তিশালী ছিল। তাদের মধ্যে দ্বীনের বড়াই ছিল, কিন্তু দ্বীন ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রকৃত দ্বীনের দিকে একাই মানুষকে আহবান জানালেন। ফলে দ্বীনদারগণের অন্তর তাঁর দিকে ধাবিত হ’ল। বড় দলের নেতা চাচা আবু জাহ্ল গোত্রনেতা আবু তালেব-এর নিকট তাঁর ভাতিজা মুহাম্মাদ সম্পর্কে অভিযোগ হিসাবে বললেন, إِنَّهُ قَدْ فَرَّقَ جَمَاعَةَ قَوْمِكَ ‘সে আপনার কওমকে বিভক্ত করেছে’।[1] অতএব শুরু হ’ল অত্যাচার-নির্যাতন ও বিতাড়নের পালা। কিন্তু এতে বাধাপ্রাপ্ত স্রোতের গতি আরো বাড়লো। অবশেষে দুর্বল দ্বীনদারগণের সংগঠনই বিশ্বজয়ী শক্তিতে পরিণত হ’ল।


[1] সীরাতে ইবনে হিশাম (মিসরী ছাপা ২য় সংস্করণ ১৩৭৫/১৯৫৫) ১/২৬৭