ইনসানে কামেল
প্রত্যেক মানুষ তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত স্বভাবধর্ম তথা ফিৎরাতের উপরে জন্মগ্রহণ করে। তার মধ্যে সর্বদা তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যের প্রবণতা মওজূদ থাকে। কিন্তু শয়তানী প্ররোচনায় সে প্রায়শ: বিপথে যায় এবং আল্লাহকে ভুলে শয়তানের গোলাম বনে যায়। আবার কখনো সে শয়তানের গোলামী ছেড়ে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে আসে। এভাবে পৃথিবীর মানুষ মুমিন ও কাফির দু’দলে বিভক্ত হয়ে যায়। কাফির-ফাসিকগণ শয়তানের তাবেদারী করে ও মুমিন-মুসলিমগণ আল্লাহর দাসত্ব করে। শয়তানের গোলামেরা পৃথিবীকে অশান্তির অগ্নিকুন্ড বানায়। আর আল্লাহর গোলামেরা সমাজকে শান্তির কুঞ্জে পরিণত করে। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে দেখা দেয় সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী চিত্র। ফাসিক-মুনাফিকরা হয় দুনিয়া পূজারী আর মুমিন-মুসলিমরা হন আখেরাতের পিয়াসী। কাফির-মুনাফিকরা দুনিয়াকে লুটে-পুটে খায়। আর মুমিন মুসলিমরা দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে করে। কাফির-ফাসিকরা প্রবৃত্তিরূপী শয়তানের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পক্ষান্তরে মুমিন পরিপূর্ণ রূপে আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণ করে। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, অহং-অহমিকা সবকিছুকে সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হুকুমের সামনে সমর্পণ করে দেয়। তার পশুপ্রবৃত্তি পরাজিত হয়। মানবতা পূর্ণতার শিখরে উন্নীত হয়। এভাবে ‘ইসলাম’ মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়। শয়তানের দাসত্ব ছেড়ে সে আল্লাহর গোলামে পরিণত হয়। অতঃপর ক্রমে ক্রমে সে ‘ইনসানে কামেল’ বা পূর্ণ মানুষে পরিণত হয়। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ- فَإِن زَلَلْتُمْ مِّن بَعْدِ مَا جَاءتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ فَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ-
অনুবাদ: ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। তোমাদের নিকটে স্পষ্ট নির্দেশাবলী এসে যাওয়ার পরেও যদি তোমরা পদস্খলিত হও, তাহ’লে জেনে রেখ আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত ও গভীর দূরদৃষ্টিময়’ (বাক্বারাহ ২/২০৮-০৯)।
শানে নুযূল: আব্দুল্লাহ ইবনুস সালাম (রাঃ) ইহুদীদের বড় আলেম ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ভাবলেন, মূসা (আ.)-এর ধর্মে শনিবারকে পবিত্র দিন হিসাবে সম্মান করা ওয়াজিব ছিল। কিন্তু মুহাম্মাদী শরী‘আতে ওয়াজিব নয়। অমনিভাবে মূসা (আ.)-এর শরী‘আতে উটের গোশত খাওয়া হারাম ছিল। কিন্তু মুহাম্মাদী শরী‘আতে তা হারাম নয়। এক্ষণে আমরা যদি যথারীতি শনিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে থাকি এবং উটের গোশতকে হালাল জেনেও তা বর্জন করি, তাহ’লে দু’কুলই রক্ষা পায়। মূসা (আ.)-এর শরী‘আতের প্রতিও আস্থা রইল, মুহাম্মাদী শরী‘আতেরও বিরোধিতা হ’ল না। বরং এতে উভয় ধর্মের প্রতি বিনয় প্রকাশের কারণে আল্লাহ তা‘আলাও অধিকতর খুশী হবেন। তখন আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়’।[1] অত্র আয়াত নাযিলের মাধ্যমে আল্লাহ উপরোক্ত ধারণা খন্ডন করেছেন এবং পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, ইসলাম হ’ল সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম। এতে কোনরূপ সংযোজন বা বিয়োজন নেই। ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল দল-মতের মানুষকে এই সর্বশেষ এলাহী দ্বীনের পরিপূর্ণ অনুসরণ করে যেতে হবে। বিগত সকল এলাহী ধর্ম ‘মানসূখ’ বা হুকুম রহিত বলে গণ্য হবে।
বলা আবশ্যক যে, বর্তমান যুগে ইহুদী বা খৃষ্টান ধর্ম বলে যা চালু আছে, তা ধর্মযাজকদের তৈরী বিকৃত ধর্ম। মূল তাওরাৎ বা ইঞ্জীলের কোন অস্তিত্ব এখন পৃথিবীতে নেই।
ব্যাখ্যা: মানুষকে আল্লাহ পাক সর্বোত্তম সৃষ্টি হিসাবে সৃজন করেছেন। দৈহিক অবয়বে ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে সে সকল সৃষ্টির সেরা। একটি স্বাভাবিক স্তর পর্যন্ত সকল মানুষ সমান হ’লেও জ্ঞান ও মানবিক গুণাবলীর কমবেশীর কারণে তাদের মধ্যে রয়েছে পূর্ণতা ও অপূর্ণতার স্তরভেদ। এমনও মানুষ রয়েছে, যাদের হৃদয় থাকা সত্ত্বেও তারা বুঝে না, কান থাকতেও শোনে না, চোখ থাকতেও দেখে না। এরা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়েও অধম’ (আ‘রাফ ৭/১৭৯)। আবার এমন মানুষ রয়েছেন, যারা সৃষ্টির সেবায় জীবনপাত করেন, সর্বোচ্চ জ্ঞান সাধনায় নিজেকে বিলিয়ে দেন, সবকিছু ত্যাগের মধ্যেই আনন্দ পান, অন্যের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য নিজের হাসি বিসর্জন দেন। বিনিময়ে তাঁরা কিছুই চান না। এমন মানুষের সংখ্যা কম হ’লেও এঁরাই দুনিয়ার সেরা মানুষ। এঁরাই মানবতার পূর্ণরূপ বা ‘ইনসানে কামেল’। এঁদের কারণেই পৃথিবী আজও টিকে আছে।
প্রত্যেক মানুষই চায় ‘ইনসানে’ কামেল’ হ’তে। কিন্তু কিভাবে হবে, তা তার জানা নেই। তাই যুগে যুগে লোকেরা স্ব স্ব জ্ঞান মোতাবেক এক একটা মতাদর্শ রচনা করে তার অনুসরণে ব্যাপৃত হয়েছে। এভাবেই পৃথিবীতে এযাবৎ রচিত হয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক ধর্ম। কিন্তু কোন ধর্মেই চূড়ান্ত সান্ত্বনা না পেয়ে আজকাল অনেক পন্ডিত বলেছেন, প্রকৃত ধর্ম হ’ল ‘মানব ধর্ম’। মানব ধর্মের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণেই কেবল পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়া যায়। যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কল্পিত সেই মানবধর্মের বাস্তব রূপরেখা কি? তখন আঁধার হাতড়িয়ে হয়ত বলেন, এটা যার যার জ্ঞান মোতাবেক। দেখা গেল এর সার কথা হ’ল ‘শূন্য’।
দেড় হাযার বছর পূর্বে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) বলে গিয়েছেন, ‘প্রত্যেক মানব সন্তানই ফিৎরাত বা স্বভাবধর্মের উপরে জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, নাছারা বা অগ্নি উপাসক বানায়’।[2] এতে বুঝা যায় যে, স্বভাবধর্ম বা মানবধর্ম হ’ল মানুষের স্বাভাবিক স্তর। একে সমুন্নত করার জন্য লাগে একটি উন্নত পরিকল্পনা এবং নিখুঁত ও বাস্তব সম্মত রূপরেখা বা কর্মসূচী। যেমন খনিতে স্বর্ণ উৎপন্ন হয়। কিন্তু সেটাকে অলংকারে রূপান্তরিত করার জন্য লাগে উন্নত কলা-কৌশল ও সর্বোত্তম প্রযু্ক্তি এবং সর্বোপরি কুশলী কারিগর। কে হবে সেই কারিগর? স্বর্ণ কি নিজেই নিজের কারিগর হ’তে পারে? অনুরূপভাবে মানুষ কি নিজেই নিজের কারিগর হ’তে পারে? মানুষ স্বর্ণপিন্ডের ন্যায় জড়পদার্থ নয়। বরং তাকে দেওয়া হয়েছে অতুলনীয় জ্ঞান সম্পদ। আর সেকারণেই সে অন্য সকল সৃষ্টির চাইতে সেরা। কিন্তু তার এই জ্ঞান কি পূর্ণাঙ্গ? সে কি তার ভবিষ্যৎ বলতে পারে? কোন্ কাজের পরিণাম কি হ’তে পারে, সে কেবল অনুমান করতে পারে। কিন্তু সে কি নিশ্চিত বলতে পারে? না। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল! আপনি বলে দিন যে, আমি আমার নিজের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধনের মালিক নই। কেবলমাত্র যা আল্লাহ চান তা ব্যতীত। আর আমি যদি আমার ভবিষ্যৎ জানতাম, তাহ’লে আমি আরও বেশী বেশী ভাল কাজ করতাম এবং কোনরূপ দুঃখ-কষ্ট আমাকে স্পর্শ করতে পারত না’ (আ‘রাফ ৭/১৮৮)।
ফলকথা, মানুষ তার জ্ঞান দিয়ে নিজেকে সুন্দর মানুষ হিসাবে, ‘ইনসানে কামেল’ হিসাবে গড়ে তুলতে চাইলেও এক পর্যায়ে সে ব্যর্থ হয়। ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতির কাছে সে পরাভূত হয়। যাদেরকে সে আদর্শ ভেবে অনুসরণ করে, সেখানেও দেখতে পায় ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা। ফলে সে হতাশ হয়ে পড়ে ও এক সময় বলে ওঠে ‘আনাল হক্ব’।[3] আমিই পরম সত্য, আমিই আল্লাহ। সে বলে, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। সে যে কারু দ্বারা সৃষ্ট, সেকথা সে ভুলে যায়। এভাবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্কে ভুলে অহংকারে মত্ত হয়ে সে এক সময় নাস্তিক হয়ে যায়।
স্বর্ণের কারিগর যেমন জানে কিভাবে স্বর্ণকে অলংকারে পরিণত করতে হয়, মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তেমনি জানেন কিভাবে মানুষকে সত্যিকারের মানুষে পরিণত করতে হয়। তিনি সেপথ কেবল বাৎলে দিয়েই ক্ষান্ত হননি। বরং শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বাস্তব দৃষ্টান্ত হিসাবে পাঠিয়ে হাতে কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁকে ‘উসওয়ায়ে হাসানাহ’ বা উত্তম নমুনা হিসাবে অনুসরণ করার জন্য পরবর্তী মানব জাতিকে নির্দেশ দিয়েছেন (আহযাব ৩৩/২১)।
আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হয়ে যাও এবং তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ ২/২০৮)। অত্র আয়াতে ‘ইনসানে কামেল’ হওয়ার বাধা হিসাবে শয়তান নির্দেশিত অন্ধকার গলিপথে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। আদেশ ও নিষেধ একই আয়াতে বলে দেওয়াতে এ বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আলোর পথের পথিকদেরকে অন্ধকার গলিপথে টেনে নেওয়ার জন্য শয়তান সর্বদা লোভ ও প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসে থাকবে। ‘ছিরাত মুস্তাক্বীম’-এর অনুসারীকে তাই সর্বদা ইসলাম রূপী গাইডের দিক-নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। নইলে আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী পথের পথিকদের ন্যায় যেকোন মুহূর্তে পদস্খলিত হয়ে সাক্ষাৎ ধ্বংসে নিক্ষিপ্ত হ’তে হবে।
উপরোক্ত আয়াতের মর্মার্থ এটাই যে, বিশ্বাসীগণ যেন তাদের বিশ্বাস ও কর্ম উভয় জগতে পরিপূর্ণভাবে ইসলামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তার মন-মস্তিষ্ক, হাত-পা, চোখ-কান সবই যেন ইসলামের আওতায় ও আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে এসে যায়। যদি কারু হাত-পা ইসলামের অবাধ্যতা করে, কিন্তু মন-মস্তিষ্ক ইসলামের প্রতি অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকে এবং খালেছ অন্তরে তওবা করে, তাহ’লে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হ’তে পারে। পক্ষান্তরে যদি কারু হাত-পা বাধ্য থাকে, কিন্তু মন-মস্তিষ্ক অবাধ্য থাকে, তবে সে হ’ল ‘মুনাফিক’। তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত। আর যে ব্যক্তি ইসলামের দেওয়া গাইড বুক গ্রহণ ও মান্য করতে অস্বীকার করবে, সে হবে ‘কাফির’। সে পদস্খলিত হবে এবং জাহান্নামের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হবে। তাছাড়া এ আয়াতে এ বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এর মধ্যে মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন সকল বিষয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বিধান ও দিক-নির্দেশনা সমূহ মওজূদ রয়েছে। সূরা মায়েদাহ ৩নং আয়াতে ইসলামের পূর্ণাঙ্গতার বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা বর্ণিত হয়েছে।
এক্ষণে অত্র আয়াতের প্রতিপাদ্য দাঁড়াচ্ছে এই যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোন মানুষ ইসলামের বিশ্বাসগত ও কর্মগত সকল বিষয়কে আন্তরিকভাবে স্বীকৃতি না দিবে এবং তাতে পূর্ণভাবে আমল না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে প্রকৃত অর্থে ‘মুসলিম’ পদবাচ্য হ’তে পারবে না এবং পরিপূর্ণ মানুষ বা ‘ইনসানে কামেল’ হ’তে পারবে না।
মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। তার মধ্যে ভাল ও মন্দ উভয় উপাদান মওজূদ রয়েছে। তার ভাল-কে সর্বোত্তম অবস্থায় ধরে রাখার জন্যই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ইসলামের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান নাযিল করেছেন। যে ব্যক্তি যত উত্তম রূপে উক্ত বিধান অনুসরণ করবে, সে ব্যক্তি তত পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে পরিগণিত হবে। ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মও মানুষকে ভাল-র প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। কিন্তু সেগুলি মানুষের রচিত বিধায় সেসবের মধ্যে অসংখ্য ত্রুটি বিদ্যমান রয়েছে। ভাল মনে করা হ’লেও প্রকৃত অর্থে তা ভাল নয়, এমন অসংখ্য বিধান ঐসব ধর্মে রয়েছে। যেমন হিন্দু ধর্মে ‘সতীদাহ’ প্রথাকে ধর্ম মনে করা হয়। নারীদেরকে পিতা ও স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। একইভাবে বিধবা মহিলাদের পুণরায় বিবাহ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়। যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রতিককালে তাদের মধ্যে কিছু কিছু সংস্কার এসেছে। কিন্তু ধর্মীয়ভাবে কট্টর হিন্দুরা তা আজও মেনে নিতে পারেনি। বিধবা বিবাহ চালু করতে গিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মত ব্যক্তিকে তার সমাজের কাছ থেকে কি নিগ্রহ পোহাতে হয়েছে, শিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই তা জানেন। খৃষ্টান ধর্মেও রয়েছে এরূপ অসংখ্য উদাহরণ। যেমন তাদের ধর্মযাজকদের চিরকুমার থাকাটাকেই ধর্ম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ফলে মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ এই ধর্মীয় বিধান মান্য করতে গিয়ে যেনা-ব্যভিচার ছাড়াও শিশু ধর্ষণের মত নোংরামিতেও আমেরিকান ধর্মযাজকদের জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় যা মাঝে-মধ্যে শিরোনাম হ’তে দেখা যায়। এতদ্ব্যতীত সূদখোরী, মদ্যপান, শূকরের গোশত ভক্ষণ এখানো তাদের নিকটে ধর্মীয়ভাবে সিদ্ধ। অথচ এগুলির কোনটাই প্রকৃত প্রস্তাবে ভাল নয়। বরং নিঃসন্দেহে মন্দ ও অকল্যাণকর।[1]. তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/২৫৫ পৃ.।
[2]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০ ‘ঈমান’ অধ্যায়।
[3]. এটি নকশবন্দীয়া তরীকার ছূফী মনছূর হাল্লাজের (৮৫৮-৯২২ খৃঃ) কুফরী উক্তি। যার অর্থ ‘আমিই পরম সত্য’ আমিই আল্লাহ। কুফরী দর্শন প্রচারের শাস্তি স্বরূপ ৯ বছর কারাদন্ড ভোগের পর বাগদাদে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। -লেখক।