ইহসান ইলাহী যহীর

বিশ্বব্যাপী তাঁর বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা

আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর আধুনিক বিশ্বের একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ধর্মতাত্ত্বিক ছিলেন। বিভিন্ন বাতিল ফিরকার উপর লিখিত তাঁর গ্রন্থগুলোকে এ বিষয়ের মৌলিক গবেষণাগ্রন্থ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো পাঠসূচীভুক্ত রয়েছে। আল্লামা যহীর বলেন, ‘আমি ধর্মতত্ত্বের উপর বই লিখে  গোটা মুসলিম বিশ্বে আমার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করেছি। আমার বইগুলো বিশ্বের প্রত্যেক ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পাঠ্যসূচীভুক্ত রয়েছে এবং অনেক দেশে ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য লিখিত অভিসন্দর্ভসমূহে ঐসব  বইয়ের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। আমার রাত্রিদিনের অধ্যয়ন ও গবেষণার ফসল এগুলি’।[1] তিনি বলেন, ‘আমার বইগুলো মুসলিম বিদ্বানদের জন্য ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক সাহিত্যের অভাব পূরণ করেছে’।[2] তিনি আরো বলেন, ‘মোদ্দাকথা, ধর্মতত্ত্বের উপর আমার লেখা গ্রন্থগুলোর মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে একটি পরিমন্ডল সৃষ্টি হয়েছে’।[3]

মুহাম্মাদ ছায়েম বলেন, وإنها في مجال الأبحاث العلمية لتعتبر من أهم مراجع الدارسين للفرق والملل والنحل. ‘বিভিন্ন ধর্মতাত্ত্বিক গোষ্ঠী সম্পর্কে গবেষণাকারীদের জন্য গবেষণা পরিমন্ডলে এ গ্রন্থগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে’।[4]

আল্লামা যহীরের প্রত্যেকটি বইয়ের প্রথম সংস্করণ ৩০ হাযার কপি বের হত। তাঁর ‘আল-ব্রেলভিয়া’ বইটির ৩০ হাযার কপি মাত্র ১৫ দিনে নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে এক বছরে এই বইটি ৯ বার প্রকাশ করতে হয়। এতেও চাহিদা পূরণ না হলে দামেশক ও সঊদী আরব থেকেও এটি প্রকাশ করা হয়। তাঁর এই বইটি প্রকাশের পর সঊদী আরব ও মিসরে উক্ত ভ্রান্ত ফিরকা সম্পর্কে অনেক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।[5] তাঁর অধিকাংশ বই পৃথিবীর বিভিন্ন জীবন্ত ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

সাবেক জনপ্রিয় সঊদী বাদশাহ ফয়ছাল এক শাহী ফরমানে তাঁর নিজ খরচে আল্লামা যহীরের বইপত্র ক্রয় করে সঊদী আরবের সকল লাইব্রেরী, শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এবং অন্য এক ফরমানে সেগুলো ছেপে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন লাইব্রেরীতে বিতরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন।[6]

তাঁর বইগুলোর বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতার কারণ সম্পর্কে তদীয় শিক্ষক মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর শায়খ আতিয়াহ সালিম (১৯২৭-৯৯) বলেন,

إن كتاباته كلها اتسمت بالرزانة والاعتدال ومدعمة بالأدلة وصدق المقال. وأهم ما فيها أن يستدل لها من كتب أهلها مما لا يدع مجالا للشك فيما يكتب عنهم. ولا مطعن فيها يفرده من مصادرهم حتى أصبحت كتبه في تلك الفرق مصادر ومراجع للدارسين ومناهل للباحثين.

‘তাঁর রচনাবলী গাম্ভীর্য ও সুসামঞ্জস্যের বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এবং দলীল ও সত্যকথন দ্বারা মযবুতকৃত। এসব গ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হ’ল ঐসব ফিরকার নিজেদের রচিত বইপত্র থেকে প্রমাণ পেশ, যা তাদের সম্পর্কে তিনি যা লিখেন তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না এবং তাদের সূত্রসমূহ থেকে তিনি যেসব উদ্ধৃতি দেন তাতে দোষারোপেরও কিছু থাকে না। এভাবে তাঁর গ্রন্থগুলো ঐ সকল ফিরকার ব্যাপারে পাঠক ও গবেষকদের জন্য উৎস ও ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে’।[7]

শায়খ মুহাম্মাদ নাছের আল-উবূদী বলেন, واتسمت كتبه بقوة الحجة والمنطق. ‘তাঁর গ্রন্থগুলো দলীল ও যুক্তির শক্তিতে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত’।[8]



[1]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫০।

[2]. ঐ, পৃঃ ৪৭।

[3]. ঐ, পৃঃ ৪৯।

[4]. শুহাদাউদ দাওয়াহ, পৃঃ ১৬৫।

[5]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪৯-৫০।

[6]. শায়বানী, ইহসান ইলাহী যহীর, পৃঃ ১৪; ‘আল-মাজাল্লাতুল আরাবিয়াহ’, সংখ্যা ৪৮, ১৪০৮ হিঃ, পৃঃ ৯১; শুহাদাউদ দাওয়াহ, পৃঃ ১৬৫।

[7]. আল-ব্রেলভিয়া, পৃঃ ৩।

[8]. ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১২৯।