বিদ‘আত হ’তে সাবধান

মদীনার হারাম শরীফের খাদেম শায়খ আহমদ মারফত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে মিথ্যা স্বপ্ন ও অছিয়ত সম্বলিত বিজ্ঞাপন সম্পর্কে

(تكذيب الرؤيا والوصية المزعومة من الشيخ أحمد خادم الحجرة النبوية)

আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায-এর পক্ষ থেকে সচেতন মুসলমানদের প্রতি (আল্লাহ আমাদেরকে ও তাদেরকে মূর্খ ও নীচুমনা লোকদের মিথ্যা অপবাদ সমূহের অনিষ্টকারিতা হ’তে রক্ষা করুন-আমীন!)।

আসসালামু আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু!

অতঃপর সম্প্রতি আমাকে মদীনার হারাম শরীফের খাদেম শায়খ আহমাদের নামে প্রচারিত নিম্ন শিরোনামযুক্ত একটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। শিরোনামটি হ’ল- هذه وصية من المدينة المنورة عن الشيخ أحمد خادم الحرم النبوي الشريف ‘এটি মদীনা মুনাউওয়ারাহর হারাম শরীফের খাদেম শায়খ আহমাদের তরফ হ’তে প্রচারিত অছিয়ত’।

যেখানে বলা হয়েছে যে, ‘আমি জুম‘আর রাত্রিতে জেগে কুরআন মজীদ পড়ছিলাম। অতঃপর আল্লাহর কল্যাণময় নামসমূহ (আল-আসমাউল হুসনা) তেলাওয়াতের পর যখন আমি নিদ্রা যাওয়ার জন্য প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলাম, এমন সময় হঠাৎ আমি কনকোজ্জ্বল চেহারার অধিকারী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখলাম। যিনি মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের মহিমাময় আয়াত ও আহকাম সমূহের বাহক, বিশ্বমানবের শান্তিদূত এবং আমাদের নেতা। অতঃপর বললেন, হে শায়খ আহমাদ! বললাম, আমি হাযির, হে আল্লাহর রাসূল! হে সৃষ্টিকুলের সেরা সম্মানিত!! তিনি তখন বললেন, ‘আমি লোকদের নানাবিধ অপকর্মে দারুণভাবে লজ্জিত। তাতে আমি আল্লাহ ও ফেরেশতাদের সম্মুখে মুখ দেখাতে পারছি না। কেননা গত এক জুম‘আ হ’তে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত এক সপ্তাহে ১,৬০,০০০ (এক লক্ষ ষাট হাযার) লোক বেদ্বীন অবস্থায় মারা গেছে। অতঃপর তিনি মানুষের বিভিন্ন পাপকর্মের কথা ব্যক্ত করলেন, যাতে তারা লিপ্ত আছে, অতঃপর বললেন,

‘এই অছিয়ত লোকদের জন্য আল্লাহর তরফ হ’তে রহমত স্বরূপ’। এরপরে তিনি ক্বিয়ামতের কিছু কিছু আলামত বর্ণনা করে বলেন, হে শায়খ আহমাদ! তুমি লোকদেরকে এই অছিয়ত সম্পর্কে জানিয়ে দাও। কেননা এটি লওহে মাহফূয থেকে তাক্বদীরের কলম দ্বারা লিখিত। যে ব্যক্তি তা ছাপিয়ে শহর হ’তে শহরান্তরে ও এলাকা হ’তে এলাকান্তরে প্রচার করবে, আল্লাহ তার জন্য  জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। কিন্তু যে ব্যক্তি তা ছাপাবে না ও প্রচার করবে না, ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য আমার শাফা‘আত হারাম হবে। যদি কোন দরিদ্র ব্যক্তি তা ছাপায়, তাহ’লে সে ধনী হবে। কোন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ছাপালে আল্লাহ তাকে ঋণমুক্ত করবেন। যদি তার কোন বিশেষ গুনাহ থাকে, তবে আল্লাহ এই অছিয়তনামার বরকতে তাকে ও তার মাতা-পিতাকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহর  যে বান্দা এটা ছাপাবে না, ইহকাল ও পরকালে তার চেহারা কালিমালিপ্ত হবে’। অতঃপর তিনি মহান আল্লাহর নামে তিনবার কসম করে বললেন, এটাই হ’ল প্রকৃত সত্য (هذه حقيقة)। যদি আমি এতে মিথ্যাবাদী হই, তাহ’লে (ক্বিয়ামতের দিন) বেদ্বীন অবস্থায় দুনিয়া থেকে বের হব। যে ব্যক্তি উপরোক্ত অছিয়তের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে জাহান্নামের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি তা মিথ্যা মনে করবে, সে কাফের হবে’।

এটাই হ’ল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নামে মিথ্যারোপিত তথাকথিত অছিয়তনামার সার-সংক্ষেপ।

আমরা বিগত কয়েক বছর যাবৎ এই মিথ্যা অছিয়তনামার কথা বহুবার শুনেছি, যা ইতিমধ্যে লোকসমাজে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত এই সকল অছিয়ত সমূহের মধ্যে কিছু শাব্দিক পার্থক্য রয়েছে। যেমন প্রথম দিকে প্রকাশিত মিথ্যা অছিয়তনামায় বলা হয় যে, শায়খ আহমাদ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ঘুমের মধ্যে দেখে সেই অবস্থায়ই অছিয়ত প্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য শেষ অছিয়তনামায়- যার বিবরণ আমরা উপরে দিয়েছি, সেখানে হে পাঠক! আপনি দেখেছেন যে, এই মিথ্যারোপকারী ব্যক্তিটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে নিদ্রাবস্থায় দেখেনি; বরং নিদ্রা যাবার প্রাক্কালে জাগ্রত অবস্থায় দেখেছে। এই মিথ্যা অছিয়তনামার মধ্যে তাই কপট দুরভিসন্ধি রয়েছে। অতএব এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা ও স্পষ্ট বাতিল দাবী। আমি অনতিবিলম্বে আপনাদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করব ইনশাআল্লাহ।

বিগত কয়েক বছরে আমি লোকদেরকে বহুবার হুঁশিয়ার করেছি যে, এটি একটি প্রকাশ্য মিথ্যা ও স্পষ্ট বাতিল জিনিস। অতঃপর যখন উক্ত অছিয়তনামার এই শেষ সংস্করণ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করা হ’ল, তখন আমি এ বিষয়ে লিখতে মনস্থ করলাম যাতে এই মিথ্যার অসারতা ও উক্ত মিথ্যাবাদীর অসম দুঃসাহস জনসাধারণ্যে প্রকাশ হয়ে পড়ে। কোন সুস্থ বিবেক ও সামান্য বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের মধ্যেও যে এই বাতিল জিনিসটি প্রসার লাভ করবে, এর আমি কল্পনাও করিনি। কিন্তু আমার বহু বন্ধু আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন যে, এটা লোকসমাজে ব্যাপকহারে প্রসার লাভ করেছেএবং লোকেরা তা একের পর এক প্রচার করছে এবং অনেকেই তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছে। এই একমাত্র কারণেই আমি আমার সাথীদের সাহায্য নিয়ে[1] এ বিষয়ে লিখে প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিলাম, যাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে এই মিথ্যা অপবাদে কেউ বিভ্রান্ত না হন।

এ বিষয়ে সামান্য চিন্তা করলেই যেকোন বিদ্বান, ঈমানদার, সুস্থস্বভাব ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিই স্বীকার করবেন যে, এটি বিভিন্ন কারণে মিথ্যা এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে একটি অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়।

আমি আলোচ্য শায়খ আহমাদের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নিকটে এই তথাকথিত অছিয়ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন যে, ওটা প্রকৃতপক্ষে শায়খ আহমাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা অপবাদ মাত্র। যিনি নিজেই এ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাছাড়া আলোচ্য শায়খ আহমাদ বহু আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

এক্ষণে যদি আমরা ধরে নেই যে, সত্যসত্যই উক্ত শায়খ আহমাদ কিংবা তার চাইতে বুযর্গ কেউ ধারণা করেছেন যে, তিনি নিদ্রা অথবা জাগ্রত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছেন এবং এই সমস্ত অছিয়ত করেছেন, তাহ’লে আমরা নিশ্চিতভাবেই জানব যে, তিনি মিথ্যাবাদী অথবা যে তাকে এমন অছিয়ত করেছে সে হ’ল ইবলীস, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নন। আমাদের এই বিশ্বাস কয়েকটি কারণে। যেমন-

১ম কারণ : মৃত্যুর পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জাগ্রত অবস্থায় কখনোই দেখা যাবে না। কিছুসংখ্যক মূর্খ ছূফী যে ধারণা করে থাকে যে, তারা জাগ্রত অবস্থায় নবীকে দেখেছে কিংবা তিনি মীলাদের মাহফিলে বা অনুরূপ মজলিস সমূহে হাযির হয়ে থাকেন- তা ভুল, নিকৃষ্টতম ভুল। তারা চূড়ান্ত ধোঁকার জালে আবেষ্টিত হয়েছে এবং মহাভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত হয়েছে। তারা আল্লাহর কিতাব, রাসূলের সুন্নাত ও বিদ্বানমন্ডলীর ইজমা তথা সম্মিলিত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। কেননা মৃত ব্যক্তিগণ কেবলমাত্র ক্বিয়ামতের দিনই স্ব স্ব কবর হ’তে বের হবেন, তার পূর্বে নয়। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ثُمَّ إِنَّكُمْ بَعْدَ ذَلِكَ لَمَيِّتُوْنَ- ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُوْنَ- ‘অতঃপর তোমাদের সবারই মৃত্যু হবে। অতঃপর তোমরা সবাই ক্বিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হবে’ (মুমিনূন ২৩/১৫-১৬)। উক্ত আয়াতে আল্লাহ রববুল আলামীন স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে, মৃতদের পুনরুত্থান কেবলমাত্র ক্বিয়ামতের দিন হবে- তার পূর্বে নয়। এক্ষণে যে ব্যক্তি এর বিরুদ্ধে বলবে, সে প্রকাশ্য মিথ্যাবাদী অথবা মোহাচ্ছন্ন ভ্রান্ত। সে সেই সত্য উপলব্ধি করতে পারেনি, যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন পূর্ববর্তী সালাফে ছালেহীন এবং মহান ছাহাবায়ে কেরাম ও তাঁদের অনুসারীগণ।

২য় কারণ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় জীবদ্দশায় কিংবা জীবনাবসানকালে হক্ব ও ন্যায়ের বিরোধী কিছু বলেননি। অথচ আলোচ্য অছিয়ত অনেকগুলি কারণে তাঁর আনীত শরী‘আতের প্রকাশ্য বিরোধী। প্রথমতঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে নিদ্রাবস্থায় দেখা দিয়েছেন। যে ব্যক্তি তাঁকে নিদ্রাবস্থায় দেখেছে সে দেখেছে। কেননা শয়তান কখনও তাঁর চেহারার অনুকরণ করতে পারে না। যেমন ছহীহ হাদীছ সমূহে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু বড় কথা হ’ল, যিনি তাঁকে দেখেছেন সেই ব্যক্তির ঈমানদারী, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, ধীশক্তি, দ্বীনদারী ও আমানতদারী সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হ’তে হবে। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছেন, না অন্য কাউকে দেখেছেন, সে বিষয়েও তাকে নিশ্চিত হ’তে হবে।

(এ বিষয়ে হাদীছ বাছাইয়ের পদ্ধতি হ’ল) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় বর্ণিত এমন কোন হাদীছ যদি আমরা পাই যা বিশ্বস্ত সনদে প্রমাণিত নয়- তখন তার উপরে আস্থা স্থাপন করা যাবে না এবং তা দ্বারা কোন প্রমাণও উপস্থাপন করা যাবে না। অথবা যদি বিশ্বস্ত সূত্রে প্রমাণিত কোন হাদীছ পাওয়া যায়। কিন্তু অবস্থা হ’ল যে, উক্ত রেওয়ায়াত তার চেয়ে অধিক বিশ্বস্ত  রেওয়ায়াতের বিরোধী এবং উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানেরও কোন পথ নেই, তখন একটিকে ‘মানসূখ’ মানতে হবে- যার উপর আমল করা যাবে না এবং অপরটিকে ‘নাসেখ’ মানতে হবে- যার উপর আমল করতে হবে। কিন্তু যেক্ষেত্রে উক্ত ‘নাসেখ-মানসূখের’  ধারাও প্রযোজ্য নয়, অধিকন্তু উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানেরও কোন উপায় নেই, সে ক্ষেত্রে নিয়ম হ’ল উক্ত  রেওয়ায়াত দু’টির মধ্যে যেটির রাবী (বর্ণনাকারী) তুলনামূলকভাবে কম ধীশক্তিসম্পন্ন ও কম বিচক্ষণ, সেটিকে বাদ দিতে হবে। আর তখন এই ‘বিরল’ (শায্) রেওয়ায়াতটির উপর আমল করা যাবে না।

এক্ষণে উপরোক্ত নিয়ম হৃদয়ঙ্গম করার পর এই অছিয়তনামাকে কি বলা যেতে পারে, যার বর্ণনাকারী ব্যক্তিটিকে কেউ চেনে না, যে সরাসরি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট থেকে তা বর্ণনা করছে। কেউ সেই ব্যক্তিটির ন্যায়নিষ্ঠা ও সত্যপরায়ণতা সম্পর্কে খবর রাখে না। এমতাবস্থায় যদি উক্ত অছিয়তটি শরী‘আত বিরোধী নাও হ’ত, তবুও তার দিকে দৃকপাত করা জায়েয হ’ত না। তাহ’লে উক্ত অছিয়তনামার অবস্থা কি হবে যা বহু বাতিল ও বাজে কথায় ভরা, যা মহান রাসূলের বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা অপবাদ এবং দ্বীনের মধ্যে একটা নতুন নিয়মের প্রবর্তন, যার অধিকার আল্লাহ কাউকে দেননি? অধিকন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, مَنْ قَالَ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বলল, যা আমি বলিনি, সে ব্যক্তি জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নিল’।[2] অথচ এই অছিয়তনামার মালিক মিথ্যুক ব্যক্তিটি মহান রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে এমন সব কথা বলেছে, যা তিনি বলেননি এবং তাঁর উপরে সে একটি জাজ্জ্বল্যমান ডাহা মিথ্যা আরোপ করেছে। অতএব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরোক্ত দুঃসংবাদের কত বড়ইনা হক্বদার সে, যদি না সে এখুনি তওবা করে এবং পাল্টা ইশতেহার ছেপে প্রচার করে দেয় এই মর্মে যে, সে উক্ত অছিয়তনামা দ্বারা মহান রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর অযথা মিথ্যারোপ করেছে। কেননা যদি কেউ ধর্মের নামে কোন বাতিল বস্ত্ত লোক সমাজে ছড়িয়ে দেয়, তখন তার তওবা শুদ্ধ হয় না, যতক্ষণ না সে তার অসারতা লোকদের মাঝে ভালভাবে প্রচার করে দেয়।  যাতে সকলে জানতে পারে যে, সে তার পূর্বে কৃত মিথ্যা হ’তে প্রত্যাবর্তন করেছে এবং নিজেকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেছে।

কেননা আল্লাহ রববুল ‘আলামীন এরশাদ করেছেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُوْلَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ الْلاَّعِنُونَ- إِلاَّ الَّذِيْنَ تَابُوْا وَأَصْلَحُوْا وَبَيَّنُوْا فَأُوْلَئِكَ أَتُوْبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ- ‘যে সমস্ত লোক আমাদের নাযিলকৃত স্পষ্ট আয়াত ও হেদায়াত সমূহ গোপন করে, লোকদের জন্য কুরআনের মধ্যে সেগুলি বিস্তারিত বর্ণনা করে দেওয়ার পর, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অভিসম্পাত সকল অভিসম্পাতকারীর। অবশ্য যদি কেউ তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে ও তা প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা করে, তাহ’লে আমি তাদের তওবা কবুল করব এবং আমিই একমাত্র তওবা কবুলকারী ও দয়ালু’ (বাক্বারাহ ২/১৫৯-৬০)।

উক্ত আয়াতে আল্লাহ রববুল ‘আলামীন স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, যদি কোন ব্যক্তি কোন সত্য গোপন করে, তবে তার তওবা শুদ্ধ হবে না নিজেকে সংশোধন ও প্রকাশ্যে ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রেরণের মাধ্যমে তদীয় দ্বীন ও শ্রেষ্ঠতম নে‘মত ইসলামকে পূর্ণতা দান করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট অহীকৃত যাবতীয় বস্ত্তই ছিল সেই পূর্ণাঙ্গ শরী‘আতের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ তাঁর রূহ ক্ববয করেননি যতক্ষণ না দ্বীন পূর্ণতা লাভ করেছে ও তা পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)

এক্ষণে উক্ত মিথ্যুক অছিয়তকারী হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়ে মুসলমানদের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহের ধূম্রজাল সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে এবং মুসলমানদের মধ্যে একটি নতুন দ্বীনের প্রচলন ঘটাতে যাচ্ছে, যার অনুসরণের উপরই নাকি নির্ভর করছে জান্নাত লাভ করা। আর যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে না সে ব্যক্তি জান্নাত লাভ হ’তে বঞ্চিত হবে। এমনকি উক্ত ব্যক্তি মনে করেছে যে, তার এই তথাকথিত অছিয়ত কুরআনের চেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন। কেননা তার কথামতে যে ব্যক্তি উক্ত অছিয়তনামা ছাপিয়ে এক শহর হ’তে অন্য শহরে কিংবা এক মহল্লা হ’তে অন্য মহল্লায় প্রচার করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা ছাপাবে না এবং প্রচার করবে না তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন নবীর শাফা‘আত হারাম হবে।’

এটি হ’ল সবচাইতে নিকৃষ্ট মিথ্যা এবং উক্ত অছিয়ত মিথ্যা হবার স্পষ্ট দলীল। এটি উক্ত মিথ্যাবাদীর নির্লজ্জতা ও মিথ্যাবাদিতার চরম দুঃসাহসের পরিচয়ও বটে। কেননা যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ শিখে শহর হ’তে শহরান্তরে, মহল্লা হ’তে  মহল্লান্তরে প্রচার করে, তার জন্যও অনুরূপ মর্যাদা নেই, যদি না সে কুরআনের হুকুম অনুযায়ী আমল করে। তাহ’লে কেমন করে উক্ত মিথ্যা অপবাদের লেখক ও প্রচারক অনুরূপ মর্যাদার অধিকারী হ’তে পারে? পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কুরআন মাজীদ লিখেনি এবং তা শহর হ’তে শহরান্তরে প্রচারও করেনি, সে ব্যক্তি রাসূলের শাফা‘আত হ’তে বঞ্চিত হবে না, যদি সে খাঁটি মুমিন হয় এবং শরী‘আতের অনুসারী হয়। তাই এই একটিমাত্র মিথ্যা দাবীই উক্ত অছিয়তনামার অসারতা, এর প্রকাশকের মিথ্যাবাদিতা, নির্লজ্জতা, মূর্খতা এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আনীত দ্বীন ও হেদায়াত সম্পর্কিত জ্ঞান হ’তে চরম অজ্ঞতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।

এই অছিয়তের মধ্যে উপরোল্লেখিত বস্ত্ত ছাড়াও আর যা কিছু রয়েছে সবকিছুই তার অসারতা এবং মিথ্যা হওয়ার প্রমাণ বহন করে। যদি ঐ ব্যক্তি হাযার বারও কসম করে বলে কিংবা নিজের জন্য সবচেয়ে বড় আযাব ও সবচেয়ে বড় শাস্তি গ্রহণের দাবী করে বলে যে সে সত্যবাদী, তবুও সে সত্যবাদী নয়, কখনোই ঐ বস্ত্ত সঠিক নয়। বরং আল্লাহর কসম! পুনরায় আল্লাহর কসম! এটি সবচেয়ে বড় মিথ্যা ও নিকৃষ্টতম বাতিল বস্ত্ত। আমরা আল্লাহকে এবং সকল ফেরেশতামন্ডলীকে- যাঁরা আমাদের সাথে সর্বদা রয়েছেন এবং মুসলমানদের মধ্যে ঐ সকল ব্যক্তিকে, যাঁরা এই লেখা সম্পর্কে অবহিত হবেন, সকলকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, উক্ত অছিয়তনামাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে আনীত অপবাদ বৈ কিছুই নয়- এই সাক্ষ্য নিয়ে আমরা ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে মুলাক্বাত করব। আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে যথাযথভাবে লাঞ্ছিত করুন, যে ব্যক্তি এই মিথ্যাচার করেছে এবং যে ব্যক্তি এর উপর আমল করেছে।

উপরের কারণগুলি ব্যতীত আরও কতকগুলি বস্ত্ত এটির অসারতা প্রমাণ করে। যেমন (১) এতে বলা হয়েছে যে, ‘এক জুম‘আ হ’তে অন্য জুম‘আ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬০ হাযার ব্যক্তি বেদ্বীন অবস্থায় মারা গেছে’ এটি একটি মিথ্যা দাবী। কেননা এটি গায়েবী ইলমের ব্যাপার। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ‘অহি’ নাযিল হওয়ার পথ বন্ধ হয়েছে। এমনকি তিনি স্বীয় জীবদ্দশায়ও ‘গায়েব’ (ভবিষ্যৎ) জানতেন না, তাহ’লে মৃত্যুর পরে কেমন করে গায়েব জানলেন? যেমন আল্লাহ বলেছেন,

 قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلاَّ اللهُ- ‘হে মুহাম্মাদ! তুমি বলে দাও যে, আসমান ও যমীনের কেউই ‘গায়েব’ জানে না একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত’ (নমল ২৭/৬৫)। এমনিভাবে ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে,إِنَّ أُنَاسًا مِنْ أَصْحَابِى يُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ فَأَقُوْلُ أَصْحَابِى أَصْحَابِى فَيَقُولُ ، إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّيْنَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ . فَأَقُولُ كَمَا قَالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ: وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا مَا دُمْتُ فِيْهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيْبَ عَلَيْهِمْ وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيْدٌ- ‘ক্বিয়ামতের দিন ‘হাউয কাওছার’ হ’তে আমার বহু লোককে বাম সারির লোকদের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি ফরিয়াদ করে বলব, হে আল্লাহ! এরা তো আমারই সঙ্গী ছিল। তখন আমাকে বলা হবে, তুমি জানো না, এরা তোমার মৃত্যুর পরে কত বিদ‘আতের উদ্ভব ঘটিয়েছিল’। তখন আমি সেই নেককার বান্দার (ঈসা) ন্যায় বলব, ‘আমি তাদের উপর সাক্ষ্য ছিলাম যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর যখন হে আল্লাহ! তুমি আমার ওফাৎ ঘটালে তখন তুমিই তাদের একমাত্র পাহারাদার হ’লে। আর তুমিই সকল বস্ত্তর প্রত্যক্ষ সাক্ষী’ (মায়েদাহ ৫/১১৭)। [3]

(২) এতে বলা হয়েছে- ‘কোন ফকীর ব্যক্তি তা লিখে প্রচার করলে সে ধনী হবে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি প্রচার করলে আল্লাহ তাকে ঋণমুক্ত করবেন, কোন পাপী তা করলে তার এবং তার মাতা-পিতাকে এই অছিয়তনামার বরকতে আল্লাহ ক্ষমা করবেন’। এটি উক্ত বেহায়া মিথ্যাবাদীর চরম মিথ্যাবাদিতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। কেননা যেখানে পবিত্র কুরআন কেবল লিখে প্রচার করলে অনুরূপ তিনটি পুণ্য লাভ করা যায় না, সেখানে একটা বাজে অছিয়তনামা লিখে প্রচার করলে কিভাবে অনুরূপ ছওয়াব লাভ করা যেতে পারে? এই খবীছ এর দ্বারা কেবল মানুষের মনে মোহজাল সৃষ্টি করতে চায় এবং তাদেরকে উক্ত অছিয়তে কল্পিত বিরাট ছওয়াবের খোয়াড়ে আবদ্ধ করতে চায়। যাতে লোকেরা তা ছাপিয়ে প্রচার করে এবং যাতে লোকেরা যাবতীয় শারঈ পথ-পন্থা ছেড়ে এই কল্পিত অছিয়তনামাকেই ধনী হবার, ঋণমুক্ত হবার ও পাপমুক্ত হবার একমাত্র ‘মাধ্যম’ (موصلة) হিসাবে মনে করে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্বিয়ামতের দিন লজ্জিত হবার এই সকল পথ-পন্থা হ’তে এবং প্রবৃত্তিপরায়ণতা ও শয়তানের তাবেদারী হ’তে রক্ষা করুন!

(৩) এতে বলা হয়েছে- ‘যারা তা ছাপাবে না আল্লাহ তাদের মুখমন্ডলকে দুনিয়া ও আখেরাতে কালিমালিপ্ত করবেন’। এটিও একটি ডাহা মিথ্যা কথা এবং উক্ত অছিয়তনামার অসারতার অন্যতম দলীল। কেননা জ্ঞান এটা কিভাবে সমর্থন করতে পারে যে, হিজরী চতুর্দশ শতকের একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির তথাকথিত অছিয়তনামা- যাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করা হয়েছে- তা যদি কেউ ছাপিয়ে প্রচার না করে তাহ’লে ইহকাল ও পরকালে তার চেহারা কালিমালিপ্ত হবে এবং ছাপালে গরীবেরা ধনী হবে, ঋণের বোঝায় ভারাক্রান্ত ব্যক্তি ঋণমুক্ত হবে, হাযারো পাপে ডুবে থাকা ব্যক্তি পাপমুক্ত হবে? সুবহানাল্লাহ! এটি একটি বড় অপবাদ। তাছাড়া যাবতীয় শারঈ প্রমাণ এবং বাস্তবতা এর অসারতা ও উক্ত মিথ্যুকের দুঃসাহস ও নির্লজ্জতা প্রমাণ করে। কেননা এমন অসংখ্য ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা তা লিখে প্রচার করেননি। অথচ তাদের চেহারা কালিমালিপ্ত হয়নি। পক্ষান্তরে এখানেই বহুলোক রয়েছে, যারা উক্ত অছিয়তনামা বহুবার লিখে প্রচার করেছে। অথচ তারা ঋণমুক্ত হয়নি, বা তাদের দারিদ্র্যও বিদূরিত হয়নি। আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই সকল প্রকারের বিভ্রান্তি হ’তে ও এই সকল পাপের মরিচা হ’তে।

এই ধরনের গুণাবলী ও উত্তম পুরস্কার সমূহ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের লেখক কোন মহান ব্যক্তির জন্যও পবিত্র শরী‘আতে বিধৃত হয়নি। অথচ তা কেমন করে একজন মিথ্যা অছিয়তনামা লেখকের জন্য হ’তে পারে, যা বিভিন্ন বাজে উক্তি ও কুফরী বাক্য সমূহ দ্বারা পরিপূর্ণ? সুবহানাল্লাহ! লোকটা মিথ্যা বলায় কতই না দুঃসাহস দেখিয়েছে!

(৪) এতে বলা হয়েছে যে, ‘যে ব্যক্তি উক্ত অছিয়তে বিশ্বাস স্থাপন করবে সে ব্যক্তি জাহান্নামের শাস্তি হ’তে মুক্তি পাবে এবং যে ব্যক্তি ওটাকে মিথ্যা মনে করবে সে কাফের হবে’। 

উক্ত মিথ্যাবাদীর জন্য এটা অন্যতম দুঃসাহস যে, সে সমস্ত লোককে তার এই মিথ্যা বানোয়াট  জিনিসের উপর বিশ্বাস স্থাপন করার আহবান জানাচ্ছে এবং ধারণা করছে যে, এর ফলে লোকেরা জাহান্নামের শাস্তি হ’তে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, সে ব্যক্তি কাফের হবে। আল্লাহর কসম! এই মিথ্যুকটি আল্লাহর উপর একটি চরম মিথ্যারোপ করেছে এবং আল্লাহর কসম! সে সত্যের বিপরীত কথা বলেছে। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ব্যক্তি অবশ্যই কাফের হবার যোগ্য। কিন্তু ঐ ব্যক্তি কখনোই নন, যিনি ওটাকে মিথ্যা মনে করেন। কেননা ওটা প্রতারণা, বাতিল ও মিথ্যা। ওতে সত্যের কোন ভিত্তিই নেই।

আমরা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, এটি একটি ডাহা মিথ্যা ও তার উদ্গাতা ব্যক্তিটি চরম মিথ্যুক। সে এর দ্বারা লোকদের মধ্যে এমন বস্ত্তর প্রচলন ঘটাতে চায়, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি। সে মুসলমানদের দ্বীনের মধ্যে এমন বস্ত্তর অনুপ্রবেশ ঘটাতে চায়, যা তার মধ্যে নেই। অথচ আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে উম্মতের জন্য পরিপূর্ণতা দান করেছেন এই মিথ্যা প্রচারণার চৌদ্দশত বৎসর পূর্বেই।

অতএব হে পাঠক, হে ভাইয়েরা সাবধান! আপনারা এই সকল মিথ্যার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হ’তে এবং আমাদের মধ্যে তার প্রচলন করা হ’তে বিরত থাকুন! কেননা সত্যের একটা জ্যোতি রয়েছে, যা কোন সত্যসন্ধানীর উপর সন্দেহের ধূম্রজাল সৃষ্টি করে না। অতএব আপনারা দলীল সহকারে সত্য সন্ধানে ব্রতী হেŠন এবং যে সকল বিষয় আপনাদের নিকট দুর্বোধ্য ঠেকে সে সকল বিষয়ে বিদ্বানদের নিকট জিজ্ঞাসা করুন। সাবধান! কোন মিথ্যাবাদীর বাহ্যিক কসম খাওয়ায় ধোঁকায় পড়বেন না। মনে রাখবেন অভিশপ্ত ইবলীসও আমাদের আদি পিতা-মাতা আদম ও হাওয়াকে কসম দিয়ে বলেছিল যে, সে তাঁদের জন্য সত্যিকারের উপদেশদাতা। অথচ সেই ছিল সেরা খেয়ানতকারী ও সেরা মিথ্যাবাদী। যেমন কুরআন মাজীদে সূরা আ‘রাফে আল্লাহ রববুল আলামীন এরশাদ করেছেন, - وَقَاسَمَهُمَا إِنِّيْ لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِيْنَ ‘ইবলীস তাদের দু’জনকে কসম দিয়ে বলল যে, অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য অন্যতম উপদেশদাতা মাত্র’ (আ‘রাফ ৭/২১)

সুতরাং আপনারা ইবলীস ও তার সাঙ্গপাঙ্গ এই সব মিথ্যুকদের সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকুন! জানি না শয়তান ও তার শিখন্ডীদের নিকট মানুষকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করার জন্য কত রকমের মিথ্যা ঈমানদারীর বাহানা, শঠতাপূর্ণ ওয়াদা সমূহ ও মিথ্যার চাকচিক্যে ঢাকা বাক্যসমূহ রয়েছে। আল্লাহ আমাকে ও আপনাদেরকে এবং সকল মুসলমানকে শয়তানদের কুহক হ’তে, পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তদের বিভ্রান্তি হ’তে এবং আল্লাহর শত্রু বাতিলপন্থীদের সৃষ্ট সন্দেহ-দ্বন্দ্ব হ’তে রক্ষা করুন! যারা আল্লাহর নূরকে ফুৎকারে নিভিয়ে দিতে চায় এবং মুসলমানদের নিকট তাদের দ্বীনকে সন্দেহপূর্ণ করে তুলতে চায়। অথচ আল্লাহ স্বীয় নূরের পূর্ণ বিকাশ চান এবং তাঁর মনোনীত দ্বীনের তিনিই স্বয়ং সাহায্যকারী। যদিও আল্লাহর চির দুশমন ইবলীস ও তার সাঙ্গপাঙ্গ কাফির ও নাস্তিকের দল তা অপসন্দ করে।

অতঃপর বিভিন্ন শরী‘আত বিরোধী কাজকর্মের প্রসার ঘটা সম্পর্কে উক্ত মিথ্যুক ব্যক্তি যা উল্লেখ করেছে, তা বাস্তব বিষয়। কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সুন্নাহ এ সম্পর্কে আমাদেরকে কঠিন হুঁশিয়ারী প্রদান করেছে। এ দু’টির মধ্যেই হেদায়াত নিহিত রয়েছে এবং এ বিষয়ে এ দু’টিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। দো‘আ করি আল্লাহ যেন মুসলমানদের অবস্থার সংশোধন করেন এবং তাদেরকে সত্য ও ন্যায়ের অনুসরণ ও তার উপর দৃঢ় থাকার তাওফীক দান করেন। সাথে সাথে তারা যেন যাবতীয় গোনাহ হ’তে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। কেননা তিনিই একমাত্র তওবা কবুলকারী, দয়ালু ও সকল কিছুর উপর একক ক্ষমতাবান।

অতঃপর ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ সম্পর্কে ঐ ব্যক্তি যে সকল কথার উল্লেখ করেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছ সমূহ সেই সকল আলামত সম্পর্কে স্পষ্ট বর্ণনা করেছে। কুরআনুল কারীম তার কিছু কিছুর প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করেছে। এক্ষণে যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের পূর্ব নিদর্শনাদি সম্পর্কে অবহিত হ’তে চায়, সে তা হাদীছের কিতাব সমূহে ও ঈমানদার বিদ্বানমন্ডলীর লেখনীর মধ্যে অবশ্যই পাবে। এর জন্য এই সকল মিথ্যুকদের কল্পকথার আশ্রয় নিতে হবে না, যা সন্দেহের তমিশ্রাযুক্ত এবং হক ও বাতিলের জগাখিচুড়ী মাত্র।

حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ، وَلاَ حَولَ وَلاَ قُوَّةَ إلاَّ بِاللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ،
وَالْحَمْدُ ِللهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وصَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ عَلَى عَبْدِهِ وَرَسُولِهِ الصَّادِقِ الأَمِينِ، وَعَلَى آلِهِ وَأَصْحَابِهِ وَأَتْبَاعِهِ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّينِ
-

আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি কতইনা সুন্দর তত্ত্বাবধায়ক। নেই কোন শক্তি, নেই কোন সামর্থ্য, সেই মহামহিমের সাহায্য ব্যতীত। অতএব বিশ্বচরাচরের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা এবং তাঁর বান্দা ও রাসূল, চিরসত্যের ঝান্ডাবাহী আল-আমীন মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবায়ে কেরাম এবং প্রলয় ঊষার উদয়কাল পর্যন্ত তাঁর দয়ায় আগত তাঁর সকল অনুসারীর প্রতি চিরশান্তির ফল্গুধারা বর্ষিত হৌক! আমীন!


[1]. প্রকাশ থাকে যে, মাননীয় লেখক একজন অন্ধ ব্যক্তি- অনুবাদক।

[2]. বুখারী হা/১০৯ ‘ইলম’ অধ্যায়-৩, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে মিথ্যারোপের পাপ’ অনুচ্ছেদ-৩৮।  

[3]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৩৫ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থাসমূহ ও সৃষ্টির সূচনা’ অধ্যায়-২৮ ‘হাশর’ অনুচ্ছেদ-২।