গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান

আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন

কোন এক দেশে নওশের নামে এক রাজা ছিল। সৈন্য-সামন্ত, হাতি-ঘোড়া, ধন-সম্পদে তার কোন তুলনা ছিল না। অঢেল সম্পদ, বিশাল সেনাবাহিনীর অধিকারী এ রাজার মনে বেশ অহংকার ছিল। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ছোট-খাট রাজা-বাদশাহদের সে মানুষ বলে মনেই করত না। তার ছিল এক অপরূপা সুন্দরী মেয়ে। একদিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাষ্ট্রীয় কাজে রাজা নওশেরের দরবারে আসে। পথিমধ্যে রাজকুমারীর সাথে মন্ত্রীর ছেলের সাক্ষাৎ হয়। দেশে ফিরে গিয়ে মন্ত্রীর ছেলে তার পিতার কাছে রাজা নওশেরের মেয়েকে বিবাহের কথা বলে। মন্ত্রী ছেলেকে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, সে বাদশাহর মেয়ে। বাদশাহ নওশের তোমার মতো সাধারণ একজন মন্ত্রীর ছেলের নিকট তার মেয়ে বিয়ে দিবেন না। তাছাড়া সে সোনার চামচ মুখে দিয়ে বড় হয়েছে। আর তুমি একজন মন্ত্রীর ছেলে মাত্র। তার চাহিদা তুমি পূরণ করতে পারবে না। ফলে সংসারে দুঃখ-দুর্দশা নেমে আসবে। জীবনে কখনো সুখ পাবে না। তুমি এ মেয়ের কথা বাদ দাও। আমি তোমাকে অন্য জায়গায় ভাল ও সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ের ব্যবস্থা করব। কিন্তু মন্ত্রীপুত্রের একই কথা- সে রাজকুমারীকেই বিয়ে করবে। অন্যথায় সে আত্মহত্যা করবে।

ছেলের কথা চিন্তা করে মন্ত্রী রাজা নওশেরের নিকটে যান। মন্ত্রী তার  পুত্রের  সাথে  রাজার  মেয়েকে  বিবাহ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। মন্ত্রীর প্রস্তাব শুনে রাগে রাজার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। রাজা বলে তোমার ধৃষ্টতা তো কম নয়। সাধারণ একজন উযীর হয়ে আমার মেয়েকে তোমার ছেলের জন্য চাইতে আসলে কোন সাহসে? তুমি এই মুহূর্তে এখান থেকে বেরিয়ে যাও। রাজা মন্ত্রীকে যারপর নাই অপমান করে তার দরবার থেকে বের করে দিলেন।

দেশে ফিরে মন্ত্রী স্বীয় পুত্রকে ঘটনা আদ্যোপান্ত বলে তাকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দিলেন। এদিকে রাজা নওশেরের অপমান সইতে না পেরে মন্ত্রী হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। পিতার মৃত্যুতে মন্ত্রীপুত্রও শোকে মুহ্যমান। সে দেশের রাজাও প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি মন্ত্রীপুত্রের নিকট থেকে মন্ত্রীর মৃত্যুর কারণ শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, বাদশাহ নওশেরের কিসের এত অহংকার, আল্লাহ চাইলে তার রাজত্ব অন্যকে দান করতে পারেন।

এর কিছুদিন পর বাদশাহ নওশের একদা কুরআন তেলাওয়াত করতে বসে সূরা আলে ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াত পড়লেন।

‘বলুন, হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও। আর যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর এবং যাকে ইচ্ছা অপমান কর। তোমার হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল’ (আলে ইমরান ২৬)

এ আয়াত পাঠ করে নওশের ভাবলেন, এটা কি করে সম্ভব? আমার এত সৈন্য-সামন্ত থাকতে কিভাবে আমার রাজ্য অন্যের করতলগত হবে? এটা হ’তে পারে না।

কিছুদিন পর রাজা নওশের পার্শ্ববর্তী রাজ্যের একটি এলাকা দখল করে নেন। একদিকে মন্ত্রীর মৃত্যু, অন্যদিকে রাজ্যের জমি অন্যায়ভাবে দখল করায় ঐ দেশের বাদশাহ নওফেল নওশেরের উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। নওফেল তার বন্ধু রাজা পারভেজের সহযোগিতায় নওশেরের দেশ আক্রমণ করেন। যুদ্ধে বাদশাহ নওশের পরাজিত হন এবং সপরিবারে বন্দী হয়ে বাদশাহ নওফেলের নিকট নীত হন। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখে এবং মন্ত্রীপুত্রের মনোবাসনা পূরণের জন্য রাজা নওশেরের কন্যার সাথে তার বিবাহ দেন। বিবাহে উপঢৌকন হিসাবে বাদশাহ নওফেল মন্ত্রীপুত্র আনজাসকে নওশেরের রাজ্যের প্রাদেশিক গভর্ণর নিযুক্ত করেন। আর মন্ত্রীপুত্র আনজাসের শ্বশুর হিসাবে বাদশাহ নওশেরকে মুক্ত করে দিয়ে যেখানে ইচ্ছা অবস্থানের সুযোগ দেন। রাজা নওফেলের এই মহানুভবতায় বাদশাহ নওশেরও মুগ্ধ হন। তিনি মুক্ত হয়ে আবার একদা কুরআন তেলাওয়াতের সময় সূরা আলে ইমরানের ঐ ২৬ নং আয়াত পর্যন্ত পৌঁছেন। তিনি এ আয়াত পড়ে কেঁদে আল্লাহর নিকট তওবা করেন এবং বিশ্বাস করেন যে, মহান আল্লাহ অসীম ক্ষমতার মালিক। তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন সময়ে বাদশাহকে ফকীর ও ফকীরকে বাদশাহ বানাতে পারেন।

শিক্ষা : আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা রাজত্ব ছিনিয়ে নেন। তেমনি ধন-সম্পদ, বিত্ত-বৈভব, প্রভাব-প্রতিপত্তি, মান-সম্মান যাকে ইচ্ছা দান করেন। কিন্তু তা পেয়ে অন্যের প্রতি অত্যাচার, অনাচার করা অনুচিত।