ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ

ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদার পরিণতি

(১) ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদা পোষণের ফলেই মুসলমানেরা খুশী মনে তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা বৈষয়িক জীবনে ইহূদী-নাছারাদের রচিত কুফরী আইনের গোলামী করছে। এই মতবাদ প্রচার করেই ইংরেজরা প্রায় দু’শো বছর ধরে শাসনশক্তি হারা ভারতীয় মুসলমানদেরকে ব্যক্তি জীবনে ধর্মীয় স্বাধীনতার সান্ত্বনা দিয়ে রাজনৈতিক গোলামীর শৃংখলে আবদ্ধ করে রেখেছিল। আজও নামকাওয়াস্তে ভৌগলিক স্বাধীনতা এলেও এবং শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইংরেজদের রেখে যাওয়া ত্বাগূতী আইনে শাসিত হচ্ছে এবং আইন ও বিচার বিভাগ সহ প্রায় সর্বক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের গোলামী করে যাচ্ছে। তাদের রেখে যাওয়া আইনেই আমাদের জেল-ফাঁস হচ্ছে। যে আইনে আখেরাতে মুক্তির কোন লক্ষ্য নির্ধারিত নেই।

(২) এই আক্বীদা পোষণের ফলে একজন মুসলমান তার আধ্যাত্মিক জীবনে আল্লাহর আইন ও বৈষয়িক জীবনে মানব রচিত আইনের দ্বারা পরিচালিত হয়। যা পরিষ্কারভাবে শিরকের পর্যায়ভুক্ত (ফুরক্বান ২৫/৪৩-৪৪)

(৩) এই আক্বীদা পোষণের ফলে একজন পাক্কা মুছল্লীও বৈষয়িক জীবনে হারাম-হালালের তোয়াক্কা করে না। তার দ্বীন তার দুনিয়াবী জীবনের উপরে কোন প্রভাব ফেলে না। সূদ, ঘুষ, জুয়া, লটারী, কালোবাজারী, মওজুদদারী, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি সবকিছুই তার নিকটে সিদ্ধ বলে গণ্য হবে। কেননা এসবই তার দৃষ্টিতে স্রেফ দুনিয়াবী ব্যাপার। যেখানে ধর্মের কোন প্রবেশাধিকার নেই।

(৪) ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনের উপরে বিশ্বাস স্থাপনের ফলে মুসলমানরা ইসলামকে অপূর্ণ ও সেকেলে ভাবতে শুরু করেছে। চৌদ্দশো বছরের পুরানো ইসলাম এযুগে অচল বলতেও তাদের জিহবা আড়ষ্ট হয় না। ফলে বৈষয়িক ব্যাপারে তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট থেকে ফায়ছালা গ্রহণ করছে, যাকে ‘ত্বাগূত’ বলা হয়। অথচ যা থেকে বিরত থেকে সার্বিক জীবনে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্য মুসলিম উম্মাহকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (নিসা ৪/৬০)। আর এটাই হ’ল তাওহীদে ইবাদতের মূল কথা ও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র মূল দাবী।

(৫) এই দর্শন মুসলিম জীবনকে দ্বীন ও দুনিয়া দু’ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। অথচ তা পৃথক হ’লেও বিভক্ত নয়। যেমন হাত ও পা পৃথক হ’লেও তা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। অতএব দ্বীন ও দুনিয়া দু’টিই মুমিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ এটি না বুঝার কারণে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানদের মত মুসলমানদের মধ্যেও একটা সুবিধাবাদী ধর্মীয় শ্রেণী গড়ে উঠেছে। যারাই কেবল ‘দ্বীনদার’ হিসাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। পক্ষান্তরে যারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা সার্বিক জীবনে আল্লাহ প্রেরিত অহি-র বিধান কায়েমে সোচ্চার হয়, তাদেরকে মৌলবাদী, জঙ্গী ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়। ইতিপূর্বে ইংরেজরা যেমন ‘জিহাদ আন্দোলনে’ নেতৃত্ব দানকারী আহলেহাদীছদেরকে ‘ওয়াহহাবী’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল এবং জেল-যুলুম, ফাঁসি-দ্বীপান্তর, সম্পত্তি বাযেয়াফ্ত ইত্যাদি নির্যাতন যাদের নিত্যদিনের সাথী ছিল। আজও তেমনি তাদেরকে লা-মাযহাবী, রাফাদানী ইত্যাদি বলে তাচ্ছিল্য করা হয় ও সমাজে কোনঠাসা করার চেষ্টা করা হয়। একজন ব্যক্তি খ্রিষ্টান হয়ে গেলেও কাউকে কিছু বলতে শোনা যায় না। কিন্তু কেউ ‘আহলেহাদীছ’ হলে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় সামাজিক বয়কট ও চারদিক থেকে ধর-মার-কাট অবস্থা। এমনকি মসজিদ থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।