ইহসান ইলাহী যহীর

তাহরীকে ইস্তেকলাল পার্টিতে যোগদান

রাজনৈতিক তৎপরতা ও জ্বালাময়ী ভাষণের কারণে আল্লামা যহীর ভুট্টো সরকার বিশেষত পাঞ্জাবের তদানীন্তন গভর্ণর গোলাম মোস্তফা খার-এর কোপানলে পড়েন। পাকিস্তানের প্রায় সকল শহরেই তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়। একা তাঁর পক্ষে এ সকল মামলার মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব ছিল। তাঁর ভাষায়, ‘মোকদ্দমাগুলো পরিচালনার জন্য প্রত্যেক শহরে উকিলের প্রয়োজন হ’ত। আমি চিন্তা করলাম, আমাকে কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে হবে। আমি এয়ার মার্শাল আছগর খানের ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত ছিলাম। আমি (১৯৭২ সালে) ‘তাহরীকে ইস্তেকলাল’ পার্টিতে যোগদান করি এবং আমাকে এ পার্টির কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক বানানো হয়। ১৯৭৭ সালের আন্দোলনের সময় আমি তাহরীকে ইস্তেকলাল-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধানও ছিলাম’।

১৯৭৮ সালে নিম্নোক্ত কারণে তিনি এ দল ত্যাগ করেন। এক- উক্ত পার্টিতে যোগদানের পর আছগর খানের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতা লক্ষ্য করেন। তিনি খেয়াল করেন যে, আছগর খান চামচা স্বভাবের লোকদের বেশী পসন্দ করেন। যারা তাঁর সব কথায় ‘জো হুকুম’ বলে কপট আনুগত্য প্রকাশ করে। এ ধরনের লোকদেরকেই তিনি দলের সক্রিয় (?) নেতা-কর্মী বলে মনে করতেন। দুই- উক্ত পার্টি ত্যাগ করার দ্বিতীয় কারণ ছিল মালেক উযীর আলী। যহীর বলেন, ‘ইনি এক আজব কিসিমের লোক ছিলেন। যখনই দলের উপর কোন ঝক্কি-ঝামেলা আসত, তখনই ইনি ছুটি নিতেন’। ইনিও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন না। সেজন্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী যারা দলে ছিল তাদের বিরুদ্ধে আছগর খানের কান ভারি করতেন। তাছাড়া তিনি সমাজতান্ত্রিকও ছিলেন। ইসলামকে মোটেই সহ্য করতেন না। তিনি আছগর খানকে ক্ষমতা দখলের চোরাগলি দেখাতেন। ফলে আছগর খানও তার প্ররোচনায় ক্ষমতা লাভের নেশায় মদমত্ত হয়ে ওঠেন।  ক্ষমতার জন্য তার যেন আর তর সইছিল না। ভুট্টোর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য মনে করতে থাকেন। জেনারেল যিয়াউল হক তার এই উচ্চাভিলাষ অাঁচ করতে পেরে তাকে প্রধানমন্ত্রী করার লোভ দেখান। এতে তিনি যিয়াউল হকের কাছে ঘেঁষতে থাকেন। এদিকে যিয়াউল হক তাঁর ক্ষমতা নিষ্কণ্টক ও মার্শাল ল’ প্রলম্বিত করার জন্য ভুট্টোর পতনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী রাজনৈতিক জোট ‘পাকিস্তান কওমী ইত্তেহাদ’ (Pakistan National Alliance) ভেঙ্গে যাক তা মনে-প্রাণে কামনা করছিলেন। তাই তিনি আছগর খানকে ইরান সফরে গিয়ে ইরানী প্রেসিডেন্ট রেযা শাহ পাহলভীর এন.ও.সি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) নিয়ে আসতে বলেন। ইরান থেকে ফিরে আছগর খান ‘কওমী ইত্তেহাদ’-এর সাথে ‘ইস্তেকলাল পার্টির’ সম্পর্কহীনতা ঘোষণা  করেন।  ফলে  রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে  যহীর ইস্তেকলাল পার্টি ত্যাগ করেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমার নিকট ঐ দুঃসময়ে ‘কওমী ইত্তেহাদ’-এর সাথে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা জাতির সাথে বড় ধরনের গাদ্দারীর শামিল ছিল’।[2]

সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা অবস্থায় তিনি কখনো আপোষকামিতাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দিতেন না। কোন লোভ-লালসা তাঁকে কখনো স্পর্শ করেনি। জেনারেল যিয়াউল হক তাঁকে ধর্মমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[3]



[1]. ১৯৭২ সালের ১লা মার্চ রাওয়ালপিন্ডিতে এই পার্টির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। এয়ার মার্শাল আছগর খান এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে এটি ‘গণঐক্য আন্দোলন’ নামে পরিচিত ছিল। দ্রঃ Nadeem Shafiq Malik, The formation of the Tehrik-i-Istiqlal and the General Elections of 1970, Pakistan Journal of History and Culture, Vol. 13, No. 2, July-December 1992, National Institute of Historical and Cultural Research, Islamabad, Pakistan, p. 89-92.

[2]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫৪-৫৫।

[3]. The Life of Shaykh Ihsan Ilahi Zahir, P. 78.