بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده ونصلى على رسوله الكريم أما بعد:
ভূমিকা
হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বিষাদ, মিলন ও বিচ্ছেদ মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য সাথী। সবকিছুকে সমন্বয় করেই মানুষ তার চূড়ান্ত ঠিকানার দিকে এগিয়ে চলে। এভাবে চলার পথে তার জীবন চাকা যাতে পথ হারিয়ে গতিহীন না হয়ে পড়ে, সেজন্য সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা আল্লাহর পক্ষ হ’তে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের সুনির্দিষ্ট পথনির্দেশ প্রেরিত হয়েছে। সেই পথনির্দেশ বা হেদায়াত মেনে চললে জীবনের গাড়ী সঠিক পথে চলবে। নইলে পথভ্রষ্ট হয়ে ধ্বংস হবে। মানুষের পারিবারিক জীবন দু’জন অচেনা নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি কৌশলের কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয়। সৃষ্টির স্বাভাবিক গতি হ’ল সেটাই। কিন্তু কখনো কখনো সেখানে সৃষ্টি হয় বিভেদ, যার পরিণতিতে আসে বিচ্ছেদ। যেটি আল্লাহর কাম্য নয়। কিন্তু তিনি সেটা হ’তে দেন অন্যদের শিক্ষা হাছিলের জন্য এবং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও তার জ্ঞানের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য।
আল্লাহর অপসন্দনীয় বস্ত্ত সমূহের অন্যতম হ’ল স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ বা ‘তালাক’ ব্যবস্থা। কিন্তু তিনি তালাককে সিদ্ধ করেছেন এবং তার জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলী দান করেছেন। সেই নিয়মের বাইরে গেলেই দেখা দেয় বিকৃতি। প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। তালাক ও তাহলীল অমনিভাবে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার নাম। তিন তালাক তিন মাসে না দিয়ে এক মজলিসে তিন তালাক বায়েন দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে হারামকে হালাল করার নোংরা কৌশল হিসাবে ‘তাহলীল’ বা হিল্লা প্রথা। জাহেলী যুগের আরবরা এ কাজ করত। ইসলাম এসে তা নিষিদ্ধ করে। অথচ উম্মতের কিছু বিদ্বানের মতামতের উপর ভিত্তি করে ফেলে আসা সেই জাহেলিয়াত পুনরায় মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে। ফলে অসংখ্য মুসলিম নারী-পুরুষ আজ এই অন্যায় প্রথার শিকার হচ্ছে। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা পেশ করেছি। যাতে মানুষ জানতে পারে যে, ‘হিল্লা’ কখনোই ইসলামী প্রথা নয়। এটি স্রেফ একটি জাহেলী কুপ্রথা মাত্র। যার মূলোৎপাটন করা আমাদের আশু করণীয়।[1]
[1]. উল্লেখ্য যে, ২০০০ সালের ২রা ডিসেম্বর নওগাঁ যেলার এক পল্লীতে হিল্লা-র একটি ঘটনা নিয়ে দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। হাইকোর্ট ‘হিল্লা’সহ সকল প্রকারের ফৎওয়া অবৈধ ও দন্ডনীয় অপরাধ বলে রায় দেন (রিট আবেদন নং ৫৮৯৭/২০০০, রায় ১.১.২০০১ ইং)। এ সময় আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরি এবং তা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অতঃপর মাসিক আত-তাহরীক ২০০১-এর ফেব্রুয়ারী (৪র্থ বর্ষ ৫ম) সংখ্যায় দরসে কুরআন ও দরসে হাদীছ বিভাগে ‘তালাক’ ও ‘হিল্লা প্রথা’র উপরে যথাক্রমে দু’টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। বর্তমান পুস্তিকাটি মূলতঃ উক্ত নিবন্ধদ্বয়ের সমষ্টি। -প্রকাশক।