بسم الله الرحمن الرحيم
প্রকাশকের নিবেদন
মানবেতিহাসের সর্বাধিক পঠিত ধর্মগ্রন্থ হ’ল ‘কুরআন’। প্রায় দেড় হাযার বছর পূর্বে শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নবুঅতী জীবনের দীর্ঘ ২৩টি বছরে থেমে থেমে নাযিল হওয়া এই মহাগ্রন্থই মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ হেদায়াতবাণী। মানবজাতির ইহকালীন সফলতা এবং পরকালীন মুক্তি এই গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের উপর নির্ভরশীল। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ও সৃষ্টিজগতের মধ্যে সেতুবন্ধনের জীবন্ত স্মারক এই মহাগ্রন্থের মাধ্যমে আল্লাহ রাববুল আলামীন মানবজাতিকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
বিশ্বজনীন ধর্মগ্রন্থ হিসাবে পবিত্র কুরআনের বিষয়বস্ত্ত স্বাভাবিকভাবেই অতি বিস্তৃত ও বহুমুখী। মানবজাতির জন্য প্রয়োজনীয় এমন কিছুই নেই, যা এই মহাগ্রন্থে বিবৃত হয়নি। জ্ঞানের সমস্ত দিক ও বিভাগের দুয়ার খুলে দিয়েছে এই গ্রন্থের প্রতিটি আয়াত ও শব্দ।
পবিত্র কুরআনের মর্মার্থ সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম ও পরবর্তী ওলামায়ে কেরাম সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন তাঁদের তাফসীর ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে। যার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ থেকেছে পরবর্তী সকল যুগে ও সমাজে। তবে বাংলাভাষায় তাফসীর চর্চার ইতিহাস খুব বেশী দিনের নয়। তদুপরি যতটুকু হয়েছে, তার অধিকাংশই বিভিন্ন মাযহাব ও মতাদর্শগত ব্যাখ্যার সংকীর্ণ গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে নি। সেকারণ বাংলাভাষায় পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক একটি বিশুদ্ধ তাফসীরের চাহিদা ছিল বহুদিনের। বিশেষতঃ বর্তমান সময়ে এই প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে আরো তীব্রভাবে। যখন আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে এদেশের মুসলিম সমাজে প্রচলিত মাযহাব ও মতাদর্শগত বিভক্তি থেকে মুক্ত হয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের সহজ-সরল ও স্বচ্ছ বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণের চেতনা দিন দিন প্রসার লাভ করছে।
এমনি মুহূর্তে অনেক দেরীতে হলেও বহু প্রতীক্ষিত ‘তাফসীরুল কুরআন’ (৩০তম পারা) জাতির সামনে পেশ করতে পেরে আমরা আল্লাহ রাববুল আলামীনের অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। সম্মানিত লেখক বগুড়া যেলা কারাগারে অবস্থানকালে অন্যান্য লেখনীর সাথে সূরা বাক্বারাহর অধিকাংশ এবং আম্মাপারার তাফসীর সম্পন্ন করেন। জেল থেকে বেরিয়ে এসে কঠিন সাংগঠনিক ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে মুহতারাম লেখকের হাতে যাচাই-বাছাই হওয়ার পর তাফসীরটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হ’ল। ফালিল্লাহিল হাম্দ। গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে প্রকাশনার ক্ষেত্রে ৩০তম পারাটি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বাকি পারাগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। আমরা মাননীয় লেখকের জন্য আল্লাহর নিকট হায়াতে ত্বাইয়েবা প্রার্থনা করছি এবং আন্তরিকভাবে দো‘আ করছি যেন তিনি এই মহান খেদমতটি সফলভাবে সমাপ্ত করতে পারেন- আমীন!
বাংলাভাষায় কুরআনের অনুবাদ ও তাফসীর মূলতঃ একটি কঠিন ও জটিল কাজ। সেই আয়াসসাধ্য ও ব্যাপক কাজটি সংক্ষেপে ও সহজ-সরল উপস্থাপনার মাধ্যমে মাননীয় লেখক পাঠকের হৃদয়ে পৌঁছে দেয়ার যে কঠিন ব্রত গ্রহণ করেছিলেন, তা সফল হয়েছে বলেই আমাদের বিশ্বাস। পবিত্র কুরআনকে সমকালীন সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিত্য-নতুন তথ্যের সমাবেশ ঘটিয়ে লেখক মুসলিম সমাজের সামনে জ্ঞানের যে নব দিগন্ত উন্মোচন করতে চেয়েছেন, তা ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশাবাদী। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ৩০ কোটি বাংলাভাষী মুসলমান এ থেকে প্রভূত কল্যাণ লাভে সমর্থ হবেন ইনশাআল্লাহ।
যারা এই প্রকাশনার কাজে আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন, সহযোগিতা করেছেন, তাদের সকলকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সকলের প্রচেষ্টাকে কবুল করে নিন- আমীন!
বর্তমান ২য় সংস্করণে মাননীয় লেখক সূরা ফাতিহার তাফসীরে সামান্য সংযোজন করেছেন এবং বাকীগুলিতে ছোট-খাট ত্রুটি সংশোধিত হয়েছে। যথাসত্বর অত্র সংস্করণটি পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পারায় আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
অধ্যাপক আব্দুল লতীফ
সচিব
হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ