জিহাদ কাদের উপরে ফরয ও কাদের উপরে নয়
সুস্থ, বয়ঃপ্রাপ্ত ও জ্ঞানসম্পন্ন মুসলিম পুরুষের উপরে জিহাদ ফরয, যখন তার নিকটে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের বাইরে জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় রসদ, সুযোগ ও সামর্থ্য থাকবে।[1] জিহাদ ফরয নয় কোন অমুসলিমের উপর, দুর্বলের উপর, নারী ও রোগীর উপর, শিশু ও পাগলের উপর। এইসব লোকদের কেউ জিহাদ থেকে দূরে থাকলেও তাদের উপর কোন দোষ বর্তাবে না। বরং জিহাদে এদের উপস্থিতি উপকারের চাইতে ক্ষতির কারণ বেশী হবে। আল্লাহ বলেন,لَيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلاَ عَلَى الْمَرْضَى وَلاَ عَلَى الَّذِينَ لاَ يَجِدُونَ مَا يُنْفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا ِللهِ وَرَسُولِهِ ‘দুর্বলদের উপর, রোগীদের উপর, ব্যয়ভার বহনে অক্ষমদের উপর (জিহাদ থেকে দূরে থাকায়) কোন দোষ নেই, যখন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি খালেছ অনুরাগ পোষণ করে’... (তওবাহ ৯/৯১)।
(ক) শিশু : আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, ওহোদের যুদ্ধে যোগদানের জন্য আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে গেলাম, তখন আমার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন না।[2] কেননা জিহাদ একটি ইবাদত, যা বয়ঃপ্রাপ্ত ব্যতীত অন্যদের উপরে ফরয নয়।[3]
(খ) নারী : হযরত আয়েশা (রাঃ) একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মেয়েদের জন্য কি জিহাদ নেই? রাসূল (ছাঃ) বললেন, অবশ্যই আছে। তবে সে জিহাদে ক্বিতাল নেই (অর্থাৎ পরস্পরে যুদ্ধ নেই)। সেটি হ’ল হজ্জ ও ওমরাহ’।[4] হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! পুরুষেরা যুদ্ধ করে, অথচ আমরা করি না। সম্পত্তির অংশ বণ্টনেও আমরা পুরুষের অর্ধেক পাই। তখন নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়, وَلاَ تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ‘তোমরা এমন সব বিষয় আকাংখা করো না, যেসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদেরকে একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে, সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে, সেটা তার অংশ। তোমরা আল্লাহর নিকটে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত’ (নিসা ৪/৩২)। অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর উপার্জন তাদের নিজস্ব। তাদের যোগ্যতা ও কর্মক্ষেত্র পৃথক ও সুনির্দিষ্ট। অতএব একে অপরের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার আকাংখা করবে না। প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করলে সে পূর্ণ নেকীর হকদার হবে।[5]
নারী ও পুরুষের লিঙ্গ বৈষম্য দূর করার প্রবক্তাগণ ও তথাকথিত সাম্যের দাবীদারগণ আল্লাহর উক্ত বিধান মানবেন কি?[1]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৮৫।
[2]. বুখারী ও মুসলিম; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৮৬।
[3]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৮৫।
[4]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/২৫৩৪।
[5]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৮৬ টীকা-১।