ঐক্য দর্শন[1]
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজ ব্যতীত সে বাঁচতে পারে না। আর সমাজ থাকলে সেখানে ঐক্য চেতনা থাকবেই। যদিও সেখানে অনৈক্যের চেতনাও থাকে। চিন্তা ও চেতনার ঐক্য মানুষকে সামাজিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করে। একইভাবে অনৈক্য তাকে বিভক্ত ও দুর্বল করে। মানুষের মধ্যে মতভেদ সাধারণতঃ দু’প্রকারের হয়ে থাকে। এক- স্বভাবগত মতভেদ, যা থেকে মুক্তি পাবার ক্ষমতা মানুষের নেই। মানুষের কল্যাণের স্বার্থেই আল্লাহ এটা করেছেন। যেমন একই বিষয়ে পাঁচ জনের পাঁচটি মত আসলো। দেখা গেল তার মধ্যে একটি মত অধিকতর কল্যাণবহ। তখন সকলে সেটা গ্রহণ করল ও উপকৃত হ’ল। এভাবে জ্ঞান ও বুঝের ভিন্নতার মধ্যেই সমাজের মঙ্গল ও অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। কেউ বিজ্ঞান ভাল বুঝেন, কেউ ব্যবস্থাপনা ভাল বুঝেন, কেউ ব্যবসা ভাল বুঝেন। আবার একই বিষয়ে কেউ বেশী কেউ কম বুঝেন। এভাবেই সমাজ এগিয়ে চলে। এসব মতভেদ তাই কল্যাণকর। আল্লাহ বলেন, ‘এজন্যেই তিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন’ (হূদ ১১/১১৮)।
মতভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টির দ্বিতীয় কারণ হ’ল আল্লাহর বিধানের উপর মানবীয় বিধানকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এটাই মানব সমাজকে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত করে। কেননা এটি হেদায়াতের আলোকবর্তিকাকে ঢেকে দেয়, যা আসমান থেকে যমীনে অবতীর্ণ হয়েছিল প্রবৃত্তিপরায়ণতার অনিষ্টকারিতা হ’তে মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্যে। মানুষের জ্ঞান সীমিত। সে জানেনা তার ভবিষ্যৎ প্রকৃত মঙ্গল কিসে আছে? তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এই যে, তাকে পথ চলার জন্য আল্লাহ যে সামান্য জ্ঞান দিয়েছেন, তাতেই সে নিজেকে বড় জ্ঞানী ভাবে ও নিজের সিদ্ধান্তকেই নিজের জন্য সবচেয়ে কল্যাণকর মনে করে। অথচ তার প্রকৃত কল্যাণ কিসে, সেকথা তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেনা। আর এজন্যেই মানুষকে সমবেতভাবে আল্লাহর রজ্জুকে ধারণ করার জন্য আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন (আলে ইমরান ৩/১০৩)। ঐ রজ্জু ছেড়ে দিলে মানুষ ছিটকে পড়বে অনৈক্য ও অশান্তির হুতাশনে, যেখান থেকে সে আর উঠে আসতে পারবে না, আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ব্যতীত। ঐ রজ্জু হ’ল পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ। মানুষ যাতে ঐ রজ্জু থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়, সেজন্য তিনি কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা ফের্কায় ফের্কায় বিভক্ত হয়েছে এবং তাদের কাছে স্পষ্ট বিধান সমূহ এসে যাওয়ার পরেও নিজেদের মধ্যে মতভেদ করেছে। বস্ত্ততঃ ওদের জন্য রয়েছে কঠিনতম শাস্তি’ (আলে ইমরান ৩/১০৫)। যারা ঐ রজ্জুধারী হবে, তারা পরস্পরে মহববত ও ভালোবাসার মাধ্যমে একটি দেহের ন্যায় সুসংবদ্ধ ও শক্তিশালী হবে। একটি দালানের সিমেন্ট ঢালা ইটের ন্যায় একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকবে। দেহের একটি অঙ্গে আঘাত হ’লে আরেকটি অঙ্গ ব্যথাতুর হবে। নিদ্রায় ও জাগরণে সর্বদা পরস্পরের সমব্যথী হবে। তারা সর্বদা উক্ত রজ্জু বিরোধীদের বিরুদ্ধে আপোষহীন হবে এবং নিজেদের মধ্যে রহমদিল হবে।
এক্ষণে আল্লাহ প্রেরিত ঐক্যদর্শন হ’ল আমরা সবাই এক আদমের সন্তান। কারু উপরে কারু প্রাধান্য নেই আল্লাহভীরুতা ব্যতীত। অতএব সকলের প্রতি বিনয় ও সহনশীলতাই হবে মানবীয় ঐক্যের ভিত্তি। যে ভিত্তির উপরে দাঁড়িয়ে মানুষকে আহবান জানানো হয় তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি এবং তাঁর প্রেরিত রাসূলের অনুসরণের প্রতি। যারা সে আহবানে সাড়া দিবে, তারা আমার ভাই। আর যারা সাড়া দিবে না, তাদের প্রতি কোন যবরদস্তি নেই। তবে একথা তাদের নিকট স্পষ্ট করে দিতে হবে যে, আল্লাহর আনুগত্যেই উত্থান ও তাঁর অবাধ্যতায় পতন অবশ্যম্ভাবী। আর সে আনুগত্যের জন্য আক্বীদা ও আমলে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী হওয়া এবং ছাহাবায়ে কেরাম ও মুহাদ্দেছীনের বুঝ অনুযায়ী দ্বীনের বুঝ হাছিল করা আবশ্যক। এর বাইরে গেলে শয়তানী খপ্পরে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাবে।
ইসলাম একটি সামাজিক ধর্ম। জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন ইসলামের মৌলিক নির্দেশাবলীর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু নানা কারণে এখানে সকল মুসলমান এক জামা‘আতভুক্ত নয় বা হ’তে পারে না। যদি কারণগুলি পরস্পরে বিদ্বেষমূলক ও শত্রুতামূলক হয় এবং ইসলামী আদর্শের বাইরে বিজাতীয় কোন আদর্শের বাস্তবায়ন লক্ষ্য হয়, তাহ’লে ঐসব দল ও সংগঠন জাহেলিয়াতের সংগঠন হবে এবং ঐসবের অন্তর্ভুক্ত সকলে আল্লাহর নিকট দায়ী হবে। হাদীছে এদেরকে ‘জাহান্নামী দল’ বলা হয়েছে। যদিও এরা ছালাত আদায় করে, ছিয়াম পালন করে ও ধারণা করে যে, তারা মুসলিম (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩৬৯৪)। আর যদি কোন সংগঠনের উদ্দেশ্য বিশুদ্ধ ইসলামের প্রচার-প্রসার ও সে আলোকে সমাজ সংস্কার হয়, তাহ’লে তা হবে সত্যিকারের ইসলামী সংগঠন। তার সংখ্যা একাধিক হ’লেও তা দোষের হবে না। বর্তমান কম্পিউটার যুগে এইসব সংগঠন দ্রুত একত্রিত হ’তে পারে এবং যেকোন ইসলামী বিষয়ে দ্রুত পরামর্শ করে ঐক্যবদ্ধ লক্ষ্যে উপনীত হ’তে পারে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে, এদেশে সেক্যুলার সংগঠনগুলির চাইতে ইসলামী সংগঠনগুলির নেতা-কর্মীরা যেন মনে হয় অধিক দুনিয়াদার। ‘মত পার্থক্যসহ ঐক্য’ ফর্মুলা অনুসরণ করে দীর্ঘ সিকি শতাব্দীর অধিককাল ধরে (১৯৭৮-২০০৫) একটি ইসলামী দলের ঐক্য প্রচেষ্টা এবং জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের পরলোকগত খতীবের আন্তরিক প্রচেষ্টার (১৯৯৮-২০০৫) ব্যর্থতার যে কারণগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সারকথা দাঁড়ায় একটাই, ‘দুনিয়া’। স্রেফ দুনিয়াবী স্বার্থের কারণেই দেশের ইসলামী নেতৃবৃন্দ এক প্লাটফরমে আসতে পারেননি। এই ব্যর্থতার একটা মৌলিক কারণ নির্দেশ করা যায়। সেটি হ’ল তাদের পুরা চেষ্টাটাই ছিল ক্ষমতাকেন্দ্রিক। কীভাবে সেক্যুলারদের হটিয়ে ইসলামী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো যায়, অথবা সেক্যুলারদের সাথে ক্ষমতার ভাগাভাগি করা যায়, সেটাই ছিল তাদের দীর্ঘ ঐক্য প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য। এর ফলে তারা দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা ও বিভেদের বীজ তাদের অজান্তেই বপন করেছেন। তার চাইতে যদি তাঁরা সমাজ সংস্কারকে লক্ষ্য বানাতেন এবং কথিত সেক্যুলার নেতাদেরকে প্রতিদ্বন্দ্বী না ভেবে তাদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরতেন, তাহ’লে তারা আদৌ সেক্যুলার থাকতেন কি-না সন্দেহ। আলেমগণ ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায় না গিয়ে অভিভাবকের ভূমিকায় থাকলে এবং প্রচলিত পুঁজিবাদী ও পাশ্চাত্যের দুনিয়াদার রাজনীতির নৌকায় চড়ে ইসলাম কায়েমের দুঃস্বপ্ন না দেখলে এদেশে ইসলামের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেত।
বিষ্ময়কর এই যে, এইসব ইসলামী নেতারাই আবার সেক্যুলার নেতাদের সাথে জোট করার জন্য ও তাদের করুণায় মন্ত্রী হবার জন্য লালায়িত হন। আর যদি মন্ত্রী হ’তে পারেন, তখন তাদের প্রধান টার্গেট হয় সমমনা আরেকটি ইসলামী দল বা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা। দলীয় সংকীর্ণতার চরম পরাকাষ্ঠা তারা যা দেখিয়ে থাকেন, সেক্যুলার নেতারাও তাতে লজ্জা পান। একথা সকলেই স্বীকার করেন যে, প্রচলিত রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিচারনীতি সবটাই ইসলাম বিরোধী ও মানবতা বিরোধী। বামপন্থীরাই বরং এ ক্ষেত্রে বেশী সোচ্চার। অতএব ইসলামী সংগঠনগুলির দায়িত্ব হ’ল এই প্রতারণাপূর্ণ ও পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। কিন্তু তারাই যদি ঐসব ইসলাম বিরোধী আদর্শের সঙ্গে আপোষ করেন এবং সেগুলির মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের শপথ নেন, তবে সেটা স্রেফ ময়লার ড্রেনে নেমে গায়ে সাবান দেওয়ার মত হবে।
আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালন সংগঠন ব্যতীত সম্ভব নয়। এমনকি ছহীহ হাদীছের একটি বিধান ব্যক্তি জীবনে কায়েম করতে গেলেও সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োজন। সাংগঠনিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি ছহীহ হাদীছের বিধান দ্রুতবেগে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়ে যায় স্রেফ একটি নির্দেশনার মাধ্যমে। অতএব সব দলের নেতাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য বানিয়ে পর্যায়ক্রমে নেতা বানানোর সুযোগ দিয়েও একই মাযহাবের আলেমদের ঐক্যবদ্ধ করতে না পারার দীর্ঘ প্রচেষ্টার ব্যর্থতা হাদীছপন্থী হবার দাবীদারগণের সাবধান হওয়ার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করি। যদিও পথভ্রষ্ট আলেমদের তওবা করে ফিরে আসার নযীর ইতিহাসে একেবারেই বিরল।
বর্তমানে জামা‘আতী যিন্দেগীর বিরুদ্ধে দু’ধরনের প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা অনেক দ্বীনদার ভাই-বোনকে সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। এক- এর ফলে সমাজে বিভক্তি ও বিশৃংখলা বৃদ্ধি পায় এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনায় শিরক ও বিদ‘আতের ব্যাপকতা বেড়ে যায়। দুই- একাকী ছহীহ হাদীছ মেনে চলে ভাল মুসলমান হওয়াই যথেষ্ট নিরাপদ ও সমাজের জন্য কম ক্ষতিকর’। দু’টির পিছনেই কম-বেশী যুক্তি রয়েছে। কিন্তু দু’টিই কুরআন-হাদীছের বিরোধী। কেননা ইসলামের পুরো বিধানই সামষ্টিক। এমনকি ছালাত আদায় করলেও একাকীর চাইতে জামা‘আতে ছালাতের নেকী ২৭গুণ বেশী। যদিও একাকী ছালাতে আল্লাহর প্রতি মনোযোগ বেশী দেওয়া যায়। তিনজনে সফরে গেলেও একজনকে ‘আমীর’ বানিয়ে সুশৃংখলভাবে সফরের নির্দেশ এসেছে হাদীছে। ‘আল্লাহর হাত রয়েছে জামা‘আতের উপরে’। ‘জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিকে বাঘে ধরবে’ বলে হাদীছে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। ‘শক্তিশালী মুমিনকে দুর্বল মুমিনের চাইতে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়’ বলা হয়েছে। এমনকি একটি রাত ও একটি দিন আমীরবিহীন বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরপরই তাঁর জানাযার চাইতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় ‘খলীফা’ নির্বাচনকে। উপরোক্ত সব নির্দেশনা সাংগঠনিক জীবনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে। অতঃপর সংগঠনের মাধ্যমে শিরক-বিদ‘আতের প্রচলন যেমন সহজ হয়, তার উৎসাদন করাও তেমনি সহজ হয়। অতএব এ যুক্তি ধোপে টিকে না। দ্বিতীয়তঃ একাকী ভাল থাকার যুক্তি আরও হাস্যকর। কেননা তখন তাকে গাইড করার কেউ থাকে না। ফলে এক সময় সে স্বেচ্ছাচারিতার শয়তানী খপ্পরে পড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এর অসংখ্য নযীর ভুক্তভোগীদের সামনেই রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই যে, তার এ একাকী বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পসন্দনীয় নয়। অতএব তা কোন দ্বীনদার ব্যক্তির পসন্দনীয় হ’তে পারে না।
ইসলামে ফির্কাবন্দী নিষিদ্ধ করা হয়েছে (আলে ইমরান ৩/১০৫)। সেগুলি ঐ ফের্কা যা মন্দ উদ্দেশ্যে গঠিত হয়। যদিও মুখে সবাই সুন্দর কথা বলে থাকে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা যাদের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী এবং যতক্ষণ তারা কর্মতৎপর থাকবে, ততক্ষণ সেখান থেকে বের হয়ে যাবার কোন অবকাশ যেমন নেই, তেমনি পৃথক দল গঠনেরও কোন সুযোগ নেই। সেটা করলে স্রেফ দলবাজি হবে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ (আন‘আম ৬/১৫৯)। হিংসা ও অহংকার নামক দু’টি নিকৃষ্ট রোগ যার মধ্যে প্রবল, তার ইহকাল ও পরকাল দু’টিই বরবাদ (মুসলিম হা/৯১)। অতএব পরস্পরের বিরুদ্ধে গীবত-তোহমত, অপবাদ ও মিথ্যা রটনা কখনোই কোন ইসলামী কর্মসূচী হ’তে পারে না। যারা এসব করে ও এতে আনন্দ পায়, তাদের চাইতে হতভাগা আর কেউ নেই। এখানে কোন্ দল আগের ও কোন্ দল পরের, সেটা দেখার বিষয় নয়। বরং দেখার বিষয় হ’ল কোন্ সংগঠন পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের কতটুক অনুসারী এবং কথায় ও কাজে মিল কতটুকু ও তারা কতটুকু কর্মতৎপর, সেটা যাচাই করা। এর বাইরে মূল্যায়নের আর কোন মানদন্ড নেই।
কুরায়েশদের কাছে ইবরাহীমী ধর্মের বড়াই ছিল। তারা নিজেদেরকে ‘আহলুল্লাহ’ বলত। সেকারণ তারা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ‘ছাবেঈ’ (ধর্মত্যাগী) ‘সমাজে বিভক্তি সৃষ্টিকারী’ বলে অপবাদ দিয়েছিল। অথচ কুরায়েশ নেতারাই ছিল পথভ্রষ্ট। অতএব পুরানো সংগঠনের বড়াই করে লাভ হবে না। বরং ছহীহ আক্বীদা ও আমলের অনুসারী ও তাক্বওয়াশীল সংগঠনকে স্বাগত জানাতে হবে, এটাই নিয়ম। পিছনের দোহাই দেওয়াটা জাহেলী যুগের লক্ষণ। আবার ইজতিহাদের দোহাই দিয়ে ইসলামকে পাশ্চাত্যের পুচ্ছধারী বানানোর চেষ্টা ইক্বামতে দ্বীনের কোন অংশ নয়; বরং ওটা দ্বীন ধ্বংসের নামান্তর। ইসলাম ইসলামই। তাকে মডার্ণ বা মডারেট বানানোর অপচেষ্টা ছাড়তে হবে এবং আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধনে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
এক্ষণে জাতির প্রকৃত ঐক্য দর্শন হ’ল হাবলুল্লাহর দর্শন। সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের দিকে ফিরে যাওয়া এবং তার মানদন্ডে সমাজকে গড়ে তোলাই হ’ল মানবীয় ঐক্যের স্থায়ী দর্শন। এর বাইরে কোন কিছুই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। অতএব আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে আমরা সার্বিক ঐক্য গড়ে তুলি! আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!!
[1]. আত-তাহরীক ১৩তম বর্ষ ৩য় সংখ্যা ডিসেম্বর ২০০৯।