ইসলামী আন্দোলনে বিজয়ের স্বরূপ

সাহায্য ও বিজয়ের স্বরূপ বিশ্লেষণ

মহান আল্লাহ বলেন, ِإنَّالَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا فِى الْحَيَاةِ الدُّنْياَ وَيَوْمَ يَقُوْمُ الْأَشْهَادُ- ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণকে ও বিশ্বাসীদেরকে পার্থিব জীবনে এবং যেদিন সাক্ষীরা দন্ডায়মান হবে সেদিন সাহায্য করব’ (মুমিন ২৩/৫১)وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘মুমিনদেরকে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব’ (রূম ৩০/৪৭)إِنْ تَنْصُْرُوْا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ   ‘যদি তোমরা আল্লাহ্কে সাহায্য কর, তবে আল্লাহ তা‘আলাও তোমাদেরকে সাহায্য করবেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৭)وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ ‘অবশ্যই আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে সাহায্য করবেন, যে তাঁকে সাহায্য করবে’ (হজ্জ ২২/৪০)

 وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ، إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ، وَإِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُوْنَ- ‘নিশ্চয়ই আমার কথা আমার রাসূলগণের ক্ষেত্রে পূর্বে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তারা অবশ্যই সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন এবং আমার বাহিনী অবশ্যই বিজয়ী হবে’ (ছাফফাত ৩৭/১৭১-৭৩)। এই আয়াতগুলি ছাড়াও এরূপ আরও অনেক আয়াত রয়েছে, যা একজন প্রচারকের পক্ষে এলাহী সাহায্যের প্রমাণ  বহন করে। চাই সে প্রচারক রাসূল হউন কিংবা মুমিন হউন। আল্লাহ প্রদত্ত এ সাহায্য আসবে আখেরাতের আগে দুনিয়াবী জীবনেই।

কুরআন-হাদীছ থেকে যা জানা যায় যে, অনেক নবীকে তাঁদের শত্রুরা হত্যা করে লাশ পর্যন্ত বিকৃত করে দিয়েছে। ইয়াহইয়া ও শু‘আইব (আঃ)-এর ক্ষেত্রে এরূপ ঘটেছিল। আবার অনেক নবীকে তাঁদের গোত্র হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। তাঁরা তাদের ছোবল থেকে নিষ্কৃতি পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাঁদের দেশ ছাড়তে হয়েছিল। যেমন ইবরাহীম (আঃ) স্বজাতি ও স্বদেশ ছেড়ে শাম দেশে হিজরত করেছিলেন। ঈসা (আঃ)-কে তাঁর জাতি যখন হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন আল্লাহ তাঁকে ঊর্ধ্বলোকে তুলে নিয়েছিলেন।

মুমিনদেরকেও অনুরূপ বর্বরতম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কাউকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছে, কাউকে শহীদ করা হয়েছে, কেউ দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে কালাতিপাত করেছেন। তবে এভাবে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়া, হত্যার শিকার ও শাস্তি ভোগের পরও পার্থিব জীবনে আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা কিভাবে বিশ্বাস করা যায়? 

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কখনই বিলম্বিত হয় না। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার সাহায্যের কথা বাদ দিয়ে আল্লাহর প্রকাশ্য সাহায্য ও দ্বীনের বিজয় লাভের মত একটি মাত্র সাহায্যের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করাতেই এরূপ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূল ও মুমিনদেরকে যে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা যে কেবল এই শ্রেণীর সাহায্যই হ’তে হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

আল্লাহ তাদেরকে যে সাহায্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অবশ্যই অতীতে    বাস্তবায়িত হয়েছে, বর্তমানে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে ইনশাআল্লাহ। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর তা আখেরাতের পূর্বে দুনিয়ার জীবনেই হবে।

এ বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখার জন্য বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত, نَصْرٌ বা ‘সাহায্য’ শব্দের মর্মার্থ ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। আমাদের স্মৃতিতে এ কথা আগেই ধরে রাখা দরকার যে, সাহায্যের নানা দিক ও প্রকৃতি রয়েছে। তার যেকোন একটি বাস্তবায়িত হ’লে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে গণ্য হবে। নানা প্রকৃতির এই সাহায্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিম্নে উপস্থাপন করা হ’ল :

(১) প্রত্যক্ষ বিজয় ও শত্রুর পরাজয় :

আল্লাহ তা‘আলা কখনও প্রচারকবৃন্দকে শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিজয় দান করেন। শত্রু তখন তাদের পদানত হয়ে যায়। বহু নবী-রাসূল এভাবে শত্রুদের বিরুদ্ধে সরাসরি বিজয় অর্জন করেছেন। দাঊদ ও সুলায়মান (আঃ) এরূপ বিজয় অর্জন করেছিলেন।  আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, وَقَتَلَ دَاوُدُ جَالُوْتَ وَآتَاهُ اللهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ، ‘দাঊদ জালূতকে হত্যা করেন এবং আল্লাহ তাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা ও প্রজ্ঞা দান করেন’ (বাক্বারাহ ২/২৫১)  وَكُلاَّ آتَيْنَا حُكْمًا وَّعِلْمًا، ‘উভয়কেই (দাঊদ ও সুলায়মানকে) আমি শাসন ক্ষমতা ও জ্ঞান দান করেছি’ (আম্বিয়া ২১/৭৯)قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَهَبْ لِي مُلْكاً لَّا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِّنْ بَعْدِي، ‘তিনি বললেন, রব আমার, আমাকে আপনি মার্জনা করুন এবং আমাকে এমন রাষ্ট্র দান করুন, যা আমার পর আর কারও জন্য সম্ভব হবে না’ (ছোয়াদ ৩৮/৩৫)

মূসা (আঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা ফির‘আউন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর জীবদ্দশায় দ্বীনকে বিজয়ী করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُواْ يَعْرِشُونَ ‘ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং তাদের নির্মিত প্রাসাদরাজি আমি ধ্বংস করে দিয়েছি’ (আ‘রাফ ৭/১৩৭)

فَأَنْجَيْنَاكُمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنْتُمْ تَنظُرُوْنَ- ‘অতঃপর আমি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলাম এবং ফির‘আউন সম্প্রদায়কে এমন করে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, যা তোমরা তাকিয়ে দেখছিলে’ (বাক্বারাহ ২/৫০)

আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কেও আল্লাহ তা‘আলা খুব বড় আকারে সাহায্য করেছেন। বদর ও পরবর্তী যুদ্ধগুলিতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর শত্রুদেরকে পদানত করেছেন। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হয়েছে এবং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحاً مُّبِيْناً ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে দান করেছি সুস্পষ্ট বিজয়’ (ফাতহ ৪৮/১)

 إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ، وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللَّهِ أَفْوَاجاً- ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, আর আপনি লোকদের দেখতে পাবেন, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে’ (নাছর ১১০/১-২)। এ জাতীয় সাহায্য তো খুবই স্পষ্ট। ‘সাহায্য’ শব্দ উচ্চারণ করা মাত্রই এদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। কারণ (ক) প্রকাশ্য সাহায্য মানুষ চোখে দেখতে পায় এবং হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারে। (খ) এ ধরনের সাহায্য একাধারে দ্বীন ও তার প্রচারক উভয়েরই বিজয়ের স্বাক্ষর বহন করে। (গ) মানব মনের কাঙ্খিত ও প্রিয় বিষয়ই হ’ল এরূপ সাহায্য। এ সাহায্য দ্রুত ফলদায়ক। আর যা দ্রুত ফলদায়ক তার প্রতি মনের আকর্ষণ আপনা-আপনি তৈরী হয়। এজন্যই মহান আল্লাহ বলেছেন, وَأُخْرَى تُحِبُّوْنَهَا نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيْبٌ ‘তিনি দান করবেন তোমাদের বাঞ্ছিত আরও একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়’ (ছাফফ ৬১/১৩)

(২) মিথ্যারোপকারীদের ধ্বংসের মাধ্যমে সাহায্য :

কখনও মিথ্যারোপকারী কাফিরদের ধ্বংস সাধন এবং নবী-রাসূল ও তাঁদের সঙ্গী মুমিনদের নাজাত প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়। নূহ (আঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা এভাবে সাহায্য করেছিলেন। তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর কাফির জাতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল।  যেমন পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّيْ مَغْلُوْبٌ فَانْتَصِرْ-َفَتَحْنَا أَبْوَابَ السَّمَاءِ بِمَاءٍ مُّنْهَمِرٍ، وَفَجَّرْنَا الْأَرْضَ عُيُوْناً فَالْتَقَى الْمَاءُ عَلَى أَمْرٍ قَدْ قُدِرَ، وَحَمَلْنَاهُ عَلَى ذَاتِ أَلْوَاحٍ وَّدُسُرٍ، تَجْرِيْ بِأَعْيُنِنَا جَزَاءً لِّمَنْ كَانَ كُفِرَ-

‘তিনি (নূহ) তাঁর রবকে আহবান করে বললেন, আমি তো অসহায়, অতএব আপনি প্রতিবিধান করুন। ফলে আমি উন্মুক্ত করে দিলাম আকাশের দ্বার প্রবল বারি বর্ষণে এবং মৃত্তিকা হ’তে উৎসারিত করলাম প্রস্রবণ। অতঃপর সকল পানি মিলিত হ’ল এক পরিকল্পনা অনুসারে। তখন নূহকে আরোহন করালাম কাষ্ঠ ও কীলক নির্মিত এক নৌযানে। যা চলত আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। এটা তার জন্য প্রতিদান যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল’ (ক্বামার ৫৪/১০-১৪)

একই পরিণতি ঘটেছিল হূদ (আঃ)-এর ক্বওমের। আল্লাহ বলেন,

فَأَنجَيْنَاهُ وَالَّذِيْنَ مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ الَّذِيْنَ كَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا وَمَا كَانُواْ مُؤْمِنِيْنَ -

‘অনন্তর আমি তাঁকে ও তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলাম এবং যারা আমার বিধানাবলীকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল তাদের মূলচ্ছেদ করেছিলাম। বস্ত্ততঃ তারা মুমিন ছিল না’ (আ‘রাফ ৭/৭২)

ছালেহ (আঃ)-এর জাতির পরিণতি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُواْ فِيْ دَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ ‘তাদেরকে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল, ফলে তারা তাদের লোকালয়ে অধঃমুখী হয়ে পড়েছিল’ (আ‘রাফ ৭/৭৮)

লূত (আঃ)-এর জাতির পরিণাম সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

-وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ مَّطَراً فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِيْنَ-

 ‘আমি তাদের উপর প্রবল বারিপাত করেছিলাম। সুতরাং পাপিষ্ঠদের পরিণতি কিরূপ দাঁড়িয়েছিল তা আপনি লক্ষ্য করুন’ (আ‘রাফ ৭/৮৪)

শু‘আইব (আঃ)-এর জাতি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,

فَكَذَّبُوْهُ فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ إِنَّهُ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ-

‘অতঃপর ওরা তাঁকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করল। ফলে ওদের মেঘাচ্ছন্ন দিবসে শাস্তি গ্রাস করল। এতো ছিল এক ভীষণ দিবসের শাস্তি’ (শু‘আরা ২৬/১৮৯)

পাপিষ্ঠদের এভাবে কঠিন শাস্তিতে জর্জরিত করা নিশ্চয়ই প্রচারকদের প্রতি বিরাট সাহায্য এবং মিথ্যারোপকারী, দুর্মুখ নাস্তিক ও সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের প্রতি লাঞ্ছনা ও নির্মম কষাঘাত। আল্লাহ অবশ্য পাপীদের অবকাশ দেন, তাই বলে চিরতরের জন্য অবকাশ দেন না। তিনি  বলেন,

فَكُلاًّ أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُم مَّنْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِباً وَّمِنْهُمْ مَّنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُم مَّنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَّنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوْا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ-

‘ওদের প্রত্যেককেই আমি তার অপরাধের জন্য শাস্তি দিয়েছিলাম। ওদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছিলাম প্রস্তরসহ প্রচন্ড ঝটিকা, কাউকে আঘাত করেছিল মহানাদ, কাউকে আমি প্রোথিত করেছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছিলাম নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি কোন যুলুম করেননি; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল’ (আনকাবূত ২৯/৪০)

(৩) নবী-রাসূলগণের তিরোধানের পর শত্রুদের বিরুদ্ধে আল্লাহর প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে সাহায্য :

যারা নবী-রাসূল ও দ্বীন প্রচারকদের প্রচারিত সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে, অনেক সময় নবী-রাসূলগণের মৃত্যুর পর আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়ে থাকেন। ইয়াহইয়া (আঃ), শু‘আইব (আঃ)-এর হত্যাকারীদের ক্ষেত্রে এবং ঈসা (আঃ)-এর হত্যার প্রচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে এরূপ প্রতিশোধ নেয়া হয়েছিল। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলগণ ও ঈমানদারগণকে পৃথিবীর জীবনেই সাহায্য করব’ (মুমিন ৪০/৫১)। এ আয়াতের মর্মার্থ প্রসঙ্গে ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) বলেছেন, এর অর্থ হচ্ছে ‘আমি এই সাহায্য হয় যারা আমাকে মিথ্যুক গণ্য করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে রাসূলগণকে বিজয়ী করে করব, নয়তো রাসূলগণকে যারা প্রত্যাখ্যান করেছে, রাসূলদের ধ্বংস ও ওফাতের পর ঐ প্রত্যাখ্যানকারীদের থেকে এই পার্থিব জীবনে প্রতিশোধ  গ্রহণের মাধ্যমে করব। যেমন নবী শু‘আইব (আঃ)-কে হত্যা করার পর আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম। তার হত্যাকারীদের উপর আমি ক্ষমতাশালী কিছু লোক নিযুক্ত করেছিলাম এবং তাদের হাতে হত্যাকারীদের নাস্তানাবুদ করে দিয়েছিলাম। ঈসা (আঃ)-এর হত্যা প্রচেষ্টাকারীদের থেকে রোমকদের মাধ্যমে প্রতিশোধ নিয়েছিলাম। তারা ওদের ধ্বংস করে দিয়েছিল। ইয়াহইয়া (আঃ)-কে যারা হত্যা করেছিল তাদের উপর আমি ব্যাবিলনের বাদশাহ বখতে নছর (নেবুচাদ নেজার)-কে চাপিয়ে দিয়েছিলাম। এভাবে ইয়াহইয়া (আঃ)-এর হত্যাকারীদের থেকে তার মাধ্যমে আমি প্রতিশোধ নিয়েছিলাম’।[1] আল্লাহর বাণী, وَلَوْ يَشَاءُ اللهُ لاَنْتَصَرَ مِنْهُمْ- ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৪)। এসবই আল্লাহর উক্তির মর্ম।

(৪) জেল, হত্যা, বাস্ত্তভিটা হ’তে উৎখাত, যুলুম-নির্যাতন ইত্যাদি যা বাহ্যদৃষ্টিতে পরাজয়, কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে তা-ই বিজয় :

মানুষের বাহ্যদৃষ্টিতে উপরোক্ত বিষয়গুলি পরাজয় গণ্য হ’লেও অনেক সময় তা প্রকৃতপক্ষে বিজয়রূপেই প্রতিপন্ন হয়। একজন প্রচারকের নিহত হওয়া কি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হওয়া নয়? আল্লাহ বলেন,

وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ قُتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّهِ أَمْوَاتاً بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُوْنَ-

‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদেরকে তুমি কখনও মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত। তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা রিযিক প্রাপ্ত হয়’ (আলে ইমরান ৩/১৬৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ، ِمَا غَفَرَ لِيْ رَبِّيْ وَجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُكْرَمِيْنَ-

‘বলা হ’ল, ‘যাও, জান্নাতে যাও। সে তখন বলল, হায় আফসোস! আমার জাতি যদি জানত যে, কেন আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করলেন এবং আমাকে সম্মানিতজনদের অন্তর্ভুক্ত করলেন’ (ইয়াসীন ৩৬/২৬-২৭)। আল্লাহ আরও বলেন,

قُلْ هَلْ تَرَبَّصُوْنَ بِنَا إِلاَّ إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ- ‘আপনি বলুন, তোমরা তো আমাদের জন্য দু’টি কল্যাণকর দিকের যেকোন একটির অপেক্ষা বৈ অন্য কিছু করছ না’ (তওবা ৯/৫২)

অতএব ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে প্রচারক নিহত হ’লেও নানাদিক দিয়েই তা বিজয় বলে গণ্য হবে। -

 (৫) শাহাদাতের অমিয় সুধা পানের মাধ্যমে বিজয় :

শাহাদাত মানব জীবনের  জন্য চরম  ও পরম  বিজয়। আল্লাহ তা‘আলা এজন্যই এরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয় তাদেরকে তুমি কখনও মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত। তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা রিযিক প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদের যা দান করেন তাতে তারা  আনন্দিত’ (আলে ইমরান ৩/১৬৯-১৭০)

(৬) অত্যাচার ও বদনামের বিনিময়ে সাহায্য ও বিজয় :

যুলুম-অত্যাচার, বদনাম ইত্যাদি সম্পর্কেও এ কথা প্রযোজ্য। কেননা অনেক সময় একজন প্রচারকের যাত্রাই শুরু হয় জেল-যুলুম, বদনামের মাধ্যমে। যেমন একজন প্রচারককে তার শত্রুদের পক্ষ হ’তে মানহানিকর কোন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হ’ল, অনেকে ভাবল এই প্রচারকের দফা-রফা হয়ে গেল। এরপর থেকে তার আর ক্ষমতা ও ব্যক্তিত্ব বলে কিছুই থাকল না। কিন্তু পরে দেখা গেল ঐ অভিযোগই সেই প্রচারকের সম্মুখপানে অগ্রসরের বড় হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এটাও নানাভাবে পরিস্ফূটিত হ’তে পারে। যথাঃ

  • উক্ত প্রচারক বদনাম ও জেল সম্পর্কে স্বীয় ব্যক্তিসত্তার উপর মানসিকভাবে বিজয়ী হয়। সে বুঝতে পারে জেলভীতি ও তার প্রকৃতি। তাই দ্বিতীয়বার যখন তাকে জেলে ঢুকান হয় তখন আল্লাহদ্রোহী শক্তির পক্ষ থেকে আগত ভয়-ভীতিকে সে আর পরওয়া করে না।
  • কোন্ পথ ও মত বাতিল তা প্রচারকের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়। কতক লোক চালাকি করে সত্যের সঙ্গে মিথ্যা ও ন্যায়ের সঙ্গে অন্যায়কে মিশ্রিত করে যে ফায়দা লুটছে, তা সে এখান থেকেই ধরতে পারে।
  • কে তার শত্রু আর কে মিত্র তা সে চিনতে পারে। যেমন কবি বলেছেন,

جَزَى اللهُ الشَّدَائِدَ عَنِّىْ كُلَّ خَيْرٍ

عَرَفْتُ بِهَا صَدِيْقِىْ مِنْ عَدُوِّىْ

‘বিপদকে আল্লাহ আমার পক্ষ থেকে সবরকম প্রতিদান দিন। উহা দ্বারা আমি চিনতে পেরেছি কে আমার শত্রু কেবা আমার মিত্র’l তার শিষ্য ও শুভার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়। যে সত্যের প্রতি সে আহবান জানায় তার আগ্রহী শ্রোতার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক সময় তা হাযার হাযারে গিয়ে দাঁড়ায়।

  • আল্লাহ তা‘আলা তাঁর শত্রু ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখ থুবড়ে দেন। দেখতে দেখতেই তারা পরাজয়ের  গ্লানি  হজম করে। এসব কি আখিরাতের আগে দুনিয়ার জীবনেই বিজয় নয়?

সাহায্য ও বিজয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর ক্ষেত্রে আমাদের এমন একটি বাস্তবতার সামনে দন্ডায়মান হওয়া যরূরী, যা অনেকের সামনে অস্পষ্ট। সেটা হ’ল প্রচারকের এক প্রকার বিজয়। প্রচারককে যখন হত্যা, কারাদন্ড, শাস্তি প্রদান, ভিটে-মাটি ছাড়া ও দেশ থেকে বহিষ্কার করা ইত্যাদির সিদ্ধান্ত তার প্রতিপক্ষ কর্তৃক গৃহীত হয় তখন তাদের মধ্যেও নানা মানসিক কষ্ট ও যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। এমনকি শাস্তি দিয়েও  তাদের স্বস্তি মেলে না। আরাম তখন হারাম হয়ে যায় এবং সৌভাগ্যের আলো কোথাও তাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। নিষ্ঠুর উমাইয়া গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ প্রখ্যাত তাবেঈ সাঈদ ইবনু জুবায়েরকে হত্যা করার পর এমনিভাবে নানা মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছিল। সে আরাম করে একটু ঘুমাতেও পারত না। ঘুমের মধ্যে ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে ভীতবিহবল হয়ে জেগে উঠত আর বলত,  ‘সাঈদকে নিয়ে আমার কি হবে’? এমনিতর দুঃখ ও পেরেশানীর মধ্যে কিছু দিন যেতে না যেতেই সে মারা যায়।

এই বাস্তবতার প্রতিধ্বনি পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

وَإِذَا لَقُوْكُمْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْاْ عَضُّواْ عَلَيْكُمُ الأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ قُلْ مُوْتُواْ بِغَيْظِكُمْ إِنَّ اللّهَ عَلِيْمٌ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ، إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُواْ بِهَا وَإِن تَصْبِرُواْ وَتَتَّقُواْ لاَ يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئاً إِنَّ اللّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ-

‘যখন তারা একান্তে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায় তখন তোমাদের উপর ক্ষোভে-দুঃখে আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, ‘তোমরা তোমাদের ক্ষোভ, দুঃখ নিয়ে মরে যাও’। নিশ্চয়ই অন্তরে যা আছে তৎসম্পর্কে আল্লাহ সর্বজ্ঞ। যদি তোমাদের কোন কল্যাণ অর্জিত হয় তবে তা তাদের মনপীড়ার কারণ হয়। কিন্তু তোমাদের কোন অকল্যাণ স্পর্শ করলে তাতে ওরা খুব খুশি হয়। তবে যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর ও আল্লাহভীতি অবলম্বন কর, তাহ’লে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের কর্মতৎপরতা পরিবেষ্টনকারী’ (আলে ইমরান ৩/১১৯-১২০)। অন্যত্র তিনি বলেন,

وَرَدَّ اللَّهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِغَيْظِهِمْ لَمْ يَنَالُوْا خَيْرًا-

‘আল্লাহ কাফেরদেরকে ক্ষোভসহ ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোন কল্যাণ লাভ করতে পারল না’ (আহযাব ৩৩/২৫)

অপরদিকে একই ক্ষেত্রে আমরা একজন প্রচারককে দেখি, তিনি সুখ ও শান্তির মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন। ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী পেশ করে বলেন,

وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ، إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ، وَإِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُوْنَ-

‘আমার প্রেরিত বান্দাদের জন্য আমার একথা আগে ভাগে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, তারা অবশ্যই সাহায্য প্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনী অবশ্যই বিজয়ী হবে’ (ছা-ফফাত ৩৭/১৭১-১৭৩)। কিছু  আরবীয় পন্ডিতের মতে, ‘আমার প্রেরিত বান্দাদের জন্য আমার কথা আগে ভাগে নিশ্চিত হয়েছে’ বাণীটির অর্থ ‘সৌভাগ্য’। অর্থাৎ তাদের জন্য সৌভাগ্য নিশ্চিত হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর একটি হাদীছেও এ অর্থ লক্ষ্য করা যায়। তিনি বলেছেন,

عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ، وَلَيْسَ ذَالِكَ لِأَحَدٍ إِلاَّ لِمُؤْمِنٍ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبََرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ-

‘মুমিনের বিষয় দেখ কি বিস্ময়কর! তার সবকিছুই কল্যাণময়। এটা মুমিন ছাড়া অন্যের বেলায় হয় না। সে যদি সুখ-সম্পদ লাভ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাহ’লে তা তার জন্য কল্যাণময়; আবার দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়ে ধৈর্যধারণ করে, সেটাও তার জন্য কল্যাণকর’।[2]

এই সত্যকে তুলে ধরেই শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেছিলেন, ‘আমার শত্রু আমার থেকে কী প্রতিশোধ নেবে? আমার জান্নাত তো আমার বক্ষে। আমাকে হত্যা করলে তা হবে শাহাদত; আমাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করলে তা হবে ভ্রমণ, আমাকে জেলে পুরলে সেটা হবে আমার জন্য নির্জন বাস’।

এতেই আমরা বুঝতে পারি, কে বিজয়ী, আর কে পরাজিত। জয়-পরাজয়ের যে অর্থ মানুষ বাহ্যদৃষ্টিতে মনে রেখেছে তা থেকে উহা অনেক দূরে। এমনকি এতে এমন কিছু লুক্কায়িত সত্য আছে যা চর্মচোখে ধরা পড়ে না। কবি সত্যই বলেছেন,

اِصْبِرْ عَلَى مَضَضِ الْحَسُوْدِ فَإِنَّ صَبْرَكَ قَاتِلُهُ

فَالنَّارُ تَأُكُلُ بَعْضَهَا إِنْ لَمْ تَجِدْ مَا تَأْكُلُهُ-

‘হিংসুকের চোখ রাঙানির কোন পরওয়া নেই

ধৈর্য যে তা মিটিয়ে দেবে অবশ্যই।

অগ্নির ধর্ম নিজকে নিজে খেয়ে ফেলা

যখন পায় না উচিত মত খাদ্য খানা’।

(৭) মূল আদর্শে অটল থাকার মাধ্যমে বিজয় :

প্রচারক যে আদর্শের পথে মানুষকে আহবান জানাবেন তাতে যতই ঝড়-ঝঞ্ঝা, বাধা-বিপত্তি আসুক তিনি নিজে উহার উপর অবিচল থাকলে তা হবে তার জন্য সুস্পষ্ট বিজয়। তাতে করে তিনি সকল কামনা-বাসনা ও সন্দেহ-সংশয়ের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবেন এবং সাহসিকতা ও অবিচলতার সাথে সকল বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হবেন। মূল আদর্শের উপর অবিচল থাকলেই কেবল প্রকাশ্য বিজয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। দেখা গেছে ইবরাহীম (আঃ)-কে আগুনে নিক্ষেপ করা হচ্ছে অথচ তিনি তাঁর বিশ্বাসে অনড় থেকেছেন; এক বিন্দুও সরে দাঁড়াননি। ফলে বিজয়মাল্য তাঁরই গলচুম্বন করেছে। আল্লাহ বলেন,

 قَالُوا ابْنُوْا لَهُ بُنْيَاناً فَأَلْقُوْهُ فِي الْجَحِيْمِ، فَأَرَدُوْا بِهِ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْأَسْفَلِيْنَ-

‘তারা বলল, তাঁর জন্য একটি ইমারত তৈরী কর এবং তাঁকে উত্তপ্ত আগুনে ফেলে দাও। তারা তাঁকে নিয়ে চক্রান্তের সংকল্প করেছিল। ফলে আমি তাদেরকে ইতর শ্রেণীভুক্ত করে দিয়েছিলাম’ (ছা-ফফাত ৩৭/৯৭, ৯৮)

ইমাম আহমাদ (রহঃ)-কে ‘কুরআন সৃষ্ট বস্ত্ত’ কথাটি মেনে নেয়ার জন্য দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রচন্ড নির্যাতনের সম্মুখীন হ’তে হয়েছিল। কিন্তু তিনি শত্রুর যাবতীয় অত্যাচার, প্রলোভন ও অপচেষ্টার সামনে নতি স্বীকার না করে স্বীয় আদর্শে অটল থেকেছেন। ফলে বিজয় মাল্য তাঁর গলায় শোভা পেয়েছিল। উল্লেখ্য, তিনি সহ ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতে’র বিশ্বাস হ’ল, আল-কুরআন আল্লাহর কালাম, যা ক্বাদীম বা অনাদি; উহা সৃষ্ট বস্ত্ত নয়।

গর্ত খননকারীদের শিকার নিরপরাধ মুসলমানদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবুও তারা দ্বীনের ব্যাপারে কোন আপোষ করেনি। বরং তারা আল্লাহর রাহে শহীদ হওয়াকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। আর এভাবেই তারা হয়েছিলেন বিজয়ী। আল্লাহ বলেন, وَمَا نَقَمُوْا مِنْهُمْ إِلَّا أَن يُؤْمِنُوْا بِاللَّهِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ ‘তারা পরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিল, এই একটি মাত্র দোষ ব্যতীত তারা তাদের থেকে অন্যকোন দোষ পায়নি’ (বুরূজ ৮৫/৮)

এরূপ বিজয়ের অর্থই আমরা খাববাব (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে দেখতে পাই। কাফেরদের অসহনীয় অত্যাচারের দরুন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট গিয়ে বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ছাঃ)! আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দো‘আ করবেন না? তিনি তখন তাকে বলেছিলেন,

كَانَ الرَّجُلُ فِيْمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُلَهُ فِىْ الْأَرْضِ فَيُجْعَلُ فِيْهِ فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوْضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُنْشَقُّ بِإِثْنَيْنِ وَمَا يَمُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِيْنِهِ وِيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الْحَدِيْدِ مَادُوْنَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمٍ أَوْ عَصَبٍ وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِيْنَهِ-  

‘তোমাদের পূর্বকালে একজন ঈমানদার লোকের জন্য যমীনে গর্ত খুঁড়া হ’ত, অতঃপর তাকে তার মধ্যে রাখা হ’ত। তারপর করাত এনে তার মাথার উপর বসিয়ে উহা দ্বিখন্ডিত করে ফেলা হ’ত। তবুও এ লোমহর্ষক কাজ দ্বীনের উপর অবিচল থাকতে তাকে বাধা সৃষ্টি করেনি। অনেক সময় লোহার চিরুনী দিয়ে তার হাড় ও শিরা-উপশিরা থেকে গোশত খুবলে তুলে ফেলা হ’ত। এরূপ কঠিনতম অত্যাচারও তাকে তার দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি’।[3]

এতে বুঝা গেল, দ্বীনের উপর অটল থাকা এবং সে জন্য যত বাধা-বিপত্তি ও যুলুম-অত্যাচার আসুক না কেন, তাতে পিছ পা না হওয়ার নামই বিজয়।

(৮) বলিষ্ঠ যুক্তি প্রমাণের মাধ্যমে বিজয় :

দ্বীন বা আদর্শের পক্ষে বলিষ্ঠ যুক্তি প্রমাণ দাঁড় করাতে পারলে অনেক সময় প্রতিপক্ষ নিরুত্তর হয়ে যায়। তার কণ্ঠে তখন আর সাড়া-শব্দ থাকে না। আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِيْنَ، إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ-

‘আমার প্রেরিত বান্দাদের প্রসঙ্গে আমার এ কথা অগ্রে স্থির হয়ে গেছে যে, তারা অবশ্যই বিজয়ী হবে’ (ছা-ফফাত ৩৭/১৭১-১৭২)

এ প্রসঙ্গে ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) বলেন, আমার পক্ষ হ’তে আমার রাসূলগণের জন্য এ কথা আগেই সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত ও বিজয়ী হবে। অর্থাৎ লাওহে মাহফূযে আমার পক্ষ থেকে ফায়ছালা করে রাখা হয়েছে যে, যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে তাদের সাহায্য ও বিজয় নিশ্চিত করা হবে। মুফাসসির সুদ্দী বলেন, إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمُنْصُوْرُوْنَ بِالْحُجَجِ، ‘তারা অবশ্যই  দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে সাহায্যপ্রাপ্ত ও বিজয়ী হবে’।[4] আল্লাহর বাণী فَأَرَدُوْا بِهِ كَيْدًا فَجَعَلْنَاهُمُ الْأسْفَلِيْنَ، ‘তারা তাঁর সম্বন্ধে চক্রান্ত করল, ফলে আমি তাদের ইতর শ্রেণীভুক্ত করে দিলাম’ (ছা-ফফাত ৯৮)। এ প্রসঙ্গে ইমাম ত্বাবারী বলেন, এ আয়াতের অর্থ- আমি ইবরাহীমের জাতিকে  যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে অপদস্ত ও লাঞ্ছিত করে দিলাম এবং ইবরাহীমকে প্রমাণ উত্থাপনের মধ্য দিয়ে বিজয়ী করলাম।

একই অর্থ আমরা আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীতে পাই,

وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيْمَ عَلَى قَوْمِهِ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّنْ نَّشَاءُ-

‘এসব প্রমাণ আমি ইবরাহীমকে তাঁর জাতির বিরুদ্ধে উত্থাপনের জন্য দিয়েছিলাম। আমি যাকে ইচ্ছা, মর্যাদায় উঁচুতে তুলে দেই’ (আন‘আম ৬/৮৩)। এই উঁচুতে তুলে দেয়াই তো বিজয়।

একইভাবে দেখুন, ইবরাহীম (আঃ)-এর সাথে তৎকালীন কাফের শাসক নমরূদ আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল এবং পরাজিত হয়েছিল। যার প্রকাশ ঘটেছে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীতে فَبُهِتَ الَّذِىْ كَفَرَ ‘কাফের লোকটি হতভম্ব হয়ে গেল’ (বাক্বারাহ ২/২৫৮)

بُهِتَ অর্থ পরাজিত হওয়া, হতবাক হওয়া। অর্থাৎ কাফের লোকটি যুক্তি প্রমাণ উত্থাপনে ব্যর্থ হয়ে পরাজিত হ’ল, আর ইবরাহীম (আঃ) যুক্তি প্রমাণ দেখিয়ে জয়যুক্ত হ’লেন। এতে বুঝা গেল, বলিষ্ঠ যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপনে সক্ষম হওয়ার মাধ্যমে একজন প্রচারক যে বিজয় অর্জন করেন তা আসলেই বিজয়। দ্বীন বিজয়ের এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

একজন দ্বীন প্রচারক কোন সময় বা স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। তার সময় যেমন পার্থিব জীবন, তেমনি পরকালীন জীবনও। তার প্রচারক্ষেত্র বিশ্বব্যাপী। এজন্যই দেখা যায় একজন প্রচারক কোন স্থানে বিফল হ’লেও অন্য স্থানে সফল হন। আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটেছে। তিনি প্রথম জীবনে মক্কায় সফলতা লাভ করতে পারেননি, কিন্তু হিজরতের পর প্রথমে মদীনায় ও পরে মক্কায় সফল হয়েছেন। অনুরূপ মূসা (আঃ) ফির‘আউনের দেশে সফল হননি। সেখান থেকে ফিলিস্তীনে এসে সফল হয়েছেন।

সময়ের আঙ্গিকে এক সময় কোন প্রচারক নিষ্প্রভ থাকলেও পরবর্তীকালে তিনি ঝলসে উঠেন। যেমন শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ) কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন, অথচ তাঁর দাওয়াতী কর্মসূচী তাঁর মৃত্যুর কয়েক শতাব্দী পর ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে এবং অব্যাহত গতিতে চলছে। এটি একটি সুবিদিত ও চাক্ষুষ বিজয়। অনেক প্রচারকই এক স্থানে পরাজিত ও অন্য স্থানে বিজয়ী হয়েছেন, এক সময়ে অত্যাচারিত হয়েছেন, অন্য সময়ে সফলতা লাভে ধন্য হয়েছেন, চাই তা তার জীবদ্দশায় হোক কিংবা মৃত্যুর পরে হোক।      

(৯) শত্রুকে বাধাগ্রস্ত করাও বিজয় :

প্রচারকের নিরাপত্তা বিধান এবং শত্রুকে তার নাগাল পেতে বাধা দেয়া আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রচারকের জন্য এক বিরাট সাহায্য। আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,وَلاَ هُمْ يُنْصَرُوْنَ ‘তারা (কাফেররা) সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/৪৮)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ত্বাবারী (রহঃ) বলেছেন, أىْ يُمْنَعُوْنَ অর্থাৎ তারা বাধাগ্রস্ত হবে। ইবনু  আববাসও এরূপ  একটি মত পোষণ করেছেন।[5]  আল্লাহ বলেন,

فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِيْنَ، إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِيْنَ-

‘আপনাকে যে বিষয়ে আদেশ দেওয়া হয়েছে তা প্রচার করুন এবং মুশরিকদের থেকে নিরস্ত থাকুন। নিশ্চয়ই ঠাট্টাকারীদের থেকে রক্ষায় আমিই আপনার জন্য যথেষ্ট’ (হিজর ১৫/৯৪-৯৫)

অত্র আয়াতের অর্থ প্রসঙ্গে ইমাম ত্বাবারী বলেন, আপনি আল্লাহর আদেশ প্রচার করুন এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবেন না। কেননা আল্লাহ আপনাকে তাদের হাত থেকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট। যারা আপনার বিরুদ্ধে শত্রুতার ঝান্ডা উত্তোলন করবে এবং আপনাকে নিপীড়ন করবে, তাদের হাত থেকেও রক্ষা করবেন, যেমন করে ঠাট্টাকারীদের হাত থেকে আপনাকে রক্ষায় তিনি যথেষ্ট। আল্লাহ আরও বলেন, وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ‘মানুষের হাত থেকে আল্লাহ আপনাকে  হেফাযত করবেন’ (মায়েদাহ ৫/৬৭)

আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়ের কয়েকটি নমুনা এখানে তুলে ধরা হ’ল। বলা চলে এগুলি সাহায্য ও বিজয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকার। আমরা যদি এগুলি নিয়ে চিন্তা করি, তারপর নবীদের আদর্শের সাথে মিলিয়ে দেখি, তাহ’লে দেখতে পাব, প্রত্যেক নবী-রাসূলের জীবনে সাহায্য ও বিজয়ের এক বা একাধিক প্রকার বাস্তবায়িত হয়েছিল। আমাদের নবীর জীবনেই দেখা যাক-

  • তাঁর প্রচারিত দ্বীন বিজয় ও পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।
  • তাঁকে যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে তৎপর ছিল, তাদের অনেকেই বদর ও পরবর্তী যুদ্ধ সমূহে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
  • তিনি প্রতিপক্ষকে বলিষ্ঠ যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা লা-জওয়াব করে দিয়েছিলেন।
  • শত্রুর হাত থেকে তাঁর জীবনের  হেফাযত ও নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছিল।
  • তাঁকে মক্কা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিজ জন্মস্থান ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন।
  • আল্লাহর দ্বীনের উপর অবিচল থেকে তিনি নির্ভীক চিত্তে সত্য প্রচার করেছিলেন।

আল্লাহ বলেন, وَلَوْلاَ أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَّ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئاً قَلِيْلاً ‘যদি আমি আপনাকে অবিচল না রাখতাম তাহ’লে অবশ্যই আপনি সামান্য হ’লেও ওদের প্রতি ঝুঁকে পড়তেন’ (বানী ইসরাঈল ১৭/৭৪)

নবী-রাসূলগণ যে সব বিজয় পেয়েছেন তাতে ক্ষেত্রবিশেষে তারতম্য হ’তে পারে, কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হওয়া নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এমনিভাবে প্রত্যেক মুমিনের জীবনেও আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিশ্চিত হওয়ার কথা; চাই তা তার জীবদ্দশায় হোক কিংবা মৃত্যুর পরে হোক। আল্লাহর নিম্নোক্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই তা হবে,

إنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا فِىْ  الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُوْمُ الْأشْهَادُ-

‘আমার রাসূলগণ ও মুমিনগণকে আমি অবশ্যই ইহজীবনে ও সাক্ষ্য দান (ক্বিয়ামত) দিবসে সাহায্য করব’ (মুমিন ৪০/৫১)

বর্তমান আলোচনা থেকে আল্লাহপ্রদত্ত সাহায্য ও বিজয়ের অর্থ আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ কথাও  পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ইচ্ছামত সাহায্য ও বিজয়ের একটি শ্রেণী নির্দিষ্ট করা আদৌ ঠিক নয়।

আমাদের বুঝতে হবে যে, ঘটনার আগে-পরে সর্বাবস্থায় হুকুম আল্লাহর। আমরা তাঁরই বান্দা, তাঁরই দাসত্ব প্রমাণে আমাদের সচেষ্ট হ’তে হবে। সব সংকোচ ঝেড়ে ফেলে দ্বিধাহীন চিত্তে আল্লাহর সাহায্য যে অবশ্যম্ভাবী, সে কথা বিশ্বাস করলে তবেই দাসত্ব পূর্ণতা পাবে। হ্যাঁ কখনো হয়ত আমাদের মানবীয় দুর্বলতা হেতু আল্লাহর হিকমতের তাৎপর্য বুঝতে পারি না। কখনো কখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও সাহায্য বিলম্বিত হয়। মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَكَانَ حَقّاً عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘মুমিনদের সাহায্য করা আমারই দায়িত্ব’ (রূম ৩০/৪৭)


[1]. তাফসীরে ত্বাবারী ২৪/৭৪ পৃঃ।

[2]. মুসলিম হা/২৯৯৯ ‘যুহদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ- ১৪; আলবানী, মিশকাত হা/৫২৯৭।

[3]. বুখারী হা/৩৬১২; মিশকাত হা/৫৮৫৮।  

[4]. তাফসীরে ত্বাবারী ২৩/১১৪ পৃঃ।

[5]. তাফসীরে ত্বাবারী ১/২৬৯ পৃঃ।