হিংসুকদের চটকদার যুক্তিসমূহের কিছু নমুনা
হিংসুক ব্যক্তি তার চাকচিক্যপূর্ণ কথা ও আকর্ষণীয় যুক্তির মাধ্যমে সত্যকে মিথ্যা বলে ও মিথ্যাকে সত্য বলে। এ বিষয়ে (১) ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ)-এর শিষ্য খ্যাতনামা তাবেঈ ইকরিমা (মৃঃ ১০৭ হিঃ) বিগত যুগে বনু ইস্রাঈলদের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, তাদের মধ্যে তিনজন বিখ্যাত কাযী বা বিচারপতি ছিলেন। পরে তাদের একজন মারা গেলে অন্যজন তার স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি বিচারকার্য চালাতে থাকলেন। এমন সময় একদিন আল্লাহ জনৈক ফেরেশতাকে পাঠালেন। যিনি ঘোড়ায় চড়ে একজন ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। যে ব্যক্তি বাছুরসহ তার গাভীকে পানি পান করাচ্ছিল। ফেরেশতা বাছুরটিকে তার দিকে ডাক দিলেন। তাতে বাছুরটি ঘোড়ার পিছে পিছে চলল। তখন ঐ লোকটি ছুটে এসে তার বাছুরটিকে ফিরিয়ে নিতে চাইল এবং বলল, হে আল্লাহর বান্দা! এটি আমার বাছুর এবং আমার এই গাভীর বাচ্চা। ফেরেশতা বললেন, বরং ওটা আমার বাছুর এবং আমার এই ঘোড়ার বাচ্চা। কেউ দাবী না ছাড়লে অবশেষে তারা কাযীর কাছে গেলেন। বাছুরের মালিক বলল, এই লোকটি আমার বাছুরের পাশ দিয়ে যাবার সময় তাকে ডাকল, আর বাছুরটি তার পিছে পিছে চলে গেল। অথচ বাছুরটি আমার। কিন্তু এখন সে আমাকে ফেরৎ দিচ্ছে না। উত্তরে বিবাদী ফেরেশতা বললেন এমতাবস্থায় যে, তার হাতে তিনটি বেত ছিল। যার অনুরূপ কোন বেত সচরাচর দেখা যায় না। তার মধ্যে একটি বেত তিনি বিচারকের হাতে দিয়ে বললেন, আপনি এটা দিয়ে আমাদের মাঝে ফায়ছালা করুন। বিচারক বললেন, কিভাবে? বিবাদী বললেন, আমরা বাছুরটাকে ঘোড়া ও গাভীর পিছনে ছেড়ে দিব। অতঃপর বাছুরটি যার পিছে পিছে যাবে, সেটি তার হবে। বিচারক সেটাই করলেন। দেখা গেল যে, বাছুরটি ঘোড়ার পিছু নিল। তখন বিচারক বাছুরটি ঘোড়ার বলে রায় দিলেন।
বাছুরের মালিক এ রায় মানল না। সে বলল, আমি আরেকজন বিচারকের কাছে যাব। সেখানে গিয়ে উভয়ে পূর্বের মত বাছুরটিকে নিজের বলে দাবী করল এবং আগের মত যুক্তি প্রদর্শন করল। সেখানেও একই রায় হ’ল। তখন বাদী তাতে রাযী না হয়ে তৃতীয় বিচারকের কাছে গেল। বিবাদী তাকে এবার তৃতীয় বেতটি দিলেন। কিন্তু তিনি তা নিতে অস্বীকার করলেন এবং বললেন, আমি আজকে তোমাদের বিচার করব না। তারা বলল, কেন করবেন না? তিনি বললেন, কেননা আমি আজ ঋতুবতী। বিবাদী ফেরেশতা একথা শুনে বলে উঠলেন, সুবহানাল্লাহ! পুরুষ লোক কখনো ঋতুবতী হয়? তখন বিচারক বললেন, ঘোড়া কখনো গরুর বাছুর জন্ম দেয়? অতঃপর তিনি বাছুরটিকে গাভীর মালিককে দিয়ে দিলেন। এবার ফেরেশতা বললেন, আল্লাহ তোমাদের পরীক্ষা করেছেন। তিনি তোমার উপর খুশী হয়েছেন এবং ঐ দুই বিচারকের উপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন’।[1]
(২) মক্কার নেতাদেরকে শয়তান যুক্তি শিখিয়ে দিল। সেমতে তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে গিয়ে প্রশ্ন করল, মৃত বকরীকে কে হত্যা করে? জওয়াবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ। তখন শয়তান বলল, দেখ তোমরা যেটা যবহ কর, সেটা হালাল। আর আল্লাহ যেটা যবহ করেন, সেটা হারাম। তাহ’লে তোমরাই আল্লাহর চেয়ে উত্তম। তখন আয়াত নাযিল হ’ল, وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَى أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ ‘যে সব পশু (যবহের সময়) তার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না, সেগুলি থেকে তোমরা খেয়োনা। নিশ্চয়ই এটি পাপ। আর শয়তানেরা তাদের বন্ধুদের কুমন্ত্রণা দেয়, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিতর্ক করে। (মনে রেখ) যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তাহ’লে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হয়ে যাবে’ (আন‘আম ৬/১২১; তাফসীর ইবনু কাছীর)।