পরিণতি
দুনিয়াতে অহংকারের পরিণতি হ’ল লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে এর পরিণতি হ’ল ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ অর্থাৎ জাহান্নামীদের পুঁজ-রক্ত পান করা। যার অন্তরে যতটুকু অহংকার সৃষ্টি হবে, তার জ্ঞান ততটুকু হরাস পাবে। যদি কারু অন্তরে অহংকার স্থিতি লাভ করে, তবে তার জ্ঞানচক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। বোধশক্তি লোপ পায়। সে অন্যের চাইতে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে। কাম্য সম্মান না পেলে সে মনোকষ্টে মরতে বসে। তার চেহারায় ও আচরণে, যবানে ও কর্মে কেবলি অহংকারের দুর্গন্ধ বের হ’তে থাকে। ফলে মানুষ তার থেকে ছিটকে পড়ে। এক সময় সে নিঃসঙ্গ হয়ে যায়। একাকীত্বের যন্ত্রণায় সে ছটফট করতে থাকে। কিন্তু বাইরে ঠাট বজায় রাখে। এভাবেই সে দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যায়। বদরের যুদ্ধে আবু জাহল মরার সময় বলেছিল, ‘আমার চাইতে বড় কোন মানুষকে তোমরা হত্যা করেছ কি’? অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মদীনার ঐ চাষারা ব্যতীত যদি অন্য কেউ আমাকে হত্যা করত’?[1]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَعِّفٍ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ ‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতীদের বিষয়ে খবর দিব না? তারা হ’ল দুর্বল এবং যাদেরকে লোকেরা দুর্বল ভাবে। কিন্তু তারা যদি আল্লাহর নামে কসম দিয়ে কিছু বলে, আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের বিষয়ে খবর দিব না? তারা হ’ল বাতিল কথার উপর ঝগড়াকারী, হঠকারী ও অহংকারী’।[2] অর্থাৎ হকপন্থী মুমিনগণ দুনিয়াবী দৃষ্টিতে দুর্বল হ’লেও আল্লাহর দৃষ্টিতে সবচেয়ে সবল। কেননা তাদের দো‘আ দ্রুত কবুল হয় এবং আল্লাহর গযবে অহংকারী ধ্বংস হয়।
পবিত্র কুরআনে জাহান্নামীদের প্রধান দোষ হিসাবে তাদের অহংকারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, وَسِيقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَى جَهَنَّمَ زُمَرًا ... قِيلَ ادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا فَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ- ‘কাফিরদের দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে’... ‘তখন তাদেরকে বলা হবে তোমরা জাহান্নামের দরজা সমূহে প্রবেশ কর সেখানে চিরকাল থাকার জন্য। অতএব অহংকারীদের বাসস্থান কতই না নিকৃষ্ট’ (যুমার ৩৯/৭১-৭২)। এখানে কাফিরদের বাসস্থান না বলে ‘অহংকারীদের বাসস্থান’ বলা হয়েছে। কেননা কাফিরদের কুফরীর মূল কারণ হ’ল তাদের সত্য প্রত্যাখ্যানের দম্ভ ও অহংকার।[1]. বুখারী হা/৩৯৬২, মুসলিম হা/১৮০০, মিশকাত হা/৪০২৯।
[2]. বুখারী হা/৪৯১৮, মুসলিম হা/২৮৫৩, মিশকাত হা/৫১০৬ ‘ক্রোধ ও অহংকার’ অনুচ্ছেদ।