মিসরীয় স্কুল (مدرسة المصر)
১. মুফতী মুহাম্মাদ আsবদুহু (১৮৪৯-১৯০৫ খৃঃ)
এই বিখ্যাত মিসরীয় পন্ডিত আধুনিক মিসরে ‘সংস্কার’ আন্দোলনের নেতা হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। যখন পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আরব বিশ্বের উপরে তাদের কালো থাবা বিস্তার করে এবং আরবীয় ইসলামী সংস্কৃতিকে মধ্যযুগীয় কুসংস্কার হিসাবে চিত্রিত করার জন্য উঠেপড়ে লাগে ও এরই অন্যতম দিক হিসাবে ইসলামের ভিত নাড়িয়ে দেবার জন্য হাদীছ শাস্ত্রের প্রামাণিকতার বিরুদ্ধে নানাবিধ চত্রুান্ত শুরু করে, তখন তাদের এই চত্রুান্ত জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েন বহু ইসলামী পন্ডিত। মুফতী মুহাম্মাদ আবদুহু ছিলেন তাদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। যদিও ইসলামের পক্ষে তাঁর ছিল জোরালো ভূমিকা।
যেমন তিনি বলেন,
إن المسلمين ليس لهم إمام فى هذا العصر غير القران وإن الإسلام الصحيح هو ماكان عليه الصدر الأول قبل ظهور الفتن-
‘এ যুগে মুসলমানদের জন্য কোন ইমাম বা নেতা নেই ‘কুরআন’ ব্যতীত। সত্যিকারের ইসলাম সেটাই, যা ইসলামের প্রথম শতকে ফিৎনা সৃষ্টির পৃর্বে ছিল’। তিনি আরও বলেন,لا يمكن أن يعةبر حديث من أحاديث الآحاد دليلا على العقيدة- ‘খবরে ওয়াহেদ পর্যায়ভুক্ত কোন হাদীছকে আক্বীদা বিষয়ে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা সম্ভব নয়’ (যাওয়াবে‘ পৃঃ ৭২)।
ডঃ মুছত্বফা সাবাঈ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে মুফতী মুহাম্মাদ আবদুহু আধুনিক যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তিনি স্বীয় যুগের অতুলনীয় ইসলামী দার্শনিক ছিলেন। পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শত্রুদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রহরীর ন্যায় কলমী যোদ্ধা ছিলেন। সাথে সাথে মুসলিম বিশ্বে চিন্তাধারার ক্ষেত্রে শতবর্ষব্যাপী বৈকল্যের অাঁধারে আলোর সঞ্চার করেছিলেন। তথাপি তিনি ছিলেন হাদীছ শাস্ত্রে খুবই কম জ্ঞানের অধিকারী। তিনি ইসলামের পক্ষে মানতিক্ব বা তর্কশাস্ত্র ও যুক্তিবাদের অস্ত্রের উপর অধিক ভরসা করতেন’।
মিসরীয় স্কুলের বিশ্ববিখ্যাত পন্ডিত সৈয়দ রশীদ রিযা (১৮৬৫-১৯৩৫ খৃঃ) ও ডঃ তাওফীক্ব ছিদক্বী প্রথম জীবনে মুফতী মুহাম্মাদ আবদুহু-র অনুসারী ছিলেন। সৈয়দ রশীদ রিযা-র জগদ্বিখ্যাত পত্রিকা ‘আল-মানার’-য়ে এই সময় হাদীছের প্রামাণিকতার বিরুদ্ধে অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হ’ত। যেমন ডঃ তাওফীক্ব ছিদক্বী লিখিত প্রবন্ধالإسلام هو القران وحده ‘ইসলাম বলতে একমাত্র কুরআনকেই বুঝায়’।[1] বলা বাহুল্য, সৈয়দ রশীদ রিযা এইসব লেখনীর সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন। কিন্তু তাঁদের উস্তাদ মুফতী মুহাম্মাদ আবদুহু-র মৃত্যুর পরে যখন আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের পন্ডিতদের হাদীছ শাস্ত্রের প্রতি অবহেলা এবং বিভিন্ন ফিক্বহী মাযহাব ও দর্শন শাস্ত্রের প্রতি তাদের অতি উৎসাহ ও গভীর পান্ডিত্য প্রত্যক্ষ করেন, তখন তিনি মিসরে ‘সুন্নাতের ঝান্ডা উড্ডীনকারী’ হিসাবে আবির্ভূত হন। তিনি হাদীছের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলের উত্থাপিত প্রশ্নসমূহের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে থাকেন এবং বিভিন্ন ফেক্বহী মাযহাবে হাদীছ বিরোধী যেসব ফৎওয়া লিপিবদ্ধ রয়েছে, তিনি তার তীব্র বিরোধিতা করতে থাকেন। পরবর্তীকালে মিসরের কুখ্যাত হাদীছ দুশমন আবু রাইয়াহর আবির্ভাবকালে যদি তিনি জীবিত থাকতেন, তবে সৈয়দ রশীদ রিযা যে তার প্রথম প্রতিবাদকারী হ’তেন, এতে কোন সন্দেহ নেই (আস-সুন্নাহ পৃঃ ৩০)। ডঃ তাওফীক্ব ছিদক্বীও আল্লাহর রহমতে তাঁর পূর্বের ভূমিকা পরিত্যাগ করেন ও সৈয়দ রশীদ রিযা-র সাথে ঐক্যমতে সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন।[2]
২. ডঃ আহমাদ আমীন (১৮৮৬-১৯৫৪ খৃঃ)
এই মিসরীয় পন্ডিত ‘ফাজরুল ইসলাম’ ‘যুহাল ইসলাম’ ও ‘যুহরুল ইসলাম’ নামে সাড়া জাগানো তিনটি গ্রন্থের বিখ্যাত লেখক। এই গ্রন্থসমূহে তিনি ইউরোপীয় প্রাচ্যবিদগণের পদাংক অনুসরণ করেন এবং হাদীছ শাস্ত্রের বিশাল ভান্ডারে সন্দেহের ধূম্রজাল সৃষ্টি করেন। এভাবে তিনি জমহূর মুসলিম বিদ্বানগণের গৃহীত তরীকার বাইরে চলে যান। ‘ফাজরুল ইসলাম’ গ্রন্থে তিনি ‘হাদীছ’ সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। যেখানে তিনি চর্বির মধ্যে বিষ মিশিয়েছেন ও হক্ব-এর সাথে বাতিল মিশ্রিত করেছেন। দুঃখের বিষয় এই যে, উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদার উপরেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন। বরং তাঁর ভ্রান্ত আক্বীদার বই পড়ে বহু লোক ভ্রান্ত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। যেমন তিনি বলেন,
وقد وضع العلماء للجرح والتعديل قواعد ليس هنا محل ذكرها ولكنهم والحق يقال عنوا بنقد الإسناد أكثر مما عنوا بنقد المتن... حتى نري البخاري نفسه على جليل قدره ورقيق بحثه يثبت أحاديث دلت الحوادث الزمنية والمشاهدة التجربية على أنها غير صحيحة لا قتصاره على نقد الرجال-
‘বিদ্বানগণ হাদীছ বর্ণনাকারী রাবীদের সমালোচনায় বহু নিয়ম-বিধান প্রণয়ন করেছেন। যার সবকিছু এখানে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু সত্য কথা বলতে কি তাঁরা হাদীছের মতনের (Text) চাইতে সনদের (Chain of narrators) সমালোচনাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।.....এমনকি যদি আমরা খোদ বুখারীকে দেখি, তবে দেখব যে, সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ সত্ত্বেও সমকালীন ঘটনাবলী ও বাস্তব অভিজ্ঞতা সমূহ প্রমাণ করে যে, তাঁর গৃহীত হাদীছ সমূহ ছহীহ নয়, কেবল রাবীদের সমালোচনায় তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার কারণে’।[3] আহমাদ আমীনের এই মন্তব্য যে নির্জলা মিথ্যা বরং মুহাদ্দিছ বিদ্বানগণের বিরুদ্ধে নিছক অপবাদ, একথা উছূলে হাদীছের সাধারণ ছাত্রও খবর রাখেন। বরং বলা চলে যে, উপরোক্ত মন্তব্য তাঁর নিজস্ব গবেষণাপ্রসূত নয়; বরং তাঁর অনুসরণীয় খ্রিষ্টান পন্ডিতগণের মন্তব্যের অনুকরণ মাত্র। যেমন প্রাচ্যবিদ গ্যাষ্টন ওয়াট বলেন, হাদীছ শাস্ত্রবিদগণ হাদীছ সর্ম্পকে গভীর গবেষণা করেছেন। কিন্তু সেগুলি ছিল সব রাবী ও সনদের সমালোচনামুখী। .....তাঁরা ‘মতনে’র সমালোচনা করেননি’। উক্ত প্রাচ্যবিদ খ্রিষ্টান পন্ডিতের বক্তব্য আর মুসলিম পন্ডিত ডঃ আহমাদ আমীনের বক্তব্যে ও মন্তব্যে কোন পার্থক্য নেই।
ডঃ আহমাদ আমীনের ছেলে ‘হুসায়েন’ পিতার চেয়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেছেন। যিনি স্বীয়دليل المسلم الحزين إلى مقتضى السلوك فى القرن العشرين বইয়ের মধ্যে ইসলামের মূলনীতিসমূহ ও বিশেষ করে সুন্নাতে নববী সর্ম্পকে তীব্র হিংসাত্মক বক্তব্যসমূহ সন্নিবেশিত করেছেন। উক্ত বইটি ১৯৮৪ সালে কায়রোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বই প্রদর্শনীতে ‘শ্রেষ্ঠ বই’ হিসাবে পুরস্কার লাভ করেছে।
উক্ত বইয়ে তিনি বলেন, ‘আহমাদ আমীন আমাদের উপরে ‘ছালাত’-কে ‘ফরয’ করে যাননি। তিনি চোরের হাত কাটা ঐসময় সিদ্ধ মনে করতেন, যখন খোলা ময়দানে কোন পথিকের নিকট থেকে চুরি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এটি কোন গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে না। অতএব বর্তমান অবস্থায় এই হুকুম অবশ্যই পরিবর্তন করা উচিত’।
মহিলাদের পর্দা সম্পর্কে তিনি বলেন, ليس للحجاب أيّ علاقة بالإسلام ‘পর্দার সঙ্গে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই’.....। এরূপ বহু অশোভন ও অনর্থক কথায় ভরে আছে পৃথিবীর কথিত ঐ ‘শ্রেষ্ঠ গ্রন্থটি’!
ডঃ আহমাদ আমীনের আরেক অনুসারী পন্ডিত ইসমাঈল আদহাম ১৩৫৩ হিজরীতে প্রকাশিত عن ةاريخ السنة নামক নিবন্ধে বলেন, ছহীহ গ্রন্থসমূহে যেসব হাদীছ লিপিবদ্ধ আছে, সেসবের ভিত্তি মযবুত নয়, বরং সন্দেহপূর্ণ এবং সেসবের মধ্যে জাল হওয়ার দোষাবলী অগ্রগণ্য’ (بل هي مشكوك فيها ويغلب عليها صفة الوضع)।
৩. মাহমূদ আবু রাইয়াহ
এই পন্ডিত ব্যক্তি সুন্নাতে নববী তো বটেই সরাসরি ছাহাবীগণের প্রতি হিংসাপরায়ণ। বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ যে মহান ছাহাবীর নিকট থেকে সবচেয়ে বেশী হাদীছ লাভ করেছে, হাদীছের শ্রেষ্ঠ হাফেয ছাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর উপরেই তার ক্রোধ সবচেয়ে বেশী। রাসূল (ছাঃ)-এর খাছ দো‘আপ্রাপ্ত ও আল্লাহর বিশেষ রহমত প্রাপ্ত অনুপম চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী এই মানুষটিকে কালিমালিপ্ত করার জন্য মিসরীয় পন্ডিত তার একটি বইয়ের নাম তাচ্ছিল্যভরে রেখেছেন شيخ المضيرة أبو هريرة ‘মযীরাহ’ খাদ্যের ভক্ষক আবু হুরায়রা’। আবু হুরায়রা (রাঃ) উক্ত খাদ্যটি পসন্দ করতেন বলে ছা‘আলাবী ও বদী‘উয্যামান হামাযানী প্রমুখ বর্ণনা করেছেন। যদিও এইসব সাহিত্যিকদের মাধ্যমে প্রচারিত উক্ত বর্ণনার কোন বিশুদ্ধ ভিত্তি নেই’।[4]
অনুরূপভাবে তার রচিত أضواء على السنة المحمدية বইয়ের মধ্যেও হাদীছ ও আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদ্গার করেছেন। সুন্নী নামধারী এই পন্ডিত মূলতঃ শী‘আ ছিলেন। যা তার লেখনীতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
উপরোক্ত মাহমূদ আবু রাইয়াহর লেখনীসমূহকে পুঁজি করে আরেকজন পন্ডিত সাইয়িদ ছালেহ আবুবকর একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যার নাম الأضواء القرآنية فى اكتساح الأحاديث الإسرائيلية وتطهير البخارى منها ‘ইস্রাঈলী হাদীছসমূহকে ঝাড়ু দেওয়ার জন্য এবং বুখারীকে ঐসব থেকে পবিত্র করার জন্য কুরআনী জ্যোতিসমূহ’। উক্ত বইয়ে তিনি ছহীহ বুখারীর ১০০ টি হাদীছ বাছাই করেছেন, যেগুলি তার মতে ইহুদীদের রচিত এবং ইমাম বুখারী সেগুলিকে ছহীহ সাব্যস্ত করেছেন (নাঊযুবিল্লাহ) ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দিকে সম্বন্ধ করেছেন। তার এই বাছাইয়ের জন্য তিনি প্রামাণ্য দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন নিকৃষ্টতম হাদীছ দুশমন মাহমূদ আবু রাইয়াহর বইসমূহকে।
অনুরূপ আরেকজন পন্ডিত আহমাদ যাকী আবু শাদী, যিনি স্বীয় বইثورة الإسلام (‘ইসলামের বিপ্লব’ পৃঃ ৪৪)-য়ে বলেন,
هذه سنن ابن ماجة والبخارى وجميع كتب الحديث والسنة طافحة بأحاديث وأخبار لا يمكن أن يقبل صحتها العقل ولا نرضي نسبتها إلى الرسول وأغلبها يدعو إلى السخرية بالإسلام والمسلمين والنبى الأعظم والعياذ بالله-
‘এই যে সুনান ইবনু মাজাহ ও বুখারী বা হাদীছ ও সুন্নাহর কিতাবসমূহ, যা হাদীছ ও খবরসমূহ দ্বারা পরিপূর্ণ, জ্ঞানের পক্ষে এগুলির বিশুদ্ধতা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এগুলিকে রাসূলের দিকে সম্বন্ধ করতে আমরা রাযী নই। বরং এগুলির অধিকাংশই ইসলাম, মুসলমান ও মহান নবীর প্রতি ঠাট্টার দিকে আহবান করে। ‘আমরা এসব থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই’।
উপরোক্ত পন্ডিতগণ ছাড়াও মুক্তবুদ্ধি ইসলামী চিন্তাবিদ নামে খ্যাত আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি আছেন, যারা চেতনে বা অবচেতনে বুঝে বা না বুঝে প্রাচীন বা আধুনিক হাদীছ দুশমনদের চটকদার যুক্তিবাদের খপ্পরে পড়ে ইসলামের নামেই ইসলামের মূল স্তম্ভ হাদীছ শাস্ত্রের প্রামাণিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যা তাদের লেখনী সমূহ দ্বারা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। ঐসকল ব্যক্তি ও তাদের বইসমূহের কয়েকটি নিম্নরূপ :
১. ডঃ আলী হাসান আব্দুল কাদের نظرة عامة في تاريخ الفقه الإسلامي ‘ইসলামী ফিক্বহের ইতিহাসের উপরে সাধারণ দৃষ্টিপাত’।
২. শায়খ মুহাম্মদ ‘ইমারাহ الإسلام والوحدة ‘ইসলাম ও ঐক্য’।
৩. মুহাম্মাদ আল-গাযালী السنة النبوية بين أهل الفقه وأهل الحديث ‘সুন্নাতে নববী : ফিক্বহবিদ ও হাদীছবিদগণের মধ্যখানে’।
৪. মুহাম্মদ আহমাদ খালাফুল্লাহ العدل الإسلامي ‘ইসলামী ন্যায়নীতি’।
৫. ডঃ হাসান তোরাবী تاريخ التجديد الإسلامي ‘ইসলামী সংস্কারবাদের ইতিহাস’।
অনুরূপভাবে ডঃ আব্দুল হামীদ মুতাওয়াল্লী মত পোষণ করেন যে, ‘খবরে ওয়াহেদ’ পর্যায়ভুক্ত হাদীছসমূহ দ্বারা কোন বিধানগত হুকুম সাব্যস্ত হবে না’। অন্যেরা বলেন, এসবের দ্বারা কোন ‘হুদূদ’ বা শাস্তি বিধান সাব্যস্ত করা যাবে না। অন্য একজন পন্ডিত শায়খ শালতূত ‘ছহীহ’ ও ‘মুতাওয়াতির’ হাদীছ সমূহের বিরুদ্ধে গিয়ে শেষ যামানায় ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ সম্পর্কিত আক্বীদাকে অস্বীকার করেন। অন্য একজন পন্ডিত হামাদ সাঈদান মত পোষণ করেন যে, শেষ দিকের সংকলনগুলিতে দুশমনরা ছহীহ বুখারীতে বহু মওযূ বা জাল হাদীছ জুড়ে দিয়েছে’। বস্ত্ততঃ একথা বলে তিনি নিজেকে অজ্ঞ ও হাদীছ দুশমনদের কাতারে শামিল করেছেন। এমনিভাবে তিনি তাঁর কোন কোন বইয়ে কবর আযাবের সর্বসম্মত আক্বীদার ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করেছেন। যে বিষয়টি মু‘তাযিলাগণ ব্যতীত কোন মুসলমান অস্বীকার করেনি।
ডঃ হাসান তোরাবী ব্যভিচারীকে পাথর মেরে হত্যা করার দন্ড, ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ প্রভৃতিকে অস্বীকার করেন। এতদ্ব্যতীত তাঁর বইসমূহে রয়েছে ভয়ংকর ভ্রান্তিসমূহ। অথচ এই ব্যক্তি সূদানে শরী‘আতী আইন কায়েম করার জন্য সোচ্চার। জানিনা সুন্নাতে নববীকে বাদ দিয়ে এবং হাদীছ শাস্ত্রকে অস্বীকার করে তিনি কার শরী‘আত দেশে প্রতিষ্ঠা করতে চান।
আরব বিশ্বের নামকরা সাহিত্যিকদের মধ্যে ইসলামের ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে যিনি সবচাইতে নগ্ন হামলা চালিয়েছেন, তিনি হ’লেন মিসরের অন্ধ সাহিত্যিক ও সমালোচক ডঃ ত্বহা হুসাইন (১৩০৭-১৩৯৩ হিঃ/১৮৮৯-১৯৭৩ খৃঃ)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উচ্চ মর্যাদার উপরে আঘাত হেনে তাঁর লিখিত বই على هامش السيرة (‘চরিত্রের আশে পাশে’)-এর ৫০ পৃষ্ঠায় شوق الحبيب إلى الحبيب ‘প্রিয়তমের প্রতি প্রিয়তমের আর্কষণ’ শিরোনামে উম্মুল মু’মেনীন যায়নাব বিনতে জাহশের সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিবাহের ঘটনা অত্যন্ত নগ্ন ভাষায় পেশ করেছেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, এই বইটি মিসরীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সে দেশের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে পাঠ্যপুস্তক হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে।
চার্লস ডারউইনের (১৮০৯-১৮৮২) বিবর্তনবাদের অন্ধ সমর্থক ও নাস্তিক্যবাদী দর্শনের অনুসারী অন্যতম মিসরীয় সাহিত্যিক নাজীব মাহফূয (১৯১১-২০০৬) সম্ভবতঃ ইসলাম সর্ম্পকে তাঁর কপট লেখনীর পুরস্কার হিসাবেই ১৯৮৮ সালে আন্তর্জাতিক ‘নোবেল’ প্রাইজে ভূষিত হয়েছিলেন। যার বিষদুষ্ট বই সমূহ এখন বাজারে বহুল প্রচলিত। বাংলাদেশের অনেক ব্যক্তি তার প্রশংসায় মুক্তকচ্ছ।[1]. যাওয়াবে‘ পৃঃ ৭৪, গৃহীত : আল-মানার ৯ম বর্ষ ৭ ও ১২ সংখ্যা।
[2]. যাওয়াবে‘ পৃঃ ৭৫, গৃহীত : আল-মানার ১০ম বর্ষ... দ্রঃ।
[3]. ড. আহমাদ আমীন, ফাজরুল ইসলাম (মিসর : ১৯৭৫) পৃঃ ২১৭-২১৮।
[4]. ড. মুছত্বফা আস-সাবাঈ, আস-সুন্নাহ (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ৪র্থ সংস্করণ ১৪০৫/ ১৯৮৫) পৃঃ ৩৩৫।