তওবার অপূর্ব নিদর্শন
একদা মা‘য়িয বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন’। তিনি বললেন, ‘ধিক তোমাকে! তুমি চলে যাও। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসলেন এবং আবারও বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এবারও তাকে পূর্বের ন্যায় বললেন। এভাবে তিনি যখন চতুর্থ বার এসে বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি তোমাকে কোন্ জিনিস হ’তে পবিত্র করব’? তিনি বললেন, ‘যেনা হ’তে’। তার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (ছাহাবীগণকে) জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ লোকটি কি পাগল’? লোকেরা বলল, ‘না, সে পাগল নয়’। তিনি আবার বললেন, ‘লোকটি কি মদ পান করেছে’? তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার মুখ শুঁকে তার মুখ হ’তে মদের কোন গন্ধ পেল না।
অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি সত্যিই যেনা করেছ’? সে বলল, ‘হ্যাঁ’। এরপর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাকে রজম করা হ’ল। এ ঘটনার দু’তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (ছাহাবীগণের নিকট) এসে বললেন, ‘তোমরা মা‘য়িয বিন মালিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তখন ছাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ মা‘য়িয বিন মালিককে ক্ষমা করুন। এরপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘সে এমন তওবা করেছে, যদি তা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তবে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে’।
এরপর আযদ বংশের গামেদী গোত্রীয় এক মহিলা এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন’। তিনি বললেন, ‘ধিক তোমাকে! তুমি চলে যাও। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর’। তখন মহিলাটি বলল, ‘আপনি মা‘য়িয বিন মালিককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন, আমাকেও কি সেভাবে ফিরিয়ে দিতে চান? আমার গর্ভের এই সন্তান যেনার’। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি (সত্যই অন্তঃসত্তা)? মহিলাটি বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, ‘যাও, তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর’। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আনছারী এক লোক মহিলাটির সন্তান হওয়া পর্যন্ত তাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর ঐ লোকটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খেদমতে এসে বলল, গামেদী মহিলাটি সন্তান প্রসব করেছে। এবার তিনি (ছাঃ) বললেন, ‘এ শিশু বাচ্চাটিকে রেখে আমরা মহিলাটিকে রজম (পাথর মেরে হত্যা) করতে পারি না’। কারণ তাকে দুধ পান করানোর মতো কেউ নেই। এ সময় জনৈক আনছারী দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি তার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব’। রাবী বলেন, তখন তিনি তাকে রজম করলেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহিলাটিকে বললেন, ‘তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর’। অতঃপর সন্তান প্রসবের পর যখন সে আসল, তখন তিনি বললেন, ‘আবার চলে যাও এবং তাকে দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত অপেক্ষা কর’। পরে যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ হয়, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খন্ড রুটির টুকরা দিয়ে তাকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খেদমতে হাযির হ’ল। এবার মহিলাটি এসে বলল, ‘হে আল্লাহর নবী! এই দেখুন আমি তাকে দুধ ছাড়িয়েছি, এমনকি সে নিজে হাতে খানাও খেতে পারে’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলে দিলেন। পরে মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। তার জন্য বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করা হ’ল। এরপর জনগণকে নির্দেশ দিলেন, তারা মহিলাটিকে রজম করল।
খালিদ বিন ওয়ালীদ (রাঃ) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার মাথায় এক খন্ড পাথর নিক্ষেপ করলে রক্ত ছিটে এসে তার মুখমন্ডলের উপর পড়ল। তখন তিনি মহিলাটিকে গাল-মন্দ করলেন। তা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন ‘থাম হে খালেদ! যার হাতে আমার জীবন তার কসম করে বলছি, এই মহিলা এমন তওবা করেছে, যদি রাজস্ব আদায়ে কারচুপিকারী ব্যক্তিও এমন তওবা করত, তাহ’লে তাকেও ক্ষমা করা হ’ত’। অতঃপর তিনি ঐ মহিলার জানাযার ছালাত আদায়ের আদেশ দিলেন এবং নিজে তার জানাযা পড়লেন। অতঃপর তাকে দাফন করা হ’ল।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার জানাযা পড়লে ওমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি তার জানাযা পড়লেন? অথচ সে যেনা করেছে? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘এ মহিলা এমন তওবা করেছে যে, তা সত্তর জন মদীনাবাসীর মধ্যে বণ্টন করে দিলেও যথেষ্ট হয়ে যেত। তুমি কি এর চাইতে উত্তম কোন তওবা পাবে, যে ব্যক্তি স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে?’।
[বুরায়দাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুসলিম হা/১৬৯৫-৯৬, মিশকাত হা/৩৫৬২ ‘দন্ডবিধি’ অধ্যায়]।
শিক্ষা :
বান্দার গোনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম হ’ল তওবা। সে এর মাধ্যমে পূত-পবিত্র হয়ে মহান আল্লাহর প্রিয়ভাজন হ’তে পারে।