কাযীর বিচার
অনেক দিন আগের কথা। শহর থেকে অনেক দূরে বাস করত একটি লোক। সে ছিল নেহায়েত গরীব। গায়ে খেটে ও বুদ্ধির জোরে সে বেশ টাকাকড়ি সঞ্চয় করেছিল। সে এক পরমা সুন্দরীকে বিয়ে করেছিল। একে একে তাদের তিনটি ফুটফুটে ছেলে হয়েছিল। ছেলে তিনটি খুব সুদর্শন ছিল। ক্রমে তারা হয়ে ওঠে এক একজন সুঠামদেহী জওয়ান। ছেলে তিনটি কারবারে তাদের পিতাকে সাহায্য করতে শুরু করে। কিন্তু পিতাকে সাহায্য করলে কি হবে, তারা কেউই বাবার মত বুদ্ধিমান ছিল না। সেজন্য বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে লোকটির চিন্তা-ভাবনাও বাড়তে লাগল। ছেলেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সে চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে ভেবে দেখল যে, তার ধন-সম্পদ যা কিছু রয়েছে, তাতে ছেলেরা সারাজীবন সুখে কাটিয়ে দিতে পারবে। ছেলেরা যাতে ভবিষ্যতে ঝগড়া-ফাসাদ না করে সেজন্য সে ঠিক করল যে, সব সম্পদ বণ্টন করে সে অছিয়তনামা তৈরী করে দিয়ে যাবে। এই ভেবে সে একজন উকিল ও দু’জন সাক্ষী ডেকে একটি অছিয়তনামা তৈরী করে ফেলল। তার মৃত্যুর পর অছিয়তনামা বের করা হ’ল। তাতে লেখা রয়েছে, ছেলেরা সোনা-চাঁদি, স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তির সমান অংশ পাবে। তবে সতেরটা হাতির মধ্যে বড় ছেলে পাবে অর্ধেক, মেজো ছেলে পাবে তিন ভাগের এক ভাগ, আর ছোট ছেলে পাবে নয় ভাগের এক ভাগ। এটা ছিল জটিল ব্যাপার। তাই সমাধানের জন্য তারা তিন ভাই শহরের কাযীর কাছে গেল। কাযী বললেন, তোমরা এখন বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম করো। আগামীকাল সকালে আমি নিজে তোমাদের বাড়িতে যাব। তোমাদের হাতীগুলো বাইরে বের করে রেখ। তোমাদের পিতার অছিয়তনামা অনুযায়ী আমি সেগুলো যথাযথভাবে ভাগ করে দেব।
পরের দিন কাযী স্বীয় হাতির পিঠে সওয়ার হয়ে সেখানে এসে হাযির হ’লেন। তিনি অছিয়তনামা পড়ে সবাইকে শোনালেন। এরপর বললেন, ছেলেরা! তোমাদের বাবা রেখে গেছেন সতেরটি হাতি আর আমি দিলাম একটি। মোট হ’ল আঠারটি। বড় ছেলের অর্ধেক অর্থাৎ সে নয়টি হাতি পাবে। সে তা নিয়ে নিক। মেজো ছেলে তিন ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ সে পাবে ছয়টি হাতি, সে তা নিয়ে নিক। আর ছোট ছেলে পাবে দু’টো হাতি। কারণ নয় ভাগের এক ভাগ তার পাওনা। এখন নয়, ছয় ও দুই মিলে হ’ল সতেরটা হাতি। এখন বাকী রইল একটি হাতী এবং এ হাতীটি আমার। অতএব আমি আমার হাতীটি ফেরত নিলাম। তোমরা সবাই খুশী হ’লে তো? ছেলেরা তখন যার যার ভাগের হাতী নিয়ে খুশিতে বাগবাগ হ’ল। কাযীর বিচারে সবাই সন্তুষ্ট। এই কঠিন হিসাবের সুষ্ঠু সমাধানে সবাই কাযীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল।
শিক্ষা : উপস্থিত বুদ্ধি বিচারকের অন্যতম গুণ।