পশুর কৃতজ্ঞতাবোধ
স্নেহ-দয়া-মায়া-ভালবাসা ইত্যাদি হৃদয়ের কোমল বৃত্তিগুলি আল্লাহপাক কেবল উন্নত জীব মানুষকেই দান করেননি। ইতর প্রাণী পশু-পাখিতেও দিয়েছেন। তাই মানুষ যেমন অতি আদর-যত্নে সন্তান-সন্ততিকে লালন-পালন করে, পশু-পাখিও এদিক দিয়ে কম নয়। তারাও সহজেই মানুষের আদর-সোহাগ বুঝতে পারে।
এক ক্রীতদাস তার মনিবের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে পালিয়ে এক বনে ঢুকে পড়ে। বনের ভিতর দিয়েই পথ চলতে চলতে সে দেখতে পেল, একটি সিংহ একস্থানে স্থির হয়ে তার দিকে একটি পা বার বার উঠিয়ে কি যেন ইশারা করছে। সে সিংহটিকে অসুস্থ মনে করল। সিংহের ইশারায় সে সাহসে বুক বেঁধে আস্তে আস্তে সিংহের কাছে গেল। সে দেখল, সিংহের পায়ে একটি বড় কাঁটা বিঁধে রয়েছে। ফলে পা-টি ফুলে গেছে। সে পা থেকে কাঁটাটি বের করল। তারপর পথ চলতে লাগল।
এর কিছুদিন পর পলাতক ক্রীতদাসটি ধরা পড়ে গেল। আর ঐ সিংহটিও ধরা পড়েছে। ধৃত সিংহটি একটি সার্কাস পার্টির হাতে এসে পড়ল। যে শহর থেকে লোকটি পালিয়েছিল, সার্কাস পার্টি ঐ শহরে এল সার্কাস দেখাতে।
শহরের বিচারকমন্ডলী পলাতকের অপরাধের শাস্তি হিসাবে ঐ সিংহকে দিয়ে তাকে ভক্ষণ করানো স্থির করল। তাহলে এটি একটি দৃষ্টান্ত হবে, যাতে আর কোন ক্রীতদাস এভাবে পালিয়ে না যায়। বিচার ব্যবস্থা নির্মম মনে হলেও সে যুগে সেটি মোটেই নির্মম ছিল না। যাহোক তারা ঘোষণা দিল, অমুক দিন অমুক সময় পলাতককে সিংহের সামনে নিক্ষেপ করা হবে। কিভাবে সিংহ তাকে ভক্ষণ করে, এ দৃশ্য দেখতে প্রচুর উৎসুক দর্শক উপস্থিত হ’ল। চারিদিক লোকে লোকারণ্য। মাঝখানে পলাতক লোকটি। এখন সিংহটিকে শিকল লাগিয়ে খাঁচা থেকে ছেড়ে দেওয়া হ’ল। সবাই ভাবছিল ছাড়া পেয়ে সিংহটি আক্রমণাত্মকভাবে দৌড়ে তাকে শেষ করে দিবে। কিন্তু একি! সবাইকে বিস্মিত করে সিংহটি তাকে খেল না। বরং পলাতককে সে সঠিকভাবেই চিনল। সে-ই তার পা থেকে কাঁটা বের করে দিয়েছিল।
শিক্ষা : একটি ইতর প্রাণী তার পা থেকে কাঁটা বের করার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে। আর আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা হয়ে কৃতজ্ঞতার বদলে যত রকম অন্যায় ও অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে মোটেই কার্পণ্য করি না। এটা কি আমাদের চরিত্র হওয়া উচিত?