সম্পদের মোহ
সম্পদের মোহ মানুষের জন্মগত। সম্পদের প্রতি মানুষের মোহ থাকা খুবই স্বাভাবিক। কেননা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপনের জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আবার সম্পদের অত্যধিক মোহ মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগ ও অশান্তির কারণও বটে। সম্পদের মোহ মানুষকে ধ্বংসের চোরাগলিতে নিয়ে যায়। সম্পদ সংগ্রহে কখনো কখনো মানুষ অন্যায় পথে পা বাড়ায়। মানুষের সম্পদ প্রাপ্তির আকাংখার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। সে যতই পায়, ততই চায়। ক্ষুধা নিবারণের পর অতি লোভনীয় খাবার গ্রহণে মানুষের অনিচ্ছা প্রকাশ পেতে পারে। কিন্তু যদি কোন মানুষের সামনে অগণিত সম্পদ রেখে দিয়ে বলা হয়, এ থেকে তোমার প্রয়োজন মতো গ্রহণ কর। তাহলে দেখা যাবে, সে তখন তার বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত সম্পদ আগলে নিয়ে বসে রয়েছে।
এক বাদশাহ অফুরন্ত সম্পদের মালিক। তিনি তার সে সম্পদ একটি ঘরে সংগোপনে সংরক্ষিত রেখেছেন। মাঝে মাঝে সে সম্পদ দেখার জন্য একাকী তিনি সেখানে যান। সম্পদ দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যায়, মনও ভরে যায়। তিনি সব ঠিকঠাক দেখে প্রশান্তি অনুভব করেন এবং মনে মনে বলেন, তিনি যদি একাধারে এ সম্পদ ব্যয় করেন তাহলে বিশ হাযার বছরেও ফুরাবে না। তিনি মনে মনে এও আশা করেন, এ সম্পদ তাকে বিশ হাযার বছর ধরে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।
এক রাতে তিনি সম্পদ দেখে মনে প্রশান্তি লাভের উদ্দেশ্যে গোপন ঘরের তালা খুলে সেটি বাইরে রেখে দরজাটি ভিতর থেকে বন্ধ করে দিয়ে ঘরের ভিতরে পায়চারি করছেন আনমনে। এমন সময় তার একমাত্র শাহযাদা কি প্রয়োজনে যেন সেখানে উপস্থিত হ’ল। সে তালাটি বাইরে দেখে ভাবল, তার বাবা হয়তো তালাটি খুলে লাগাতে ভুলে গেছেন। তখন সে দরজায় তালা লাগিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর বাদশাহ বাইরে আসার জন্য দরজার কাছে এলেন। কিন্তু তিনি আর বের হ’তে পারলেন না। ঘরটি এমন গোপনীয় ও সুরক্ষিত যে, ভিতর থেকে শত ডাকাডাকি করলেও কোন শব্দ বাইরে বের হয় না। তিনি বুঝতে পারলেন, এ ঘরেই তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। সম্পদ মানুষকে বাঁচায়, কিন্তু সরাসরি বাঁচায় না। ঘরে সম্পদের ছড়াছড়ি অথচ একটুও খাদ্য নেই। অনাহারে তাকে মরতে হ’ল।
এদিকে রাজবাড়ীতে বাদশাহকে না পেয়ে স্ত্রী-পুত্র মনে করল, তিনি হয়তো কোথাও গিয়েছেন। তারা সম্ভাব্য স্থানসমূহে খোঁজাখুঁজি করল, কিন্তু কোথাও তাকে পাওয়া গেল না। রাজকার্য পরিচালনা করতে মন্ত্রীবর্গ শাহযাদাকে রাজমুকুট পরিয়ে সসম্মানে সিংহাসনে বসালেন। রাজকার্য পরিচালনা করতে সম্পদের প্রয়োজন দেখা দিল। বাদশাহ নিখোঁজ হওয়ার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। ধন-ভান্ডারের তালা খোলার সাথে সাথে এক বীভৎস গন্ধে চারিদিক ভরে গেল। দেখা গেল, বাদশাহ-ই স্বয়ং মরে পচে রয়েছেন। ধুলা ধূসরিত তার নিথর-নিস্তব্ধ-অসাড় দেহ।
শিক্ষা : মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের নেশা মানুষকে বিবেক-বোধহীন পশুতে পরিণত করে। ফলে সে হালাল-হারাম বিবেচনা না করে শুধু দু’হাতে সম্পদ উপার্জন করতে থাকে। অথচ সে চিন্তা করে না যে, মৃত্যু বরণের সাথে সাথে সেই সম্পদ একটি মুহূর্তের জন্যও তার কোন কাজে আসবে না।