গল্পের মাধ্যমে জ্ঞান

ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) ও ছূফীদের গল্প

ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ)-এর সময়ে সিরিয়া এলাকায় ছূফীদের উপদ্রব ছিল খুব বেশী। তারা ‘কারামতের’ নামে বিভিন্ন ভেল্কিবাজি দেখিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্ট করত ও তাদের গোলামীতে আবদ্ধ করত। দেশের নেতৃবৃন্দ ও সমাজপতিরা ছাড়াও হাযার হাযার সাধারণ লোক তাদের ধোঁকার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। ছূফীরা নিজেদেরকে ‘বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী’ এবং আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত বলে মিথ্যা দাবী করত। তারা আগুনের মধ্যে প্রবেশ করত, কিন্তু পুড়ত না। এ কারণে লোকেরা ভাবত, এইসব ছূফীর শিষ্য হ’তে পারলে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। মানুষ ইবাদত-বন্দেগী ছেড়ে দিয়ে দলে দলে তাদের খানকাহে হাযির হয়ে নযর-নেয়ায দিয়ে তথাকথিত মা‘রেফাতের সবক নেওয়া শুরু করল।

গোমরাহীর এই স্রোত ঠেকানোর জন্য ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) সিরিয়ার বাদশাহর নিকটে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে বাদশাহ! আমি এই ছূফীদের চ্যালেঞ্জ করছি। আপনি ওদের হাযির করুন। বাদশাহ বললেন, ওরা তো বলে যে, ওদের এক ধরনের ‘হাল’ হয়। যার কারণে ওরা আগুনে প্রবেশ করলেও অক্ষত থাকে। ‘শরী‘আতপন্থী কোন ব্যক্তি একাজ করতে সক্ষম নয়’ বলে ওরা দাবী করে থাকে।

ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বললেন, আমিও আগুনে প্রবেশ করব। তবে একটা শর্ত আছে, যেটা ওদের সাথে চ্যালেঞ্জের মুকাবিলায় গিয়ে বলব। আপনি ওদের নেতাদের হাযির করুন।

বাদশাহ ছূফী সম্রাটদের দরবারে হাযির করলেন। যথাসময়ে ছূফী সম্রাট তার সাথী শায়েখ খলীফা সাইয়েদ আহমাদ ও শায়েখ হাতেম প্রমুখকে নিয়ে উপস্থিত হ’লেন। অতঃপর তারা তাদের টেকনিক অনুযায়ী প্রথমে অনেকগুলি মা‘রেফতী কসরৎ করলেন। তারপর ‘হাল’ হ’ল। এরপর ছূফী সম্রাট আগুনে প্রবেশ করতে উদ্যত হ’লেন। কিন্তু ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বাধা দিয়ে বললেন, ‘খাল’ (সাবান-এর ন্যায় এক প্রকার বস্ত্ত) ও গরম পানি দিয়ে আগে গোসল কর। তারপর আগুনে প্রবেশ কর’। কিন্তু ছূফী সম্রাট চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, এটাই আমাদের মা‘রেফতী তরীকা। গোসল করাটা আমাদের তরীকা বিরোধী। ইবনু তায়মিয়াহ বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে মোমবাতির আগুনে কেবল তোমার আঙ্গুলটি পোড়াও, আমিও আঙ্গুল পোড়াব। কিন্তু শর্ত হ’ল, আগে তোমার আঙ্গুলগুলো ভালভাবে গরম পানি ও ‘খাল’ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। কিন্তু ছূফী সম্রাট এতে আরও ক্ষেপে উঠল ও রাগান্বিত হয়ে চলে গেল। তখন সমবেত হাযার হাযার জনতার উদ্দেশ্যে ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বললেন, আসল রহস্য হ’ল এই যে, এরা হাতে পায়ে ও সারা দেহে ‘কিবরীত’ নামক এক প্রকার তৈল মর্দন করে। যা আগুন থেকে দেহকে রক্ষা করে। এটাকেই লোকেরা তাদের ‘কারামত’ মনে করে। আর এই সুযোগে ছূফীরা ভক্তদের ঈমান চুরি করে ও তাদের পকেট ছাফ করে। এরা শয়তানের এজেন্ট। এদের থেকে সকলে সাবধান হও’। তিনি বলেন, যদি কেউ অলৌকিকতা দেখিয়ে আগুনে প্রবেশ করে বা আকাশে ওড়ে বা পানিতে হেঁটে বেড়ায়, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কেননা বড় দাজ্জাল আকাশকে বলবে, ‘পানি বর্ষণ কর’ তখন বৃষ্টি হবে। মাটিকে বলবে, ‘উৎপাদন কর’ তখন বিভিন্ন গাছ জন্মাবে। সে বলবে, হে যমীন! তোমার খনিগুলোকে বের করে দাও। তখন সব খনিজ সম্পদ বেরিয়ে আসবে। সে মানুষ হত্যা করবে, তারপর বলবে, উঠে দাঁড়াও। তখন সে পুনরায় জীবিত হয়ে উঠে দাঁড়াবে’। অতএব হে জনগণ! অলৌকিকতার মধ্যে কোন শিক্ষা নেই। প্রকৃত শিক্ষা হ’ল এ বিষয়ে যে, মানুষের কাজ-কর্ম কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক হচ্ছে কি-না। কুরআন ও সুন্নাহ হ’ল সবকিছুর মাপকাঠি।

ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-এর এই সাহসী পদক্ষেপের ফলে হাযার হাযার মানুষ মা‘রেফাতের ধোঁকা থেকে মুক্ত হ’ল এবং পুনরায় কুরআন ও সুন্নাহর পথে ফিরে এল।

[উল্লেখ্য যে, সমাজের দুনিয়াপূজারী আলেম ও ভন্ড পীর-আউলিয়াদের চক্রান্তে ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে ৮ বার জেল খাটতে হয় এবং জেলখানাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।]

শিক্ষা : ছূফী/ব্রেলভীদের যাবতীয় ভ্রান্ত কারামতের ভেল্কিবাজি থেকে সাবধান থাকুন! যাতে তারা ঈমানদারদের ঈমান হরণ করতে না পারে।