ফিরক্বা নাজিয়াহ

জামা‘আত অর্থ

 (وفي رواية لأحمد وأبي داؤد عن معاوية.... وَهِيَ الْجَمَاعَةُ) ‘আহমাদ ও আবুদাঊদে হযরত মু‘আবিয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘সেটি হ’ল জামা‘আত’ অর্থাৎ ছাহাবীগণের জামা‘আত (جماعة الصحابة) এবং তাঁদের আক্বীদা, আমল ও রীতি-পদ্ধতির সনিষ্ঠ অনুসারী ব্যক্তি বা দল’। তারাই হ’লেন নাজী ফের্কা। যে বিষয়ে সূরা তওবা ১০০ আয়াতে ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

অতএব পৃথিবীর সকল প্রান্তের সকল ‘আহলেহাদীছ’ একই জামা‘আতভুক্ত। এমনকি যদি তিনি কোন স্থানে একাকীও থাকেন। যেমন খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর কাছে রাসূল (ছাঃ) বর্ণিত ‘আল-জামা‘আত’ অর্থ কি- একথা জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, اَلْجَمَاعَةُ مَا وَافَقَ الْحَقَّ وَإِنْ كُنْتَ وَحْدَكَ ‘হক-এর অনুগামী দলই জামা‘আত, যদিও তুমি একাকী হও’।[1]

ফায়েদা : ছাহেবে মিরক্বাত বলেন, أي أهلُ العلم والفقه الذين اجتمعوا على اتباع آثاره عليه الصلاة والسلام في النقير والقطمير ولم يبتدعوا بالتحريف والتغيير ‘উক্ত জামা‘আত হ’ল, আলিম ও ফিক্বহবিদগণ। যারা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়েও রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ সমূহের অনুসরণের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং কোনরূপ (শাব্দিক বা মর্মগত) পরিবর্তনের বিদ‘আত সৃষ্টি করেননি’। এরপরে তিনি সুফিয়ান ছাওরীর বক্তব্য উদ্ধৃত করেন যে, لو أن فقيها على رأس جبل لكان هو الجماعة ‘যদি একজন ফক্বীহ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করেন, তাহ’লে তিনিই একটি জামা‘আত’।[2]

এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে পাঠকের দৃষ্টিকে ছাহাবায়ে কেরামের জামা‘আত ও মুহাদ্দিছ ফক্বীহগণ থেকে মাযহাবী ফক্বীহমুখী করা হয়েছে, যা উম্মতের ঐক্যের জন্য অতীব বিপজ্জনক। কেননা মাযহাবী ফক্বীহদের মতভেদের শেষ নেই এবং এইসব ফক্বীহদের অনৈক্যের কারণেই উম্মতের ঐক্য অনেকাংশে বিনষ্ট হয়েছে।

পক্ষান্তরে মিশকাতের অন্যতম আরবী ভাষ্যগ্রন্থ মির‘আতুল মাফাতীহ-এর লেখক মুহাদ্দিছ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (১৩২২-১৪১৪ হিঃ/১৯০৪-১৯৯৪ খৃঃ) বলেন, وهم أهلُ السنة والجماعة، أي أصحابُ الحديث الذين اجتمعوا على اتباع آثاره صلى الله عليه وسلم في جميع الأحوال، واتفقوا على الأخذ بتعامل الصحابة وإجماعهم، ولم يبتدعوا بالتحريف والتغيير، ولم يبدلوا بالآراء الفاسدة ‘তারা হ’ল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত অর্থাৎ আহলুল হাদীছ। যারা সর্বাবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছের অনুসরণ করেন এবং যারা ছাহাবীগণের আচার-আচরণ ও ইজমা গ্রহণের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেন। যারা শব্দ বা মর্ম পরিবর্তনের বিদ‘আতে লিপ্ত হন না কিংবা নিজেদের বাতিল রায়সমূহ দ্বারা তা পরিবর্তন করেন না’।[3]


[1]. ইবনু আসাকির, তারীখু দিমাশ্ক্ব, সনদ ছহীহ; হাশিয়া মিশকাত আলবানী, হা/১৭৩।

[2]. মিরক্বাত ১/২৪৮-৪৯।

[3]. মির‘আত ১/২৭৮।