দাওয়াতের তিনটি স্তর
১- দাওয়াত ফরযে ‘আয়েন : প্রত্যেক মুমিনের উপরে যেটা ফরয, তাকে ‘ফরযে আয়েন’ বলা হয়। যা পালন না করলে কঠিন গুনাহ্গার হ’তে হয় এবং অস্বীকার করলে কাফের হ’তে হয়। যেমন ছালাত, ছিয়াম ইত্যাদি। আল্লাহ্র দিকে দাওয়াত দেওয়া প্রত্যেক মুমিনের জন্য ‘ফরযে আয়েন’ তখন হয়, যখন সমাজে অন্যায়-অনাচার বিজয় লাভ করে এবং নেকী ও ন্যায়নীতি পরাভূত হয়। যেমন আল্লাহ বলেন, كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ- (آل عمران 110)- ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত। তোমাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে মানব জাতিকে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ করার জন্য’ (আলে ইমরান ৩/১১০)। এখানে উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রত্যেকের উপরে দাওয়াত ফরয করা হয়েছে, যা লংঘন করলে গুনাহগার হ’তে হবে।
২- দাওয়াত ফরযে কিফায়াহ : সমাজের কিছু মুমিন দায়িত্ব পালন করলে অন্যদের জন্য যেটা যথেষ্ট হয়, তাকে ‘ফরযে কিফায়াহ’ বলে। যেমন ছালাতে জানাযাহ। হাযার পড়শীর মধ্যে কিছু সংখ্যক মুমিন জানাযা ও দাফনে অংশ গ্রহণ করলে বাকীদের ফরয আদায় হয়ে যায়। কিন্তু কেউ অংশ গ্রহণ না করলে প্রত্যেকেই গুনাহগার হবে। তখন ওটা ‘ফরযে আয়েন’-এর পর্যায়ভুক্ত হয়ে থাকে।
দাওয়াত ‘ফরযে কিফায়াহ’ তখনই হবে, যখন সর্বত্র নেকী ও ন্যায়নীতি বিজয় লাভ করবে, অন্যায় ও দুর্নীতি পরাভূত হবে। এই সময় কিছু লোক দাওয়াতের কাজ করলে বাকীদের জন্য যথেষ্ট হবে। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ - (آل عمران 110)-
‘তোমাদের মধ্যে একটা দল থাকা চাই যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হবে সফলকাম’ (আলে ইমরান ৩/১০৪)।
৩- দাওয়াত মুবাহ : ‘মুবাহ’ অর্থ যে কাজ করলে ছওয়াব আছে, না করলে গুনাহ নেই। সমাজে যখন ন্যায়নীতি বিজয়ী অবস্থায় থাকবে, নেকীর কাজ সর্বত্র বিরাজিত হবে এবং সমাজের পক্ষ হ’তে কিছু লোক সর্বদা দাওয়াতের জন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়োজিত থাকবেন, তখন অন্যদের জন্য দাওয়াতের কাজ ‘মুবাহ’ পর্যায়ভুক্ত হবে। দাওয়াত দিলে তারা ছওয়াব পাবেন, না দিলে গুনাহগার হবেন না। আল্লাহ বলেন,
فَلَوْلاَ نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوْا فِي الدِّيْنِ وَلِيُنْذِرُوْا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوْا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُوْنَ- (التوبة 122) -
‘তোমাদের প্রত্যেক গোত্র হ’তে কেন একটা দল বেরিয়ে আসছ না দ্বীনের জ্ঞান হাছিল করার জন্য? অতঃপর ফিরে গিয়ে তারা তাদের কওমকে জাহান্নামের ভয় দেখাবে যাতে তারা সাবধান হয়ে যায়’ (তাওবাহ ৯/১২২)।