দাওয়াত না বিজয় সাধন?
দ্বীনের দাওয়াত না দ্বীনের বিজয় সাধন, কোন্টি মুমিনের উপরে ফরয এ নিয়ে অনেক সময় তর্কের সৃষ্টি হয় । অথচ মুমিনের উপরে ফরয দায়িত্ব হ’ল দাওয়াত দেওয়া, অন্য কিছু নয়। হেদায়াত দান বা দুনিয়াতে বিজয় দান সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। যদি আমাদের দাওয়াত আল্লাহর নিকটে কবুল হয়ে যায় তাহ’লে তিনি এ দাওয়াতের বিনিময়ে দুনিয়াতেই দ্বীনের বিজয় দান করতে পারেন। নইলে আখেরাতের বিজয় ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির বিষয়ে তো আল্লাহর ওয়াদা রয়েছেই।
আল্লাহ বলেন,
وَمَا النَّصْرُ إِلاَّ مِنْ عِنْدِ اللهِ الْعَزِيْزِ الْحَكِيْمِ- ‘সাহায্য কেবলমাত্র মহা প্রতাপান্বিত ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে’ (আলে ইমরান ৩/১২৬)। অন্যত্র তিনি এরশাদ করেন, إِنْ يَّنْصُرْكُمُ اللهُ فَلاَ غَالِبَ لَكُمْ- ‘যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন, তাহ’লে কেউই তোমাদের উপরে জয়লাভ করতে পারবে না’ (আলে-ইমরান ৩/১৬০)।
এক্ষণে যদি দ্বীনের বিজয় সাধনকে আন্দোলনের কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়, তবে সেখানে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তিনটি মারাত্মক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। (১) দাওয়াতকে আল্লাহর পসন্দনীয় বানাবার প্রচেষ্টায় ভাটা পড়বে (২) দ্বীনের বিজয় সাধনের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ হবে ও দাওয়াতের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে (৩) আল্লাহ না করুন যদি দুনিয়াবী বিজয় না আসে, তাহ’লে দা‘ঈর মধ্যে হতাশা ও নৈরাশ্য দেখা দিবে। পরিশেষে হয়তবা সে হক্ব-এর দাওয়াত থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিবে। অবশ্য ইসলামের সার্বিক বিজয় সাধনের লক্ষ্য নিয়েই দা‘ঈ-কে কাজ করে যেতে হবে এবং সেই মূল লক্ষ্য অর্জনের পথেই তাকে দাওয়াত দিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন,
هُوَ الَّذِيْ أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدٰى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُوْنَ، (الصف 9)-
‘তিনি তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে অন্যান্য দ্বীন সমূহের উপরে তা জয়লাভ করে। যদিও মুশরিকরা এটা অপসন্দ করে’ (ছফ ৬১/৯)।
এই বিজয় প্রাথমিকভাবে অবশ্যই আক্বীদাগত এবং আমলগত বিজয়, যাকে আধুনিক পরিভাষায় সাংস্কৃতিক বিজয় বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে প্রচলিত সকল ধর্ম ও মতাদর্শ অবশ্যই ইসলামের নিকটে পরাজিত এতে কোনই সন্দেহ নেই। অতঃপর পৃথিবীতে এমন কোন মাটির ঘর বা ঝুপড়িও থাকবে না যেখানে ইসলামের দাওয়াত প্রবেশ করবে না। হয় তারা ইসলাম কবুল করে সম্মানিত হবে, নয় ইসলামের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য হবে। যেমন নিম্নোক্ত হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ الْمِقْدَادِ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ: لاَ يَبْقَى عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ بَيْتُ مَدَرٍ وَلاَ وَبَرٍ إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللهُ كَلِمَةَ الإِسْلاَمِ بِعِزِّ عَزِيْزٍ أَوْ ذُلِّ ذَلِيْلٍ إِمَّا يُعِزُّهُمُ اللهُ فَيَجْعَلُهُمْ مِنْ أَهْلِهَا أَوْ يُذِلُّهُمْ فَيَدِيْنوُنَ لَهَا، قُلْتُ فَيَكُوْنُ الدِّيْنُ كُلُّهُ ِللهِ- رواه أحمد-
মিক্বদাদ বিন আসওয়াদ (রাঃ) বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘ভূপৃষ্ঠে এমন কোন মাটির ঘর বা তাঁবু থাকবে না, যেখানে আল্লাহ ইসলামের বাণী পৌঁছে দিবেন না- সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে এবং অসম্মানীর ঘরে অসম্মানের সাথে। আল্লাহ যাদেরকে সম্মানিত করবেন, তাদেরকে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণের যোগ্য করে দিবেন। আর যাদেরকে তিনি অসম্মানিত করবেন, তারা (জিযিয়া দানে) ইসলামের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য হবে। আমি বললাম, তাহ’লে তো দ্বীন পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হয়ে যাবে’ (অর্থাৎ সকল দ্বীনের উপরে ইসলাম বিজয় লাভ করবে)।[1] এই হাদীছে বিশ্বব্যাপী ইসলামের রাজনৈতিক বিজয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। এজন্য প্রত্যেক দা‘ঈকে আক্বীদা ও আমলে উত্তম নমুনা হ’তে হবে যার দ্বারা অমুসলিমদের হৃদয় জয় করা সম্ভব হবে। রাজনৈতিক বিজয় লাভ করার জন্য যা আবশ্যিক পূর্বশর্ত।