অর্থনৈতিক কর্মসূচী
১. শরী‘আহ ভিত্তিক ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের প্রসার:
আধুনিক সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে চাঙ্গা রাখতে হ’লে ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রচলিত এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সূদনির্ভর বিধায় শরী‘আতের সাথে সাংঘর্ষিক। এরই প্রতিবিধানের জন্য গত চার দশক ধরে মুসলিম বিশ্বে গড়ে উঠেছে ইসলামী শরী‘আহ ব্যাংক, বীমা ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানসমূহ। কিন্তু সেগুলি পুরোপুরি শরী‘আহ ভিত্তিক করা সম্ভব নয় বলে অভিজ্ঞমহলের বিশ্বাস। এর সবচেয়ে বড় কারণ হ’ল এই যে, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হ’ল সূদভিত্তিক এবং একই সঙ্গে পুঁজিবাদী। তাই ইসলামী ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের যেমন রয়েছে নিজস্ব সীমাবদ্ধতা, তেমনি রয়েছে নানা আইনী প্রতিবন্ধকতা।
২. করযে হাসানাহ ও মুযারাবা পদ্ধতির বাস্তবায়ন:
সমাজে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি এবং বিত্তহীন দক্ষ ও যোগ্য লোকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারে করযে হাসানাহ ও মুযারাবা পদ্ধতি। ইসলামী অর্থনীতির এই অপরিহার্য বিধান দু’টি এদেশে অনুপস্থিত। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, এমনকি সংখ্যালঘু মুসলমানের দেশ শ্রীলংকাতেও মসজিদভিত্তিক করযে হাসানাহ প্রদান ও সোসাইটিভিত্তিক মুযারাবা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এ দেশেও এই ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। সমাজের বিত্তশালী লোকদের করযে হাসানাহ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এই উদ্যোগ যদি মসজিদকেন্দ্রিক হয় তাহ’লে সত্যিকার যোগ্য লোককে যেমন সুযোগ দেওয়া যাবে, তেমনি এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের পাশাপাশি সমাজ সচেতনতা ও সমাজকল্যাণ নিশ্চিত হবে।
মুযারাবা পদ্ধতি এদেশে চালু করতে সময়ের প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন হবে আইন কাঠামো বদলানোর পাশাপাশি উত্তম চরিত্রের লোক সৃষ্টি। উত্তম ও যোগ্য লোকেরা মুযারাবার মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বৃদ্ধি উভয়বিধ উপায়েই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারে। উপরন্তু সমাজের বিত্তশালী লোকদের মনোভাব পরিবর্তনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন তাদের ইসলামী অনুশাসন জানতে ও অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করা। এর ফলে দুঃসময়ে প্রয়োজনীয় ঋণ পাওয়া সহজ হবে বিনা সূদেই এবং বিনিয়োগ গ্রহীতা সূদ প্রদানের বাড়তি দায় হ’তে রক্ষা পাবে। করযে হাসানাহ দিলে সেই অর্থের জন্য আয়কর দিতে হবে না এবং মুযারাবার ক্ষেত্রে ছাহেবুল মাল বা সম্পদের মালিককে কেবল মুনাফার নির্দিষ্ট পরিমাণের ঊর্ধ্বের জন্য আয়কর দিতে হবে এমন আইন করে বিত্তশালী মুসলিমদের মনোযোগ এ ক্ষেত্রে আকর্ষণ করা সম্ভব।
৩. যাকাতভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহণ :
সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতি তথা জীবনের সকল ক্ষেত্র হ’তে সূদ নির্মূল করতে হলে যাকাতভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ইসলামের অন্যতম মুখ্য কৌশল। এই কৌশল গ্রহণ ও বাস্তবায়নের যেমন বিকল্প নেই তেমনি এর সাথে আপোষও হ’তে পারে না। মুসলিম সমাজে যেদিন হ’তে রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায় ও তার যথাযথ ব্যবহার বন্ধ হয়েছে সেদিন হ’তেই দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক বঞ্চনা তথা যুল্ম চেপে বসেছে। বিশেষতঃ যেসব কারণে লোকেরা সূদভিত্তিক ঋণ গ্রহণে বাধ্য হয়। সেসবের মূলোচ্ছেদ করতে হ’লে যাকাতের জুড়ি নেই। যাকাতের অর্থ গ্রহীতার হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় বা তার জন্যে ব্যয় করা হয় কোন প্রত্যুপ্রকার বা আর্থিক প্রত্যাশা না করেই। তাই এক্ষেত্রে লাভের গুড় পিঁপড়ের খাওয়ার কোন আশংকা নেই।
যাকাতের অর্থ উৎপাদনী ও অনুৎপাদনী উভয় ধরনের প্রয়োজন পূরণে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর এবং আকস্মিক বিপদগ্রস্ত লোকের প্রয়োজনের প্রধান ও বৃহৎ অংশটিই অনুৎপাদনী শ্রেণীর। মুখ্যতঃ এই প্রয়োজন পূরণের জন্যই তারা মহাজনের শরণাপন্ন হয় এবং গৃহীত অর্থের জন্য সূদ প্রদানে বাধ্য থাকে। অথচ যাকাতের অর্থের জন্য তা অনুৎপাদনী বা উৎপাদনী যে কাজেই ব্যবহার করা হোক না কেন- সূদ তো দিতে হবেই না, মুনাফা হ’লেও তার অংশবিশেষও কাউকে দিতে হবে না। যাকাতভিত্তিক মূলধন ফেরত দেবার তো প্রশ্নই ওঠে না। তাই এই অর্থ ব্যবহার করে যথার্থ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা যতটা সহজ মাইক্রো ক্রেডিটের দ্বারা তা আশা করা যায় না।
উল্লেখ্য, সমাজের যে বিপুল সংখ্যক লোক কর্মজীবী হ’লে দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতিধারা সচল হয়, কেইনসের ভাষায় পূর্ণ কর্মসংস্থান স্তরে পৌঁছানো যায় সেই স্তরে পৌঁছুতে হ’লে প্রয়োজন একটা Big Push বা প্রবল ধাক্কা। এজন্যে যুগপৎ প্রয়োজন বিপুল অর্থের ও দক্ষ উদ্যোক্তার। উদ্যোক্তা উন্নয়ন তথা ভিখারীর হাতকে কর্মীর হাতিয়ারে রূপান্তরের মধ্য দিয়েই দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচী তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম। এজন্য প্রয়োজন মানবসম্পদ উন্নয়ন। দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপের পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নমূলক দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচী গৃহীত না হ’লে সমাজে স্থায়ী কল্যাণ ও মঙ্গল সাধন অসম্ভব। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তর তথা মানবসম্পদে উন্নীত করার জন্য অন্ন-বস্ত্র ছাড়াও যেসব মৌলিক প্রয়োজন পূরণ খুবই যরূরী সেসবের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যরক্ষা ও চিকিৎসা এবং গৃহায়ন। সূদনির্ভর ঋণভিত্তিক কর্মসূচীর মাধ্যমে এই উদ্দেশ্য যথাযথভাবে পূরণ হবার নয়। অথচ পরিকল্পিতভাবে যাকাতের অর্থ ব্যবহার করে এই লক্ষ্য অর্জন খুবই সম্ভব।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থানকারী লোকের সংখ্যা ২০০৫-এ বৃদ্ধি পেয়ে ৫ কোটি ৬০ লক্ষে দাঁড়িয়েছে (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৭, অর্থ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, জুন ২০০৭; পৃ. ১৪৮)। এদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকার গ্রহণ করেছেন দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের (Poverty Reduction Strategy Paper বা PRSP) আওতায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরীর কর্মসূচী। দুঃখের বিষয়, এজন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এর চাইতে বহু গুণ অর্থ আদায় হ’তে পারে যাকাত সূত্রেই, যদি সরকার এজন্যে প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন করেন। বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং কৃষিবিভাগের ফসল উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আমাদের মতো দেশেও যাকাত ও উশর সূত্রে বার্ষিক চার হাযার কোটি টাকার বেশী অর্থ আদায় হওয়া খুবই সম্ভব। উপরন্তু PRSP-এর আওতায় সরকারের গৃহীত কর্মসূচীর ক্ষেত্রে বেশ কিছু যরূরী পদক্ষেপ বাদ পড়েছে যেগুলো গ্রামীণ জনগণ ছাড়াও শহর ও শহরতলীর জনগণের জন্যও সমানভাবে প্রয়োজন। এসবের মধ্যে রয়েছে সহায়-সম্বলহীন বিধবা এবং বিকলাঙ্গদের জন্য জীবনধারণ উপযোগী মাসোহারা, কন্যাদায়গ্রস্তদের কন্যার বিবাহে আর্থিক সহযোগিতা, প্রসবকালীন অত্যাবশ্যক প্রয়োজন পূরণ, দরিদ্র শিশুদের পুষ্টি যোগান, ঋণগ্রস্ত কৃষকদের জমি অবমুক্তকরণ, মরণোত্তর ঋণ পরিশোধ, দরিদ্র পরিবারের জন্যে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ, স্বল্পব্যয়ে বাসগৃহ নির্মাণ এবং নদীভাঙ্গন ও অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন। তাছাড়া প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মহীন সময়ে যাকাতের অর্থ হ’তে পরিকল্পিতভাবে সহায়তা প্রদান করলে সূদভিত্তিক ঋণের চাহিদা দূর হবে।
৪. ক্ষুদ্র বিনিয়োগের উপযুক্ত কৌশল উদ্ভাবন :
দরিদ্র অথচ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য পুঁজির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সেই পুঁজির পরিমাণও যে খুব বেশী এমন নয়। কিন্তু তাই-ই তাদের কাছে সহজলভ্য নয়। এই প্রয়োজন পূরণের জন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলিতে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল হিসাবে ‘মাইক্রো ক্রেডিট’ বা ক্ষুদ্রঋণের প্রসার ঘটেছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট-বড় জাতীয়-আঞ্চলিক মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক এনজিও এই কাজে অংশগ্রহণ করে চলেছে।
মাইক্রো ক্রেডিট মাকড়সার জালের মতো সমগ্র দেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। কিন্তু দরিদ্র জনগণ, বিশেষতঃ মহিলারা যারা ক্ষুদ্র ঋণের সর্ববৃহৎ ক্লায়েন্ট, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কি সত্যি সত্যি দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে? দু’চারটি সম্মানজনক ব্যতিক্রমী ঘটনাকে উদাহরণ হিসাবে দেখানো যায় কিন্তু সেসবের ভিত্তিতে সরলীকরণ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হ’লে বিপত্তি ঘটে। ঋণ ও সূদ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নির্দিষ্ট হারে সূদসহ কিস্তি প্রদানের শর্তেই এনজিওরা ঋণ দিয়ে থাকে। পুঁজি পাওয়ার কোন সহজ উপায় না থাকায় নিরুপায় হয়ে দরিদ্র মহিলা ও পুরুষরা ঋণ নেয়। এই ঋণের সূদের হার যথেষ্টই চড়া।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পি-এইচ.ডি. ডিগ্রীর জন্য পরিচালিত কয়েকটি মাঠ গবেষণা তথ্য হ’তে দেখা গেছে, এনজিওদের প্রদত্ত ঋণ ব্যবহার করে গ্রামীণ মহিলাদের দারিদ্র্য যেটুকু হ্রাস পেয়েছে তা খুবই অকিঞ্চিৎকর। তাদের স্বনির্ভরতা অর্জন বা নীট দারিদ্র্য হ্রাস ঘটেনি। এর প্রধান কারণ, প্রাপ্ত ঋণ কাজে লাগিয়ে ঋণগ্রহীতারা যা উপার্জন করে তার বৃহৎ অংশই চলে যায় সূদ পরিশোধ করতে। ফলে তাদের হাতে উদ্বৃত্ত থাকে যৎসামান্যই। তাদের অপেক্ষায় থাকতে হয় পুনরায় ঋণ পাবার জন্য। পুনরায় ঋণ না পেলে তার কর্মসংস্থানের উপায়টিও বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সূদসহ মূলধনের কিস্তি শোধ করতে গিয়ে বহু সময়েই দারুণ বিড়ম্বনাময় পরিস্থিতির শিকার হ’তে হয় ঋণগ্রহীতাকে। সূদভিত্তিক এনজিওর মাঠকর্মীরা খাতকের ঘরের চালের টিন খুলে নিয়েছে, শেষ সম্বল দুধের গরু ধরে নিয়ে গেছে, এমনকি ন্যূনতম সভ্যতার মুখোশ ছুঁড়ে ফেলে সধবার নাকফুল পর্যন্ত খুলে দিতে বাধ্য করেছে কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য এমন ঘটনা অহরহ প্রকাশিত হচ্ছে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলিতে। কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে এমন উদাহরণও অপ্রতুল নয়।
এই অবস্থা হ’তে পরিত্রাণের জন্য বিকল্প ইসলামী পদ্ধতিসমূহের ব্যবহার করতে হবে। মাইক্রো ক্রেডিটের পরিবর্তে মাইক্রো ইনভেষ্টমেন্টের ব্যাপক প্রসার ঘটানো এখন সময়ের দাবী। উদ্যোগ নিতে হবে ঋণ নয়, বিনিয়োগ প্রদানের জন্য। এই উদ্দেশ্যে অংশীদারিত্বমূলক বিনিয়োগ স্কীম বা Participatory Investment Scheme চালু করা বাঞ্ছনীয়। এটি মুযারাবা পদ্ধতিরই একটি রূপ। এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ হ’তে অর্জিত মুনাফার একটা অংশ পাবে সংশ্লিষ্ট এনজিও, বাকীটা পাবে উদ্যোক্তা। লাভ যদি না হয় তাহ’লে উদ্যোক্তাকে কোন বাড়তি দায় নিতে হবে না। এক্ষেত্রে যেহেতু পূর্বনির্ধারিত হারে সূদ পরিশোধের শর্ত নেই, সেহেতু লাভ না হ’লেও বাধ্যতামূলকভাবে সূদ প্রদানের দায়িত্বও নেই। কাজেই কষ্টার্জিত উপার্জনের সিংহভাগ তুলে দিতে হবে না এনজিওদের হাতে। প্রকৃত অর্থে ক্ষুদ্র বিনিয়োগ গ্রহীতারাই উপকৃত হবে এই পদ্ধতিতে। পাইলট স্কীম হিসাবে হ’লেও এই পদ্ধতি চালু করা সময়ের দাবী। তৃণমূল পর্যায় হ’তে সূদ উচ্ছেদের জন্য এটি কার্যকর কৌশল হিসাবে বিবেচিত হ’তে পারে।
৫. আড়ম্বরপূর্ণ ব্যয় পরিহার:
বিলাসিতা ও আড়ম্বরপ্রিয়তার পথ ধরে অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ ক্রমশই বৃদ্ধি পায়। এক সময়ে নিয়মিত উপার্জনে ব্যয় সংকুলান না হ’লে ঋণের আশ্রয় নিতে হয়। এই মোক্ষম সুযোগে সূদ অনুপ্রবেশ করে সংসারে, সাধ্যের বাইরে যেয়ে বিলাসবহুল বাড়ী বানাতে হ’লে, ফ্যাশানেবল গাড়ী কিনতে হ’লে, কেতাদুরস্ত লাইফস্টাইল অনুসরণ করতে হ’লে ঋণ না করে উপায় নেই। বিকল্প উপায় দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ-উপার্জন। পূর্বেই বলা হয়েছে, ঋণ ও সূদ অঙ্গাঙ্গীভাবে সম্পৃক্ত। তাই ঋণ পেতে হ’লে সূদ দেবার অঙ্গীকার করতেই হয়। উপরন্তু বর্তমান সময়ে কিস্তিতে যেসব গৃহসামগ্রী ও ইলেকট্রিক-ইলেকট্রনিক দ্রব্যসামগ্রী বাজারে দেদারসে বিক্রি হয় সেসবেও যুক্ত রয়েছে সূদ। তাই ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন হ’তে সূদ উচ্ছেদ করতে হ’লে অতি অবশ্যই বিলাসিতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অন্যের অন্ধ অনুসরণ এবং আড়ম্বরপ্রিয়তা পরিহার করা যৌক্তিক দাবী।