(انتصار الدنيوى لا يلزم للمؤمن)
প্রকাশকের নিবেদন
(كلمة الناشر حول الطبعة الأولى سنة 1986م)
بسم الله الرحمن الرحيم
বিগত ২২শে অক্টোবর ’৮৬ বুধবার রাজশাহীর রাণীবাজার জামে মসজিদে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর তিনদিন ব্যাপী কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্মেলন ’৮৬ উদ্বোধন করতে গিয়ে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব অধ্যাপক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব যে অমূল্য ভাষণ প্রদান করেন, অত্র পুস্তিকাটি তারই অনুলিপি। ভাষণটির শেষে কর্মী ও সুধীবৃন্দের মৌলিক তিনটি প্রশ্নের জওয়াব ‘তিনটি মতবাদ’ নামে পৃথক পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হ’ল। বর্তমান পরিবেশে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য ভাষণটি পথনির্দেশ হিসাবে কাজ করবে- এ বিশ্বাস নিয়েই ভাষণটি দুই অংশে দু’টি পুস্তিকাকারে পৃথকভাবে প্রকাশ করতে পেরে আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। বলা বাহুল্য ভাষণটি উপস্থিত সুধীমন্ডলী কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত হয় এবং তা যথাসত্ত্বর ছেপে বিলি করার জন্য দাবী জানানো হয়। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের সত্যিকারের মুজাহিদ হিসাবে কবুল করে নিন। আমীন!
মুহাম্মাদ এনামুল হক
তাবলীগ সম্পাদক
বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ
بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده و نصلى على رسوله الكريم اما بعد..
আসসালা-মু আলায়কুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু
নাহমাদুহূ ওয়া নুছাল্লী ‘আলা রাসূলিহিল কারীম। আম্মা বা‘দ-
‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্মেলন’৮৬-তে দেশের বিভিন্ন এলাকা হ’তে আগত নিবেদিতপ্রাণ সাথী ও বন্ধুগণ, রাজশাহী শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় সুধীবর্গ, প্রশিক্ষক হিসাবে আগত মাননীয় ওলামায়ে কেরাম, বিদ্বান মন্ডলী, বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলেহাদীছের মাননীয় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সম্মানিত প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি মহোদয়গণ!
‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সম্মেলন ’৮৬ উদ্বোধন করতে গিয়ে আমি প্রথমে স্মরণ করছি উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আন্দোলনের বিগত সূর্যগুলিকে। স্মরণ করছি অলিউল্লাহ-পরিবার১-কে। স্মরণ করছি শায়খুল কুল ফিল কুল মিয়াঁ নাযীর হোসায়েন দেহলভী (১২২০-১৩২০/১৮০৫-১৯০২),২ নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (১২৪৮-১৩০৭/১৮৩২-১৮৯০)৩ ও তৎপরবর্তীকাল হ’তে বর্তমান যুগ পর্যন্ত ইল্মে কুরআন ও ইল্মে হাদীছের অতন্দ্র প্রহরীগণকে। সেই অতুলনীয় শিক্ষকবৃন্দকে;
১. অলিউল্লাহ-পরিবার বলতে শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী ও তাঁর চার পুত্র ও পৌত্র শাহ ইসমাঈল শহীদসহ মোট বারো জনকে বুঝানো হয়। শাহ অলিউল্লাহ (১১১৪-১১৭৬/১৭০৩-১৭৬২ খৃঃ), তৎপুত্র শাহ আবদুল আযীয (১১৫৯-১২৩৯/১৭৪৭-১৮২৪), শাহ রফীউদ্দীন (১১৬২-১২৩৩/১৭৫০-১৮১৮), শাহ আবদুল ক্বাদের (১১৬৭-১২৫৩/১৭৫৫-১৮৩৮), শাহ আবদুল গণী (১১৭০-১২২৭/১৭৫৮-১৮২৪) এবং তাঁর পুত্র শাহ ইসমাঈল (১১৯৩-১২৪৬/১৭৭৯-১৮৩১)। জিহাদ আন্দোলনের এই মহান সিপাহসালার ১৮৩১ সালের ৬ই মে শুক্রবার পূর্বাহ্নে বর্তমান পশ্চিম পাঞ্জাবের বালাকোটে শাহাদাত বরণ করেন।
২. দিল্লীর মাদরাসা রহীমিয়ার এই স্বনামধন্য মুহাদ্দিছের দীর্ঘ ৭৫ বছরের শিক্ষকতা জীবনে ১ লক্ষ ২৫ হাযার ছাত্রের মধ্যে ৮০ হাযারই আহলেহাদীছ হয়ে যান। উপমহাদেশে আহলেহাদীছ আন্দোলনে এই মহান শিক্ষকের অবদান ছিল সর্বাধিক।
৩. তৎকালীন ভারতের ভূপাল রাজ্যের নওয়াব ছিদ্দীক হাসান খান রাজ্য পরিচালনার কঠিন দায়িত্ব পালন করেও আরবী, ফারসী ও উর্দূ ভাষায় অন্যূন ২২২ খানা গ্রন্থ রচনা ও প্রকাশ করেন। মিসর থেকে হাদীছ গ্রন্থসমূহ ছাপিয়ে এনে সারা ভারতে বিতরণ করেন। এইভাবে লুপ্তপ্রায় ইলমে হাদীছ ও হাদীছ ভিত্তিক ইসলামকে তিনি পুনরায় লেখনীর মাধ্যমে জাগিয়ে তোলেন।
স্মরণ করছি বালাকোটের অমর শহীদানকে; স্মরণ করছি কালাপানির বীর কয়েদীগণকে।
স্মরণ করছি আফগানিস্তান হ’তে শুরু করে বাংলার বিস্তীর্ণ বরেনদ্র এলাকার শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে আহলেহাদীছ আন্দোলনের সেই জানা-অজানা বীর মুজাহেদীনকে, যাঁদের ত্যাগপুত ইতিহাস আমাদের যাত্রাপথে প্রতিনিয়ত প্রেরণা যোগায়; উৎসাহ যোগায় সম্মুখে এগিয়ে যাবার। যাঁদের রক্তঋণ কিছুটা আদায়ের উদেশ্যেই আমরা বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক তরুণ ভাই আজ এখানে জমায়েত হয়েছি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে আমাদের মহান পূর্বসূরীগণের, আমাদের মহান সালাফে ছালেহীনের যথার্থ উত্তরসূরী হওয়ার তওফীক দান করুন- আমীন!