ইহসান ইলাহী যহীর

শিক্ষাজীবন

ইহসান ইলাহী যহীর দ্বীনী পরিবেশে ও আর্থিক স্বচ্ছলতার মধ্যে প্রতিপালিত হন। পরিবারেই তাঁর শিক্ষার হাতে খড়ি হয়। বাল্যকাল থেকেই তিনি জামা‘আতে ছালাত আদায়ে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁর পিতা হাজী যহূর ইলাহী সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে খুবই সজাগ ও সচেতন ছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল, তাঁর সব ছেলে ‘দাঈ ইলাল্লাহ’ (আল্লাহর পথের দাঈ) হৌক। বড় ছেলে হিসাবে যহীরের প্রতি তাঁর বিশেষ মনোযোগ ছিল। তিনি চেয়েছিলেন, আয়-উপার্জনের চিন্তা বাদ দিয়ে যহীর একনিষ্ঠভাবে জ্ঞান অর্জন করুক।[1] যহীর বলেন, طالبني والدى بأن أكون طالب علم فقط وأوقفني في سبيل الله. وحثنى على الاتجاه إلى الدعوة إلي الله- ‘আমার পিতা চেয়েছিলেন, আমি যেন শুধু তালেবে ইলম (জ্ঞানান্বেষী) হই। তিনি আমাকে আল্লাহর পথে ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহর পথে দাওয়াতে মনোনিবেশ করার জন্য আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন’।[2]

প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য তাঁকে দাহারওয়াল গ্রামের এম.বি প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেখানে পাঠ শেষে উঁচী মসজিদ বাজার পানসারিয়াতে কুরআন মাজীদ হিফয করার জন্য ভর্তি করা হয়। যহীর অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় মাত্র দেড় বছরে কুরআন মাজীদ মুখস্থ করেন।[3] মাহবূব জাবেদকে দেয়া জীবনের সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে নিজের বাল্যজীবন সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি শিয়ালকোটের এক ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার পিতা যহূর ইলাহী ছালাত-ছিয়ামে অভ্যস্ত এবং ইসলামের প্রতি দারুন অনুরাগী ছিলেন। তিনি মাওলানা মুহাম্মাদ ইবরাহীম শিয়ালকোটির অত্যন্ত আস্থাভাজন ও ভক্ত ছিলেন। এজন্য তিনি বাল্যকালেই আমাকে কুরআনের হাফেয বানানো এবং ইসলামের খিদমতে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমি যখন প্রাইমারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই, তখন আমার আববা আমাকে কোন (মাধ্যমিক) স্কুলে ভর্তি না করে হিফয খানায় ভর্তি করেন। ঐ সময় আমার বয়স ছিল সাড়ে সাত বছর। আলহামদুল্লিাহ, আমি নয় বছর বয়সে কুরআন মাজীদ মুখস্থ করি এবং হিফয শেষে রামাযান মাসে তারাবীহর ছালাত পড়াতে শুরু করি’।[4]

হিফয সম্পন্ন করার পর তাঁকে শিয়ালকোটের ‘দারুল উলূম শিহাবিয়াহ’ মাদরাসায় ভর্তি করা হয়। এখানে তিনি মাধ্যমিক স্তর শেষ করেন। এরপর শিয়ালকোট থেকে ৪০ কিঃ মিঃ দূরে গুজরানওয়ালার বিখ্যাত মাদরাসা ‘জামে‘আ ইসলামিয়া’য় ভর্তি হন। এখানে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতিমান মুহাদ্দিছ, পঞ্চাশের অধিকবার বুখারীর দরস প্রদানকারী, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, ‘পশ্চিম পাকিস্তান জমঈয়তে আহলেহাদীছ’-এর আমীর আল্লামা হাফেয মুহাম্মাদ গোন্দলবীর (১৮৯৭-১৯৮৫) কাছে হাদীছের দরস গ্রহণ করেন।[5] হাফেয মুহাম্মাদ গোন্দলবী শুধু জমঈয়তে আহলেহাদীছের আমীরই ছিলেন না; বরং তিনি এ সম্মানও অর্জন করেছিলেন যে, পাক-ভারতের অধিকাংশ আহলেহাদীছ আলেম সরাসরি বা কোন না কোন মাধ্যমে তাঁর কাছ থেকে হাদীছের পাঠ গ্রহণ করেছেন। মাওলানা গোন্দলবীর কাছে হাদীছের গ্রন্থাবলী অধ্যয়নের পর কিছুদিন জামে‘আ সালাফিইয়াহ ফয়ছালাবাদেও ছিলাম। বিশেষ করে আমি ওখানে মাওলানা মুহাম্মাদ শরীফুল্লাহর কাছে মা‘কূলাতের গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করি। মাওলানা শরীফুল্লাহ দিল্লীর ফতেহপুর সিক্রি থেকে হিজরত করে ফয়ছালাবাদে এসেছিলেন এবং মা‘কূলাতের বিষয়াবলী পড়ানোতে তাঁর পদ্ধতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি তাঁর কাছে দর্শন ও মানতিক (যুক্তিবিদ্যা) পড়েছি এবং এই দুই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছি। ১৯৬০ সালে আমি শুধু ফারেগ হয়েছিলাম তাই নয়; বরং পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে আরবী সাহিত্যে বি.এ (অনার্স) ডিগ্রীও অর্জন করেছিলাম’।[6]



[1]. ঐ, পৃঃ ৩৯, ৪৭।

[2]. ‘আল-মাজাল্লাহ আল-আরাবিয়াহ’, সংখ্যা ৮৭, বর্ষ ৮ম, রবীঊল আখের ১৪০৫ হিঃ, ৯০ পৃঃ।

[3]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১১৬।

[4]. আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর সে আখেরী ইন্টারভিউ, সাক্ষাৎকার গ্রহণে : মাহবূব জাবেদ, মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, সেপ্টেম্বর ’৮৭, পৃঃ ৪২।

[5]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১১৬।

[6]. মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪২-৪৩।