بسم الله الرحمن الرحيم
হজ্জ ও ওমরাহ
হজ্জ-এর সংজ্ঞা (معنى الحج) :
‘হজ্জ’-এর আভিধানিক অর্থ: সংকল্প করা (القصد)। পারিভাষিক অর্থ: আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শরী‘আত নির্ধারিত ক্রিয়া-পদ্ধতি সহকারে মক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহ যেয়ারত করার সংকল্প করা।
ওমরাহ-এর সংজ্ঞা (معنى العمرة) :
‘ওমরাহ’-এর আভিধানিক অর্থ : আবাদ স্থানে যাওয়ার সংকল্প করা (الاعتمار) , যিয়ারত করা। পারিভাষিক অর্থ: আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের উদ্দেশ্যে বছরের যেকোন সময় শরী‘আত নির্ধারিত ক্রিয়া-পদ্ধতি সহকারে মক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহ যেয়ারত করার সংকল্প করা।
হজ্জ-এর সময়কাল (أشهر الحج) :
হজ্জের জন্য নির্দিষ্ট তিনটি মাস হ’ল শাওয়াল, যুলক্বা‘দাহ ও যুলহিজ্জাহ । এ মাসগুলির মধ্যেই যেকোন সময় হজ্জের ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হয় এবং ৯ই যিলহাজ্জ তারিখে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে হয়। ৯ তারিখে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান না করলে হজ্জ হবে না। পক্ষান্তরে ‘ওমরাহ’ করা সুন্নাত এবং বছরের যেকোন সময় তা করা চলে।[1]
হুকুম (حكم الحج والعمرة) :
নিরাপদ ও সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুমিনের জন্য জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয।[2]অধিকবার হজ্জ বা ওমরাহ করা নফল বা অতিরিক্ত বিষয়’।[3]বারবার নফল হজ্জ ও ওমরাহ করার চাইতে গরীব নিকটাত্মীয়দের মধ্যে উক্ত অর্থ বিতরণ করা এবং অন্যান্য দ্বীনী কাজে ছাদাক্বা করা উত্তম।
৯ম অথবা ১০ম হিজরীতে হজ্জ ফরয হয়। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) এ মতকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তবে জমহূর বিদ্বানগণের মতে ৬ষ্ঠ হিজরীতে হজ্জের হুকুম নাযিল হয় এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ১০ম হিজরীতে জীবনে একবার ও শেষবার সপরিবারে হজ্জ করেন।[4] তিনি জীবনে মোট ৪ বার ওমরাহ করেন।[5]
ফযীলত (فضائل الحج والعمرة) :
مَنْ حَجَّ للهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ، متفق عليه-
১.রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লা-হু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে। যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্জ হ’তে ফিরবে সেদিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’।[6]
اَلْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِّمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ، متفق عليه-
২. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত সময়ের (ছগীরা গোনাহ সমূহের) কাফফারা স্বরূপ। আর কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয়’।[7]
কবুল হজ্জের নিদর্শন (علامات الحج المبرور) :
‘হাজ্জে মাবরূর’ বা কবুল হজ্জ বলতে ঐ হজ্জকে বুঝায়, (ক) যে হজ্জে কোন গোনাহ করা হয়নি এবং যে হজ্জের আরকান-আহকাম সবকিছু (ছহীহ সুনণাহ মোতাবেক) পরিপূর্ণভাবে আদায় করা হয়েছে। (খ) হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর পূর্বের চাইতে উত্তম হওয়া এবং পূর্বের গোনাহে পুনরায় লিপ্ত না হওয়া’।[8] আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছিলেন, ...سَتَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ ، فَسَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ ، أَلاَ فَلاَ تَرْجِعُوا بَعْدِى ضُلاَّلاً، Ô †হ লোকসকল! সত্বর তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। অতএব সাবধান! তোমরা আজকের দিনের পর যেন পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ো না।[9]
৩.রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘ইসলাম, হিজরত এবং হজ্জ মুমিনের বিগত দিনের সকল গুনাহ ধ্বসিয়ে দেয়’।[10]
৪.তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরাহর মধ্যে পারম্পর্য বজায় রাখো (অর্থাৎ সাথে সাথে কর)। কেননা এ দু’টি মুমিনের দরিদ্রতা ও গোনাহ সমূহ দূর করে দেয়, যেমন স্বর্ণকারের আগুনের হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ময়লা ছাফ করে দেয়...’।[11]তিনি আরও বলেন, ওমরাহ সর্বদা হজ্জের মধ্যে প্রবেশ করবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত’।[12]সম্ভবত: সে কারণেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় ছাহাবীগণকে প্রথমে ওমরাহ সেরে পরে হজ্জ করার অর্থাৎ ‘তামাত্তু হজ্জ’ করার তাকীদ দিয়েছেন এবং না করলে ক্রোধ প্রকাশ করেছেন।[13]
৫.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, إِنَّ عُمْرَة فِىْ رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً، ‘নিশ্চয়ই রামাযান মাসের ওমরাহ একটি হজ্জের সমান।[14] অন্য বর্ণনায় এসেছে, إنَّ عُمْرَةً فِىْ رَمَضَانَ تَقْضِىْ حَجَّةً مَّعِىْ ‘রামাযান মাসে ওমরা করা আমার সাথে হজ্জ করার ন্যায়’।[15]
৬.হযরত আয়েশা(রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহা) একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদের উপরে ‘জিহাদ’ আছে কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ আছে। তবে সেখানে যুদ্ধ নেই। সেটি হ’ল হজ্জ ও ওমরাহ’।[16] তিনি বলেন, ‘বড়, ছোট, দুর্বল ও মহিলা সকলের জন্য জিহাদ হ’ল: হজ্জ ও ওমরাহ’।[17] তিনি বলেন, ‘শ্রেষ্ঠ আমল হ’ল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে ঈমান আনা। অতঃপর শ্রেষ্ঠ হ’ল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। অতঃপর শ্রেষ্ঠ হ’ল কবুল হজ্জ’।[18]
৭. তিনি বলেন, وَفْدُ اللهِ ثَلاَثَةٌ: الغَازِى وَالْحَاجُّ وَالْمُعْتَمِرُ ‘আল্লাহর মেহমান হ’ল তিনটি দল: আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকারী, হজ্জকারী ও ওমরাহকারী’।[19]
৮.রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ ‘শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল আরাফা দিবসের দো‘আ...’।[20] তিনি বলেন, ‘আরাফার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন আল্লাহ এত অধিক পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন না। ঐদিন আল্লাহ নিকটবর্তী হন। অতঃপর আরাফাহ ময়দানের হাজীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন ও বলেন, দেখ ঐ লোকেরা কি চায়’?[21] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘ওরা আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ ওদের ডেকেছেন তাই ওরা এসেছে। এখন ওরা চাইবে, আর আল্লাহ তা দিয়ে দিবেন’।[22]
৯. আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ্জ, ওমরাহ কিংবা জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হ’ল এবং রাস্তায় মৃত্যুবরণ করল, আল্লাহ তার জন্য পূর্ণ নেকী লিখে দিবেন’।[23]
১০.হাজারে আসওয়াদ ও ত্বাওয়াফ(الحجر الأسود والطواف) :রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রুক্নে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ (কালো পাথর) স্পর্শ করবে, তার সমস্ত গোনাহ ঝরে পড়বে’।[24] তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহর সাতটি ত্বাওয়াফ করবে ও শেষে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, সে যেন একটি গোলাম আযাদ করল’। ‘এই সময় প্রতি পদক্ষেপে একটি করে গোনাহ ঝরে পড়ে ও একটি করে নেকী লেখা হয়’।[25] তিনি বলেন, ‘ত্বাওয়াফ হ’ল ছালাতের ন্যায়। তবে এই সময় প্রয়োজনে যৎসামান্য নেকীর কথা বলা যাবে’।[26]
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন হাজারে আসওয়াদকে উঠাবেন এমন অবস্থায় যে, তার দু’টি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সে দেখবে ও একটি যবান থাকবে, যা দিয়ে সে কথা বলবে এবং ঐ ব্যক্তির জন্য সাক্ষ্য দিবে, যে ব্যক্তি খালেছ অন্তরে তাকে স্পর্শ করেছে’।[27]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘হাজারে আসওয়াদ’ প্রথমে দুধ বা বরফের চেয়েও সাদা ও মসৃণ অবস্থায় জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর বনু আদমের পাপ সমূহ তাকে কালো করে দেয়’।[28]
² মনে রাখা উচিত যে, পাথরের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। আমরা কেবলমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের উপর আমল করব। যেমন ওমর ফারূক (রাঃ) উক্ত পাথরে চুমু দেওয়ার সময় বলেছিলেন,
إِنِّىْ لَأَعْلَمُ أَنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلاَ تَضُرُّ، وَلَوْلاَ أَنِّيْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عليه وسَلَّمَ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ، متفق عليه-
‘আমি জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারো না। তবে আমি যদি আল্লাহর রাসূলকে না দেখতাম তোমাকে চুমু দিতে, তাহ’লে আমি তোমাকে চুমু দিতাম না’।[29]ওমর ফারূক (রাঃ) উক্ত পাথরে চুমু খেয়েছেন ও কেঁদেছেন’।[30]
১১. যমযম পানি (ماء زمزم):ত্বাওয়াফ শেষে দু’রাক‘আত ছালাত অন্তে মাত্বাফ থেকে বেরিয়ে পাশেই যমযম কুয়া এলাকায় প্রবেশ করবে এবং সেখানে যমযমের পানি বিসমিল্লাহ বলে দাঁড়িয়ে পান করবে ও কিছুটা মাথায় দিবে।[31] যমযম পানি পান করার সময় ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত বিশেষ দো‘আ পাঠের প্রচলিত হাদীছটি যঈফ।[32] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,خَيْرُماءٍ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ مَاءُ زَمْزَمَ، فِيْهِ طَعَامٌ مِِّنَ الطُّعْمِ وَشِفَاءٌ مِّنَ السُّقْمِ ‘ভূপৃষ্ঠে সেরা পানি হ’ল যমযমের পানি। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিকর খাদ্য এবং রোগ হ’তে আরোগ্য’।[33] অন্য বর্ণনায় এসেছে إِنَّهَا مُبَارَكَةٌ ‘এটি বরকত মন্ডিত’।[34] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এই পানি কোন রোগ থেকে আরোগ্যের উদ্দেশ্যে পান করলে তোমাকে আল্লাহ আরোগ্য দান করবেন’।[35] বস্ত্ততঃ যমযম হ’ল আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে সৃষ্ট এক অলৌকিক কুয়া। যা শিশু ইসমাঈল ও তার মা হাজেরার জীবন রক্ষার্থে এবং পরবর্তীতে মক্কার আবাদ ও শেষনবী (ছাঃ)-এর আগমন স্থল হিসাবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হয়েছিল।[36]
১২. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘অন্যত্র ছালাত আদায়ের চেয়ে আমার মসজিদে ছালাত আদায় করা এক হাযার গুণ উত্তম এবং মসজিদুল হারামে ছালাত আদায় করা একলক্ষ গুণ উত্তম’।[37]
১৩.রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ উটের পিঠে বসে কংকর মারার সময় বলেন, خُذُوا عَنِّى مَناسِكَكُمْ ‘হে জনগণ! তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখে নাও। কেননা আমি জানিনা, এ বছরের পরে আমি আর হজ্জ করতে পারব কি-না।[38] অতএব হজ্জের প্রতিটি অনুষ্ঠান সঠিকভাবে খুবই সম্মান ও নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সম্পাদন করা কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম সেভাবেই হজ্জ ও ওমরাহ পালন করতেন।
দ্রুত হজ্জ সম্পাদন করা (التعجيل في الحج):রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, مَنْ أَرَادَ الْحَجَّ فَلْيَتَعَجَّلْ ‘যে ব্যক্তি হজ্জের সংকল্প করে, সে যেন দ্রুত সেটা সম্পাদন করে’।[39]যাদের উপরে হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও দেরী করেন, তারা হাদীছটি লক্ষ্য করুন।
বদলী হজ্জ (الحج البدل) :কেউ অন্যের পক্ষ হ’তে বদলী হজ্জ করতে চাইলে তাকে প্রথমে নিজের হজ্জ করতে হবে।[40]যার উপর হজ্জ ফরয হয়েছে, কিন্তু রোগ বা অতি বার্ধক্যের কারণে নিরাশ হয়ে গেছেন, তাঁর পক্ষে বা মৃতব্যক্তির পক্ষে বদলী হজ্জ করা যাবে। নারী পুরুষের পক্ষে অথবা পুরুষ নারীর পক্ষে বদলী হজ্জ করতে পারেন। বদলী ওমরাহর কোন দলীল পাওয়া যায় না। ওমরাহ ফরয নয়। তাই নফল হজ্জ বা নফল ওমরাহর কোন বদলী হয় না।
শিশুর হজ্জ (حج الصبى) :শিশু হজ্জ করলে তার হজ্জ হবে ও তার পিতা নেকী পাবেন। কিন্তু ঐ শিশুর উপর থেকে হজ্জের ফরযিয়াত বিলুপ্ত হবে না। বড় হয়ে সামর্থ্যবান হ’লে পুনরায় তাকে নিজের হজ্জ করতে হবে।
অন্যের খরচে হজ্জ (الحج بنفقة الغير) :
অন্যের খরচে ও ব্যবস্থাপনায় হজ্জ করা যাবে এবং এর ফলে তার উপর হজ্জের ফরযিয়াত বিলুপ্ত হবে। যিনি হজ্জ করাবেন, তিনি এই বিরাট সৎকর্মের নেকী পাবেন এবং হজ্জকারী তার হজ্জের নেকী পাবেন।
[1]. সাইয়িদ সাবিক্ব, ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রো: দারুল ফাৎহ ৫ম সংস্করণ ১৪১২/১৯৯২), পৃঃ ১/৪৬২, ৫৪০।
[2]. আলে ইমরান ৩/৯৭; আবুদাঊদ হা/১৭২১।
[3]. আবুদাঊদ, নাসাঈ, আহমাদ, আলবানী মিশকাত হা/২৫২০।
[4]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪৪২, ৪৪৪।
[5]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫১৮; চারটি ওমরাহ : (১) ৬ষ্ঠ হিজরীতে হোদায়বিয়ার ওমরাহ (عمرة الحديبية) , যা পূর্ণ না হওয়ায় তিনি সন্ধি করে ফিরে যান (২) ৭ম হিজরীতে গত বছরের সন্ধি মতে ওমরাহ (عمرة القضاء) আদায় (৩) ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয় ও হোনায়েন যুদ্ধের পর গণীমত বণ্টন শেষে জি‘ইর্রা-নাহ হ’তে ওমরাহ (عمرة الجعرّانة) আদায় এবং (৪) সবশেষে ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জের সাথে একত্রিতভাবে ওমরাহ আদায়। সবগুলিই তিনি করেছিলেন যুলক্বা‘দাহ মাসে’। উক্ত হিসাবে দেখা যায় যে, তিনি পৃথক ও স্বতন্ত্রভাবে কেবল দু’টি ওমরাহ করেছেন। একটি ৭ম হিজরীতে এবং অন্যটি ৮ম হিজরীতে। সম্ভবতঃ একারণেই ছাহাবী বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর হজ্জের পূর্বে দু’টি ওমরাহ করেছেন যুলক্বা‘দাহ মাসে’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৫১৯)।
[6]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৭।
[7]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৫০৮।
[8]. ফৎহুল বারী ৩/৪৪৬; হা/১৫১৯-এর ব্যাখ্যা।
[9]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৫৯।
[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৮।
[11].তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৫২৪।
[12]. আবুদাঊদ হা/১৭৮৪, ৮৭, ৮৮, ৯০।
[13]. আবুদাঊদ হা/১৭৮৫, ৮৭।
[14]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৯।
[15]. বুখারী হা/১৮৬৩; মুসলিম হা/৩০৩৯।
[16]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৫৩৪।
[17]. ছহীহ নাসাঈ হা/২৪৬৩।
[18]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫০৬।
[19]. নাসাঈ, মিশকাত হা/২৫৩৭।
[20]. তিরমিযী, মিশকাত হা/২৫৯৮; ছাহীহাহ হা/১৫০৩।
[21]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৯৪।
[22]. ইবনু মাজাহ হা/২৮৯৩; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮২০।
[23]. বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২৫৩৯; ছহীহাহ হা/২৫৫৩।
[24]. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৭২৯; ছহীহ নাসাঈ হা/২৭৩২।
[25]. তিরমিযী ও অন্যান্য, মিশকাত হা/২৫৮০।
[26].তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৫৭৬; ইরওয়া হা/১১০২।
[27]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, দারেমী, মিশকাত হা/২৫৭৮।
[28]. তিরমিযী, মিশকাত হা/২৫৭৭; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৭৩৩।
[29]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৮৯।
[30]. বায়হাক্বী ৫/৭৪ পৃঃ, সনদ জাইয়িদ।
[31]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৪২৬৮; আহমাদ (কায়রো, তাবি) হা/১৫২৮০ সনদ ছহীহ, আরনাঊত্ব; ক্বাহত্বানী পৃঃ ৯৩।
[32]. ইরওয়া ৪/৩৩২-৩৩ পৃঃ হা/১১২৬-এর আলোচনা দ্রঃ।
[33]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৩৯১২; ছহীহাহ হা/১০৫৬।
[34]. আহমাদ, মুসলিম; ছহীহাহ হা/১০৫৬।
[35]. দারাকুৎনী, হাকেম, ছহীহ তারগীব হা/১১৬৪।
[36]. ছহীহ বুখারী হা/৩৩৬৪; দ্রঃ লেখক প্রণীত ‘নবীদের কাহিনী’ ১/১৩৪-৩৫ পৃঃ।
‘যমযম’ (زمزم) : ১৮ ফুট দৈর্ঘ, ১৪ ফুট প্রস্থ ও অন্যূন ৫ ফুট গভীরতার এই ছোট্ট কুয়াটি অত্যাশ্চর্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। বিগত প্রায় চার হাযার বছরের অধিককাল ধরে এই কুয়া থেকে দৈনিক হাযার হাযার গ্যালন পানি মানুষ পান করছে ও সুস্থতা লাভ করছে। কিন্তু কখনোই পানি কম হ’তে দেখা যায়নি বা নষ্ট হয়নি। বিজ্ঞানীরা বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অবশেষে এ পানির অলৌকিকত্ব স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের ল্যাবরেটরী রিপোর্ট এই যে, এ পানিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সল্টের আধিক্যের কারণেই পানকারী হাজীদের ক্লান্তি দূর হয়। অধিকহারে ফ্লোরাইড থাকার কারণে এ পানিতে কোন শেওলা ধরে না বা পোকা জন্মে না’। অথচ দেড় হাযার বছর আগেই নিরক্ষর নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এ পানির উচ্চগুণ ও মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণনা করে গেছেন(দ্রঃ মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী ৪/৭ সংখ্যা, এপ্রিল ২০০১, পৃঃ ১৭-১৮)।
[37]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ, ইরওয়া হা/১১২৯।
[38].মুসলিম, নাসাঈ, আবুদাঊদ প্রভৃতি; ইরওয়া হা/১০৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৮২।
[39]. আবুদাঊদ, দারেমী, মিশকাত হা/২৫২৩।
[40]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৫২৯।