হজ্জ ও ওমরাহ

مناسك الحج فى لمحة

এক নযরে হজ্জ

(১) ‘মীক্বাত’ থেকে ইহরাম বেঁধে সরবে ‘তালবিয়াহ’ পড়তে পড়তে কা‘বা গৃহে পৌঁছবেন।

(২) কা‘বাকে বামে রেখে ‘হাজারে আসওয়াদ’ হ’তে ত্বাওয়াফ শুরু করবেন ও সেখানে এসে সাত ত্বাওয়াফ সমাপ্ত করবেন। ‘রুক্নে ইয়ামানী’ ও ‘হাজারে আসওয়াদ’-এর মধ্যে ‘রববানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া ...’ (পৃঃ ৬৬) পড়বেন।

(৩) ত্বাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে অথবা হারামের যে কোন স্থানে দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করবেন। অতঃপর যমযমের পানি পান করবেন।

(৪) এরপর প্রথমে ‘ছাফা’ পাহাড়ে উঠে কা‘বার দিকে মুখ করে লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ ও তিনবার আল্লাহু আকবার বলবেন এবং দু’হাত তুলে তিন বার ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু... ওয়াহদাহূ... ওয়া হাযামাল আহ্যা-বা ওয়াহদাহূ’ (পৃঃ ৭৫-৭৬) দো‘আটি পড়ে ‘মারওয়া’র দিকে ‘সাঈ’ শুরু করবেন। অল্প দূরে গিয়ে দুই সবুজ চিহ্নের মধ্যে কিছুটা দ্রুত চলবেন। তবে মহিলাগণ স্বাভাবিক গতিতে চলবেন। ‘ছাফা’ হ’তে ‘মারওয়া’ পর্যন্ত একবার ‘সাঈ’ ধরা হবে। এইভাবে সপ্তম বারে ‘মারওয়ায়’ গিয়ে ‘সাঈ’ শেষ হবে।

(৫) ‘সাঈ’ শেষে মারওয়া থেকে বেরিয়ে মাথা মুন্ডন করবেন অথবা সব চুল ছোট করবেন। মহিলাগণ চুলের অগ্রভাগ থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ সামান্য চুল ছাঁটবেন।

(৬) ‘হজ্জে তামাত্তু’ সম্পাদনকারী প্রথমে ওমরাহ শেষ করে হালাল হয়ে সাধারণ কাপড় পরিধান করবেন। কিন্তু ‘হজ্জে ইফরাদ’ ও ‘ক্বিরান’ সম্পাদনকারীগণ হজ্জ শেষে হালাল হওয়া পর্যন্ত ইহরাম অবস্থায় থেকে যাবেন।

(৭) ৮ই যুলহিজ্জার দিন মক্কায় স্বীয় আবাসস্থল হ’তে গোসল করে ও খোশবু লাগিয়ে হজ্জের ইহরাম বেঁধে ‘লাববায়েক...’ বলতে বলতে মিনার দিকে রওয়ানা হবেন।

(৮) মিনায় পৌঁছে সেখানে যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজরের ছালাত পৃথক পৃথকভাবে নির্দিষ্ট ওয়াক্তে ‘ক্বছর’ সহ আদায় করবেন। দুই ওয়াক্তের ছালাত একত্রে  জমা করবেন না।

(৯) ৯ তারিখে সূর্যোদয়ের পর ধীরস্থিরভাবে ‘তালবিয়া’ ও ‘তাকবীর’ বলতে বলতে আরাফা ময়দানের দিকে যাত্রা শুরু করবেন। অতঃপর সেখানে গিয়ে আরাফার সীমানার মধ্যে অবস্থান করে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দো‘আ ও যিকর-আযকারে রত হবেন। অতঃপর সূর্য পশ্চিমে ঢলার পরে হজ্জের খুৎবা শ্রবণ শেষে যোহর ও আছরের ছালাত ক্বছর সহ এক আযান ও দুই ইক্বামতে ‘জমা তাক্বদীম’ করে আদায় করবেন এবং পুনরায় দো‘আ, যিকর-আযকার ও তেলাওয়াতে রত হবেন।

অতঃপর সূর্যাস্তের পর আরাফা ময়দানে হ’তে মুযদালেফার দিকে রওয়ানা হবেন এবং সেখানে পৌঁছে মাগরিবের তিন রাক‘আত ও এশার দু’রাক‘আত ছালাত ক্বছর সহ এক আযান ও দুই ইক্বামতে এশার আউয়াল ওয়াক্তে ‘জমা তাখীর’ করে আদায় করবেন এবং ঘুমিয়ে যাবেন। অতঃপর ঘুম থেকে উঠে আউয়াল ওয়াক্তে ফজরের ছালাত আদায় করে ক্বিবলামুখী হয়ে যিকর-আযকারে লিপ্ত হবেন ও হৃদয় ঢেলে দিয়ে দো‘আয় রত হবেন। অতঃপর ভালভাবে ফর্সা হ’লে সূর্যোদয়ের আগেই মিনা অভিমুখে রওয়ানা হবেন। এ সময় মুযদালিফা হ’তে ৭টি কংকর সংগ্রহ করে সাথে নিবেন।

(১০) মিনায় পৌঁছে সূর্যোদয়ের পর ‘জামরাতুল আক্বাবা’য় অর্থাৎ বড় জামরায় গিয়ে ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন ও প্রতিবারে ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। কংকর মারা হ’লে কুরবানী করবেন। অতঃপর মাথা মুন্ডন করবেন অথবা ছোট করে সমস্ত মাথার চুল ছাঁটবেন। তবে এতে আগপিছ হ’লে দোষ নেই।

(১১) এরপর ইহরাম খুলে ‘প্রাথমিক হালাল’ হয়ে সাধারণ কাপড় পরিধান করবেন। প্রাথমিক হালাল হওয়ার পর স্ত্রী মিলন ব্যতীত বাকী সব কাজ সাধারণভাবে করা যাবে।

(১২) অতঃপর মক্কায় গিয়ে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ’ সেরে তামাত্তু হাজীগণ ছাফা-মারওয়া সাঈ করবেন। কিন্তু ক্বিরান ও ইফরাদ হাজীগণ শুরুতে মক্কায় পৌঁছে সাঈ সহ ‘ত্বাওয়াফে কুদূম’ করে থাকলে শেষে ‘ত্বাওয়াফে ইফাযাহ্’র পর আর সাঈ করবেন না। এই ত্বাওয়াফ শেষে হাজীগণ পূর্ণ হালাল হবেন।

(১৩) ত্বাওয়াফে ইফাযাহ শেষে হাজীগণ মিনায় ফিরে আসবেন ও সেখানে রাত্রিযাপন করবেন। অতঃপর ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে প্রতিদিন অপরাহ্নে তিন জামরায় ৩´৭=২১টি করে কংকর নিক্ষেপ করবেন।

(১৪) ১১ তারিখ দুপুরে সূর্য ঢলার পর ২১টি কংকর সাথে নিয়ে প্রথমে ছোট জামরায় ৭টি, তারপর মধ্য জামরায় ৭টি ও সবশেষে বড় জামরায় (জামরাতুল আক্বাবাহ) ৭টি কংকর নিক্ষেপ করবেন এবং প্রতিবার নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলবেন। ১ম ও ২য় জামরায় কংকর নিক্ষেপ শেষে একটু দূরে গিয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দু’হাত উঠিয়ে প্রাণ খুলে দো‘আ করবেন।

(১৫) ১২ তারিখে কংকর মারার পর সূর্যাস্তের পূর্বেই যদি কেউ মক্কায় ফিরতে চান, তবে ফিরতে পারেন। কিন্তু যদি ১২ তারিখে রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই সূর্য মিনায় ডুবে যায়, তাহ’লে তাকে সেখানে অবস্থান করে ১৩ তারিখে কংকর মেরে আসতে হবে। বাধ্যগত শারঈ ওযর থাকলে ১১, ১২ দু’দিনের যেকোন একদিনে একসাথে কংকর মেরে মক্কায় ফেরা যাবে।

(১৬) সবশেষে মক্কায় ফিরে ‘ত্বাওয়াফে বিদা’ বা বিদায়ী ত্বাওয়াফ করতে হবে। তবে ঋতুবতী ও নেফাসওয়ালী মেয়েদের জন্য এটা মাফ। ‘ত্বাওয়াফে বিদা‘র মাধ্যমে হজ্জ সমাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ।[1]

-- ০০০ --



[1]. মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫৫; ‘বিদায় হজ্জের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ।