পর্যালোচনা
‘দ্বীন’ অর্থ ‘হুকুমত’ এই বিশ্বাস করলে তার জীবন রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে। পক্ষান্তরে দ্বীন অর্থ ‘তাওহীদ’ এই বিশ্বাস করলে তার জীবন তাওহীদকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে। ‘তাওহীদ’ হ’ল মূল এবং ‘হুকুমত’ হ’ল পূর্ণাঙ্গ ‘তাওহীদ’ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সহায়ক শক্তি মাত্র। সেটা কখনোই তাওহীদের জন্য শর্ত বা রুকন নয়। একজন মানুষের মুসলমান হওয়ার জন্য তাওহীদে বিশ্বাসী হওয়া শর্ত। হুকুমত কায়েম করা শর্ত নয়। ফলে যিনি দ্বীন অর্থ ‘তাওহীদ’ মনে করেন, তিনি তার জানমাল ব্যয় করবেন সার্বিক জীবনে সাধ্যপক্ষে ‘তাওহীদ’ প্রতিষ্ঠার জন্য। ইসলামী রাষ্ট্র থাক বা না থাক, এটা তার নিকটে মুখ্য বিষয় হবে না। পৃথিবীর সকল পরিবেশের ও সকল দেশের লোক তখন ইসলাম কবুল করতে উদ্বুদ্ধ হবে পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে। পক্ষান্তরে দ্বীন অর্থ ‘হুকুমত’ করলে ব্যালট হৌক বা বুলেট হৌক যেকোন প্রকারে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করাই তার নিকটে ‘প্রধান ইবাদত’ বলে গণ্য হবে। আর বাকী সকল কাজ তার নিকটে গৌণ মনে হবে। রাষ্ট্র কায়েম না করে মারা গেলে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে সে মরবে ও নিজেকে অপূর্ণ মুসলমান ভেবে হতাশাগ্রস্ত হবে।
মূলতঃ নবীগণ দুনিয়াতে প্রেরিত হয়েছিলেন আত্মভোলা মানবজাতিকে আল্লাহর দিকে ডাকতে। তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিতে ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শন করতে। মানব জাতিকে কিতাব ও সুন্নাহ শিক্ষা দানের মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। মানুষের আক্বীদা ও আমলের সংশোধনের মাধ্যমে প্রকৃত অর্থে সমাজ বিপ্লব ঘটাতে। মূলতঃ সমাজ পরিবর্তনের তুলনায় রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তন অতীব তুচ্ছ ব্যাপার। ক্ষমতার হাত বদল সমাজ বদলে অতি সামান্যই প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। তাইতো দেখা যায়, নবীগণ রাষ্ট্র ক্ষমতার জন্য লালায়িত ছিলেন না এবং তা পাবার জন্য লড়াইও করেননি। এমনকি একদিনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতার মালিক না হয়েও সারা বিশ্বের মানুষ তাঁদের ভক্ত অনুসারী ও সশ্রদ্ধ অনুগামী হয়েছে ও তাঁদেরকেই বিশ্বনেতা হিসাবে মেনে নিয়েছে।
মুমিন তার সার্বিক জীবনে দ্বীন কায়েম করবেন। যিনি জীবনের যে শাখায় কাজ করবেন, তিনি সেখানে দ্বীনের হেদায়েত মেনে চলবেন। যিনি ব্যবসায়ী হবেন, তিনি স্বীয় ব্যবসায়ে ‘ইক্বামতে দ্বীন’ করবেন। অর্থাৎ শরী‘আতের সীমারেখার মধ্যে থেকে তিনি হালাল ভাবে ব্যবসা করবেন। যিনি কর্মজীবী বা শ্রমজীবী হবেন, তিনি সঠিকভাবে তার কর্তব্য পালন করবেন ও মূল মালিক আল্লাহকে ভয় করবেন। যিনি রাজনীতি করবেন, তিনি ইসলামী পদ্ধতিতে রাজনীতি করবেন এবং শরী‘আতের বিধান সমূহ রাষ্ট্রীয়ভাবে বলবৎ করার চেষ্টা করবেন। যিনি জ্ঞানী ও মনীষী হবেন, তিনি স্বীয় জ্ঞান ও মেধাকে অন্যান্য মতাদর্শের উপরে ইসলামকে বিজয়ী করার পক্ষে ব্যয় করবেন। এক কথায় মুমিন তার ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে যেখানে যে পরিবেশে থাকবেন, সেখানেই সর্বদা তাওহীদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবেন ও সাধ্যপক্ষে আল্লাহর আইন মেনে চলবেন। মূলতঃ একেই বলে ‘ইক্বামতে দ্বীন’। আর এভাবেই ইসলাম অন্যান্য দ্বীনের উপরে বিজয় লাভ করতে পারে।