প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব


galib
ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব (৭৩) বাংলাদেশের একজন খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। তিনি জাতীয়ভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে সংগঠনটির আমীর হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি গবেষণাধর্মী মাসিক ‘আত-তাহরীক’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক। তাঁর অধীনে বেশ কয়েকটি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থা পরিচালিত হয়। ২০১৬ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ থেকে প্রফেসর হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি :

বাংলা ১৩৫৪ সালের ২রা মাঘ মোতাবেক ১৫ই জানুয়ারী ১৯৪৮ রবিবার দিবাগত রাত ১১-টায় তিনি বর্তমান সাতক্ষীরা যেলার সদর থানাধীন বুলারাটি গ্রামের সম্ভ্রান্ত মণ্ডল বংশের মৌলভী বাড়ীতে জন্মগ্রহণ করেন। মাতা বছীরুন্নেসা ছিলেন অত্যন্ত পুণ্যবতী মহিলা এবং পিতা ‘উস্তাযুল আসাতিযাহ’ মাওলানা আহমাদ আলী (১৮৮৩-১৯৭৬) ছিলেন খ্যাতনামা আলেম, লেখক, বাগ্মী, শিক্ষক, সমাজ সংস্কারক ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আহলেহাদীছ আন্দোলনের সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতা। দাদা মুন্শী যীনাতুল্লাহ ছিলেন গ্রামের বুযুর্গ সরদার। নানা বাহার আলী পণ্ডিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা যেলার বসিরহাট মহকুমাধীন ঘোড়ারাস গ্রামের আহলেহাদীছ নেতা ও সকলের শ্রদ্ধেয় মুরব্বী।

তাঁর বংশ পরিক্রমা- মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বিন আহমাদ আলী বিন মুনশী যীনাতুল্লাহ বিন আলহাজ্জ যমীরুদ্দীন বিন রফী মাহমূদ বিন আব্দুল হালীম বিন উযির আলী মণ্ডল বিন সৈয়দ নাযীর আলী আল-মাগরেবী। তাঁর ঊর্ধ্বতন ৭ম পুরুষ সৈয়দ নাযীর আলী আল-মাগরেবী একজন উঁচুদরের আলেম ছিলেন। তিনি মরক্কো কিংবা কোন আরব দেশ থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে হিন্দুস্থানে আগমন করেন। তাঁর উন্নত চরিত্র মাধুর্যে ও দ্বীন প্রচারে মুগ্ধ হ’য়ে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগণা যেলাধীন বারাসাত মহকুমার ‘ফল্তী’ গ্রামের লোকেরা তাঁর অনুসারী হ’য়ে যায়। তিনি উক্ত গ্রামের মণ্ডলের (সরদারের) কন্যার পাণি গ্রহণ করেন এবং এদেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই হ’তে এই বংশ ‘মণ্ডল’ বংশ হিসাবে পরিচিত হয়। এই বংশের প্রতি স্তরে এক বা একাধিক যোগ্য আলিম ছিলেন। মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা সিরাজুল ঈমান, মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা আহমাদ আলী প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম এই বংশেরই কৃতি সন্তান। ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৯ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর শ্বশুর ছিলেন প্রাক্তন সরকারী কর্মকর্তা (সার্কেল অফিসার/উপজেলা নির্বাহী অফিসার) জনাব হাজী আকবার আলী (মৃ. ১৯৮৬ইং)। সহধর্মীনী তাহেরুন্নেছা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর। তিনি বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহতাবুদ্দীন (মৃ. ১৯৮০ইং)-এর নাতনী এবং বৃটিশ ভারতের প্রখ্যাত সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী খান বাহাদুর মোবারক আলী (মৃত. ১৯৭৫ইং) (খান বাহাদুর আহছানউল্লাহর কনিষ্ঠ ভ্রাতা)-এর প্রোপৌত্রী। তিনি ৪ সন্তানের জনক। তারা হলেন ডা. তামান্না তাসনীম (কলোরেক্টাল সার্জন ও সিনিয়র কনসালটেন্ট), ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব (লেখক, গবেষক ও সংগঠক), ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব (লেখক ও গবেষক) ও হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির।

শিক্ষা :

মায়ের নিকটেই তাঁর লেখা-পড়ার হাতেখড়ি হয়। অতঃপর ছাত্রজীবনের শুরুতে তিনি স্থানীয় আলীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর বাড়ী হ’তে ১৪ মাইল দূরে পাথরঘাটা গমন করেন ও সেখানে পিতার নিকটে মসজিদে থেকে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে আরবী-উর্দূ-ফার্সী শিক্ষা করেন। কিছুদিন পরে পিতার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় কাকডাঙ্গা সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হন এবং পিতার সাথেই মসজিদে কাটিয়ে উক্ত মাদরাসা হ’তে দাখিল, আলিম ও ফাযিল এবং ১৯৬৯ সালে জামালপুর যেলাধীন আরামনগর আলিয়া মাদরাসা হ’তে কামিল (মুহাদ্দিছ) পাশ করেন। সকল পরীক্ষাতেই তিনি ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা এডুকেশন বোর্ডে আলিম ও কামিল পরীক্ষার সম্মিলিত মেধা তালিকায় তাঁর অবস্থান ছিল যথাক্রমে ১৬তম এবং ৫ম। পরবর্তীতে তিনি কলারোয়া সরকারী কলেজ, সাতক্ষীরা থেকে আইএ ও সরকারী মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ, খুলনা থেকে বিএ পরীক্ষাতেও কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। মাস্টার্সে তাঁর থিসিসের বিষয় ছিল ‘আধুনিক আরবী সাহিত্যে তায়মূর পরিবারের অবদান’। ১৯৮৪ সালে তিনি ইংল্যাণ্ডে পিএইচ.ডি গবেষণার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করেছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত গমন করেননি। ১৯৯২ সালে তিনি ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিত সহ’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। মাতৃভাষা বাংলাসহ আরবী, ইংরেজি, উর্দূ ও ফার্সী ভাষায় তাঁর দক্ষতা রয়েছে।

কর্মজীবন :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় মাদরাসা মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, যাত্রাবাড়ীতে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। অতঃপর এম.এ পাশ করার পরে ১৯৮০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে’ খণ্ডকালীন লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন। অতঃপর একই বছরের ১০ই ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আরবী ও ইসলামী শিক্ষা’ বিভাগে লেকচারার হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে উক্ত বিভাগ বিভক্ত হ’লে তিনি আরবী বিভাগে থেকে যান এবং দীর্ঘ ৩৬ বছরের অধ্যাপনা জীবন শেষে ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণ করেন। পেশাগত কাজে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য তিনি ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সঊদী আরব, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেছেন। ২০০০ সনে তিনি সঊদী সরকারের রাজকীয় মেহমান হিসাবে হজ্জব্রত পালন করেন।

প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ও সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ :

১. বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ (১৯৭৮)।

২. আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থা (১৯৮১)।

৩. তাওহীদ ট্রাস্ট (১৯৮৯)।

৪. হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ (১৯৯২)।

৫. আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ (১৯৯৪)।

৬. সোনামণি (১৯৯৪)।

৭. মাসিক আত-তাহরীক (১৯৯৭)।

৮. সালাফিয়া ট্রাস্ট (২০০২)।

৯. ইসলামিক কমপ্লেক্স (২০১০)।

০. আল-আওন (স্বেচ্ছাসেবী নিরাপদ রক্তদান সংস্থা) (২০১৮)।

রচনাবলী :

তিনি ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় নিয়মিত সম্পাদকীয় লেখা ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকায় তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা প্রায় ছয় শতাধিক। সাপ্তাহিক আরাফাত, দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইনকিলাব প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় তাঁর অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৫ সালে তিনি প্রথম ‘তাওহীদের ডাক’ নামে একটি পত্রিকা বের করেন। পরে ‘যুবসংঘ বার্তা’ অপর অন্য আরেকটি পত্রিকা বের করেন। তবে সেগুলির প্রকাশনা স্থায়িত্ব পায়নি। অতঃপর ১৯৯৭ সালে তিনি ‘আত-তাহরীক’ নামে একটি মাসিক গবেষণা পত্রিকা বের করেন, যেটি দ্রুতই পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে এবং বিদ্বান মহলে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্যতা পায়। বাংলাদেশের আহলেহাদীছদের প্রধান মুখপত্র হিসাবে পরিচিত এই পত্রিকাটি বর্তমানে নিয়মিত প্রকাশনার ২৫তম বর্ষ অতিক্রম করছে। এছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘তাওহীদের ডাক’ পত্রিকাটি যুবকদের দ্বি-মাসিক মুখপত্র হিসাবে পুনরায় ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি বেশ কয়েকটি এমফিল, পিএইচ.ডিসহ একাডেমিক গবেষণাকর্মসমূহ তত্ত্বাবধান ও নিরীক্ষণ এবং গবেষণা জার্নাল সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতিমধ্যে তাঁর রচিত ও অনূদিত প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রন্থ ও পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হ’ল ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন: উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ’, যেখানে তিনি ভারত উপমহাদেশে আহলেহাদীছ আন্দোলনের ইতিহাস ও কর্মধারা সবিস্তারে বিধৃত করেছেন। বর্তমানে বইটির ইংরেজী ও উর্দূ অনুবাদের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া তাঁর রচিত নবীদের কাহিনী সিরিজটি পাঠক নন্দিত ও বিদ্বান মহলে স্বীকৃত, যেখানে তিনি বিশুদ্ধ তথ্যভিত্তিক ইতিহাস রচনা করেছেন। সিরিজের সর্বশেষ গ্রন্থ তথা রাসূল (ছাঃ)-এর জীবনী গ্রন্থ ‘সীরাতুর রাসূল (ছাঃ)’ বিশুদ্ধতা, তাত্ত্বিক গভীরতা ও বাহুল্যবর্জিত উপস্থাপনায় এক অনন্য বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে এবং বাংলাভাষায় রচিত বিশুদ্ধতম সীরাত গ্রন্থ হিসাবে প্রসিদ্ধি পেয়েছে। তাঁর রচিত ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’ গ্রন্থটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, যা ইতিমধ্যে অন্তত দশ লক্ষাধিক কপি ছাপা হয়েছে। ভারতে ও সঊদীআরবেও এটি বিভিন্ন প্রকাশনালয় ও দাওয়াহ সেন্টার থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরুল কুরআন’ (২৬-৩০ম পারা) যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে তিনি কুরআন মাজীদের সংক্ষিপ্ত টীকা সহ পূর্ণাঙ্গ বঙ্গানুবাদ এবং তাফসীর রচনায় ব্যাপৃত রয়েছেন। 

ধর্ম বিষয়ক :

১.   বঙ্গানুবাদ কুরআন ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর

২.   তাফসীরুল কুরআন - ৩০তম পারা

৩.   তাফসীরুল কুরআন - ২৬-২৮তম পারা

৪.   তাফসীরুল কুরআন - ২৯তম পারা

৫.   ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) [বাংলা]। (বইটি ইংরেজী ভাষায় ÔSalatur Rasool (SM)Õ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে)।

৬.   ছিয়াম ও ক্বিয়াম

৭.   জিহাদ ও ক্বিতাল

৮.   মীলাদ প্রসঙ্গ

৯.   শবেবরাত

১০.   হজ্জ ও ওমরাহ

১১.   আক্বীদা ইসলামিয়াহ

১২.   হাদীছের প্রামাণিকতা

১৩.   মাসায়েলে কুরবানী ও আক্বীকা

১৪.   তালাক ও তাহলীল

১৫.   আশূরায়ে মুহাররম ও আমাদের করণীয়

১৬.   কুরআন অনুধাবন

১৭.   তাওহীদের শিক্ষা ও আজকের সমাজ

সমাজ বিষয়ক :

১৮.   আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ [ডক্টরেট থিসিস]

১৯.   আহলেহাদীছ আন্দোলন কি ও কেন? (বাংলা)। (বইটি ইংরেজী ÔAhle hadeeth movement What and Why?Õ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে)।

২০.   ফিরক্বা নাজিয়াহ

২১.   জীবন দর্শন

২২.   দিক দর্শন-১ (মাসিক আত-তাহরীক পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয় সংকলন)।

২৩.   দিক দর্শন-২ (ঐ)

২৪.   ইনসানে কামেল

২৫.   উদাত্ত আহ্বান

২৬.   বিবর্তনবাদ

২৭.   এ্যাক্সিডেন্ট (পৃথিবীর উৎপত্তি)

২৮.   নৈতিক ভিত্তি ও প্রস্তাবনা

২৯.   মৃত্যুকে স্মরণ

৩০.   সমাজ বিপ্লবের ধারা

৩১.   তিনটি মতবাদ

৩২.   দাওয়াত ও জিহাদ

৩৩.   ছবি ও মূর্তি

৩৪.   হিংসা ও অহংকার

৩৫.   মানবিক মূল্যবোধ

৩৬.   সমাজ পরিবর্তনের স্থায়ী কর্মসূচী

রাজনীতি :

৩৭.   ইসলামী খেলাফত ও নেতৃত্ব নির্বাচন

৩৮.   ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ

৩৯.   ইক্বামতে দ্বীন : পথ ও পদ্ধতি

৪০.   জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ এবং চরমপন্থীদের বিশ্বাসগত বিভ্রান্তির জবাব

অর্থনীতি :

৪১.   বায়‘এ মুআজ্জাল

ইতিহাস :

৪২.   নবীদের কাহিনী-১

৪৩.   নবীদের কাহিনী-২

৪৪.   সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) (নবীদের কাহিনী-৩)

অনুবাদ :

৪৫.   সালাফী দাওয়াতের মূলনীতি [আরবী হ’তে অনূদিত]

৪৬.   আরব বিশ্বে ইসরাঈলী আগ্রাসনের নীল নকশা (ইংরেজী হ’তে অনূদিত) (ইফাবা, ঢাকা, ১৯৮৭)

৪৭.   ইসলাম ও জাহেলিয়াতের দ্বন্দ্ব [আরবী হ’তে অনূদিত]

৪৮.   নয়টি প্রশ্নের উত্তর [আরবী হ’তে অনূদিত]

৪৯.   বিদ‘আত হ’তে সাবধান [আরবী হ’তে অনূদিত]

৫০.   শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রচিত অছিয়তনামা [ফার্সী হ’তে অনূদিত]

শিক্ষা, ভাষা ও সাহিত্য :

৫১.   আরবী ক্বায়েদা-১

৫২.   আরবী ক্বায়েদা-২

৫৩.   তাজবীদ শিক্ষা

৫৪.   মাদরাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে।

সমাজ সংস্কার :

ধর্মীয় : শিরক-বিদ‘আত এবং মাযহাব-তরীকায় আচ্ছন্ন বাংলাদেশের মুসলিম সমাজকে আক্বীদা ও আমলে পরিশুদ্ধ করা এবং পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মর্মমূলে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি জাতির উদ্দেশ্যে পেশ করেছেন সুনির্দিষ্ট রূপরেখা। আর তা হ’ল, কিতাব ও সুন্নাতের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠার এক বলিষ্ঠ আহ্বান- ‘আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি’। তাঁর মতে, শতধাবিভক্ত মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করতে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের কোন বিকল্প নেই। সেই সাথে ছাহাবায়ে কেরাম তথা সালাফে ছালেহীনের গৃহীত আক্বীদা ও মানহাজকে যথাযথ অনুসরণ করাও সমানভাবে অপরিহার্য। অর্থাৎ তাঁরা যেভাবে দ্বীনকে বুঝেছেন, সেভাবেই দ্বীনকে বুঝতে হবে। কেননা তাঁরাই ছিলেন দ্বীনের প্রকৃত ধারক ও বাহক। নতুবা দ্বীনের ব্যাখ্যায় বিকৃতি ও নানা নব আবিষ্কৃত মতবাদ সৃষ্টি হবে। এজন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কারের প্রতি তিনি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। কেননা প্রচলিত ধর্মনিরপেক্ষ এবং ধর্মীয় উভয়ধারার শিক্ষাব্যবস্থাই চরমভাবে ত্রুটিপূর্ণ, যা শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক আক্বীদাসম্পন্ন প্রকৃত মুসলিম হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ। এজন্য তিনি তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতভিত্তিক জাতীয় শিক্ষানীতি নির্ধারণ করতঃ পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক সমন্বিত ও একক ধারার পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন।   

সামাজিক ও রাজনৈতিক : ৫০ ও ৬০-এর দশকে এ দেশে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র প্রখ্যাত নেতা আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী যে সামাজিক ও সাংগঠনিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সে আন্দোলনকে আরো বেগবান, সুপ্রতিজ্ঞ ও সুসংহত করে তুলেছেন ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। গোষ্ঠীগত গণ্ডীর ঊর্ধ্বে উঠে তিনি ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’কে একটি ব্যাপকভিত্তিক ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনে রূপদান করেছেন। তিনি এমন একটি সমাজ গড়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন- ‘যেখানে থাকবেনা প্রগতির নামের কোন বিজাতীয় মতবাদ, থাকবে না ইসলামের নামে কোনরূপ মাযহাবী সংকীর্ণতাবাদ’। তিনি মনে করেন, যাবতীয় মানবরচিত মতবাদ পরিত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত অহি-র বিধানের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্যেই মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তি নিহিত। যা তিনি শ্লোগান আকারে ১৯৯৪ সালের ২৯শে জুলাই ঢাকার পল্টন ময়দানে সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত সর্বদলীয় ইসলামী সম্মেলনে উল্লেখ করেন- ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’। তাঁর মতে, প্রচলিত রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, বুলেট কিংবা ব্যালট নয়; বরং নবীদের পদ্ধতিতে মানুষের আক্বীদা-আমল সংস্কারের নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজের সার্বিক সংস্কার সাধনই ছিরাতুল মুস্তাক্বীমের পথ। আর এ পথেই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ‘ইমারত ও বায়‘আত’ ভিত্তিক সুসংঘবদ্ধ আন্দোলনকে তিনি যুগের প্রেক্ষাপটে আবশ্যক মনে করেন। তিনি মনে করেন ইসলামী খিলাফত তথা ইমারত ও শূরা পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনার মাধ্যমেই প্রকৃতপক্ষে ইনছাফ ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন সম্ভব। একই সাথে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার সাধন করে দল ও প্রার্থীবিহীন নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন। তাঁর রচিত ইসলামী খেলাফত ও নেতৃত্ব নির্বাচন, সমাজ বিপ্লবের ধারা, সমাজ পরিবর্তনের স্থায়ী কর্মসূচী, ইক্বামতে দ্বীন : পথ ও পদ্ধতি প্রভৃতি, উদাত্ত আহ্বান, নৈতিক ভিত্তি ও প্রস্তাবনা, তিনটি মতবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রভৃতি গ্রন্থে এ বিষয়গুলোর প্রতি জোর তাকীদ প্রদান করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক : পুঁজিবাদী সূদভিত্তিক অর্থনীতিকে হারাম অর্থব্যবস্থা উল্লেখ করে যাকাতভিত্তিক ইনছাফপূর্ণ ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালুর জন্য তিনি সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন। এনজিওদের ক্ষুদ্রঋণ, মহাজনী দাদন ব্যবসা, বন্ধকী ব্যবস্থা, সূদ-ঘুষ-জুয়া-লটারী প্রভৃতি নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার সংস্কার সাধনের জন্যও তিনি প্রস্তাবনা পেশ করেছেন। সাম্প্রতিককালে জিজিএন, ডেসটিনি বিভিন্ন নামে প্রতারণামূলক পিরামিড স্কীম ব্যবসা শুরু হলে তিনি এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেন, যা পরবর্তীতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।

সমাজসেবা : জীবনের সূচনালগ্ন থেকে তিনি সমাজসেবায় নিয়োজিত থেকেছেন। সর্বদা অসহায় ও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাওহীদ ট্রাস্ট, সালাফিয়াহ ট্রাস্ট, ইসলামিক কমপ্লেক্স, পথের আলো ফাউণ্ডেশন প্রভৃতি তাঁর প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত কয়েকটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ১২০০ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বৃহৎ মাদরাসাসহ অসংখ্য নিম্ন-মাধ্যমিক মাদরাসা ও মক্তব। এসব মাদরাসায় বর্তমানে চার শতাধিক ইয়াতিম ও দুস্থ শিক্ষার্থী প্রতিপালিত হচ্ছে। এছাড়া তাঁর নির্দেশনায় প্রতিবছর দুর্গত এলাকায় নলকুপ ও টয়লেট স্থাপন, গৃহনির্মাণ, ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এবং দুস্থ-অসহায়দের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, শীতবস্ত্র, ইফতার, কোরবানীর গোশত, ঈদসামগ্রী প্রভৃতি বিতরণ ও ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্পিং-এর আয়োজন করা হয়। ২০১৮ সালে তিনি ‘আল-আওন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী নিরাপদ রক্তদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সারাদেশে অসংখ্য মানুষ উপকৃত হচ্ছে। দারুল হাদীছ (প্রা.) বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন, যদিও তা প্রশাসনিক জটিলতায় এখনও আলোর মুখ দেখেনি।        

কারাবরণ : ২০০৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী জঙ্গীবাদের সাথে সম্পৃক্ত থাকার মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং একই দিনে দেশের সাতটি জেলার ১০টি মামলায় সন্দেহভাজন আসামী হিসাবে তাঁর নাম অন্যায়ভাবে যুক্ত করা হয়। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এসব অভিযোগকে তাঁর বিরুদ্ধে বিশেষ মহলের শত্রুতামূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবী করেন। অবশেষে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ২৮শে আগস্ট তিনি মুক্তিলাভ করেন। পরবর্তীতে সকল মামলায় তিনি বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত হন।

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর লিখিত বই সমূহ পাঠ করতে ক্লিক করুন

প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব -এর বক্তব্য সমূহ পেতে ক্লিক করুন