তিনটি মতবাদ

তাক্বলীদ ও ইত্তেবা ( التقليد والإتباع ) :

অনেকেই দু’টি পরিভাষাকে এক করে দেখতে চান। অথচ দু’টির মধ্যে রয়েছে মৌলিক প্রভেদ। ‘তাক্বলীদ’ হ’ল নবী ব্যতীত অন্য কারো শারঈ বক্তব্যকে বিনা দলীলে কবুল করা। পক্ষান্তরে ছহীহ দলীল অনুযায়ী নবীর অনুসরণ করাকে বলা হয় ‘ইত্তেবা’। একটি হ’ল দলীল ছাড়াই অন্যের রায়ের অনুসরণ, অন্যটি হ’ল দলীলের অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণ। অন্য কথায় ‘তাক্বলীদ’ হ’ল রায়ের অনুসরণ, ‘ইত্তেবা’ হ’ল ‘রেওয়ায়াতে’র অনুসরণ। এক্ষণে কারু রায়ের অনুসরণ ও দলীলের অনুসরণের মধ্যে যে অন্ধকার ও আলোর পার্থক্য, তা আশা করি কাউকে বুঝিয়ে বলতে হবে না।

তাক্বলীদ ও ইত্তেবার আরবী সংজ্ঞা নিম্নরূপ :

 ³التَّقْلِيْدُ هُوَ قُبُوْلُ قَوْلِ الغَيْرِ بِلاَ دَلَيْلٍ وَالْإِتِّبَاعُ هُوَ قُبُوْلُ قَوْلِ الغَيْرِ مَعَ دَلَيْلٍ-

  ³التَّقْلِيْدُ إِنَّمَا هُوَ قُبُوْلُ الرَّأىِ وَالْإِتِّبَاعُ إِنَّمَا هُوَ قُبُوْلُ الرِّوَايَةِ، فَالْإِتِّبَاَعُ فِى الدَّيْنِ مَسُوْغٌ وَالتَّقْلِيْدُ مَمْنُوْعٌ (القول المفيد للشوكانى ص১৪)-

ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, ‘তাক্বলীদ হ’ল রায়-এর অনুসরণ এবং ‘ইত্তেবা’ হ’ল রেওয়ায়াতের অনুসরণ। ইসলামী শরী‘আতে ‘ইত্তেবা’ সিদ্ধ এবং ‘তাক্বলীদ’ নিষিদ্ধ’।[1]

একথা পরিষ্কার যে, ইসলাম মানব জাতিকে আল্লাহ প্রেরিত সত্য গ্রহণ ও তাঁর নবীর ইত্তেবা করতে আহবান জানিয়েছে। কোন মানুষের ব্যক্তিগত রায়ের অনুসরণ কখনই করতে বলেনি। কোন মানুষ যেহেতু ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তাই মানব রচিত কোন মতবাদই, সে মতবাদ ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যাই-ই হোক না কেন, প্রকৃত সত্যের সন্ধান দিতে পারে না। সেই মতবাদে পৃথিবীতে শান্তিও আসতে পারে না। আর এজন্যেই নবী ব্যতীত অন্যের তাক্বলীদ নিষিদ্ধ এবং নবীর ইত্তেবা মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে অপরিহার্য।


৩. শাওকানী, আল-ক্বাওলুল মুফীদ (মিসরী ছাপা ১৩৪০/১৯২১ খৃ:) পৃঃ ১৪।