তিনটি মতবাদ

ইবাদত ও মু‘আমালাত:

জ্বিন ও ইনসান সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ، مَا أُرِيْدُ مِنْهُم مِّن رِّزْقٍ وَّمَا أُرِيْدُ أَن يُّطْعِمُوْنِ، إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِيْنُ-

‘আমি জ্বিন ও ইনসানকে শুধুমাত্র আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’। ‘আমি তাদের থেকে কোন রূযি চাই না এবং আমি চাই না যে তারা আমাকে খাওয়াবে’। ‘নিশ্চয় আল্লাহই রূযিদাতা এবং প্রবল পরাক্রমশালী’ (যারিয়াত ৫১/৫৬-৫৮)

উপরোক্ত আয়াতে মানুষের সকল কাজ দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ইবাদত ও মু‘আমালাত তথা দ্বীনী ও দুনিয়াবী, ধর্মীয় ও বৈষয়িক। দু’ধরনের কাজে দু’ধরনের মূলনীতি আছে। ইবাদত-এর মূলনীতি হ’ল ‘তাওক্বীফী’। অর্থাৎ কেবলমাত্র শরী‘আতই যে কোন ইবাদত চালু করতে পারে। নিজেরা ধর্মের নামে কোন অনুষ্ঠান চালু করলে সেটা বিদ‘আত হবে, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

পক্ষান্তরে মু‘আমালাত বা বৈষয়িক কাজ-কর্মের মূলনীতি হ’ল ‘ইবাহাত’। এখানে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারি, যতক্ষণ না সেটা শারঈ সীমারেখা অতিক্রম করে। যেমন যায়েদ তার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মাছ-গোশত-দুধ, ডিম রাখবে, না শাক-সবজী-ডাল রাখবে, সে বিষয়ে সে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিবে। সে খেয়াল রাখবে যেন হারাম খাদ্য ভক্ষণ না করে। অমনিভাবে দেশের শাসনকর্তা সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় কখন কোন আইন রচনা করা যায়, তিনি তার বিজ্ঞ পারিষদবর্গের সঙ্গে পরামর্শ করে তা করবেন। কিন্তু এমন আইন তিনি রচনা করতে পারবেন না, যা হারামকে হালাল করে বা হালালকে হারাম করে। অর্থাৎ কোন অবস্থাতেই শরী‘আতের সীমা লংঘন করা চলবে না। বলা বাহুল্য বৈষয়িক ব্যাপারে দ্বীনের হেদায়াত মেনে চলার ফলে দুনিয়াবী ঐ কাজটিও দ্বীন ও ইবাদাতের মর্যাদা লাভ করতে পারে। কিন্তু আসলে দ্বীন দ্বীনই থাকে, দুনিয়া দুনিয়াই থাকে। যেমন জ্বলন্ত লোহাকে আমরা  ‘লোহাটি আগুন হয়ে গিয়েছে’ বলি। কিন্তু আসলে লোহা লোহাই থাকে, আগুন আগুনই থাকে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখের দাবী রাখে। সেটি হ’ল দুনিয়ার উদ্দেশ্যে দুনিয়া করলে তাতে কোন গুনাহ নেই। দ্বীন মেনে দুনিয়া করলে  তাতে ছওয়াব আছে। পক্ষান্তরে দুনিয়া হাছিলের উদ্দেশ্যে দ্বীন করলে দ্বীন-দুনিয়া দু’টিই বরবাদ হবে। অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্য দুনিয়া করে, সে স্রেফ দুনিয়া পায়, কিন্তু আখেরাত হারায়। আর যে ব্যক্তি দ্বীনের জন্য দুনিয়া করে, সে দ্বীন-দুনিয়া দু’টিই পায়। কিন্তু যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্য দ্বীন করে, সে দ্বীন-দুনিয়া দু’টিই হারায়। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।