তালাক ও তাহলীল

উপসংহার

দরসে বর্ণিত ও সূরায়ে তালাকে বর্ণিত কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ পাক সকল প্রকার  তালাকের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।[1] যেমন (১) সহবাসহীন স্ত্রীকে  তালাক প্রদান। এই তালাকের কোন ইদ্দতকাল নেই (২) সহবাসকৃত স্ত্রীকে তৃতীয় তালাক প্রদান। এই স্ত্রীর স্বামীর উপরে হারাম হয়ে যাবে, যতক্ষণ না সে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে ও সেখান থেকে স্বেচ্ছায়  তালাকপ্রাপ্তা হয় (৩) খোলা, যা তিন তালাকের বাইরে এবং স্ত্রীর পক্ষ হ’তে স্বামীর নিকট থেকে মালের  বিনিময়ে যে বিচ্ছেদ  সংঘটিত হয় (৪)  তালাকে রাজঈ, যেখানে এক বা দুই তালাক দেওয়ার পরে স্ত্রীকে ইদ্দতের মধ্যে বা ইদ্দতের পরেও স্বামী ফেরৎ নিতে  পারে।

প্রত্যেক তালাকেরই ভিন্ন ভিন্ন  প্রকৃতি ও ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম-পদ্ধতি রয়েছে। সেইসব পদ্ধতির বাইরে তালাক দিলে তা বিদ‘আত হবে, যা প্রত্যাখ্যাত। ঋতুকাল বা নেফাস অবস্থায় তালাক দেওয়া, এক মজজিসে তিন তালাক দেওয়া বা একই তুহরে পৃথকভাবে তিন তালাক দেওয়া, উপরে বর্ণিত চার প্রকার তালাকের বাইরে  সম্পূর্ণ বিদ‘আতী প্রথা। তালাক কোন খেলনার বস্ত্ত নয় যে, একে ইচ্ছামত ব্যবহার করা যায়। তবুও যদি কেউ এরূপ করে বসে, তাহ’লে রাসূলের যামানায় তাকে এক তালাকে রাজ‘ঈ গণ্য করা হ’ত। যাতে অনুতপ্ত স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রিত হ’তে পারে এবং সংশোধন ও সমঝোতার সুযোগ নিতে পারে। কিন্তু ঐ বিদ‘আতী তালাককে বায়েন তালাকের কঠোর সিদ্ধান্ত প্রদান করার ফলে মুসলিম পারিবারিক জীবনে নেমে এসেছে অশান্তির গাঢ় অনানিশা। আর তা থেকে নিষ্কৃতির জন্য তাহলীল-এর যে পথ বাৎলানো হয়েছে, তা আরও অন্ধকার ও আরও নোংরা। ধর্মের নামে প্রকাশ্য ব্যভিচারের এই নোংরা প্রথা বন্ধ করার জন্য দায়িত্বশীল ওলামায়ে কেরামকে সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যদি কখনো দেশে ইসলামী সরকার আসে, তখন তাদেরকে এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে অবশ্যই পৌঁছতে হবে।

সবশেষে বলা চলে যে, বর্তমানে বিশেষ করে পাক-ভারত উপমহাদেশে এই বিদ‘আতী তালাকই প্রায় সর্বত্র চালু রয়েছে। সুন্নাতী নিয়মে তালাকের খবরই অনেকে জানে না। অতএব ‘তাহলীল’-এর কুপ্রথা বন্ধ করতে চাইলে এক মজলিসে তিন তালাককে তিন তালাক গণ্য করার বিদ‘আতী তালাকের প্রথা আগে বন্ধ করতে হবে এবং জনগণকে শারঈ তালাকের সুষম বিধান সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। -আমীন!!



[1]. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ (বৈরুত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ ২৯তম সংস্করণ, ১৪১৬/১৯৯৬) ৫/২২৪-২৫।