তালাক ও তাহলীল

খুলাফায়ে রাশেদীনের ইজতিহাদ পর্যালোচনা

অনুরূপভাবে আরও ইজতিহাদী ঘটনাসমূহ রয়েছে। যেমন মদ্য পানকারীকে ওমর ফারূক (রাঃ) ৮০ বেত মারেন। তার মাথা মুন্ডন করেন ও দেশছাড়া করেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্রেফ ৪০ বেত মেরেছিলেন।[1] আবুবকর (রাঃ) জনৈক পায়ুকামীকে এবং আলী (রাঃ) তাঁকে ‘আল্লাহর অবতার’ দাবীকারী এক দল যিন্দীক্বকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিলেন। অথচ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কোন প্রাণীকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে নিষেধ করেছেন। ছাহাবায়ে কেরাম গর্ভাবস্থা দেখেই যেনার শাস্তি এবং মদের গন্ধ পেয়েই মদ্যপানের শাস্তি দিয়েছিলেন সাক্ষীর অপেক্ষা করেননি।[2]

মদীনার বাজারে লোক সমাগম বৃদ্ধি পাওয়া ওছমান গণী (রাঃ) জুম‘আর খুৎবার সময় মূল আযানের পূর্বে ‘যাওরা’ বাজারে আরেকটি আযানের প্রচলন করলেন (বুখারী, মিশকাত হা/১৪০৪)। এমনিভাবে খিলাফতে রাশিদাহর যুগে সময় ও প্রেক্ষিত বিবেচনায় ইজতিহাদের ভিত্তিতে অনেক কিছু প্রশাসনিক নির্দেশ সাময়িকভাবে জারি করা হয়েছিল। পক্ষান্তরে এলাহী বিধান চিরন্তন ও চিরস্থায়ী।

(৯) ইবনু মাস‘ঊদ ও ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা এসেছে যে,  যদি কেউ তালাক দেয় একথা বলে যে, আমার স্ত্রীর উপর আসমানের তারকারাজির সংখ্যায় তালাক দিলাম। তাঁরা বলেন, এর দ্বারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক তিন তালাকই পতিত হবে। বাকী সব বেকার হবে। ক্বাযী শুরাইহ বলেন, যদি কেউ পৃথিবীর সকল নারীর স্বামী হয় ও এভাবে তালাক দেয়, তবে তার উপরে সকল স্ত্রীই হারাম হয়ে যাবে।[3]

(১০) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে অন্য একটি ‘আছারে’ বলা হয়েছে যে, একত্রিত তিন তালাক দানকারী স্বামীকে তিনি বলতেন, যদি তুমি আল্লাহ্কে ভয় করতে, তাহ’লে তোমার জন্য তিনি একটা পথ বের করে দিতেন। অর্থাৎ তিন তালাক একত্রে দেওয়ার ফলে এখন তোমার জন্য সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে।[4]

জবাব : এমনিতরো বহু ‘আছার’ মুওয়াত্ত্বা মালেক, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক, দারাকুৎনী প্রভৃতিতে এসেছে। যার অধিকাংশ যঈফ, মুনকার, মওযূ ও কয়েকটা ‘ছহীহ’ কিন্তু এগুলি অগ্রহণযোগ্য। কারণ বুখারী ও মুসলিমে ইবনু আববাস (রাঃ) থেকেই এর বিরোধী বক্তব্য মওজূদ রয়েছে। যেখানে রাসূলের ও আবুবকরের যামানায় এবং ওমরের যামানায় প্রথম দুই বা তিন বছর একত্রিত তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হ’ত বলে বলা হয়েছে।


[1]. আওনুল মা‘বূদ হা/২১৭১-এর ভাষ্য; ৬/২৪২।

[2]. আহলেহাদীছ আন্দোলন (ডক্টরেস থিসিস), পৃঃ ১৯০।

[3]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ ৪/১৩ ‘তালাক্ব’ অধ্যায় ১৩ অনুচ্ছেদ।

[4]. ত্বাহাভী, মুহাল্লা ৯/৩৯৩।