মাসায়েলে কুরবাণী ও আক্বীক্বা

ঈদায়নের মাসায়েল

(১) সংজ্ঞা: ‘ঈদ’ ‘আওদুন’ (عَادَ يَعُوْدُ عَوْدًا) ধাতু হ’তে উৎপন্ন, যার অর্থ বারবার ফিরে আসা। জাহেলী আরবে যে কোন বার্ষিক আনন্দ মেলাকে ‘ঈদ’ বলা হ’ত। অতঃপর ইসলামী পরিভাষায় ‘ঈদ’ ঐ দু’টি বার্ষিক ধর্মীয় উৎসবকে বলা হয়, যা শরী‘আত নির্ধারিত পন্থায় উদযাপিত হয়। যেদিন বারবার আল্লাহর  বড়ত্ব ঘোষণা করে তাঁর নামে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারিত হয় এবং যা প্রতি বছর বান্দার উপরে আল্লাহর বিশেষ ক্ষমা ও অনুগ্রহের বারতা নিয়ে ফিরে আসে’। পর পর দুই ঈদকে একত্রে ‘ঈদায়েন’ বলা হয়।

(২) প্রচলন: ঈদায়নের ছালাত ২য়  হিজরী সনে ছিয়াম ফরয হওয়ার সাথে সাথে  চালু হয়। ঈদায়নের ছালাত কিতাব ও সুন্নাত ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা প্রমাণিত। এটি সুন্নাতে মুওয়াক্কাদাহ। এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমৃত্যু নিয়মিতভাবে এটি আদায় করেছেন এবং ছোট-বড় নারী-পুরুষ সকল সক্ষম মুসলমানকে ঈদের জামা‘আতে শরীক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

(৩) করণীয়: রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এদিন সর্বোত্তম পোষাক পরিধান করতেন ও স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে ঈদগাহে যেতেন।[1] (খ) তিনি এক পথে যেতেন ও অন্য পথে ফিরতেন।[2] (গ) মুক্বীম-মুসাফির সবাই ঈদের দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবেন। (ঘ) এ দিন সকালে মিসওয়াক সহ ওযূ-গোসল করে তৈল-সুগন্ধি মেখে উত্তম পোষাকে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে তাকবীর দিতে দিতে রওয়ানা হওয়া মুস্তাহাব।[3] (ঙ) জামা‘আত ছুটে গেলে একাকী বা জামা‘আত সহকারে ঈদের তাকবীর সহ দু’রাক‘আত পড়বে।[4] (চ) ঈদগাহে আসতে না পারলে বাড়ীতে মেয়েরা সহ বাড়ীর সকলকে নিয়ে তাকবীর সহকারে জামা‘আতের সাথে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে।[5]

(৪) ঈদায়নের সময়কাল: ঈদুল আযহায় সূর্য এক ‘নেযা’ পরিমাণ ও ঈদুল ফিৎরে দুই ‘নেযা’ পরিমাণ উঠার পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদের ছালাত আদায় করতেন। এক ‘নেযা’ বা বর্শার দৈর্ঘ্য হ’ল তিন মিটার বা সাড়ে ছয় হাত।[6] অতএব ঈদুল আযহার ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই যথাসম্ভব দ্রুত শুরু করা উচিত।

(৫) ফযীলত ও নিয়ত: ঈদায়নের ছালাত সকল নফল ছালাতের মধ্যে সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ।[7] হজ্জ ও ওমরাহর ‘তালবিয়াহ’ ব্যতীত ঈদায়েন সহ কোন ইবাদতের জন্য নিয়ত মুখে বলতে হয় না, বরং হৃদয়ে সংকল্প করতে হয়।[8]

(৬) ঈদায়নের তাকবীর ধ্বনি:

ঈদায়নের তাকবীর ধ্বনি করা সুন্নাত। এটি হ’ল ‘ঈদের নিদর্শন’ (شعار العيد)। ঈদুল ফিৎরে রামাযানের মাসব্যাপী ছিয়াম পূর্ণ করা এবং আল্লাহ পাকের বিশেষ অনুগ্রহ ও হেদায়াত প্রাপ্তির শুকরিয়া স্বরূপ এটা করতে হয়। আল্লাহ বলেন, وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ‘(ছিয়াম ফরয করা হয়েছে এজন্য যে,) আল্লাহ তোমাদের হেদায়াত দান করেছেন সেজন্য তোমরা আল্লাহ বড়ত্ব ঘোষণা করবে এবং তোমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)। অতঃপর ঈদুল আযহাতে কুরবানীর পশুগুলিকে মানুষের অনুগত করে দেওয়া ও শিরক থেকে মুক্ত হয়ে স্রেফ আল্লাহর নামে জীবন উৎসর্গ করার হেদায়াত প্রাপ্তির শুকরিয়া স্বরূপ (হজ্জ ২২/৩৭) আল্লাহর নিরংকুশ তাওহীদ ও বড়ত্ব ঘোষণা করে বার বার তাকবীর ধ্বনি করতে হয়। 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় চাচা আববাস, চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস, ফযল ইবনে আববাস, জামাতা আলী, তার ভাই জা‘ফর, নাতি হাসান-হোসায়েন, গোলাম যায়েদ ইবনে হারেছাহ, তৎপুত্র উসামা ইবনে যায়েদ ও আয়মান ইবনে উম্মে আয়মান প্রমুখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদায়নের সকালে উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর ও তাহলীলসহ ঈদগাহ অভিমুখে ঘর হ’তে রওয়ানা দিতেন ও এইভাবে তিনি ঈদগাহ পর্যন্ত পৌঁছতেন।[9] তাবেঈ বিদ্বান মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম ইবনু শিহাব যুহরী (৫০-১২৪ হিঃ) বলেন যে, লোকেরা ঈদের দিন সকালে তাকবীর ধ্বনি করতে করতে ঈদগাহে আসত। অতঃপর ইমাম এলে তাকবীর বন্ধ করত। এ সময় ইমামের সাথে তারাও তাকবীর দিত।[10] নিতান্ত কোন ওযর না থাকলে পায়ে হেঁটেই তাকবীর ধ্বনি সহকারে ঈদগাহে আসতে হয়।[11]

ছাহাবায়ে কেরাম থেকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ রেওয়ায়াত অনুযায়ী আরাফার দিন ফজর থেকে মিনার শেষ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৯ই যিলহাজ্জ ফজর থেকে ১৩ ই যিলহাজ্জ ‘আইয়ামে তাশরীক্ব’-এর শেষ দিন আছর পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত ছালাত শেষে কমপক্ষে তিন বার করে ও অন্যান্য সকল সময়ে উচ্চকণ্ঠে তাকবীর ধ্বনি করা সুন্নাত। ঈদুল ফিৎরের দিন সকালে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়া থেকে খুৎবা শুরুর আগ পর্যন্ত তাকবীর ধ্বনি করবে।[12]

তাকবীরের শব্দাবলী : ইমাম মালেক ও আহমাদ (রহঃ) বলেন, তাকবীরের শব্দ ও সংখ্যার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। ওমর, আলী, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) ইবনে আববাস প্রমুখ ছাহাবীগণ তাকবীর দিতেন ‘আল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, আল্লা-হু আকবার, ওয়া লিল্লা-হিল হাম্দ’[13] অনেক বিদ্বান পড়েছেন, ‘আল্লা-হু আকবার কাবীরা, ওয়াল হামদু লিল্লা-হি কাছীরা, ওয়া সুবহানাল্লা-হি বুকরাতাঁও ওয়া আছীলা’। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এটাকে ‘সুন্দর’ বলেছেন।[14]

সূরায়ে বাক্বারাহ্ ১৮৫ ও হজ্জ ৩৭ নং আয়াতের মর্ম অনুযায়ী তাকবীর ধ্বনির গুরুত্ব সর্বাধিক। মহিলাগণও সরবে (তবে উচ্চকণ্ঠে নয়) তাকবীর পাঠ করবেন।[15] আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ আইয়ামে তাশরীকের দিনগুলিতে বাজারে গমন করে তাকবীর ধ্বনি করতেন। লোকেরাও তাঁদের সাথে জোরে জোরে তাকবীর ধ্বনি করত। ওমর ফারূক্ব (রাঃ) মিনাতে নিজের তাঁবুতে এত জোরে তাকবীর দিতেন যে, পার্শ্ববর্তী মসজিদের মুছল্লী ও বাজারের লোকেরা সবাই তাঁর সাথে তাকবীর ধ্বনি করে উঠত, যা এলাকাকে মুখর করে তুলত।[16]

(৭) ঈদায়নের ছালাত আদায়ের পদ্ধতি:

কোনরূপ আযান-এক্বামত ছাড়াই প্রথমে ক্বিবলামুখী দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে তাকবীরে তাহরীমা দিয়ে বাম হাতের উপরে ডান হাত  বুকের  উপরে  বাঁধবে।  অতঃপর  ‘ছানা’ (দো‘আয়ে  ইস্তেফতাহ) পড়বে। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ধীর-স্থিরভাবে দুই তাকবীরের মাঝে স্বল্প বিরতিসহ পরপর সাতটি তাকবীর দিবে। প্রতি তাকবীরে হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে, অতঃপর পূর্বের ন্যায় বুকে বাঁধবে। তাকবীর শেষ হ’লে প্রথম রাক‘আতে আ‘ঊযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পূর্ণভাবে পড়ে ইমাম হ’লে সরবে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে। মুক্তাদী হ’লে নীরবে কেবল সূরা ফাতিহা ইমামের পিছে পিছে পড়বে ও ইমামের ক্বিরাআত শুনবে। অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতে উঠে দাঁড়িয়ে পূর্বের নিয়মে ধীর-স্থিরভাবে দুই তাকবীরের মাঝে স্বল্প বিরতিসহ প্রথমে পরপর পাঁচটি তাকবীর দিবে। তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ অন্তে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে।

দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের শুরুতে ‘আঊযুবিল্লাহ’ পড়তে হয় না। কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে হয়। ঈদায়নের ছালাতে ১ম ও ২য় রাক‘আতে যথাক্রমে সূরা আ‘লা ও গাশিয়াহ অথবা সূরা ক্বাফ ও ক্বামার পড়া সুন্নাত।[17]

ঈদায়নের জন্য প্রথমে ছালাত ও পরে খুৎবা প্রদান করতে হয়।[18] তার আগে পিছে কোন ছালাত নেই, আযান বা এক্বামত নেই। ঈদগাহে বের হবার সময় উচ্চকণ্ঠে তাকবীর এবং পৌঁছার পরেও তাকবীর ধ্বনি ব্যতীত কাউকে জলদি আসার জন্য আহবান করাও ঠিক নয়।[19] কোন কোন ঈদগাহে ইমাম পৌঁছে যাওয়ার পরেও ছালাতের পূর্বে বিভিন্নজনে বক্তৃতা করে থাকেন। এটা সুন্নাত বিরোধী কাজ।

খুৎবা: ঈদায়নের ছালাতের পর খুৎবা দেওয়া ও তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করা সুন্নাত। ঈদায়নের খুৎবা একটি হওয়াই ছহীহ হাদীছ সম্মত। যেমনঃ

عَن أَبِىْ سَعِيْدِنِ الْخُدْرِىِّ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى إِلَى الْمُصَلَّى فَأَوَّلُ شَيْئٍ يَّبْدَأُ بِهِ الصَّلاَةُ ثُمَّ يَنْصَرِفُ فَيَقُوْمُ مُقَابِلَ النَّاسِ وَالنَّاسُ جُلُوْسٌ عَلَى صُفُوْفِهِمْ فَيَعِظُهُمْ  وَ يُوْصِيْهِمْ وَيَأْمُرُهُمْ وَ إِنْ كَانَ يُرِيْدُ أَنْ يَّقْطَعَ بَعْثًا قَطَعَهُ اَوْ يَأْمُرَ بِشَيْئٍ أَمَرَ بِهِ ثُمَّ يَنْصَرِفُ، متفق عليه-

‘আবুসাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহার দিনে ঈদগাহের দিকে বের হ’তেন। (ঈদগাহে পৌঁছে) তিনি প্রথমে ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর ছালাত শেষে মুছল্লীদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন, মুছল্লীরা তখন নিজ নিজ কাতারে বসা থাকত। তিনি তাদেরকে উপদেশ দিতেন, নছীহত করতেন এবং নির্দেশ দিতেন। কোথাও সৈন্য প্রেরণের ইচ্ছা করলে বাছাই করতেন অথবা কোন বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার থাকলে নির্দেশ দিতেন। অতঃপর বাড়ীতে প্রত্যাবর্তন করতেন’।[20]

মিশকাতে সংকলিত উপরোক্ত হাদীছ ও একই মর্মে ইবনু আববাস (রাঃ) বর্ণিত পরবর্তী হাদীছ (হা/১৪২৯) দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ঈদায়নের খুৎবা একটিই ছিল। মাঝখানে বসে দু’টি খুৎবা প্রদান সম্পর্কে ইবনু মাজাহ (হা/১২৮৯) ও বাযযারে কয়েকটি ‘যঈফ’ হাদীছ রয়েছে, যা ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়। ছাহেবে সুবুলুস সালাম ও ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘প্রচলিত দুই খুৎবার নিয়মটি মূলতঃ জুম‘আর দুই খুৎবার উপরে ক্বিয়াস করেই চালু হয়েছে। এটি রাসূলের ‘আমল’ দ্বারা এবং কোন নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়’।[21] খুৎবা শেষে বসে দু’হাত তুলে সকলকে নিয়ে দো‘আ করার রেওয়াজটিও হাদীছ সম্মত নয়। বরং এটিই প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র একটি খুৎবা দিয়েছেন, যার মধ্যে আদেশ, নিষেধ, উপদেশ, তাকবীর, দো‘আ সবই ছিল।[22] ইবনু মাজাহ কর্তৃক যঈফ সনদে রাসূলের মুওয়াযযিন সা‘দ আল-ক্বারায (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে জানা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের খুৎবার মধ্যে বেশী বেশী তাকবীর ধ্বনি করতেন’।[23] এ সময় মুছল্লীগণ ইমামের সাথে সাথে তাকবীর ধ্বনি করবেন’।[24] এটি কুরআনী নির্দেশের অনুকূলে। কেননা ছিয়াম ফরয করার উদ্দেশ্য বর্ণনায় আল্লাহ বলেন, وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ এটা এজন্য যে, তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করবে একারণে যে, তিনি তোমাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/১৮৫)

অনেক মুছল্লী খুৎবার সময় অন্যদিকে মনোযোগ দেন, অনেকে চলে যান, অনেক ঈদগাহে খুৎবার সময় পয়সা তোলা হয়, এগুলি খুৎবা অবমাননার শামিল। কেননা খুৎবার সময় অন্য কাজে লিপ্ত হওয়া, পরষ্পরে কথা বলা, এমনকি অন্যকে ‘চুপ কর’ একথা বলাও নিষেধ।[25] সবচেয়ে বড় কথা, ঐ ব্যক্তি খুৎবা শোনার ছওয়াব ও বরকত থেকে মাহরূম হয় এবং সুন্নাত তরক করার জন্য গোনাহগার হয়।

(৮) মহিলাদের অংশগ্রহণ:

ঈদায়নের জামা‘আতে পুরুষদের পিছনে পর্দার মধ্যে মহিলাগণ প্রত্যেকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে যোগদান করবেন। প্রত্যেকের চাদর না থাকলে একজনের চাদরে জড়িয়ে দু’জন আসবেন। খত্বীব ছাহেব নারী-পুরুষ সকলকে লক্ষ্য করে মাতৃভাষায় পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে খুৎবা প্রদান করবেন। ঋতুবতী মহিলাগণ কেবল খুৎবা শ্রবণ করবেন এবং মুখে তাকবীর, তাহলীল, আমীন ইত্যাদি বলবেন। যেমন,

 عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ أُمِرْنَا أَنْ نُّخْرِجَ الْحُيَّضَ يَوْمَ الْعِيْدَيْنِ وَذَوَاتِ الْخُدُوْرِ فَيَشْهَدْنَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِيْنَ وَ دَعْوَتَهُمْ وَ تَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ عَنْ مُّصَلاَّهُنَّ قَالَتِ امْرَأَةٌ يَّا رَسُوْلَ اللهِ إِحْدَانَا لَيْسَ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ لِتُلْبِسْهَا صَاحِبَتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا، متفق عليه-

‘উম্মে ‘আত্বিইয়া (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হ’ল, আমরা যেন ঋতুবতী ও পর্দানশীন মহিলাদেরকে দুই ঈদের দিনে বের করে নিয়ে যাই। যেন তারা মুসলমানদের জামা‘আত ও দো‘আয় শরীক হ’তে পারে। তবে ঋতুবতী মহিলারা একদিকে সরে বসবে। জনৈকা মহিলা তখন বলল, আমাদের অনেকের বড় চাদর নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তার সাথী তাকে নিজের চাদর দ্বারা আবৃত করে নিয়ে যাবে’।[26]

মিশকাতের ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, হাদীছের শেষে বর্ণিত دعوة المسلمين  কথাটি ‘আম’। এর দ্বারা ইমামের খুৎবা ও ওয়ায-নছীহত শ্রবণে শরীক হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। কেননা ঈদায়নের ছালাতের পরে প্রচলিত নিয়মে সম্মিলিত ভাবে হাত তুলে দো‘আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম  থেকে কোন দলীল নেই।[27]

(৯) ময়দানে ঈদের জামা‘আত:

ময়দানে ঈদের জামা‘আত করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীন সর্বদা ঈদের ছালাত ময়দানে পড়তেন। অন্যান্য মসজিদের চেয়ে এক হাযার গুণ বেশী নেকী এবং অতি নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কখনো মসজিদে নববীতে ঈদের ছালাত আদায় করেননি। ঈদের এই ময়দানটি ছিল মদীনার মসজিদে নববীর পূর্ব দরজা বরাবর মাত্র পাঁচশ’ গজ (الف ذراع) দূরে ‘বাত্বহান’ সমতল ভূমিতে অবস্থিত।[28] একটি ‘যঈফ’ বর্ণনা অনুযায়ী তিনি একবার মাত্র বৃষ্টির কারণে মসজিদে নববীতে ঈদের ছালাত আদায় করেছেন।[29] অতএব বৃষ্টি কিংবা ভীতি বা অন্য কোন বাধ্যগত কারণে ময়দানে যাওয়া অসম্ভব হ’লে মসজিদে ঈদের জামা‘আত করা যাবে।[30] কিন্তু বায়তুল্লাহ শরীফ ব্যতীত অন্য কোথাও বিনা কারণে বড় মসজিদের দোহাই দিয়ে সেখানে ঈদের ছালাত আদায় করা সুন্নাত বিরোধী কাজ।

(১০) জুম‘আ, ঈদ ও আক্বীক্বা একই দিনে:

জুম‘আ ও ঈদ একই দিনে হওয়াতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’টিই পড়েছেন। তবে যারা ঈদ পড়েছেন, তাদের জন্য জুম‘আ অপরিহার্য করেননি।[31]  অনুরূপভাবে আক্বীক্বা ও কুরবানী একই দিনে হ’লে এবং দু’টিই করা সাধ্যে না কুলালে আক্বীক্বা অগ্রাধিকার পাবে। কেননা সাত দিনে আক্বীক্বা করাই ছহীহ হাদীছ সম্মত।[32]

(১১) ঈদায়নের ছালাতে অতিরিক্ত তাকবীর:

প্রথম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমা ও ছানা পড়ার পরে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ছালাতের তাকবীর ব্যতীত ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ মোট বারো তাকবীর দেওয়া সুন্নাত। যদি কেউ ভুলে যায় ও কিরা‘আত শুরু করে দেয়, তাহ’লে পুনরায় তাকবীর দিতে হবে না।[33] যদি গণনায় কমবেশী হয়ে যায়, তাতে সিজদায়ে সহো লাগে না। দুই তাকবীরের মাঝে স্বল্প বিরতি সহ ধীরে-সুস্থে প্রতিটি তাকবীর দিবে। প্রতি তাকবীরে দু’হাত উঠাবে ও বাম হাতের উপর ডান হাত বুকে বাঁধবে।[34]

চার খলীফা ও মদীনার শ্রেষ্ঠ সাত জন তাবেঈ ফক্বীহ সহ প্রায় সকল ছাহাবী, তাবেঈ, তিন ইমাম ও অন্যান্য শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ও মুজতাহিদ ইমামগণ এবং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর দুই প্রধান শিষ্য ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (রহঃ) বারো তাকবীরের উপরে আমল করতেন। ভারতের দু’জন খ্যাতনামা হানাফী বিদ্বান আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী ও আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী বারো তাকবীরকে সমর্থন করেছেন।[35]

বারো তাকবীর সম্পর্কে ছহীহ, হাসান ও যঈফ সনদে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ তিনটি ছহীহ হাদীছ নিম্নে প্রদত্ত হ’লঃ

(১) মা আয়েশা (রাঃ) বলেন,

كان رسولُ الله صلى الله عليه وسلم يُكَبِّرُ فى الفِطْرِ والأَضْحَى فى الأُوْلَى سَبْعَ تكبيراتٍ وفى الثانيةِ خمسًا سِوَى تكبيرتَى الركوعِ رواه ابوداؤد،  وفى الدارقطنى: سِوَى ةكبيرةٍ الإِسْتِفْتَاحِ-

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহাতে প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন রুকুর তাকবীর ব্যতীত’।[36] দারাকুৎনীর বর্ণনায় এসেছে ‘তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত’।[37]

শায়খ আলবানী বলেন, অত্র হাদীছের সনদে ইবনু লাহী‘আহ থাকার কারণে অনেকে হাদীছটিকে ‘যঈফ’ বলেছেন। কিন্তু যখন তিন আব্দুল্লাহ অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক, আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহাব এবং আব্দুল্লাহ আল-মুক্বরী তাঁর থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন, তখন সেটি ‘ছহীহ’ হিসাবে গণ্য হয়। আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীছটি আব্দুল্লাহ বিন ওয়াহাব বর্ণনা করেছেন ইবনু লাহী‘আহ থেকে তিনি খালেদ ইবনু ইয়াযীদ থেকে। অতএব হাদীছটির সনদ ছহীহ।[38]

২ নং হাদীছ:

عن كثير بن عبد الله عن أبيه عن جده أَنَّ النبىَّ صلى الله عليه و سلم كَبَّرَ فِى الْعِيْدَيْنِ فِى الأُوْلَى سَبْعًا قَبْلَ الْقِرَاءََةِ وَ فِى الآخِرَةِ خَمْسًا قَبْلَ الْقِرَاءََةِ،  رواه الترمذى وابن ماجه-

অনুবাদঃ কাছীর ইবনে আব্দুল্লাহ স্বীয় পিতা হ’তে তিনি স্বীয় দাদা ‘আমর ইবনে ‘আওফ আল-মুযানী (বদরী ছাহাবী) হ’তে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদায়নের প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন’।[39]

হাদীছটি সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী বলেন,

حديث جد كثير حديث حسن و هو أحسن شيئ روى فى هذا الباب عن النبى صلى الله عليه و سلم- قال ابو عيسى سألت محمدا يعنى البخارى عن هذا الحديث فقال ليس فى هذا الباب شيئ أصح من هذا و به أقول-

অর্থঃ হাদীছটির সনদ ‘হাসান’ এবং এটিই ঈদায়নের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে বর্ণিত ‘সর্বাধিক সুন্দর’ বর্ণনা’। তিরমিযী বলেন, এটাই মদীনাবাসীদের আমল এবং একথাই বলেন ইমাম মালেক, শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব প্রমুখ।[40] তিনি আরও বলেন যে, আমি এ সম্পর্কে আমার উস্তায ইমাম বুখারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ঈদায়নের ছালাতের অতিরিক্ত তাকবীর সম্পর্কে এর চাইতে অধিক আর কোন ছহীহ রেওয়ায়াত নেই’।[41] তবে ছাহেবে তুহফা ও ছাহেবে মির‘আত বলেন, বিভিন্ন ‘শাওয়াহেদ’-এর কারণে তিরমিযী একে ‘হাসান’ বলেছেন’।[42] শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, হাদীছটির সনদ ‘খুবই যঈফ’। কিন্তু বহু ‘শাওয়াহেদ’-এর কারণে হাদীছটি শক্তিশালী হয়েছে’।[43]


৩ নং হাদীছ:

عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده أَنَّ رسولَ الله صلى الله عليه و سلم كَبَّرَ فِى الْعِيْدَيْنِ الْأَضْحَى وَالْفِطْرَ ثِنْتَىْ عَشَرَةَ تَكْبِيْرَةً فِى الْأُوْلَى سَبْعًا وَفِي الْأَخِيْرَةِ خَمْسًا سِوَى تَكْبِيْرَةِ الْإِحْرَامِ، وفى رواية: سِوَى تَكْبِيْرَةِ الصَّلاَةِ،  رواه الدارقطنى والبيهقى-

অনুবাদ:   ‘আমর ইবনে শু‘আইব তার পিতা হ’তে তিনি তার দাদা আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিৎরে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত প্রথম রাক‘আতে সাতটি ও শেষ রাক‘আতে পঁঁাচটি (অতিরিক্ত) তাকবীর দিতেন’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘ছালাতের তাকবীর’ ব্যতীত।[44]

অত্র হাদীছটি সম্পর্কে ছাহেবে তুহফা ও ছাহেবে মির‘আত উভয়ে বলেন,  الظاهر أن حديث عبد الله بن عمرو أصح شيئ فى الباب   ‘সনদ হিসাবে এটা পরিষ্কার যে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর বর্ণিত অত্র হাদীছটিই এ বিষয়ে সর্বাধিক বিশুদ্ধ হাদীছ’।[45]

শায়খ আলবানী হাদীছটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। ইমাম আহমাদ, ইমাম বুখারী ও তাঁর উসতায আলী ইবনুল মাদীনী হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন। আল্লামা নীমভী বলেন, হাদীছটির সনদের মূল কেন্দ্রবিন্দু (مدار ) হ’লেন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান আত-ত্বায়েফী। তাঁকে কোন কোন বিদ্বান ‘যঈফ’ বলেছেন। ছাহেবে মির‘আত বলেন, আহমাদ, বুখারী, আলী ইবনুল মাদীনী প্রমুখ বিদ্বানগণের ন্যায় হাদীছ শাস্ত্রের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিবর্গের (جهابذة ) বক্তব্যের পরে অন্যদের বক্তব্যের প্রতি দৃকপাত না করলেও চলে। মুজতাহিদ ইমামগণ এ হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন। ইবনু ‘আদী বলেন, আমর ইবনু শু‘আইব থেকে আব্দুর রহমান আত-ত্বায়েফীর সকল বর্ণনা সুদৃঢ় (مسةقيمة )। হাফেয ইরাক্বী বলেন, إسناده صالح ‘অত্র হাদীছের সনদ দলীলযোগ্য’। তিরমিযীর ভাষ্যকার ছাহেবে তুহফা বলেন,

فالحاصل أن حديث عبد الله بن عمرو حسن صالح الاحتجاج و يؤيده الأحاديث التى أشار إليها الترمذى-

‘সারকথা এই যে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের হাদীছটি ‘হাসান’ ও দলীল গ্রহণের যোগ্য এবং একে শক্তিশালী করে ঐ সকল হাদীছ, যেগুলির দিকে তিরমিযী ইঙ্গিত করেছেন’।[46]

তাকবীরে তাহরীমা সহ কি-না?

এক্ষণে উক্ত বারো তাকবীর ‘তাকবীরে তাহরীমা’ সহ, নাকি ওটা বাদে, এ বিষয়ে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। ইমাম শাফেঈ, আওযাঈ, ইবনু হাযম প্রমুখ বিদ্বানগণ তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর বলেন। পক্ষান্তরে ইমাম মালেক ও আহমাদ তাকবীরে তাহরীমা সহ সাত তাকবীর বলেন।[47]  

(১) এ বিষয়ে বুলূগুল মারামের ভাষ্যকার ছাহেবে সুবুলুস সালাম বলেন,

ويحتمل أنها بتكبيرة الافتتاح و أنها من غيرها والأوضح أنها من دونها... و قال: الأولى العمل بحديث عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده و أنه أشفى شيئ فى الباب ‘এটি তাকবীরে তাহরীমা সহ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এটি তা ব্যতীত। বরং এটাই অধিকতর স্পষ্ট যে, এটি তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত।... তিনি বলেন, সর্বোত্তম হ’ল আমর ইবনে শু‘আইব কর্তৃক তার পিতা, অতঃপর তার দাদা খ্যাতনামা ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীছের উপরে আমল করা। এটিই অত্র বিষয়ে সর্বাধিক হৃদয় শীতলকারী বস্ত্ত’।[48]

(২) ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,

أن يقرأ دعاء الاستفتاح عقب الإحرام كغيرها ثم يكون فى الأولى سبع تكبيرات سوى تكبيرة الإحرام والركوع وفى الثانية خمسًا سوى تكبيرة القيام-

‘অন্যান্য ছালাতের ন্যায় তাকবীরে তাহরীমার পরে দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ (‘ছানা’) পাঠের পর তাকবীরে তাহরীমা ও তাকবীরে রুকূ ব্যতিরেকে সাত তাকবীর দিবে এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বওমার তাকবীর বাদে পাঁচ তাকবীর দিবে’।[49]

(৩) ছাহেবে ফিক্বহুস সুন্নাহ বলেন,

صلاة العيد ركعةان يسن فيهما أن يكبر المصلى قبل القراءة فى الركعة الأولى سبع ةكبيراة بعد ةكبيرة الإحرام وفى الثانية خمس ةكبيراة غير ةكبيرة القيام مع رفع اليدين مع كل ةكبيرة-

‘ঈদের ছালাত দু’রাক‘আত। এতে সুন্নাত হ’ল প্রথম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমার পরে ও ক্বিরাআতের পূর্বে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বওমার তাকবীর ব্যতীত পাঁচ তাকবীর দেওয়া এবং প্রতি তাকবীরে দুই হাত উঠানো’।[50]

(৪) তিরমিযীর ভাষ্যকার ছাহেবে তুহফা বলেন, واحتج من قال إن تكبيرة الإحرام معدودة من السبع فى الأولى بإطلاق الأحاديث- ‘যারা তাকবীরে তাহরীমাকে প্রথম রাক‘আতের সাত তাকবীরের মধ্যে গণ্য করেছেন, তারা হাদীছ সমূহের ‘মুত্বলাক্ব’ বা সাধারণ (সাত) শব্দ থেকে দলীল নিয়েছেন’।[51] অথচ উছূলে হাদীছের নিয়ম অনুযায়ী ‘মুত্বলাক্ব’ বা ব্যাখ্যাশূন্য হাদীছের উপরে বিস্তারিত হাদীছ অগ্রগণ্য। যা দারাকুৎনীতে ১৭১২ ও ১৭১৪ নং হাদীছে আমর ইবনে শু‘আইব তার পিতা ও দাদা হ’তে বর্ণিত হয়েছে। অনুরূপভাবে দারাকুৎনী ১৭০৪ নং হাদীছে আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে, سِوَى تَكْبِيْرَةِ الْإِسْتِفْتَاحِ ‘তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত’।

(৫) মিশকাতের ভাষ্যকার ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, الأظهرُ بَلِ الْمُتَعَيَّنُ أَنَّهَا من دونها  ‘এটাই সর্বাধিক স্পষ্ট বরং নির্দিষ্ট যে, ওটা তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত’।[52] কেননা তাকবীরে তাহরীমা হ’ল ফরয। যা সকল ছালাতেই দিতে হয়। আর এগুলি হ’ল অতিরিক্ত বা নফল তাকবীর। যা কেবল ঈদের ছালাতে দিতে হয়।

(৬) তাঁদের আরেকটি দলীল হ’ল আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) -এর কয়েকটি ‘আছার’, যার বর্ণনাসূত্র ছহীহ হ’লেও তা ৭, ৯, ১১, ১২, ১৩ মর্মে পরষ্পরের বিরোধী।[53] অতএব একজন ছাহাবীর পরষ্পর বিরোধী আমলের বিপরীতে রাসূলের স্পষ্ট ছহীহ মারফূ‘ হাদীছ নিঃসন্দেহে অগ্রগণ্য। তাছাড়া এটা স্পষ্ট যে, আববাস (রাঃ)-এর বংশধর আববাসীয় খলীফাগণ সকলে ১২ তাকবীরের উপরে আমল করেছেন। এতে বুঝা যায় যে, ইবনু আববাস (রাঃ)-এর নিয়মিত আমল ১২ তাকবীরের উপরেই ছিল।[54]

(৭) শায়খ আলবানী উক্ত তাকবীর সমূহকে ‘ঈদায়নের সাথে খাছ অতিরিক্ত তাকবীর’ হিসাবে গণ্য করেছেন।[55] এতএব সাময়িক অতিরিক্ত তাকবীর কখনো নিয়মিত ফরয তাকবীরে তাহরীমা ও তাকবীরে ছালাত-এর সাথে যুক্ত হ’তে পারে না।

(৮) কূফার গবর্ণর সাঈদ ইবনুল ‘আছ হযরত আবু মূসা আশ‘আরীকে ঈদায়নের তাকবীর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কিভাবে দিয়েছিলেন, সেকথা জিজ্ঞেস করেন।[56] তিনি নিশ্চয়ই সেখানে তাকবীরে তাহরীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেননি, যা সকল ছালাতেই ফরয। বরং ‘অতিরিক্ত তাকবীর’ ভেবেই তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, এগুলি কিভাবে দিতে হবে সেটা জানার জন্য।

(৯) উক্ত তাকবীরগুলি ছিল ক্বিরাআতের পূর্বে, ছানার পূর্বে নয়। কেননা হাদীছে উক্ত তাকবীরগুলিকে স্পষ্টভাবেই قبل القراءة অর্থাৎ ‘ক্বিরাআতের পূর্বে’ বলা হয়েছে। এটা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকবীরে তাহরীমার পরে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন ও তখন ‘ছানা’ (দো‘আয়ে ইস্তেফতাহ) পাঠ করতেন।[57] অতএব ‘ছানা’ পড়ার পরে অতিরিক্ত তাকবীরগুলি দিলে ফরয তাকবীরে তাহরীমা থেকে এগুলিকে পৃথক করা সহজ হয়।

ছয় তাকবীর: হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ প্রথম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমার পরে ক্বিরাআতের পূর্বে পরপর তিনটি অতিরিক্ত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে উঠে ক্বিরাআতের পরে রুকুর তাকবীর ছাড়াই অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর দিয়ে থাকেন। বস্ত্ততঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছয় তাকবীরে ঈদের ছালাত আদায় করেছেন মর্মে ছহীহ বা যঈফ কোন স্পষ্ট মারফূ হাদীছ নেই। তবে কয়েকজন ছাহাবীর আমল বা ‘আছার’ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেখানে স্পষ্টভাবে ছয় তাকবীরের কথা নেই। এরপরেও সেগুলি সবই ‘যঈফ’। যেমন আবু মূসা আশ‘আরী ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) বর্ণিত ‘আছার’, যেখানে ‘জানাযার তাকবীরের ন্যায় চার তাকবীর’ বলা হয়েছে।[58] অনুরূপভাবে ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হ’তে ৫+৪ মোট ৯ তাকবীরের একটি ‘আছার’ মুসনাদে আব্দুর রাযযাক ও  মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাতে এবং ইবনু আববাস ও মুগীরা ইবনে শো‘বাহ (রাঃ) হ’তে নয় তাকবীরের আরেকটি ‘আছার’ মুসনাদে আব্দুর রাযযাকে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সবগুলিই ‘যঈফ’।[59]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর ‘আছার’টি মূলতঃ তাঁর নিজস্ব উক্তি। তিনি এটিকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দিকে সম্পর্কিত করেননি। উপরন্তু উক্ত রেওয়ায়াতের সনদ সকলেই ‘যঈফ’ বলেছেন।[60] সুতরাং ইবনু মাস‘উদ (রাঃ)-এর সঠিক আমল কি ছিল, সে ব্যাপারেও সন্দেহ থেকে যায়। এ বিষয়ে ইমাম বায়হাক্বী বলেন,

هذا رأى من جهة عبد الله رضى الله عنه والحديث المسند مع ما عليه من عمل المسلمين أولى أن يتبع و بالله التوفيق-

অর্থঃ ‘এটি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদের ‘ব্যক্তিগত রায়’ মাত্র। অতএব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত মারফূ হাদীছ, যার উপরে মুসলমানদের আমল চালু আছে (অর্থাৎ বারো তাকবীর) তার উপরে আমল করাই উত্তম’।[61]

উল্লেখ্য যে, ছয় তাকবীর সাব্যস্ত করার জন্য ‘জানাযার চার তাকবীরের ন্যায়’ বলে দুই রাক‘আতে ৪+৪ মোট ৮ তাকবীর, তন্মধ্যে ১ম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমা সহ ক্বিরাআতের পূর্বে চার তাকবীর এবং ২য় রাক‘আতে রুকুর তাকবীর সহ ক্বিরাআতের পরে চার তাকবীর বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর মূল তাকবীর দু’টি বাদ দিলে অতিরিক্ত তিন তিন ছয়টি তাকবীর হয়। অথচ উক্ত হাদীছে ক্বিরাআতের আগে বা পরে বলে কোন কথা নেই। অনুরূপভাবে মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ্তে বর্ণিত ‘নয় তাকবীর’ থেকে তাকবীরে তাহরীমা এবং ১ম ও ২য় রাক‘আতের রুকুর তাকবীর দু’টি সহ মোট তিনটি মূল তাকবীর বাদ দিলে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর হয়। এভাবেই ব্যাখ্যা করে ছয় তাকবীর সাব্যস্ত করা হয়েছে।[62] 

ছাহেবে মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন, সবচেয়ে উত্তম হ’ল প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে পাঁচ মোট বার তাকবীর দেওয়া। কারণ এর উপরে এসেছে অনেকগুলি মরফূ হাদীছ, যার কতকগুলি ‘ছহীহ’ ও কতকগুলি ‘হাসান’। বাকীগুলি ‘যঈফ’ হ’লেও এদের সমর্থনকারী। ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, ৭ ও ৫ বারো তাকবীর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে ‘হাসান’ সূত্রে বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, জাবের, আয়েশা, আবূ ওয়াক্বিদ, আমর ইবনু ‘আওফ প্রমুখ ছাহাবীগণ থেকে। কিন্তু শক্তিশালী বা দুর্বল কোন সূত্রে এর বিপরীত কিছুই বর্ণিত হয়নি।

দ্বিতীয় কারণ হ’ল বারো তাকবীরের উপরে আমল করেছেন মহান চার খলীফা হযরত আবুবকর, ওমর, ওছমান ও আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)’।[63]

অতএব ১২ তাকবীরের স্পষ্ট ছহীহ মরফূ হাদীছের উপরে এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের অনুসৃত সুন্নাতের উপরে সকলে আমল করলে সুন্নী মুসলমানগণ অন্ততঃ বৎসরে দু’টি ঈদের খুশীর দিনে ঐক্যবদ্ধ হ’য়ে ছালাত ও ইবাদত করতে পারতেন। কিন্তু দ্বীনের দোহাই দিয়েই আমরা দ্বীনদার মুসলমানদের বিভক্ত করে রেখেছি। আল্লাহ পাক আমাদেরকে ছহীহ হাদীছের উপরে আমলের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতি হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!!

(১২)  ঈদায়নের অন্যান্য মাসায়েল:

(ক) মুসলমানদের জাতীয় আনন্দ উৎসব মাত্র দু’টি, ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহা।[64] এক্ষণে ‘ঈদে মীলাদুন্নবী’ নামে তৃতীয় আরেকটি ঈদ-এর প্রচলন ঘটানো নিঃসন্দেহে বিদ‘আত, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

(খ) দুই ঈদের দিন ছিয়াম পালন নিষিদ্ধ এবং আইয়ামে তাশরীক্বের তিনদিন ১১, ১২ ও ১৩ই যিলহাজ্জ খানা-পিনার দিন।[65]

(গ) ঈদের দিন পরষ্পরে কুশল বিনিময়, খানাপিনা ও নির্দোষ খেলাধূলা: ঈদের দিন ছাহাবায়ে কেরাম পরষ্পরে সাক্ষাৎ হ’লে বলতেন ‘তাক্বাববালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ (অর্থঃ আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ হ’তে কবুল করুন!)।[66] অতএব ‘ঈদ মোবারক’ বললেও সাথে সাথে উপরোক্ত দো‘আটি পড়া উচিত। ঈদের দিন এবং ঈদুল আযহার পরের তিনদিন পরষ্পরের বাড়ীতে খানাপিনা এবং নির্দোষ খেলাধুলা ও ইসলামী সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি করা যাবে।[67] অতএব উভয় ঈদের সরকারী ছুটি কমপক্ষে ছয়দিন থাকা উচিত। উল্লেখ্য যে, ঈদের খুশীতে গান-বাজনা, পটকাবাজি, মাইকবাজি, ক্যাসেটবাজি, চরিত্র বিধ্বংসী ভিডিও-সিডি প্রদর্শন, বাজে সিনেমা দেখা এবং খেলাধূলার নামে নারী-পুরুষের অবাধ সমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

(ঘ) ঈদের ক্বাযা: ‘যদি কেউ প্রথমে চাঁদ দেখতে না পেয়ে ছিয়াম রাখে ও পরে দিনের শেষে জানতে পারে, সে ব্যক্তি ছিয়াম ভঙ্গ করবে ও পরের দিন সকালে ঈদের ক্বাযা আদায় করবে’।[68] অনুরূপভাবে অন্য কোন বাধ্যগত কারণে কেউ ঈদের দিন ঈদের ছালাত আদায়ে ব্যর্থ হ’লে পরের দিন সকালে ক্বাযা আদায় করবে‘।[69]


[1]. মির‘আত ৫/২১-২২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১৭-১৮।

[2]. বুখারী, মিশকাত হা/১৪৩৪ ‘ঈদায়নের ছালাত’ অনুচ্ছেদ।

[3]. বুখারী, মিশকাত হা/১৩৮১ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘পরিচ্ছন্নতা ও তাকবীর’ অনুচ্ছেদ-৪৪; আল-মুগনী ২/২২৮ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৭ পৃঃ।

[4].  ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৪০ পৃঃ; আল-মুগনী ২/২৫১।

[5]. ফাৎহুল বারী  ২/৫৫০-৫১ ‘ঈদায়েন’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ২৫; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৪০ পৃঃ।

[6]. আওনুল মা‘বূদ শরহ সুনানে আবুদাঊদ (কায়রো ছাপাঃ ১৪০৭/১৯৮৭) ৩/৪৮৭; ফিক্বহুস  সুন্নাহ ১/২৩৮ পৃঃ।

[7].  তাফসীর তাফসীরে কুরতুবী ১৫/১০৮ পৃঃ।

[8].  মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১।

[9]. বায়হাক্বী, হাদীছ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল (বৈরুত: ১৪০৫/১৯৮৫) হা/৬৫০, ৩/১২৩ পৃঃ।

[10]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, সনদ ছহীহ, ইরওয়া ৩/১২১ পৃঃ; দারাকুৎনী হা/১৬৯৬, ১৭০০।

[11]. নায়ল ৪/২৩৬ পৃঃ; মির‘আত ৫/৭০ পৃঃ।

[12]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, সনদ ছহীহ, ইরওয়া ৩/১২৫ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৪২-২৪৩ পৃঃ; নায়ল ৪/২৭৮ পৃঃ; আল-মুগনী ২/২৫৪-৫৬ পৃঃ।

[13].  মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, বায়হাক্বী, সনদ ছহীহ, ইরওয়া ৩/১২৫ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৪৩ পৃঃ; আল-মুগনী ২/২৫৪-৫৬ পৃঃ।

[14]. যাদুল মা‘আদ (বৈরুত ১৪১৬/১৯৯৬) ২/৩৬১ পৃঃ; নায়ল ৪/২৫৭ পৃঃ।

[15]. তাফসীরে কুরতুবী, ২/৩০৭, ৩/২-৪; বায়হাক্বী ৩/৩১৬ পৃঃ।

[16]. বুখারী, তা‘লীক্ব, সনদ ছহীহ, ইরওয়া হা/৬৫১, ৩/১২৪ পৃঃ; নায়লুল আওত্বার ৪/২৭৪ পৃঃ।

[17]. ইমাম নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন (বৈরুত ছাপাঃ ১৪১২/১৯৯১) ২/৭১-৭২ ‘ছালাতুল ঈদের বিবরণ’ অধ্যায়; মির‘আত ৫/৫৩; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ১১৪।

[18]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত, হা/১৪২৬, ১৪৩১।

[19]. মুসলিম, মিশকাত হা/১৪৫১; নায়ল ৪/২৫১; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১৯ পৃঃ।

[20]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪২৬, ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৩৪২।

[21]. সুবুলুস সালাম ১/১৪০; মির‘আত ৫/২৭; নায়লুল আওত্বার ৪/২৬৪; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৪০ পৃঃ।

[22].  মির‘আত  ৫/৩১;  বায়হাক্বী ৩/২৯৯; ফিক্বহুস  সুন্নাহ ১/২৪০ পৃঃ।

[23]. মির‘আত ৫/৭০ পৃঃ।

[24]. আল-মুগনী ২/২৪৪ পৃঃ।

[25].  মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩৮৫।  

[26]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৩১; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/১৩৪৭।

[27]. মির‘আত, ২/৩৩১; ঐ, ৫/৩১ পৃঃ।

[28]. ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৩৭-৩৮; মির‘আত ২/৩২৭; ঐ, ৫/২২ পৃঃ।

[29]. আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হা/১৪৪৮ সনদ ‘যঈফ’।

[30]. আল-মুগনী ২/২৩৫ পৃঃ; ফিক্বহুস  সুন্নাহ, ১/৩১৮; ঐ, ১/২৩৭ পৃঃ।

[31]. ফিক্বহুস  সুন্নাহ, ১/৩১৬; ঐ, ১/২৩৬ পৃঃ; নায়ল ৪/২৩১ পৃঃ।

[32]. তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪১৫৩ ‘শিকার ও যবহ সমূহ’ অধ্যায় ‘আক্বীক্বা’ অনুচ্ছেদ।

[33]. ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ২/২৪২ পৃঃ; মির‘আত ৫/৫৩ পৃঃ।

[34]. বায়হাক্বী ৩/২৯৩ পৃঃ; মির‘আত ৫/৫৪ পৃঃ; আল-মুগনী ২/২৪২ পৃঃ; বুখারী, মিশকাত হা/৭৯৮ ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ।

[35]. মির‘আত ২/৩৩৮, ৩৪১ পৃঃ; ঐ, ৫/৪৬, ৫১, ৫২ পৃঃ।

[36]. আবু দাঊদ হা/১১৪৯; ছহীহ আবুদাঊদ হা/১০১৮-১৯।

[37]. দারাকুৎনী (বৈরুতঃ ১৪১৭/১৯৯৬) হা/১৭০৪।

[38]. ইরওয়াউল গালীল হা/৬৩৯-এর ব্যাখ্যা, ৩/১০৭-১০৮ পৃঃ।

[39]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত, হা/১৪৪১; এখানে মিশকাতে ‘দারেমী’ লেখা হয়েছে, যেটা ভুল। কেননা দারেমীতে এ হাদীছ নেই; আলবানী, ছহীহ তিরমিযী হা/৪৪২; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১০৬৪। এতদ্ব্যতীত ছহীহ আবুদাঊদে আয়েশা ও আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হ’তে ৪টি হাদীছ নং ১০১৮, ১০১৯, ১০২০, ১০২১ এবং ছহীহ ইবনু মাজাহতে রাসূলের অন্যতম মুওয়াযযিন সা‘দ আল-ক্বারায, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ও আয়েশা (রাঃ) হ’তে আরও ৩টি হাদীছ নং ১০৬২, ১০৬৩, ১০৬৫ বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, হাদীছগুলির কোন কোনটি সরাসরি ‘ছহীহ’ নয়। বরং ‘শাওয়াহেদ’-এর কারণে ‘ছহীহ’।

[40]. জামে তিরমিযী (দিল্লীঃ ১৩০৮ হিঃ), ১/৭০ পৃঃ; আলবানী, ছহীহ তিরমিযী, হা/৪৪২; ইবনু মাজাহ (বৈরুতঃ তাবি) হা/১২৭৯; মির‘আত ৫/৪৮ পৃঃ।

[41].  বায়হাক্বী (বৈরুতঃ তাবি), ৩/২৮৬ পৃঃ; মির‘আত, ২/৩৩৯ পৃঃ; ঐ, ৫/৪৮ পৃঃ।

[42].  তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৮২ পৃঃ; মির‘আতুল মাফাতীহ ৫/৫৫ পৃঃ।

[43].  মিশকাত হা/১৪৪১ -এর টীকা ১, ১/৪৫৩ পৃঃ।

[44]. দারাকুৎনী হা/১৭১২, ১৭১৪ ‘ঈদায়েন’ অধ্যায়; বায়হাক্বী ২/২৮৫ পৃঃ। হাদীছটির শেষাংশটি দারাকুৎনী ও বায়হাক্বীতে এসেছে। এতদ্ব্যতীত হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে আবুদাঊদ হা/১১৫১, আলবানী-ছহীহ আবুদাঊদ হা/১০২০; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১০৬৩। 

[45]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৮২; মির‘আতুল মাফাতীহ ৫/৫৫ পৃঃ। ইমাম শাওকানী (রহঃ) ঈদায়নের অতিরিক্ত তাকবীর বিষয়ে ১০টি মতভেদ উল্লেখ করে ১২ তাকবীরকেই ‘সর্বাগ্রগণ্য’ (أرجح الأقوال) হিসাবে মন্তব্য করেছেন। দ্রঃ নায়ল ৪/২৫৭ পৃঃ।

[46]. আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ জামে‘ তিরমিযী (মদীনাঃ মাকতাবা সালাফিইয়াহ ১৩৮৪/১৯৬৪) ৩/৮৫ পৃঃ; আল-মুগনী ২/২৩৮ পৃঃ।

[47]. মির‘আত ৫/৪৬ পৃঃ।

[48]. মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আমীর ছান‘আনী, সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম (কায়রোঃ দারুর রাইয়ান ১৪০৭/১৯৮৭) হা/৪৬১ -এর ব্যাখ্যা, ২/১৪১-৪২ পৃঃ।

[49]. ইয়াহ্ইয়া বিন শারফ নববী, রওযাতুত ত্বালেবীন (বৈরুত: ১৪১২/১৯৯১) ‘ছালাতুল ঈদের বিবরণ’ অধ্যায় ২/৭১ পৃঃ ।

[50]. সাইয়েদ সাবেক্ব, ফিক্বহুস সুন্নাহ (কায়রোঃ দারুল ফাৎহ ১৪১২/১৯৯২) ১/২৩৯ পৃঃ।

[51]. তুহফাতুল আহওয়াযী হা/৫৩৪ -এর ব্যাখ্যা, ৩/৮৩ পৃঃ।

[52]. মির‘আত, ২/৩৩৮ পৃঃ; ঐ, ৫/৪৬ পৃঃ।

[53]. ইরওয়াউল গালীল  ৩/১১২ পৃঃ; জাওহারুন নাক্বী শরহ বায়হাক্বী ৩/২৮৭।

[54]. বায়হাক্বী ৩/২৯১ পৃঃ।

[55]. ইরওয়াউল গালীল  ৩/১১৩ পৃঃ।

[56]. আবুদাঊদ, মিশকাত, হা/১৪৪৩।

[57]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮১২।

[58]. আবুদাঊদ, মিশকাত, হা/১৪৪৩ হাদীছ যঈফ-আলবানী; হেদায়াতুর রুওয়াত হা/১৩৮৮, ২/১২১ পৃঃ; মির‘আত ৫/৪৬, ৫০-৫১ পৃঃ।

[59]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৮৬; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ (বোম্বাইঃ ১৯৭৯), ২/১৭৩ পৃঃ।

[60]. বায়হাক্বী, ৩/২৯০; নায়ল, ৪/২৫৪, ২৫৬; মির‘আত ৫/৫০-৫১ পৃঃ।

[61]. বায়হাক্বী, ৩/২৯১; মির‘আত ৫/৫১ পৃঃ।

[62]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৮৬, ৮৮ পৃঃ।

[63]. মির‘আত ৫/৫৩ পৃঃ।

[64]. আবুদাঊদ, মিশকাত, হা/১৪৩৯।

[65]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত, হা/২০৪৮; মুসলিম, মিশকাত হা/২০৫০।

[66]. আল-মুগনী ২/২৫৯ পৃঃ; ফিক্বহুস  সুন্নাহ, ১/৩১৫ পৃঃ; ঐ, ১/২৪২ পৃঃ।

[67]. ফিক্বহুস  সুন্নাহ, ১/৩২২ পৃঃ; ঐ, ১/২৪১ পৃঃ।

[68]. আহমাদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, সনদ ছহীহ, ইরওয়া হা/৬৩৪।

[69]. ঐ, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৪১ পৃঃ; আল-মুগনী ২/২৫০-৫১ পৃঃ ।